হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর টি।
হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর |
হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফত ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন এবং অসাধারণ গুণাবলির আধার খলিফা ওমর ছিলেন একাধারে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজেতা, শ্রেষ্ঠ প্রশাসক, বৈপ্লবিক সংস্কারক, বিচক্ষণ রাজনীতিজ্ঞ, অপ্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠক, প্রজাবৎসল ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। হজরত ওমর (রা.) বিজিত অঞ্চলে বিরাজমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থা দূরীভূত করে প্রশাসনকে সুষ্ঠু, সুসংহত ও জনগণের উপযোগী করে তোলেন।
হজরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কার : নিম্নে হজরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা করা হলো-
১. মজলিশ-উস-শূরা : শাসনব্যবস্থায় হজরত ওমর (রা.)-এর কৃতিত্ব ও অবদানের কথা ঐতিহাসিকরা অকপটে স্বীকার করেছেন। তার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মজলিশ-উস-শূরা বা উপদেষ্টা পরিষদ। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশে এবং মজলিশ- উস-শূরার পরামর্শে রাষ্ট্রীয় কাজ সমাধান করতেন ।
২. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা : হজরত ওমরের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি একনায়কতন্ত্রের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে খলিফা নিযুক্ত, পরামর্শ সভার মতানুসারে প্রশাসনিক কাঠামো ও কার্যক্রম গ্রহণ, সাম্য, একতা, ভ্রাতৃত্বের আদর্শে জনকল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন, খলিফার কার্যে জনগণের সমালোচনা করার অধিকার গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য ।
৩. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : মুসলিম রাষ্ট্রের পরিধি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে হজরত ওমর প্রশাসনিক কাঠামোকে সুষ্ঠু কার্যকর জন্য সমগ্র আরব ও বিজিত দেশকে সামরিক ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রদেশগুলোকে জেলায় এবং জেলাগুলোকে মহকুমায় বিভক্ত করেন।
৪. আরব জাতীয়তাবাদ : হজরত ওমরের শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল আরব জাতীয়তাবাদ অক্ষুণ্ণ রাখা। আরব জাতির বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তিনি আরব উপদ্বীপকে সম্পূর্ণরূপে আরব মুসলিমদের বাসভূমিতে পরিণত করার জন্য শত্রুভাবাপন্ন ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের আরব দেশের বাইরে বসবাসের নির্দেশ দেন।
৫. সামরিক প্রশাসন : হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতে সামরিক বাহিনীকে সুসংহত করার জন্য একটি প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা হয়। বিশাল ইসলামি রাষ্ট্রে সর্বমোট নয়টি সামরিক বিভাগ বা জুনদ ছিল। এই ৯টি সামরিক ঘাঁটিতে সর্বদা ৪ হাজার অশ্বারোহী ও ৩৬ হাজার পদাতিক সৈন্য প্রস্তুত থাকতো। মুসলিম সৈন্যরা লৌহ নির্মিত তরবারি, বর্শা, বল্লম, তীর-ধনুক, শিরস্ত্রান ব্যবহার করতো।
৬. রাজস্ব ব্যবস্থা : ইসলামি রাষ্ট্রের বিশালতায় এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হজরত ওমর (রা.) রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। খলিফা হজরত ওমর (রা.) সর্বপ্রথম ইরাকে ভূমি জরিপ করে সুষ্ঠু বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। জমির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে করের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়। তার আমলে রাজস্ব আয়ের উৎস ছিল ৭টি যথা- ১. খারাজ, ২. উশর, ৩. যাকাত, ৪. জিজিয়া, ৫. গণিমাত, ৬. রাষ্ট্রীয় ভূমির আয় ও ৭. উশর ইত্যাদি ।
৭. সামরিক বিভাগ : হজরত ওমর (রা.)-এর সময় সামরিক বিভাগ বেশ শক্তিশালী ছিল। তাঁর শাসনামলে প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানদের সৈন্য বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ছিল। তাঁর সেনাবাহিনী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা— অশ্বারোহী, পদাতিক, তীরন্দাজ প্রভৃতি ।
৮. ডাক বিভাগ : খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর সময় প্রথম ডাক বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি প্রথম ঘোড়ার ডাকের ব্যবস্থা করেন। এ প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে দ্রুত খবর পাঠানোর জন্য তিনি এই ডাক বিভাগ চালু করেন।
৯. পুলিশ বিভাগ : খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথমদিকে কোনো স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ ছিল না। জনসাধারণের জীবন রক্ষা এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধ করে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য হজরত ওমর (রা.) সর্বপ্রথম একটি সুসংগঠিত পুলিশ বাহিনী গঠন করেন। সাহিবুল আহদাত এ বিভাগের প্রধান ছিলেন।
১০. বিচার বিভাগ : বিচার বিভাগের গঠন এবং উন্নতি বহুলাংশে হজরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক মেধার জন্য সম্ভবপর হয়েছিল। প্রশাসনিক কাঠামোর দুটি পৃথক বিভাগ ছিল । যথা- (ক) নির্বাহী শাসনব্যবস্থা, (খ) বিচার বিভাগ। খলিফা বিচার বিভাগকে নির্বাহী শাসনব্যবস্থা থেকে পৃথক করে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন।
১১. গুপ্তচর প্রথা প্রবর্তন : শাসনব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য হজরত ওমর (রা.) গুপ্তচর প্রথা প্রবর্তন করেন। প্রাদেশিক শাসন সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানলাভ করার জন্য গুপ্তচর নিযুক্ত করা হয় এবং তাদের মাধ্যমে খলিফা সরকারি কর্মচারীদের উপর কঠোর দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হন ।১১. মুদ্রা সংস্কার : হজরত ওমর (রা.) মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন। তাঁর রাজত্বকালে ইসলামি সাম্রাজ্যে অনেক মুদ্রার অনুপ্রবেশ ঘটে। এর মধ্যে কিছু মুদ্রা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। দিরহামের ক্ষেত্রে এই ত্রুটি লক্ষণীয়। কারণ তখন ২০ কারাত, ১২ কারাত এবং ১০ কারাত এই তিনটি বিভিন্ন ওজনের মুদ্রা অসুবিধার সৃষ্টি করতো। তিনি তখন গড় ওজন নিয়ে ১৪ কারাত বা ৭/১০ মিশকল ওজন বিশিষ্ট দিরহাম মুদ্রিত করেন।
১২. ভূমি সংস্কার : হজরত ওমর (রা.) ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন। এজন্য তিনি প্রাচীন যুগের শোষণমূলক ভূমিস্বত্ব ও জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করেন। এ সংস্কারের ফলে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। এছাড়া তিনি পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য বিজয়ের পর অনাবদি জমি দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দেন।
১৩. বায়তুল মাল : নবি করীমের সময় প্রাপ্ত অর্থ সঙ্গে সঙ্গে বণ্টন করা হতো বলে সরকারি কোষাগার বা বায়তুল মালের কোন প্রয়োজন ছিল না। ইসলামের সম্প্রসারণে রাজস্ব বৃদ্ধি পেলে ওয়ালিদ বিন হিশামের পরামর্শে হজরত ওমর (রা.) সর্বপ্রথম একটি বায়তুল মাল' বা কোষাগার স্থাপন করেন ৷
১৪. জনকল্যাণমূলক সংস্কার : হযরত ওমর একজন জনকল্যাণকামী শাসক ছিলেন। তিনি তার দশ বছরের শাসনকালে বহু মসজিদ, সেতু, খাল, সড়ক, বিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। যার ফলে তার আমলে প্রজারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত ওমরের খিলাফত ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে। তার আমলেই গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমূলক শাসনকাঠামো শাসনব্যবস্থা ইসলামের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অবদানই নয় বরং যুগ যুগ ধরে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, হজরত ওমর নিঃসন্দেহে আরব প্রশাসন ব্যবস্থার সুযোগ্য প্রতিষ্ঠাতা।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক সংস্কার আলোচনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।