একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট জেনে নিবো। তোমরা যদি একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট টি।
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা |
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা
ভূমিকা: বর্ষা বাংলার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি বাঙালির কাছেই বর্ষা ভিন্নরকম ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের কাব্যে-কবিতায় কেবলই বর্ষা-বন্দনা। আমার বেলায়ও তার ব্যতিক্রম নেই। বর্ষণমুখর সন্ধ্যা আমাকে সবসময়ই কেমন বিষণ্ণ করে দেয়। দূরাগত কোনো বেদনা যেন আমার ওপর ভর করে । আজকের বর্ষণমুখর সন্ধ্যাটিও তেমনই ।
আজ নীল আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। বিকেলের এক ঝলক রোদের পরে আবারও জমাট বাঁধতে শুরু করেছে মেঘ। মেঘের গুরুগর্জনে ও আকাশের বিদ্যুৎ চমকানোর মধ্য দিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে পড়েছিল অস্তায়মান সূর্যটা; বর্ষণমুখর সন্ধ্যার এ এক দুর্লভ রূপ। বর্ষণমুখর সন্ধ্যা আগেও দেখেছি কিন্তু আজকের মতো এত দুর্লভ, এত প্রাণবন্ত শ্রাবণসন্ধ্যা আমার জীবনে আগে আসেনি। এ দুর্লভ সন্ধ্যার আমিই যেন একক অধিপতি । প্রকৃতির বিষণ্ণতা: দুর্যোগপূর্ণ শ্রাবণসন্ধ্যা; গ্রামান্তের পথ নির্জন; প্রকৃতির কোলজুড়ে বিষণ্ণতা। কোথাও যেন প্রিয়জন হারানোর আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে । বেদনায় অন্তলীন বাদল বাতাসের দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে তার চোখের জল ঝরে পড়ছে। প্রকৃতির এমন বেদনাবিধুর ক্ষণে কিছুতেই ঘর থেকে বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না। পৃথিবীর এ বিষণ্ণবেলায় বৈষ্ণব পদাবলি মনে পড়ে, ‘এ সখী হামারি দুখের নাহি ওর। এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর।' প্রকৃতির এ বিষণ্ণতাই হয়তো আমার ভাবনাগুলোকে এলোমেলো করে দিলো। অন্ধকার নেমে আসছে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটার আমেজ উপভোগের লোভ সামলানো গেল না । বসে পড়লাম জানালার পাশে।
বৃষ্টির পতনধ্বনি: অন্ধকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়ে চলেছে বৃষ্টি । ভাষাহীন অন্ধকারে বৃষ্টিপাতের অবিরাম শব্দ যেন বোবা প্রকৃতির বহুদিনের সংগীতমুখর অব্যক্ত ভাষা। যেন হঠাৎ নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গের পর অবিরাম নূপুরের ছন্দ তুলে বয়ে চলা। জানালার পাশে বসে বৃষ্টি পতনের এ ধ্বনি কার না হৃদয়ে সংগীতের মূর্ছনা জাগায়! কার না হৃদয়ে কাব্যের অনুভূতি দোলা দেয়! বিশ্বকবির কবিতায় এ মুহূর্তটির অনুভব আমার হৃদয়েও বেজে উঠল—
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
বিষণ্ণ প্রকৃতির বুকে এ রকম কাব্য-সংগীতের সুরলহরি আমাকে রোমান্টিক করে দেয়। কাকে, কী বলা যায়- তা কবিগুরু জানাননি; কিন্তু এ রকম মন উদাস করা সন্ধ্যাই একমুহূর্তে যেন আমাকে সব জানিয়ে দিলো।
মেঘদূতের ভাষা: শ্রাবণসন্ধ্যার ভাষা যেন মেঘদূতেরই ভাষা । শ্রাবণসন্ধ্যা আমাকে জনশূন্য শৈলশৃঙ্গের শিলাতলে সঙ্গীহীন করে ছেড়ে দিলো। যক্ষের মতো আমিও কল্পনার পাখায় চড়ে পৃথিবীর বনে বনে, গ্রামে গ্রামে, শৃঙ্গে শৃঙ্গে, নদীর কূলে কূলে ফিরতে ফিরতে অপরিচিত সুন্দরের পরিচয় নিতে উৎসুক হয়ে উঠলাম। বৃষ্টিবিষণ্ণ নির্জন পথে দু-একটি যানবাহনের তীব্র আর্ত হাহাকার, পথের পাশে ডোবার ধারে ব্যাঙের ডাক আমার কাছে এ শ্রাবণসন্ধ্যার হৃদয়ের ব্যথিত সংগীত বলে মনে হতে লাগল ।
বর্ষণমুখর অন্ধকারের সৌন্দর্য: এ শ্রাবণসন্ধ্যায় প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা' নিয়ে বর্ষার কবিতাগুলো পড়তে ইচ্ছা হলো । এ সময় গৃহত্যাগী মন আমার মুক্তগতি মেঘপৃষ্ঠে নিয়েছে আসন। আমার বাঁধনহারা এ মন হংসবলাকার মতো মেঘের সঙ্গী হয়ে দিক হতে দিগন্তে ঘুরে বেড়াতে লাগল। আমার শৈশবের পল্লিগ্রামের স্মৃতি ফিরে আসতে শুরু করল। এ সময় দেখতাম কোথাও বা বৃষ্টিস্নাত শ্যামল ধবলী গোহালে প্রত্যাগমনরত, কোথাও বা নিঃসঙ্গ পথিক ওপারে যাবে বলে বর্ষণস্ফীত নদীতীরে মাঝিকে ঘন ঘন ডাকছে।
আমি ঠিক বলতে পারি না, ঠিক ঝড়ো সন্ধ্যায় কবি কালিদাস 'মেঘদূত' কিংবা বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ 'বর্ষা' কবিতা লিখেছেন কি না। এ
কথা সত্য যে বর্ষার এ সন্ধ্যায় কবিতা লেখার জন্য মনে ভাব জাগে । কিন্তু স্যাঁতসেঁতে মন নিয়ে আমি যখন মেঘের কোলে ঘুরে বেড়াই সেই বিশেষ মুহূর্তে কেমন করে কবিতা লেখা যায় বুঝি না। আমার মন এ সময়ে শূন্য হয়ে যায়। অবশ্য এমনও হতে পারে যে, এ কাজল কালো মেঘের রূপ দেখে কুঁচবরণ কন্যার মেঘবরণ কেশ মনে পড়তে পারে। বাদলের ঝর ঝর ধারা কারো অশ্রুধারার মতো মনে হতে পারে এবং বিশেষ মনোভাবের বাহ্যিক প্রকাশ হতে পারে কবিতায়। কিন্তু আমার মনে কবিতা রচনার কোনো অনুপ্রেরণা দেখি না, কারণ আমি দেখছি সন্ধ্যার আকাশ মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে । নীল আকাশ কলো মেঘের অন্ধকারে লীন হয়ে গেছে । তারার মালা গেছে ছিঁড়ে। তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তবে কবিরা বর্ষাপ্রেমী। বর্ষার বর্ষণ ধারার মধ্যেও দৃষ্টি তাদের প্রসারিত। কিন্তু আমি তো কবি নই । আমার সর্বত্র তার ছেঁড়ার ভয়। সৃষ্টির নামে অহেতুক ধ্বংস আমার কাম্য নয়। তাই এ রকম বর্ষণমুখর সন্ধ্যার সবটুকু রূপ, সবটুকু অনির্বচনীয়তা প্রাণভরে উপভোগ করতে পারলেই আমি ধন্য ।
উপসংহার: রাত বাড়ছে। আরও বাড়বে। কিন্তু অকৃত্রিম শুদ্ধতাসমৃদ্ধ প্রকৃতির এই যে নিঃস্বার্থ দান, সে দানটুকু আমি কৃতজ্ঞচিত্তে দু হাত পেতে গ্রহণ করলাম। আজকের বর্ষণমুখর সন্ধ্যাটি আমি কোনোদিন ভুলব না। আমার স্মৃতিতে তা অক্ষয় হয়ে থাকবে চিরদিন। কয়েক দিন পর বার্ষিক পরীক্ষা । আলো জ্বালিয়ে পড়তে বসি। বাইরে অবিশ্রান্ত পত্র-মর্মরে বাদল- বাতাসের হা-হুতাশ। পড়ায় আর মন বসে না ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট টি। যদি তোমাদের আজকের এই একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা ২০ পয়েন্ট টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।