জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা টি।
জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা |
জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা
ভূমিকা: বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মপন্থা নির্ধারণে দেশের জনসংখ্যা বিষয়ক সুশৃঙ্খল ও যথাযথ তথ্য-উপাত্তের কোনো বিকল্প নেই । দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পন্থা হচ্ছে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা।' আধুনিক তথ্যবহুল জ্ঞানভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা — ২০২২। আশা করা হচ্ছে, রূপকল্প ২০৪১, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনসহ অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবারের জনশুমারি।
প্রেক্ষাপট: ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ৪টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠন করা হয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এই সংস্থার অধীনে ১৯৭৪ সালে পরিচালনা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি। তারপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১, ২০১১ সালে ধারাবাহিকভাবে ৪টি শুমারি পরিচালিত হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রণীত পরিসংখ্যান আইনানুযায়ী ইতিপূর্বে পরিচিত ‘আদমশুমারি’-কে ‘জনশুমারি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ “জনশুমারি ও গৃহগণনা' এবং ১৫-২১ জুন ২০২২ নির্ধারিত হয় শুমারি সপ্তাহ হিসেবে।
জনশুমারির সংজ্ঞা: বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশে পরিচালিত এই জনশুমারি ও গৃহগণনা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপকভিত্তিক পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম। জাতিসংঘের ২০১৭ সালের নির্দেশনা অনুসারে জনশুমারি হচ্ছে, একটি দেশ বা সীমানাবেষ্টিত অঞ্চলের সকল ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট বিষয় সংক্রান্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ, সংকলন এবং প্রকাশের সার্বিক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ কোনো দেশের বা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ গণনাকেই মূলত জনশুমারি বলা হয় । বাংলাদেশে প্রথম জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। সাধারণত একটি দেশে জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয় দশ বছর পর পর। জনশুমারি ও গৃহগণনার রয়েছে দুটি প্রধান অংশ । যথা—
১। জনশুমারি— যা নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের সকল ব্যক্তির আর্থসামাজিক ও জনমিতিক উপাত্ত ক্ষুদ্রতর ভৌগোলিক বা প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত সরবরাহ করে ।
২। গৃহগণনা— যা নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের সকল আবাসিক ইউনিটের সংখ্যা, অবস্থা এবং বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত ক্ষুদ্রতর ভৌগোলিক বা প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত সরবরাহ করে।
প্রথম জাতীয় ডিজিটাল শুমারি: ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি দেশের প্রথম ডিজিটাল শুমারি। এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
• Geographic Information System (GIS) ও Geocode সমন্বয় করে প্রস্তুতকৃত ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট গণনা অঞ্চল চিহ্নিতকরণ।
• ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেট ব্যবহার করে Computer Assisted Personal Interviewing (CAPI) পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহ। • ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত সকল তথ্য Encrypted অবস্থায় সার্ভারে প্রেরণ।
• শুমারির যাবতীয় কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক Integrated Census Management System (ICMS) এর ব্যবহার।
• মাঠপর্যায়ে তথ্যসংগ্রহ কার্যক্রম রিয়েল টাইম মনিটরিং-এর পাশাপাশি তথ্যের গতিবিধি সরাসরি পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে Network Operation Center (NOC) স্থাপন যা তথ্যের গুণগত মান নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
• প্রচলিত প্রচার মাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল অনলাইন মাধ্যমে শুমারির প্রচারণা ।
জনশুমারি ও গৃহগণনা — ২০২২ এর গণনা পদ্ধতি: জাতিসংঘের গাইডলাইন অনুযায়ী জনশুমারি মূলত নিম্নবর্ণিত তিন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালনা করা হয়।
. • ডি-জুরি (de jure) পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে খানার সদস্যগণকে শুধু তাদের বাসস্থানে গণনাভুক্ত করা হয় ।
• ডি-ফ্যাক্টো (de : facto) পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে খানার সদস্যগণকে শুমারি মুহূর্তে তাদের অবস্থানে গণনাভুক্ত করা হয় । • মোডিফাইড ডি-ফ্যাক্টো (Modified de facto) পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে খানার সদস্যকে শুমারি মুহূর্তে তাদের অবস্থান গণনাভুক্ত করার পাশাপাশি শুমারি মুহূর্তে যারা ভ্রমণরত; হাসপাতাল ও হোটেলে থাকবেন বা কর্মরত থাকবেন তাদেরকে স্ব স্ব খানায় গণনাভুক্ত করা হয় ।
জনশুমারি ও গৃহগণনা — ২০২২ মোডিফাইড ডি ফ্যাক্টো (Modified defacto) পদ্ধতি অনুসারে পরিচালনা করা হয়েছে ।
জনমিতিক তথ্য: ষষ্ঠ জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী— ২০২২ স সালে দেশের গণনাকৃত মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম আদমশুমারিতে গণনাকৃত জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন। ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যার গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ২.৮৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা লক্ষণীয় মাত্রায় হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.২২ শতাংশে ।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
• · লিঙ্গানুপাতের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রতি ১০০ জন মহিলার বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৮ জন ।
• মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৮.৪৯ শতাংশ মানুষ পল্লি অঞ্চলে এবং ৩১.৫১ শতাংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করে। • মোট জনসংখ্যার ১.০০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ।
• ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৪৮৪ জন। ২০২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১,১১৯ জনে পৌঁছেছে ।
• মোট জনসংখ্যার ৯১.০৪ শতাংশ মুসলমান, ৭.৯৫ শতাংশ হিন্দু, ০.৬১ শতাংশ বৌদ্ধ, ০.৩০ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং ০.১২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
মূল্যায়ন: জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ উঠে এসেছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা, আর্থসামাজিক অবস্থা ও সামগ্রিক বাস্তবতার গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত। এসব উপাত্ত একদিকে যেমন হতাশাব্যঞ্জক ও উদ্বেগজনক, অন্যদিকে তেমনি কিছুটা ইতিবাচকও বটে। উদ্বেগের দিকটি হচ্ছে আমাদের সামষ্টিক জনসংখ্যা। গত ৫০ বছরে আমাদের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। এই বর্ধিত জনসংখ্যা দেশের সকল সেক্টরে তীব্র চাপ তৈরি করছে। সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সুফল না পাওয়ার পেছনে জনসংখ্যার এই ঊর্ধ্বগামিতাই দায়ী জনসংখ্যার ঘনত্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের হতাশায় মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। ক্ষুদ্রায়তনের এ দেশে বর্তমানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১১৯ জন মানুষের বাস যা উন্নত বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষ পল্লিনিবাসী; তবুও সিটি কর্পোরেশন, বিশেষত ঢাকার জনসংখ্যার চিত্র ভয়ানক, ভীতিপ্রদ ও বিপদসংকেতপূর্ণ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৯,৩৫৩ জন মানুষের বাস। জনসংখ্যার এই ঘনত্ব ঢাকাকে করেছে জনাকীর্ণ, ঘিঞ্জি, অপরিচ্ছন্ন ও যানবাহনবহুল একটি অপরিকল্পিত শহরে । ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্বের অন্যতম প্রধান বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর একটি ইতিবাচক ও আশাপ্রদ দিক রয়েছে। হ্রাস পেয়েছে জনসংখ্যার গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার। ১৯৮১ সালের তুলনায় " ২০২২ সালে এই সূচক ২.৮৪ শতাংশ থেকে ১.২২শতাংশে নেমে এসেছে। এটি আমাদের জন্য খুবই স্বস্তিদায়ক। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মসূচির প্রত্যক্ষ ফল এটি। তবে এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে রাসোপযোগী রাখতে সরকারকে জনসংখ্যার গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। ঢাকাকে দূষণমুক্ত, যানজটহীন ও বাসোপযোগী নগর হিসেবে গড়তে বিকেন্দ্রীকরণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার: জনশুমারি ও গৃহগণনা একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ কর্মকাণ্ড। জনগণের আর্থসামাজিক ও সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য এর মধ্য দিয়ে উঠে আসে । এর ফলে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মূল্যায়নের প্রায়োগিক সুযোগ সৃষ্টি হয়। এভাবে জনশুমারি ও গৃহগণনা নাগরিকের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই জাতীয় জনশুমারি ও গৃহগণনা রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।