হযরত ওমর (রা.) এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হযরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হযরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর টি।
হযরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর |
হযরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর
উত্তর : | ভূমিকা : ইসলামের আবির্ভাব ও সম্প্রসারণ পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে। হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফত লাভ করেই মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজ্য বিজয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেন। একের পর এক দেশ জয় করে বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
সিরিয়া বিজয় : নিম্নে হজরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা করা হলো-
১. আজনাদাইনের যুদ্ধ : বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে প্রথম অংশ গ্রহণ করেন মুসলমানদের পক্ষ থেকে আমর ইবনুল আস। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস ২ লক্ষ ৪০ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী ভ্রাতা থিউডোরাসের নেতৃত্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। অপরপক্ষে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ হাজার। আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বে মুসলমানগণ রোমান সৈন্য বাহিনী মোকাবিলা করে এবং গাজা, জাফা প্রভৃতি অধিকার করে।
২. গাঁজা ও ফিহলের যুদ্ধ (৬৩৫ খ্রি.) : হজরত আবু বকর (রা.)-এর নির্দেশে বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ হীরা হতে দামেস্কের উপকণ্ঠে আগমন করে প্রচণ্ড আক্রমণ পরিচালনা করেন। মারজরাহিতে গাচ্ছান বংশীয় খ্রিস্টান অধিপতিকে পরাজিত করে তিনি বসরা দখল করেন এবং সিরিয়ায় অবস্থিত ফিহল শহর ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি অধিকার করেন।
৩. দামেস্ক বিজয় (হামা, হিমস, বালাবাক) : বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত সিরিয়া প্রদেশের রাজধানী দামেস্ক বিজয়ের ফলে সমগ্র সিরিয়া মুসলমানদের করতোলগত হয়। দামেস্ক পতনের পর মুসলিম সৈন্যবাহিনী সামান্য বাধার পর দখল করে। এরপর হিমস, হামা, ও বালাবাক মুসলমানদের অধিকারে আসে ।
৪. ইয়ারমুকের যুদ্ধ : দামেস্ক, হামা ও হিমস মুসলিম বাহিনী অধিকার করলে সম্রাট হিরাক্লিয়াস ক্রোধান্বিত হয়ে আর্মেনিয়ান, সিরিয়ান, রোমান ও আরব গোত্রীয় খ্রিস্টানদের নিয়ে ২ লক্ষ ৪০ হাজার সৈন্যের একটি বিশাল বাহিনী গঠন করেন। ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট ২৫ হাজার সৈন্যের মুসলিম বাহিনী ইয়ারমুকে বাইজান্টাইন সৈন্যবাহিনীর মোকাবিলা করেন। কয়েক মাসের খণ্ড যুদ্ধের ফলে মুসলিম বীর খালিদের নেতৃত্বে বাইজান্টাইন সেনাপতি থিওডোরাস পরাজিত ও নিহত হয়।
৫. জেরুজালেম অধিকৃত : ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন অভিযানে জেরুজালেমের পতন একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। ইয়ারমুকের যুদ্ধের পর আমর ইবনে আল আস জেরুজালেম অবরোধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করলে রোমান শাসনকর্তা আরতাবুন শহর পরিত্যাগ করে পলায়ন করেন।
৬. জাজিরা বিজয় : ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাটের প্ররোচনায় ৩০ হাজার জাজিরাবাসী বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুসলিম আধিপত্য খর্ব করায় আবু ওবায়দা অভিযান পরিচালনা করে জাজিরা দখল করেন।
সিরিয়া বিজয়ের ফলাফল : বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত সিরিয়া প্রদেশের রাজধানী দামেস্ক বিজয়ের ফলে সমগ্র সিরিয়া মুসলমানদের অধীনে আসলো। সিরিয়ার পতনে নির্যাতিত অধিবাসীরা মুসলমানদের সক্রিয় সাহায্য করে। সিরিয়া বিজয়ের ফলে পরবর্তীকালে ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিরিয়া বিজয়ের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
→ আরবদের মিসর বিজয়ের কারণ : নিম্নে আরবদের মিসর বিজয়ের কারণগুলো আলোচনা করা হলো-
১. আত্মরক্ষার জন্য : মুসলমানদের হাতে পরাজিত হয়ে রোমানরা সিরিয়া, জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইন পরিত্যাগ করে সদলবলে মিশরে অবস্থান করছিল। তাদের মুসলিম অধিকৃত ঐ দেশসমূহের এতো কাছাকাছি অবস্থান অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। এ ছাড়াও ভূমধ্যসাগরীয় খ্রিস্টান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের উপস্থিতি মুসলমানদের জন্য বিপজ্জনক ছিল। এসব কারণে মিশর বিজয় মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
২. অর্থনৈতিক কারণ : সুজলা সুফলা মিশর দেশকে নীল নদের দান বলা হয়। আরবদেশ অনুর্বর। মিশর নীলনদের উপত্যকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে মিশর ছিল খুবই উর্বর ও কৃষি সম্পদে ভরপুর। মিশরকে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে মরুভূমির অধিবাসী মুসলমানদের দখল করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ জন্য আরবরা মিশর জয় করেন।
৩. সামরিক কারণ : মিশরের সুয়েজ ও আলেকজান্দ্রিয়ায় রোমানদের শক্তিশালী নৌঘাঁটি ও সেনানিবাস ছিল। শক্তিশালী মুসলিম সাম্রাজ্য গঠনে মিশর অধিকারে আনা মুসলমানদের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। মুসলমানগণ মনে করেন যে, মিশর | দখল হলে শক্তিশালী নৌঘাঁটি ও সেনানিবাস তাদের নিয়ন্ত্রণে | আসবে এবং শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র গড়ে তুলতে তাদের সাহায্য ও শক্তি যোগাবে এ জন্য মুসলমানরা মিশর অভিযান করে ।
৪. ভৌগোলিক কারণ : ইরাক, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন প্রভৃতি অঞ্চলে কর্তৃত্ব স্থাপনের পর ভৌগলিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ | লোহিত সাগরের উপরে অবস্থিত সমৃদ্ধশালী মিশর দখল করা আরবদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল।
৫. আমর বিন আসের আগ্রহ : আমর বিন আল আস বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্য উপলক্ষে মিশর গিয়েছিলেন। এজন্য মিশরের পথঘাট তার জানা ছিল। খলিফা যখন জেরুজালেম শহরে যান, তখন আমর ইবনে আল আস অনেক পীড়াপীড়ি করে মিশর আক্রমণের জন্য খলিফার নিকট হতে অনুমতি আদায় করেন ।
ঘটনা : ৬৩৯ সালে মুসলিম সেনাপতি আমর বিন আল আস ৪ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ওয়াদি আল আরিশ নামক স্থান দখল করেন এবং পরে আল ফারসায় স্বীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। অতঃপর বিবলস ও আবো রেশ কয়েকটি ছোট ছোট শহর দখল করে আমর ব্যবিলনের কাছাকাছি পৌঁছে। এ সময় ওমর কর্তৃক ১০ হাজার সৈন্য মিশরে চলে আসে। ৬৪০ সালে আমর বাইজান্টাইন বাহিনীকে হেলিও পলিসের যুদ্ধে পরাজিত করেন।
→ মিশর বিজয়ের গুরুত্ব বা ফলাফল : নিম্নে মিশর বিজয়ের গুরুত্ব বা ফলাফল আলোচনা করা হলো-
১. সামরিক ঘাঁটি নৌ বহর : আলেকজান্দ্রিয়া বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী ঘটনা। এটা মুসলমানদের সামরিক ঘাঁটি ও নৌবহর প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। সামরিক ঘাঁটি ও নৌবহর গঠনে আব্দুল্লাহ ও হজরত মুয়াবিয়ার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
২. ফুসতাতের গোড়াপত্তা : ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে আমর বিন আল আস ফুসতাত নগরীর গোড়াপত্তন করেন। বর্তমানে মিশরের রাজধানী কায়রো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (৬৪২-৯৬৯ সাল) ফসতাত নগরী মিশরের রাজধানী ছিল। ফাতেমী খলিফা মুইজ ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আল কাহিরা বর্তমান কায়রোকে মিশরের রাজধানী করেন।
৩. সুয়েজ খাল খনন : দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর প্রত্যক্ষ সমর্থনে বিখ্যাত যোদ্ধা আমর সুয়েজ খাল খনন করে নীল নদের সাথে লোহিত সাগরের সংযুক্ত করে দেন। সুয়েজ খাল খননের ফলে মিশর হতে আরবের সামুদ্রিক বন্দর ইয়ামেন পর্যন্ত যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়।
৪. কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি : মিশর জয় মুসলমানদের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিশর জয় করার পর সেখানকার লোকদের উন্নতিকল্পে আমর অনেকগুলো জনকল্যাণমূলক সংস্কার- প্রবর্তন করেন। ফলে কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় । মিশরীয়গণ মুসলিম শাসনে সুখী ও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠল ।
৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা : স্থানীয় জনসাধারণের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া কোন অঞ্চলে কোন নীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই আমর জনসাধারণের কল্যাণার্থে উদারনীতি গ্রহণ করেছেন। মিশরীয় নাসারাগণ ও মুসলমানদের সদয় ব্যবহার এবং উদার নীতিতে মুগ্ধ হলো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সিরিয়া ও মিশর বিজয় ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। হজরত ওমর (রা.) ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা। তাই তিনি মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের লক্ষে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান প্রেরণ করেন। যেসব এলাকা মুসলমানদের জন্য হুমকিস্বরূপ সেসমস্ত এলাকায় কঠোর বল প্রয়োগ করে সেই এলাকা করতলগত করেন। সিরিয়া ও মিশর বিজয়ের ফলে আরবগণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সবদিক থেকেই সুবিধা অর্জন করেছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ হযরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হযরত ওমর (রা.)-এর সিরিয়া ও মিশর বিজয় সম্পর্কে আলোচনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।