১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর।
১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর |
১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর
- অথবা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের গতিপ্রকৃতি, নেতৃত্ব, আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি বহুদিক থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংগ্রামের মধ্যে তারতম্য থাকলেও স্বৈরাচারী আইয়ুবের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানে গণ-অভ্যুত্থানের একই সাধারণ পটভূমি গড়ে উঠেছিল। প্রকৃতপক্ষে কেবল আইয়ুবী শাসনের দশ বছরের স্বৈরশাসক শ্রেণির নয়; বরং পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই দীর্ঘ ২২ বছরব্যাপী মূলত একই শাসক শ্রেণির শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে জনজীবনে যে সংকট সৃষ্টি হয় তাই গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমি। বিশেষ করে ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের মারাত্মক পরাজয় এবং এরপর থেকেই বারবার জনগণ বিচ্ছিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে। সারা পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এ ব্যবস্থায়ও ১৯৬৫ এর নির্বাচনে আইয়ুব সরকার টিকে যায়। তারপর ১৯৬৯-১৯৭০ সালের নির্বাচনের ব্যাপারে আইয়ুব সরকারের ঘোষণার পুনরায় রাজনৈতিক জোয়ার বইতে থাকে ।
→ গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় : ছয় দফার আন্দোলন যখন তুঙ্গে পৌছে তখন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ কতিপয় ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় এবং পরিষদ ছয় দফার সম্পূরক হিসেবে ছাত্রসমাজের ১১ দফা দাবি প্রণয়ন করে। নিম্নে ছাত্র সমাজের আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানের রূপ ধারণের একটি দিবস ওয়ারি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
১৭ জানুয়ারি ১৯৬৯ : এ দিন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জনসভা ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
১৮ জানুয়ারি ১৯৬৯ : ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়।
২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ : রমনা এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নগ্নপদে মিছিল করে। একই দিনে রাজশাহীসহ অন্যান্য শহরেও ধর্মঘট পালিত হয়।
২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ : দিনে নারায়ণগঞ্জে পূর্ণদিবস হরতাল পালিত হয় এবং ময়মনসিংহে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়।
২৫ জানুয়ারি ১৯৬৯ সাল : ঢাকায় ও খুলনাতে সান্ধ্য আইন জারি করা হয় এবং পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়। (এর মধ্যে, জহির একজন)
২৬ জানুয়ারি ১৯৬৯ : এই দিন ন্যাপ (ওয়ালী) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদসহ অনেকেই গ্রেফতার হন।
১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : এদিন আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানান এবং ইত্তেফাকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রদেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : কুর্মিটোলা সেনানিবাসে সার্জেন্ট জহরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : কুর্মিটোলা সেনানিবাসে সার্জেন্ট জহরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : পল্টন ময়দানে মাওলানা ভাসানী এক জনসভায় ভাষণ দেন এবং ১ দফার বাস্তবায়ন ও শেখ মুজিবের মুক্তির কঠিন শপথ ব্যক্ত করেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সামসুজ্জোহাকে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে ।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : একদিন ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় এবং সেদিনের স্লোগান ছিল একটাই “জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনব”। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয় ।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : এদিন আইয়ুব খান ঘোষণা করেন যে, তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না ।
২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ : শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স বাতিল করা হয় । ৪ মার্চ ১৯৬৯ : এই দিন সারা পাকিস্তানে হরতাল আহ্বান করা হয়।
১০ মার্চ ১৯৬৯ : 'পিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। শেখ মুজিব ৬ দফা ও ১১ দফার পক্ষে কথা বলেন। এই বৈঠকে প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও পার্লামেন্টারি ফেডারেল গভর্নমেন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
২৫ মার্চ ১৯৬৯ : এই দিন রাত ৮-১৫ মিনিটে আইয়ুব খান দেশের শাসনভার সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দেন। এই ঘোষণার ফলশ্রুতিতে আন্দোলনের তীব্রতা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
গণ-অভ্যুত্থানের বহুবিধ কারণের মধ্যে নিম্নোক্ত কারণগুলো উল্লেখযোগ্য-
১. ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ঘোষিত সামরিক শাসনের প্রতিবাদ হিসেবে পরবর্তীকালে সূচিত হয় এই গণ-অভ্যুত্থান ।
২. আইয়ুব শাসনের ফলে সৃষ্ট পূর্ব-পশ্চিম বৈষম্যের প্রতি এক আন্দোলন সৃষ্টির জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়।
৩. মৌলিক গণতান্ত্রিক ও অন্যান্য স্বার্থান্ধ ব্যক্তিবর্গের অশুভ ক্ষমতাকে প্রতিহত করার মানসে সৃষ্টি হয় গণ-অভ্যুত্থান ।
৪. পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের গণবিরোধী ভূমিকার প্রতিবাদ হিসাবে সৃষ্টি হয় এই গণ-অভ্যুত্থান ।
৫. পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়ার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের নীতি প্রতিবাদ স্বরূপ গড়ে উঠে ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ।
উপসংহার : আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালে সারা পাকিস্তানে যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে, তা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছিল এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। প্রকৃতপক্ষেই অভ্যুত্থান ছিল সারা পাকিস্তানের জনগণের এমন একটি গণ-অভ্যুত্থান যা ঘটা পর্যন্ত কারো পক্ষেই তা বিশ্বাস করা সম্ভব ছিল না। স্বৈরাচারী একনায়কত্ববাদী শাসন তথা আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানের জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনরূপে মূলত বিকাশ লাভ করে এই গণ-অভ্যুত্থান ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।