কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল টি।
কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল |
কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল
উত্তর : ভূমিকা : কারবালার হত্যাকাণ্ড ইসলাম জগতের সর্বত্র ত্রাসের শিহরণ জাগিয়ে তুলেছিল। এ ঘটনা খিলাফত ও এর দীর্ঘকাল পরে মুসলিম সালতানাতের ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করে। এ মর্মান্তিক ঘটনার পর হাশেমী ও উমাইয়া বিরোধ আরও তীব্র আকারে ধারণ করে। এ কারবালার ফলাফল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধের ফলে ইসলামে বিভিন্ন মতভেদ দেখা দেয়। ফলে ইসলামের ঐক্য বিনষ্ট হয়।
→ কারবালার যুদ্ধের গুরুত্ব : ইসলামের ইতিহাসে কারবালার যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ যুদ্ধে ইয়াজিদ জয় লাভ করে ঠিকই কিন্তু ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না। নিম্নে এ যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. মহান শিক্ষা : কারবালার নৃশংসতা ছিল মুসলমানদের একটি মহান শিক্ষা। এ যুদ্ধে ইমাম হোসাইন মিথ্যার উপর জয়লাভ করেন। তিনি সত্যের জন্য আত্মাহুতি দেন। তার এই আত্মাহুতি সর্বকালে সর্বদেশে একটি গৌরবোজ্জ্বল আদর্শরূপে পরিগণিত হয়। তিনি অসত্য ও অসাধুতার সহিত আপোস করেন নাই। ঐতিহাসিক গিলমান সত্যিই বলেন, “ইমাম হুসাইনকে শহীদের সম্মান প্রদান করা হয়, তিনি উমাইয়াদের ঘৃণার শিকার হন এবং স্বজাতির স্বার্থে আত্মদান করেন।”
২. শিয়া সম্প্রদায়ের জন্ম লাভ : এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফলে মুসলিম জগৎ শিয়া সুন্নি নামে দুটি বিবদমান দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, “হুসাইনের রক্ত তার পিতার রক্ত অপেক্ষাও বেশি করে শিয়া মতবাদ গঠনের কার্যকরী বীজ বলে প্রমাণিত হলো। এজন্য ১০ ই মহররম শিয়া মতবাদের জন্মলাভ ঘটে।”
৩. রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন : কারবালা প্রান্তরের হত্যাকাণ্ডকে উমাইয়াগণ হজরত ওসমানের হত্যার এবং পক্ষান্তরে-বানু হাশিম গোত্রের উপর প্রতিশোধ বলে গণ্য করতো। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, উমাইয়াদের ৭৫০ খ্রি. জাবের যুদ্ধে পরাজিত করে বানু হাশিম গোত্রের প্রতি যে অবিচার ও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল আব্বাসীয়গণ তারই প্রতিশোধ নেয়। বলা বাহুল্য, এই ঘটনা ইসলামি রাষ্ট্রে একটি বিপর্যয় সৃষ্টি করে। মুইর বলেন, “কারবালার ঘটনা কেবল খেলাফতের ভাগ্যই নির্ধারণ করে নাই ইহা খিলাফত ধ্বংসের অনেক পরে মুসলিম জাহানের ভাগ্য নির্ধারিত করে।”
৪. ইসলামি ঐক্য বিনষ্ট : কারবালার মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড ইসলামি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের মূলে কুঠারাঘাত করে। এর ফলে মুসলমানদের জাতীয় ঐক্য ধসে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের গোত্র কলহ সৃষ্টি করে ।
৫. মক্কা ও মদিনায় বিদ্রোহ : কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার প্রত্যক্ষ ফলাফল ছিল যুবায়েরের নেতৃত্বে পরিচালিত মক্কা ও মদিনার বিদ্রোহ। কারবালার ঘটনা মক্কা ও মদিনাবাসীকে কঠিনতম আঘাত হেনেছিল। তারা ইয়াজিদের নিকট হজরত আলীর বংশধরের উপর কৃত অন্যায়ের প্রতিকার দাবি করল ৷
৬. শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব : কারবালার যুদ্ধের ফলে শিয়াদের আবির্ভাব হয়। শিয়ারা আলীর বংশধরদের প্রতি উমাইয়াগণের দুর্ব্যবহার সমর্থন করে না। শিয়ারা মহররমের প্রথম দশ দিন। শোক দিবস হিসেবে পালন করেছে তা পরিণামে উমাইয়া বংশের পতন ত্বরাণিত করে। এ যুদ্ধের বিষময় ফল এই যে, এটি শিয়া- সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে ইসলামের ঐক্য ও সংহতি চিরতরে বিনষ্ট করেছে।
৭. সর্বত্র বিশৃঙ্খলা : কারবালার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সর্বত্র এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। মক্কা-মদিনাবাসী ইয়াজিদের নিকট। এ অন্যায়ের প্রতিকার দাবি করল। কুফাবাসীগণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। বসরাতে খারিজি দলও শক্তিশালী হয়ে ওঠে অন্যদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের খিলাফত দাবি করে বসল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কারবালার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ যুদ্ধের ফলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান খেলাফতের পতন ঘটায়। এ যুদ্ধের ফলে আলীর বংশধরদের প্রতি সহানুভূতি হয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কারবালা যুদ্ধের তাৎপর্য কি ছিল টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।