১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর ।
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর |
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর
- ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণসমূহ আলোচনা কর।
- অথবা, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।
- অথবা, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ বর্ণনা কর।
- অথবা, যুক্তফ্রন্টে কয়টি দল ছিল এবং কী কী? ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট কেন জয় লাভ করেছিল?
- অথবা, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ কী ছিল?
- অথবা, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির কারণ কি?
উত্তর : ভূমিকা : ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এর নেতৃত্ব পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে চলে যায়। বিশেষ করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সম্মোহনী নেতৃত্বের কারণে মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের অনেকেই জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পরও এর মূল নেতৃত্ব পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ ও তাদের পূর্ব পাকিস্তানের কিছু সহযোগীদের হাতে চলে যায় মুসলিম লীগ পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষায় তৎপর হওয়াতে ১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম দেয়। মুসলিম লীগের পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি অধিক নির্ভরশীলতার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে ব্যাপক ভোট প্রদান করে মুসলিম লীগের পরাজয় নিশ্চিত করে।
→ মুসলিম লীগের পরাজয় ও যুক্তফ্রন্টের জয়ের কারণ : মুসলিম লীগের পরাজয় ও যুক্তফ্রন্টের জয়ের কারণগুলো বর্ণনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক কারণ : পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পরে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভাগ্য বিধাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তারা শুরু থেকেই পূর্ব বাংলার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে। পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে পশ্চিম পাকিস্তান। তারা পূর্ব পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। কেন্দ্রীয়ভাবে মুসলিম লীগ সরকার একক অধিপত্যের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু পূর্ব বাংলার জনগণ এ ধরনের বঞ্চনা মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ মুসলিম লীগের বিপক্ষে রায় দেয়।
২. অর্থনৈতিক কারণ : পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে একটি সুখী সমৃদ্ধিশীল জীবন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব বাংলায় শুধুমাত্র বণিক ও জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষায় তৎপর ছিল। মুসলিম লীগ নেতৃত্ব এখানে জমিদার ও মহাজনদের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে। প্রজাস্বত্ব আইন পাস হলেও এখানকার সাধারণ কৃষক শ্রেণির জীবনে কোন পরিবর্তন আসেনি। মুসলিম লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় কালোবাজারী, মজুদদার ও মুনাফাখোরদের দৌরাত্মে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। ফলে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে মুসলিম লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি ঘটে এবং যুক্তফ্রন্টের জয় নিশ্চিত হয়।
৩. সাংস্কৃতিক কারণ : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রথম সংঘাত ঘটে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ পূর্ব পাকিস্তানে বাস করা সত্ত্বেও পাকিস্তানের শাসকচক্র পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের মাতৃভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথকে রক্তে রঞ্জিত করে। এ হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। তারা মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালের মুসলিম লীগকে হারিয়ে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতাসীন হয়।
৪. প্রশাসনিক ব্যর্থতা : মুসলিম লীগ দলীয় সরকার প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। মুসলিম লীগ শাসন আমলে খাদ্য সংকট, লবণ সংকট ও বন্যা সমস্যা এবং পাট কেলেংকারী ফাঁস হয়ে যাবার ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ মুসলিম সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। অপরদিকে যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ তাদের ২১ দফা কর্মসূচিতে লবণ সংকট, খাদ্য সংকট ও বন্যা সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা প্রদান ও মুসলিম লীগ শাসনামলের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরিচালনার ঘোষণা পূর্ব বাংলার জনগণকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় হয় এবং যুক্তফ্রন্টের জয় হয়।
৫. যোগ্য নেতৃত্বের অভাব : পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ক্যারিসমা সুলভ নেতৃত্ব অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিল। তখন পাকিস্তানের জনগণ জিন্নাহর যেকোনো আহ্বানে সাড়া দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকত। কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুর পর মুসলিম লীগে তেমন কোন যোগ্য ক্যারিসমাসুলভ নেতৃত্বের আবির্ভাব না হওয়ার ফলে এক বিরাট রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীকালের নেতারা আর কোন ক্রমেই পূরণ করতে সক্ষম হয়নি। সুতরাং বলা যায়, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ পরাজিত হয় এবং যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে ।
৬. সংকীর্ণ মনোভাব : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার ছিল কায়েমি স্বার্থবাদীদের সরকার। এ সরকার প্রথম হতেই দেশের আপামর জনগণের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিল না। ফলে দলটি কিছুসংখ্যক বিত্তশালী নেতার পকেট সংগঠনে পরিণত হয়। এ স্বার্থবাদী শ্রেণি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায্য দাবির প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করলে জনগণ সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাই স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য জনগণ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পতাকার নিচে সমবেত হয়।
৭. দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব ও আদর্শগত কোন্দল : পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ দল কিছু সংখ্যক নেতার কুক্ষিগত হয়। ফলে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। প্রগতিশীল নেতা ও কর্মীরা মুসলিম লীগের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠে। ক্ষেত্র বিশেষে নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী দল এর সৃষ্টি হয়। যেমন- সীমান্ত প্রদেশের কর্মী পীর মস্কী শরীফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, পূর্ব পাকিস্তানে ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ, পাঞ্জাবে মামদতের নেতৃত্বে | জিন্নাহ মুসলিম লীগ ইত্যাদি নতুন সংগঠনের সৃষ্টি হয়।
৮. লাহোর প্রস্তাবে বিরোধী ভূমিকা : লাহোর প্রস্তাবের | ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে মুসলিম | লীগ বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে। লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের কথা থাকলেও ১৯৪৬ সালে সংশোধন করে এক পাকিস্তান গঠনের ব্যবস্থা করায় পূর্ব বাংলায় অসন্তোষ দেখা দেয়। এ অসন্তোষ পরবর্তীকালে মুসলিম লীগ সরকারের হঠকারী কার্যকলাপের দরুন আরও বেশি দানা বেঁধে উঠে যা ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ে প্রভাব বিস্তার করে ।
৯. অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ : ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩৪টি আসন শূন্য ছিল কিন্তু ১৯৪৮ সালে টাংগাইলের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী পরাজিত হলে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব পাকিস্তান অংশে কোনো উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করেনি। এ ছাড়া ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতি সরকার অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। ফলে মুসলিম লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সংঘবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে রায় দেয় এবং মুসলিম লীগ পরাজয়বরণ করে।
১০. পূর্ব বাংলার স্বার্থের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন : পূর্ব বাংলার জনগণের স্বার্থের প্রতি মুসলিম লীগ চরম উপেক্ষা দেখিয়েছিল । পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগের কায়েমী স্বার্থবাদী মহল শুরু থেকেই বাঙালিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে সুকৌশল ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তাদের ইচ্ছা ছিল পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত করা। মুসলিম লীগ সরকারের শাসনামলে সৃষ্ট এ অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিলেন। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিপক্ষে ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষে রায় প্রদান করে ।
১১. মধ্যবিত্ত বাঙালি শ্রেণির বিকাশ : পাকিস্তান সৃষ্টির পর হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী ও বুদ্ধিজীবীগণ ব্যাপক হারে ভারতে চলে যাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির সৃষ্টি হয়। এ বিকাশমান বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাথে অতি শীঘ্রই উর্দুভাষী মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের স্বার্থের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্বে সচেতন মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণি মুসলিম লীগের পরিবর্তে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পথ বেছে নেয়। ফলে তারা মুসলিম লীগকে পরাজিত করে এবং যুক্তফ্রন্টকে জয়ী করে।
১২. পূর্ব বাংলার জনপ্রিয় নেতাদের মুসলিম লীগে যথাযোগ্য মর্যাদা না দেয়া : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতাদের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান না করে জনধিকৃত ও জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের, নেতাদের দলের প্রথম সারিতে স্থান দেয়। পক্ষান্তরে, পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হককে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো জনপ্রিয় নেতাদের দলে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করা হয়নি। ফলে মুসলিম লীগ পরিণত হয় জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের একটি মঞ্চ। এতে পূর্ব বাংলার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে তাদের রায় প্রদান করে ।
১৩. নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনকামী ছাত্র-যুব-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দেশদ্রোহী 'ভারতের অনুচর' 'কমিউনিস্ট' বলে আখ্যায়িত করে তাদের উপর নির্যাতন চালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে এ নির্যাতিত নেতারাই যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিপক্ষে ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষে রায় প্রদান করে ।
১৪. মুসলিম লীগ নেতৃত্বের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য : মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ ছিলেন উচ্চবিত্ত জমিদার, জোতদার ধনী ও অভিজাত শ্রেণির। ফলে স্বভাবতই তারা পূর্ব বাংলার জনগণের স্বার্থের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। তারা জনতার সাথে মিশতেন না। তাদের মধ্যে একটি অহমিকা বোধ কাজ করতো। পক্ষান্তরে, যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ছিলেন অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তারা পূর্ব বাংলার জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশার কথা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতেন। ফলে জনসাধারণ মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করে এবং যুক্তফ্রন্টকে বরণ করে নেয়।
১৫. সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থতা : পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ সরকার ক্ষমতার রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ক্ষমতার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়। এর ফলে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। অপরদিকে, যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ অতি দ্রুত সংবিধান প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করলে পূর্ব বাংলার জনগণ যুক্তফ্রন্টের প্রতি তাদের সমর্থন জানায়।
১৬. স্বায়ত্তশাসনের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন : পূর্ব বাংলার জনগণ স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে প্রথম থেকেই সচেতন ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের পরিবর্তে পূর্ব বাংলার জনগণের উপর জাতিগত নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। ফলে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বাঙালি জনগণ মুখরিত হয়ে উঠে যা মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ডেকে আনে ।
১৭. বাংলা ভাষাবিরোধী ভূমিকা : পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতে মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার স্বার্থবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করে। | মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার করায় পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগ জনপ্রিয়তা হারায় এবং তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার মিছিলের উপর পুলিশের গুলি চালানোর ফলে কয়েকজন শাহাদতবরণ করলে মুসলিম লীগ সরকারের প্রতি পূর্ব | বাংলার জনগণের আস্থা একেবারে শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়ায়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজয়বরণ করে।
১৮. সংখ্যানীতি ও সাম্যনীতি উপেক্ষা : জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের জন্য সমানুপাতিক হারে আইনসভার যে প্রতিনিধিত্ব দরকার ছিল পাকিস্তান তা করেনি। এতে করে বাঙালিরা নিজেদের বঞ্চিত ও শোষিত ভাবতে শুরু করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা ব্যাপক হ্রাস পায়। এর প্রভাব পড়ে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে। ফলে মুসলিম লীগ নির্বাচনে পরাজয় বরণ করে এবং যুক্তফ্রন্ট বিজয় লাভ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় ছিল একটি অভাবনীয় ব্যাপার। মুসলিম লীগ মনে করতো যে, পূর্ব বাংলার জনসাধারণ যেভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় নিরংকুশ সমর্থন জুগিয়েছিল সেভাবে ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনেও তাদের গলায় বিজয় মালা পরাবে। কিন্তু মুসলিম লীগের শাসন ছিল শোষণ ও বঞ্চনার। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক ও ধর্মীয় সকল দিক থেকে পূর্ব বাংলার লোকদেরকে বঞ্চিত করেছে। পূর্ব বাংলার প্রতি সবসময় তাদের একটি অগণতান্ত্রিক মনোভাব কাজ করেছে। তারা আত্ম-আহমিকায় ভুগে পূর্ব বাংলার জনগণকে শোষণ ও নির্যাতন করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগকে চরম পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হয়েছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ উল্লেখ কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।