১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল আলোচনা কর |
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৬৯ এর গণ-আন্দোলনের সাথে ১৯৭১ " সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। মূলত ১৯৬৬ সালের ৬ দফার মাধ্যমে যে স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৬৯ সালে তা একধাপ এগিয়ে নেওয়া হয় এবং ১৯৬৯ সালের এই গণ-আন্দোলনের শেষ পরিণতি ঘটে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে ।
→ ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল ব্যাপক। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, আইয়ুব সরকারের পতন দ্বিতীয়বার সামারক শাসনব্যবস্থা জারি এবং জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা দখল ইত্যাদি ছাড়াও এ গণ-অভ্যুত্থানের কতিপয় সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল। যা নিচে আলোচনা করা হলো:
১. আগরতলা মামলা প্রত্যাহার : ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব-মোনায়েম চক্র 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনে ভীত হয়ে আইয়ুব ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
২. গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রশমনের জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এক গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করে। উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । যা আইয়ুব খানের শাসনব্যবস্থার মূলে আঘাত আনে।'
৩. আইয়ুব খানের পতন : গোলটেবিল বৈঠকে গৃহীত তিনটি বিষয়ে আইয়ুব খান ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ একমত হয়। কিন্তু ছয় দফার ভিত্তিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় আওয়ামী লীগ গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করে এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এ গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান তদানীন্তন প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর -করে রাজনীতির অঙ্গন থেকে চিরবিদায় নেন।
৪. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থার অবনতি ঘটে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ ।
৫. জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : এ আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয়। আর জাতীয়তাবোধের ওপর ভিত্তি করেই তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেয় এবং ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য।
৬. স্বৈরাচার বিরোধী মানসিকতা সৃষ্টি : ১৯৬৯ সালের গণভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে স্বৈরাচার বিরোধী মানসিকতার সৃষ্টি হয়। ফলে গণতন্ত্রের জন্য আরো বেশি ত্যাগ স্বীকারের ব্যাপারে জনগণ মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়।
৭. এলিটদের মনোবল নষ্ট : ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন কেবল আইয়ুব খানের শাসন বিরোধী আন্দোলনই ছিল না, বরং এ আন্দোলন ক্ষমতাকেন্দ্রিক এলিটদের বিরুদ্ধেও ছিল। তাই এ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতাকেন্দ্রিক এলিটদের মনোবল নষ্ট হয়।
৮. স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি : এ আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট জাতীয়তাবোধের কারণে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি অংশগ্রহণ করে এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে সংগঠিত সর্ববৃহৎ আন্দোলন। আন্দোলনের ফলাফল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে সংগ্রামী চেতনাবোধ জাগ্রত হয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।