প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর ।
প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর |
বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা আলোচনা কর
অথবা, প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর
অথবা, অখণ্ড বাংলার প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
অথবা, যুক্ত বাংলার প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
উত্তর : ভূমিকা : অভিন্ন বাংলা ছিল বিহার, উড়িষ্যা, আসাম পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গ নিয়ে। ১৯৪৭ সালের পূর্বে এসব রাজ্য মিলে বিভিন্ন বাংলা ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার সাথে বাংলা বিভক্ত হয়। পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পাকিস্তানের অংশ এবং বাংলার অন্যান্য অংশ ভারতের সাথে যুক্ত হয়। তখনকার পূর্ববঙ্গ এবং বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্যই হচ্ছে স্বকীয় সত্তা। তখনকার পূর্ববঙ্গের মানুষ যেসব ধর্ম, বর্ণ, কাজ, বিশ্বাস, সংস্কৃতি পালন করতো বর্তমানে তার কতটুকু বিদ্যমান আছে তাই এক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়। নিম্নে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উহা আলোচনা করা হলো :
১. সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে : তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষের ৮০ ভাগ মুসলমান থাকা সত্ত্বেও তারা ছিল হিন্দু জমিদারদের প্রজা। তাই তাদের সংস্কৃতিতে হিন্দুদের প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। বাংলার অনেক মুসলমানরা তখন হিন্দুদের সংস্কৃতির সাথে অনেকটা জড়িয়ে পড়ে কিন্তু বর্তমানে বাংলার মানুষ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে বসবাস করে। এখন বাংলাদেশের মুসলমানরা শাস্তির সহিত ধর্মীয় কার্যাবলি সম্পাদনের সাথে ইসলাম ধর্মের মৌলিক | বিধিবিধান মেনে চলে। পাশাপাশি হিন্দুরাও তাদের সংস্কৃতি স্বাধীনভাবে পালন করে থাকে।
১. সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে : তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষের ৮০ ভাগ মুসলমান থাকা সত্ত্বেও তারা ছিল হিন্দু জমিদারদের প্রজা। তাই তাদের সংস্কৃতিতে হিন্দুদের প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। বাংলার অনেক মুসলমানরা তখন হিন্দুদের সংস্কৃতির সাথে অনেকটা জড়িয়ে পড়ে কিন্তু বর্তমানে বাংলার মানুষ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে বসবাস করে। এখন বাংলাদেশের মুসলমানরা শান্তির সহিত ধর্মীয় কার্যাবলি সম্পাদনের সাথে ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিধিবিধান মেনে চলে। পাশাপাশি হিন্দুরাও তাদের সংস্কৃতি স্বাধীনভাবে পালন করে থাকে।
২. ধর্মীয় সহনশীলতা : অভিন্ন বাংলায় তখন জাতিভেদ প্রথা ছিল অত্যন্ত প্রকট। এক্ষেত্রে হিন্দুদের মধ্যে যারা উচ্চ বর্ণের ছিল তারা নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের এবং মুসলমানদের তেমন সম্মান দিত না। এদেরকে অস্পৃশ্য হিসেবে গণ্য করতো। বর্তমান বাংলাদেশে এরূপ অবস্থার আর বিদ্যমান নেই। এখনকার সময় হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে সমান অধিকার নিয়ে একত্রে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে।
৩. শিক্ষা-ব্যবস্থা : অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ইংরেজদের দ্বারা শাসিত হতো। বাংলার মুসলমানরা ইংরেজদের শত্রু মনে করে তাদের শিক্ষা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে পূর্ববঙ্গ অশিক্ষিত জাতিতে পরিণত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার প্রায় ৬০ শতাংশ, যা ভারত বা পাকিস্তানের তুলনায় বেশি। তাই দেখা যায়, অভিন্ন বাংলার প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
৪. ভাষার ক্ষেত্রে স্বকীয় সত্তা : অভিন্ন বাংলায় সকলেই যে বাংলায় কথা বলত একথা বলা ঠিক নয়। তখনকার সময়ে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আরবি, ফার্সি ভাষা শিক্ষা দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যদিও কিছু ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল রয়েছে তবে সবকিছুতে বাংলার প্রাধান্যই বেশি ।
৫. শাসনব্যবস্থা : অভিন্ন বাংলার সময় পূর্ববঙ্গে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমেই বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করা হতো। খুব কম সংখ্যক লোকই প্রশাসনিক সুবিধা ভোগ করতে পারতো। বর্তমান বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত। কোনো ধরনের অপরাধ থানা-কোর্টের মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার করা হয়। এছাড়া গরিবদেরকে বিনা খরচে আইন সুবিধা প্রদানেরও ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু অভিন্ন বাংলায় এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা কল্পনাই করতে পারতো না ।
৬. আর্থিক অবস্থা : তৎকালীন সময়ে পূর্ববাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ । জমিদারদের অত্যাচারে কৃষকদের অনেক সময়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হতো। বছরের পর বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। বর্তমানে বাংলাদেশে এরূপ অবস্থা আর বিদ্যমান নেই। এখনকার মানুষেরা বর্তমানে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটাই ভালো অবস্থানে আছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত হবে।
৭. রাজধানীর গুরুত্ব : অভিন্ন বাংলার রাজধানী ছিল কলকাতা। তৎকালীন সময় পূর্ববঙ্গের সকল প্রশাসনিক কাজের জন্য কলকাতায় যেতে হতো। কলকারখানার কাঁচামাল পূর্ববঙ্গ থেকে সংগ্রহ করা হতো। তাই পূর্ববঙ্গের পাট, আখ, পাঁচার হয়ে কলকাতায় চলে যেত। বর্তমান সময়ে পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার উন্নয়নের প্রভাব সকল জনগণের উপর পড়ছে। ফলে সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে।
৮. জনসংখ্যা : অভিন্ন বাংলার সময় পূর্ববঙ্গে হিন্দু-মুসলমানদের সংখ্যার ব্যবধান ছিল কম। বাংলা বিভাগের পর এদেশ থেকে অনেক হিন্দু ভারতে চলে যায়, আবার ভারত থেকে অনেক মুসলমান বাংলাদেশে চলে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৯% মুসলমান, ৯% হিন্দু এবং ২% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বসবাস করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৯. প্রশাসনিক কর্মকর্তা : অভিন্ন বাংলায় পূর্ববঙ্গে ডিসি, ম্যাজিস্ট্রেট, জিওসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রভৃতি উচ্চপদগুলো ছিল ইংরেজদের দখলে। বর্তমানে এসব পদযোগ্যতার ভিত্তিতে বাঙালিরা পেয়ে থাকে। তৎকালীন সময়ে আই, সিম এস এর বেশিরভাগ ক্যাডাররা ছিল অবাঙালি কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সকল বি.সি.এস ক্যাডারা বাঙালি ।
১০. জমির মালিকানা : অভিন্ন বাংলায় জমিদার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ১৯৪৭ সালে বাংলায় ২২৩৭টি জমিদারি ছিল। এসকল জমিদারদের বেশিরভাগ ছিল হিন্দু। প্রজাদের মধ্যে ৮০ ভাগ ছিল গরিব মুসলমান। তাই গরিবদের প্রায়ই শোষণ, বঞ্চনার স্বীকার হতে হতো। বর্তমান বাংলাদেশে রাজস্ব আইন প্রচলিত। অর্থাৎ কৃষকরা জমির মালিকানা লাভ করেছে। বাংলাদেশে সরকার কৃষকদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, অভিন্ন বাংলায় তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তখনকার সময়ে পূর্ববঙ্গ ছিল অবহেলিত, নিষ্পেশিত এক অশিক্ষিত জাতি। বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষিত, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিত। যদিও সম্রাট শায়েস্তাখানের আমলে পূর্ববঙ্গের সমৃদ্ধির কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম প্রাচীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের স্বকীয় সত্তা এক ও অভিন্ন-ব্যাখ্যা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।