১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর |
১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর
- ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব লেখ।
- অথবা, ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বও অপরিসীম। ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা ১৯৬৩ সালের প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কলেজ এমনকি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এতে ⇒ অংশ নেয়। মোনায়েম খানকে গভর্নর নিয়োগ এবং তার বিশ্বস্ত . ওসমান গণি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলে ঢাকা ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দমননীতি বেড়ে যায়। তাই ছাত্ররা প্রথম থেকেই | মোনায়েম খানকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।
ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব : পূর্ব বাংলার ছাত্র আন্দোলন তথা জাতীয় আন্দোলন ও জাতীয় মুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল সুদূরপ্রসারী। এ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. অভিজ্ঞতা অর্জন : ১৯৬২-৬৪ আন্দোলন ছাত্র সমাজ ও ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্য অভিজ্ঞতার দ্বার খুলে দেয়। শুধুমাত্র শিক্ষাবিষয়ক ব্যাপার নিয়ে এতো ব্যাপক ও বিশাল ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে তা ছিল ছাত্র নেতৃবৃন্দের জন্য একটি বিরাট শিক্ষা। ছাত্র সমাজ, শ্রমজীবী মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীসহ সকল স্তরের মানুষের কাছে এ কথা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, আইয়ুব খানের মতো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা মোটেও অসম্ভব নয়।
২. জাতীয়তাবোধ জাগ্রত : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম দেয়। আর ১৯৬২-র ছাত্র আন্দোলনে এই বীজ অংকুরিত হয়ে জাতীয় চেতনার সঙ্গে প্রগতিশীল ধারার স্ফুরণ ঘটায়। সমগ্র দেশে এই আন্দোলন অসামান্য প্রাণের জোয়ার বয়ে আনে।
৩. আন্দোলনের সফলতা : এ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের মতো লৌহ মানব ছাত্র আন্দোলনের নিকট নতিস্বীকার করে। সরকার শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে মুক্তি প্রদান ও ১৯৬২ সালের শেষ দিকে শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হয় ।
৪. বিনা পরীক্ষায় ডিগ্রি প্রদান : আইয়ুব খান ক্রমবর্ধমান ছাত্র আন্দোলনের বা ছাত্রদের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে বিনা পরীক্ষায় ছাত্রদের ডিগ্রি প্রদান করেন ।
৫. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি : শিক্ষা আন্দোলন হিসেবে বহুল পরিচিত এ আন্দোলনের রাজনৈতিক দিকও উপেক্ষনীয় নয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে যে দমন পীড়ন ও বিভিন্ন নিবর্তনমূলক ও রাজনীতিবিদদের অকেজো করার জন্য বিভিন্ন অযোগ্যকরণ অধ্যাদেশ জারি করেন তাতে পাকিস্তানের বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানে এক চরম রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ১৯৬২-১৯৬৪ সালের আন্দোলন এ পরিকল্পিত রাজনৈতিক শূন্যতাকে ভেঙ্গে গোটা পরিবেশকে চাঙ্গা করে তোলে ।
৬. আগরতলা মামলা প্রত্যাহার : ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের এগারো দফা ঘোষণা এবং এগারো দফাভিত্তিক আন্দোলনে ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করে যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে ভূমিকা রাখে।
৭. বিজয় অর্জন : ১৯৬৬ সালের ছয়-দফা আন্দোলন ৬৯- এর ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান ও আইয়ুব খানের পতন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি রাজনৈতিক এলিটদের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের ক্ষেত্রে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন অধিকতর প্রভাব বিস্তার করে। পঞ্চাশের দশকের স্বাধিকার আন্দোলন এবং ষাটের দশকের শেষ নাগাদ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয়ক হিসেবে ১৯৬২-১৯৬৪ সালের আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
৮. ক্ষোভ প্রকাশ : ১৯৬২-৬৪ সালের আন্দোলনের ব্যাপ্তি আগের বছরের তুলনায় ব্যাপক ছিল। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্র ও পেশাজীবীদের আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনে ছাত্র শক্তি ও এন.এস.এফ এর মতো কড়া পাকিস্তান পন্থি সংগঠন জড়িত থাকলেও আন্দোলনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের হাতে। তারা ১৯৬৩ সালে জিন্নাহর ছবি পুড়িয়ে, কোথাও কোথাও নামিয়ে ফেলে | পাকিস্তান রাষ্ট্রের আদর্শের উপর আঘাত হানে। আইয়ুব হটাও স্লোগান দিয়ে রাজনীতিবিদদেরও সক্রিয় করে তোলে ছাত্র সমাজের একাংশ স্বাধীনতার স্লোগান তোলে সরকার বিরোধী। ক্ষোভ প্রকাশের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিরোধী ক্ষোভ প্রকাশ করে।
৯. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত : ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন শুধু শহর এলাকায় সীমিত থাকলেও ১৯৬৩-১৯৬৪ সালের আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত হওয়ার গ্রামীণ পর্যায়েও সম্প্রসারিত হয়। এর ফলে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরদার হয় এবং এ দাবির সপক্ষে জাতীয়তাবাদী চেতনার ও বিকাশ ঘটে। ১৯৬৪ সালকে বলা হয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বছর। ব্যাপক ছাত্র জনতার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার বছর। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সুনির্দিষ্টভাবে গতি দেওয়ার শুরুর বছর। ছাত্র রাজনীতিকদের এই ঐক্য পরবর্তীকালে আন্দোলনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
১০. স্বাধিকার আন্দোলন : ১৯৬২ সালের আন্দোলনে এবং তার পূর্বে ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে ১৯৬২-১৯৬৪ সাল একটি মাইলফলক। আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, শাসনতন্ত্র ও শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালের ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ১৯৬২-১৯৬৪ সালের আন্দোলন থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার সরাসরি প্রয়োগ ঘটিয়ে ছাত্র সমাজ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতন ঘটায় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের বিজয়কে সুনিশ্চিত করে। তাই শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯৬২-১৯৬৪ সালের ছাত্র আন্দোলন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা এ আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলন সফল করার শিক্ষা লাভ করে। বাংলার রাজনীতিতে ছাত্ররা তাদের অবিস্মরণীয় অবদান রাখতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালের লাহোর প্রস্তাবের পর ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর উপর যে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের কারণে ১৯৬৯ সালে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।