হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর টি।
হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর |
হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : হজরত ওসমান (রা.) ছিলেন ইসলামের চারজন খলিফার মধ্যে তৃতীয় খলিফা। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর মৃত্যুর পর ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হজরত ওসমান (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তিনি দীর্ঘ ১২ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেন । তাঁর রাজ্য শাসনের শেষ দিকে সমগ্র সাম্রাজ্যে বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়। ইসলামের ইতিহাসে খলিফা হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটি দল তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। আর এই দলের হাতেই তিনি শহিদ হন।
→ হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার কারণসমূহ : যে সকল কারণের পরিপ্রেক্ষিতে হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
১. গোত্রীয় কলহ : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার অন্যতম কারণ হলো গোত্রীয় কলহ। হজরত ওসমান (রা.) ছিলেন উমাইয়া গোত্রের। আর তাই হাশেমী গোত্রের লোকেরা তার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করতে থাকে। হাশেমীরা চেয়েছিল যে, তাদের গোত্র থেকেই খলিফা নির্বাচিত হোক। তাই তারা খলিফার সাথে কলহে লিপ্ত হয়।
২. স্বজনপ্রীতি : হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ রাসূলের প্রিয় সহচরদের অপসারণ করে তার আত্মীয়-স্বজনদেরকে নিয়োগ করেন। কিন্তু এ অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে তিনি রাজকার্য থেকে অযোগ্য লোকদেরকে বহিষ্কার করেন।
৩. বায়তুল মালের অর্থ অপচয় : হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করেন এবং নিজ আত্মীয়স্বজনকে বায়তুল মাল হতে প্রচুর অর্থ প্রদান করেন এবং তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হয়েছিল। যে, তিনি অর্থ অপচয় করতেন ও তিনি অমিতব্যয়ী ছিলেন। অথচ খলিফা বায়তুল মাল থেকে এক কপর্দকও গ্রহণ করতেন না। খিলাফত লাভের পূর্বে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। কিন্তু বাস্তবে তার নিজস্ব সম্পত্তি হতেই তিনি আত্মীয়স্বজনকে দান করতেন।
৪. কুরআন শরীফ দক্ষীভূতকরণ : হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি কুরআন শরীফ দগ্ধ করেন। কিন্তু আসলে তিনি তা করেননি। তিনি কুরআন শরীফ নির্ভুলভাবে পড়ার জন্য তা সংকলন করার জন্য যায়েদ বিনি সাবিতের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন এবং বিবি হাফসার কাছ থেকে নির্ভুল কপিটি সংগ্রহ করে তা গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন এবং অপ্রয়োজনীয় কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলেন।
৫. আবুজার গিফারীকে নির্বাসন : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার অন্যতম কারণ হলো আবুজার আল গিফারীকে নির্বাসন। ব্যবসায়ী আবুজার গিফারী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সিরিয়ায়। নিজস্ব মতবাদ প্রচার করতে থাকেন। ফলে মুয়াবিয়া কৌশলে | তাকে সিরিয়া হতে মদিনায় প্রেরণ করেন। খলিফা ওসমান (রা.) তাকে মদিনায় বসবাসের জন্য উপদেশ দেন। কিন্তু প্রথমে রাজি না হলেও পরে মদিনায় বসবাস করতে থাকে। ফলে মদিনায় তার প্রচারিত মতবাদের কারণে অশান্তি বিরাজ করলে খলিফা তাকে রাবাধায় বসবাস করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। মূলত খলিফা তাকে জোরপূর্বক নির্বাসন করেননি।
৬. কাবাঘরের সম্প্রসারণ : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার অন্যতম কারণ হলো কাবাঘর সম্প্রসারণ। পূর্ববর্তী খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর সময় কাবাঘর সম্প্রসারণ শুরু হয় এবং তার সময়ে যে সকল জমির মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বী করে তারা ওসমান (রা.)-এর সময় ক্ষতিপূরণ দাবি করে বিদ্রোহ করে ফলে একটি জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে ।
৭. চারণভূমি ব্যক্তিগতকরণ : হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি সরকাান চারণ ভূমি ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেন। কিন্তু তিনি বাস্তবে তা করেননি, বরং তিনি চারণভূমি সরকারি খামাররূপে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি সরকারি চারণভূমি ব্যক্তিগত স্বার্থে কখনোই ব্যবহার করেননি, বরং তিনি চারণভূমির ব্যবহারের সরকারি নীতিমালা রক্ষা করেছিলেন।
৮. হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ঘটনা : উপরিউক্ত অভিযোগ ও কারণের পরিপ্রেক্ষিতে হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহ শুরু হয় এবং বিদ্রোহীরা মদিনা আক্রমণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন বিদ্রোহীদের হাতে সহজ সরল খলিফা ওসমান এর মৃত্যু' ঘটে ।
→ হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ফলাফল : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ফলাফল নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. খিলাফতের পবিত্রতা নষ্ট : হজরত ওসমান (রা.)-এর শাহাদতের ফলে খলিফা ও খিলাফতের প্রতি জনসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভক্তি ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক খোদাবক্স হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যাকে একটি অভাবনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করেন এবং বলেন, “এটি সর্বকালের জন্য খলিফার ব্যক্তিগত পবিত্রতা বিনষ্ট করে।”
২. ঐক্য বিনষ্ট : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য নষ্ট হয়ে যায়। মুসলমানরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার খবর সমগ্র | বিশ্বে পৌঁছলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মাঝে বিষাদের ছায়া নেমে আসে এবং ঐক্য নষ্ট হয়ে যায়।
৩. মদিনার প্রাধান্য বিলুপ্ত : ইসলামি প্রজাতন্ত্রের রাজধানী মদিনার প্রাধান্য ও গৌরব খলিফার হত্যার পর লোপ পেতে থাকে। নব প্রতিষ্ঠিত শহরগুলো যেমন- কুফা, দামেস্ক, ফুসতাত, বসরা ইসলামের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। উল্লেখযোগ্য যে, হজরত আলী (রা.) সাময়িকভাবে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করেন এবং ময়াবিয়া দামেস্ক উমাইয়া সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিণত করেন।
৪. গণতন্ত্রের অবসান : হজরত ওসমান (রা.) হত্যার অন্যতম ফলাফল ছিল গণতন্ত্রের অবসান। হজরত ওমর (রা.) যে গণতন্ত্রের সূচনা করে গিয়েছিলেন তার স্থায়ীত্ব দান করেছিলেন হজরত ওসমান (রা.)। কিন্তু তার শাহাদতের পরপরই গণতন্ত্রের সমাধির পথ সুপ্রশস্ত হয়। মুয়াবিয়া উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করে রাজতন্ত্রের প্রবর্তন করেন।
৫. উমাইয়া বিরোধী শত্রুতা : উমাইয়া খিলাফতে বানু হাশিম গোত্রকে যেভাবে বিকৃতরূপে চিত্রিত করা হয় পরবর্তীকালে আব্বাসীয় খলিফাগণও ইর্ষা ও বিদ্বেষবশত উমাইয়াদের সেভাবে বিকৃতরূপে চিত্রিত করে। এ প্রসঙ্গে মুইর বলেন, “অধিকাংশ প্রচলিত কাহিনীতে ফরমান লেখার ও মোহরযুক্ত করার দায়িত্ব খলিফার সম্পর্কিত ভ্রাতা মারওয়ানের উপর ন্যাস্ত ছিল। এসব কাবলি হজরত ওসমান (রা.)-এর যাবতীয় দুর্ভোগের কারণ বলে তাঁকে দোষারোপ করা হয়েছে।
৬. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব : হজরত ওসমান (রা.)-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে বিভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। নিকলসন ওয়েলতাইসেনের মতে, শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় ইবনে সাবার প্রচারণা থেকে। হজরত আলীর সমর্থন না পেলেও ইহুদি মাতার সন্তান সাবা স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য মৌখিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে।
৭. সাম্রাজ্যের বিচ্ছিন্নতা : মহানবি (সা.) আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর সময় মুসলিম সাম্রাজ্য একসূত্রে গাঁথা ছিল। কিন্তু ওসমান হত্যার পর আরব সাম্রাজ্য বিশাল শতধা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । সাম্রাজ্য বিভাজনের প্রভাব পরবর্তীতে ব্যাপক আকার ধারণ করে ।
৮. গৃহযুদ্ধের সূচনা : ওসমান (রা.) কে হত্যার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, “হজরত ওসমান (রা.) হত্যা ছিল গৃহযুদ্ধের বিপদসংকেত স্বরূপ।” মুসলিম ঐক্যবিনষ্ট হয়ে রাসূলে করীমের মহান আদর্শগুলো ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। মুসলমান কর্তৃক মুসলমানের রক্তপাত হজরত ওসমানের মতো নিরীহ, সরল প্রকৃতির অশীতিপর বৃদ্ধের হত্যা থেকে শুরু করে ইসলামের ইতিহাসের প্রতি সংঘাতপূর্ণ অধ্যায়ে এটি ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েল হাউসেন বলেন, “এর ফলে গৃহযুদ্ধের যে কপাট খুলে যায় তা আর কখনও বন্ধ হয়নি।
৯. কেন্দ্রীয় শাসন উপেক্ষা : মুয়াবিয়া (রা) কেন্দ্ৰীয় শাসনকে উপেক্ষা করে ওসমান হত্যার প্রতিশোধ দাবি করলেন। হজরত ওসমান (রা.) কে হত্যার পরে মুয়াবিয়া যখন ক্ষমতায় বসলেন তখন কেন্দ্রীয় শাসনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে রাজতন্ত্রের সূচনা করেন ।
১০. উমাইয়া হাশেমী দ্বন্দ্ব : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ফলে যেসব সমস্যার উদ্ভব হয় সেগুলোর মধ্যে উমাইয়া ও হাশেমী গোত্রের দ্বন্দ্ব অন্যতম একটি সমস্যা। তার শাহাদত বরণের ফলে উমাইয়া ও হাশেমী গোত্র বিভক্ত হয়ে যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ঘটনা ইতিহাসে একটি অন্যতম মর্মান্তিক ঘটনা। তিনি শাসক হিসেবে ছিলেন যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ। তিনি সহজ সরল ও বিনয়ী প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুর পর মুসলিম খিলাফতে ফাটল সৃষ্টি হয়। যা এক সময় ধ্বংস সাধন হয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হযরত উসমান রাঃ এর মৃত্যুর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।