হযরত উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হযরত উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হযরত উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ টি।
হযরত উসমান রাঃ এর শাসনকাল |
হযরত উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ
উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব পেয়ে সুন্দরভাবে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। মোট ১২ বছর খিলাফতে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন। খিলাফতের প্রথম ৬টি বছর তিনি খুব সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যারা এতোদিন খলিফার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল তারাই পরের ৬টি বছর নিরপরাধ খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওবং অচলাবস্থা সৃষ্টি করে ।
→ হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ : হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয় তা ছিল নিম্নরূপ :
১. কুরআন দগ্ধকরণের অভিযোগ : হজরত ওসমান (রা.) বিভিন্ন দেশে কুরআনের বিভিন্ন প্রকার ভুল পাঠের কথা শুনতে পেয়ে মহানবি (সা.)-এর আমলে রক্ষিত কুরআন অনুযায়ী কয়েকখানি কুরআন প্রকাশ করে অন্য দেশে প্রচলিত কুরআন পুড়িয়ে ফেলেন। এতে ধর্মান্ধ মুসলমানগণ উত্তেজিত হয় এবং খলিফার বিরুদ্ধে কুরআন ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয় ।
২. স্বজনপ্রীতির অভিযোগ : বিদ্রোহীরা অভিযোগ উত্থাপন করে যে, সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত যোগ্য ও অভিজাত কর্মচারীদের অপসারণ করে খলিফা হজরত ওসমান (রা.) নিজের অযোগ্য আত্মীয়স্বজনকে ঐ সমস্ত পদে নিযুক্ত করেন। মূলত নিরপেক্ষভাবে বিচার করলে দেখা যাবে যে, খলিফা ওসমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মোটেও সত্য ছিল না।
৩. আবুজার আল গিফারীর নির্বাসন : অভিযোগকারীরা অভিযোগ করেন যে, খলিফা বেআইনিভাবে আবুজার আল গিফারীকে নির্বাসন দিয়েছিলেন। আবুজার আল গিফারী ধনসম্পদ অর্জন করা | ইসলামের নীতিবিরুদ্ধ বলে বলে প্রচার করতে লাগলেন। খলিফা তাকে বোঝাতে না পেরে নির্বাসিত করলেন।
৪. শাসনকর্তাদের অপসারণের অভিযোগ : মারওয়ানের পরামর্শে খলিফা বিভিন্ন প্রদেশের জনপ্রিয় শাসনকর্তাদেরকে অপসারিত করে সে সকল পদে নিজের আত্মীয়স্বজনকে অধিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ অমূলক কথা ছিল।
৫. বায়তুল মালের অর্থ অপচয়ের অভিযোগ : তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করেন এবং নিজ আত্মীয়স্বজনকে বায়তুল মাল হতে প্রচুর অর্থ প্রদান করেন। অথচ খলিফা বায়তুল মাল থেকে এক কপর্দকও গ্রহণ করতেন না। খিলাফত লাভের পূর্ব তিনি ছিলেন সবচেয়ে ধনীব্যক্তি। তার নিজস্ব সম্পত্তি হতেই তিনি আত্মীয়স্বজনকে দান করতেন ।
৬. শাসনকার্যে দুর্বলতার অভিযোগ : বিভিন্ন গুণে বিভূষিত হলেও সর্বোপরি তার শাসনকার্যে দুর্বলতার অভিযোগ আনা হয়। সাম্রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলার মুহূর্তে দৃঢ়হস্তে শাসনকার্য পরিচালনা করার পরিবর্তে তিনি সরলতা ও উদারতা প্রদর্শন করেছিলেন এবং অপরাধীদের অহেতুক ক্ষমা প্রদর্শন করে বিদ্রোহীদেরকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন।
৭. আনসারদের পক্ষাবলম্বন : মহানবি (সা.) থেকে হজরত ওমর (রা.) পর্যন্ত আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে সম্প্রীতি ও সদ্ভাব বজায় ছিল। কিন্তু ওসমানের খিলাফতে মুহাজিরীন নানাদিক হতে অবহেলিত হতে থাকে। ফলে মুহাজিররা খলিফার বিরুদ্ধে আনসারদের পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ আনে ৷
৮. কাবাগৃহ সম্প্রসারণ : হজরত ওমর (রা.) কাবাঘর সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর এ অসমাপ্ত কাজ হজরত ওসমান (রা.) শেষ করেন। এ কাজের জন্য অধিকৃত জমির মালিকগণ জমির ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় । খলিফা তাদের কারারুদ্ধ করেন। এতে জনগণ অসন্তুষ্ট হয়।
৯. চারণভূমির ব্যক্তিগত ব্যবহার : রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ‘বাকি’ নামে একটি চারণভূমি সরকারিকরণ করা হয়। অভিযোগ ওঠে হজরত ওসমান (রা.) এ চারণভূমি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। কিন্তু আসলে এ চারণভূমিকে সরকারি উট ও ঘোড়ার চারণভূমির জন্য ব্যবহার করা হতো ।
১০. আব্দুলাহ বিন মাসউদের ভাতা বন্ধ : ভুল বোঝাবুঝির ফলে খলিফা ওসমান (রা.) আব্দুলাহ বিন মাসউদের ভাতা প্রদান বন্ধ করে দেন। এতে খলিফার বিরুদ্ধে প্রচরণা শুরু হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সে সকল অভিযোগের সামান্য সত্যতা হয়তো ছিল। তবে একটি নবীন ইসলামি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সৌহার্দ্য রক্ষা করতে গিয়ে তাকে বিভিন্ন পদক্ষেপের সামান্য ভুলত্রুটি দিয়ে তাকে আদৌ বিবেচনা করা উচিত নয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ হযরত উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হযরত উসমান রাঃ এর শাসনকাল টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।