গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা টি।
গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা |
গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা
ভূমিকা: সমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনে আধুনিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থার উপায় ও পদ্ধতিসমূহের মধ্যে জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রই শেষ পর্যন্ত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পথ হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে । ‘গণতন্ত্র’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘জনগণের ক্ষমতা'। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তাঁর গেটিসবার্গ ভাষণে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র জনগণের, জনগণের দ্বারা গঠিত এবং জনগণের জন্য'। প্রাচীন গ্রিস এবং রোমের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রগুলোতে সরাসরি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হতো। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলি ষোড়শ শতাব্দীতে যে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের (National State) গোড়াপত্তন করেন, তা মূলত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত সরকারব্যবস্থা। উদ্ভবের পর থেকেই নানারকম পর্যালোচনা ও নিরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকায়নের চেষ্টা চলে আসছে। উদ্দেশ্যগতভাবে জনগণের অংশগ্রহণ, অধিকার ও কল্যাণের বিষয়গুলো যুক্ত থাকায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট: বাঙালি সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুপ্রাচীন । জীবনধারণ ও জীবনযাপনের সহজলভ্যতার কারণে কালে কালে নানা জাতির সংমিশ্রণে ঐতিহ্যবাহী এই জনপদ গড়ে উঠেছে। এই জাতি চিরকাল সংগ্রামী ও স্বাধীনচেতা হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইতিহাসের প্রতিপদেই পরাধীনতা, শাসন-নিপীড়ন তাদের মেনে নিতে হয়েছে। প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে পারলেও দেশভাগের মধ্য দিয়ে যে সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন জাতি দেখেছিল তা অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে অধিকারের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, মর্যাদার জন্য, সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আমাদেরকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে নতুন করে সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়েছিল। বস্তুত পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আমাদের আদ্যোপান্ত সংগ্রামের যে ইতিহাস তথা অধিকার আদায়ের সমন্বিত সংগ্রাম তাতে নিহিত মূল আকাঙ্ক্ষাটি ছিল গণতন্ত্রে উত্তরণ। গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করার যে দুরভিসন্ধি পাকিস্তানি শাসকেরা করেছিল, তার বিরুদ্ধেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার জনগণ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে ত্রিশ লক্ষ শহিদসহ প্রায় আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তা মূলত গণতান্ত্রিক উত্তরণের নতুন একটি ধাপ।
সংবিধান ও গণতন্ত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূলনীতিই ছিল গণতন্ত্র। সদ্য স্বাধীন একটি দেশে এমন পূর্ণাঙ্গ ও প্রশংসনীয় সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি অবশ্যই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি মাইলফলক ও সর্বাত্মক নির্দেশনা। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় দলিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ ও জাতীয় ‘সংবিধান’; এই উভয় দলিলেই গণতন্ত্রকে মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি বলা হয়েছে। আমাদের সংবিধানে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ‘সংসদ’, ‘বিচার বিভাগ' ও ‘প্রশাসন' আইনের অধীনে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’– এই নীতির ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সাধারণ আসন থেকে ৩০০ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য ৫০ জন— এই ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংসদ নিজস্ব আইন ও বিধানের আওতায় আইন প্রণয়নসহ রাষ্ট্রীয় সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাংবিধানিকভাবে তার নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালতের বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে যেন কাজ করতে পারে তার কথাও সংবিধানে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন কাজ করবে প্রচলিত আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের আওতায় ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র: সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সংহত করা এবং জনজীবন স্থিতিশীল রাখা সত্যিই একটা কঠিন ব্যাপার ছিল। তথাপি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও বিপ্লবী-প্রতিবিপ্লবী ঘটনাবলি এ দেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। তারপর পর্যায়ক্রমে জাতীয় চার নেতা হত্যা, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা গণতান্ত্রিক উত্তরণের ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতা। সৃষ্টি করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেন এবং তাঁর মতো করে সংবিধান সংশোধন করে দেশ পরিচালনা শুরু করেন। কিন্তু এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে দেশ আবারও সামরিক শাসনের আওতায় চলে যায়। সে সময় জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ শাসনকালকে গণতন্ত্রের পরিপন্থি স্বৈরতন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় তাঁর ইচ্ছায় জাতীয় সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো মূলনীতিগুলো বাদ দেওয়া হয়। অবশেষে ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে স্বৈরতন্ত্রের অবসান হলে রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র নিশ্চিতকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । এরই অংশ হিসেবে ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখায় বলা হয়েছিল, 'যেহেতু সামরিক শাসকরা নির্বাচনি ব্যবস্থায় অনেক অগণতান্ত্রিক নিয়মকানুনকে তা চিরস্থায়ী রূপ দিয়েছে এবং সরকার সবসময়ই নির্বাচনি ফলাফল নিজের পক্ষে নিয়ে যেতে সচেষ্ট ছিল, তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অধিকতর উপযোগী।' ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এই নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে । কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, বিএনপি তিন জোটের রূপরেখায় প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুত হয়ে পরবর্তী নির্বাচন নিজেদের অধীনেই করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মিরপুর ও মাগুরার ত্রুটিপূর্ণ উপনির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী জোট নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে গণ-আন্দোলন শুরু করে । ফলে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। তারপর একই রীতিতে তিনটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে, প্রথমটি হয়েছে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে, দ্বিতীয়টি হয়েছে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে আর তৃতীয়টি হয়েছে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একরকম শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে যেখানে ক্ষমতাসীন দল প্রতিবার ব্যতিক্রমহীনভাবে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু এ রকম স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ এক দলের হাত থেকে আরেক দলের হাতে অর্পিত হলেও দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যবস্থা প্রণয়নে ঐকমত্য হতে পারেনি। সবশেষে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই তাদের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। ফলে দল দুটির মধ্যে তিক্ততা ও অবিশ্বাস সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে এবং আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলোর একাধিপত্য তৈরি হয়। ২০১৮ সালে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে।
গণতন্ত্রের পদযাত্রা ও আমাদের হতাশা: গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া যেকোনো দেশের জন্যই একটি দীর্ঘ পরিক্রমা। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম 'পর্যাপ্ত হলেও অর্জনকে হতাশাব্যঞ্জকই বলতে হবে। ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের পতন হলেও এদেশে গণতন্ত্র আজও পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া বর্তমানে এ দেশের রাজনীতিতে অস্ত্র, কালো টাকা, পেশিশক্তির ব্যবহারসহ জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ সমস্যার অনুপ্রবেশ হওয়ায় গণতন্ত্রের অগ্রগতি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ রাজনীতির কারণে এ দেশের রাজনীতিবিদরা প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়োজন বোধ করেনি। তার বদলে তারা কালো টাকা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি করার দুঃস্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে সবসময়। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-এর সম্মাননীয় ফেলো প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহানের মতে, ‘মাফিয়ারা রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় চলে এসেছে এবং সন্ত্রাস, ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রুগ্ণ রাজনীতির আরেকটি অন্যতম উপসর্গরূপে সশস্ত্র ছাত্রসংগঠনের ক্যাডাররা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমনকি রাজনীতিবিদরা নিজেদের রক্ষা ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপপ্রয়োগও করেছেন।' এছাড়া সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি, দলীয়করণ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ইত্যাদি সমস্যাগুলো এ দেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উন্নয়ন ও গণতন্ত্র: গণতন্ত্র চর্চা, জবাবদিহিমূলক ও অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অসন্তোষ থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে একটা বিষয় লক্ষ করা যায় যে, প্রায় প্রত্যেক শাসক দলই নিজেদের মতো করে দাবি করে যে তারা দেশ ও জনগণের জন্য প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। বস্তুত সীমিত সম্পদ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশটিতে দারিদ্র্য ও জনজীবনের ভোগান্তি হ্রাসে যেকোনো উপায়ে কোনো কিছু করাকেও স্বাগত জানানো হয়। গণতন্ত্রের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া না গেলেও উন্নয়নের ধারায় এর সাফল্য চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি তাই যথেষ্ট জনপ্রিয়। সম্প্রতি লোকাল গভর্ন্যান্স বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী মণি শঙ্কর আয়ারের সঙ্গে ‘স্থানীয় সুশাসন’; এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ' সম্পর্কিত দুটি আলাদা আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে উপস্থিত একাডেমিক সুধীজন, নাগরিক প্রতিনিধিবৃন্দ ও সাংবাদিকরা ঐকমত্য পোষণ করেন যে, ‘উন্নয়ন' ও ‘গণতন্ত্র' পরস্পর সমার্থক । মণি শঙ্কর বলেন, একটি দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও যদি সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা না হয়, সামাজিক বৈষম্য না কমে, তাহলে সেই সমাজকে উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজ বলা চলে না। এ মানদণ্ডে বাংলাদেশে 'উন্নয়ন' ও 'গণতন্ত্র' সমকেন্দ্রিক। ভিশন ২০২১-এর আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৭ শতাংশ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রেও ঘটে চলেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নজির। উন্নত চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৭২ বছর পেরিয়ে গেছে। এমনকি নিজস্ব অর্থায়নে এ দেশে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প। এছাড়া সাম্প্রতিককালে সমুদ্র বিজয়, এমডিজি অর্জন এবং এসডিজি অর্জনে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ।
উপসংহার: গণতন্ত্র মূলত দীর্ঘ চর্চা এবং সংগ্রামের ফসল । পৃথিবীর কোনো দেশই রাতারাতি সফল গণতন্ত্রে উন্নীত হতে পারেনি। তাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত অর্জন সীমিত হলেও আমরা আশাবাদী হতেই পারি। এ লক্ষ্যে জবাবদিহিতামূলক সরকার, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক অধিকার তথা মানবাধিকার নিশ্চিত করে গুণগতভাবে আরও অর্থবহ গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আগামী বিশ্বে তার গৌরবগাথা তুলে ধরতে সক্ষম হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই গণতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।