বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ কি | বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ব্যাখ্যা কর class 8 ।
বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ কি | বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ব্যাখ্যা কর |
বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ কি | বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ব্যাখ্যা কর
উত্তর : ভূমিকা : বঙ্গভঙ্গ অবিভক্ত বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯০৫ সালের পূর্বে ‘বাংলা প্রেসিডেন্সি' ছিল ভারতের সর্ববৃহৎ প্রদেশ। ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করা হয় এবং ১৬ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং আসাম নিয়ে গঠিত হয় 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ'। এ নতুন প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ' প্রদেশ। এর রাজধানী হয় কলকাতা ।
→ কেন বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়েছিল : ব্রিটিশ সরকার অনেক রাজনৈতিক স্বার্থ ও দীর্ঘস্থায়ী দরিদ্র ও নির্যাতিত কৃষক শ্রেণির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বঙ্গভঙ্গ করলেও পরে উগ্রপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাদের স্বার্থে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। তবে এর পশ্চাতে বলিষ্ঠ কারণ ছিল । যথা—
১. কংগ্রেস ও হিন্দুদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হওয়ায় বাংলার সাধারণ লোকের কোনো মাথাব্যথা, ছিল না। কারণ সাধারণ কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থ বঙ্গ ব্যবচ্ছেদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এক শ্রেণির উচ্চ মধ্যবিত্ত ও কিছু নিম্ন মধ্যবিত্ত হিন্দুই এর প্রতিবাদে সামিল হয় । কারণ দেখা যায়, বঙ্গভঙ্গের ফলে বিক্রমপুরের বাবুরা ভয় পান যে, নবগঠিত বাংলা প্রদেশে তাদের চাকরির সুযোগ থাকবে না। জমিদাররা দুই বাংলায় জমিদারি করার মতো সময় পাবে না বলে জমিদাররা এটাকে মেনে নিতে পারেনি। ভাগ্যকুলের রায় পরিবার যারা চাল ও পাটের একচেটিয়া পাইকারি ব্যাবসা করতেন, তারা ভয় পান যে, আগের মতো তাদের আর ব্যাবসা চলবে না। কলকাতামুখী রাজনীতিবিদরা দেখেন যে, রাজনীতির ক্ষেত্রে যে কলকাতা কেন্দ্রিকতা তা আর থাকছে না। তাই এভাবে এ বিশেষ বিশেষ শ্রেণির স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন ।
২. স্বদেশি আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পরবর্তীতে স্বদেশি আন্দোলনের রূপ নেয় এবং সমগ্র দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। শত শত সভামঞ্চ থেকে বঙ্গভঙ্গ রদ করার দাবি উঠে এবং সমগ্র দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য ছাপা হতে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ সরকারকে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে হয়।
৩. বিলাতি দ্রব্য বর্জন : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আইন পাস হওয়ার পর থেকেই উপমহাদেশের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে হিন্দু নেতৃবৃন্দ বিলাতি দ্রব্য বর্জনের নির্দেশ দেন। তারা জনগণকে | বুঝাতে চেষ্টা করেন যে, বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে হিন্দু মুসলিম ঐকত্র বিনষ্ট হবে এবং ভারত কখনো স্বাধীন হতে পারবে না। তাই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি বিলাতি দ্রব্য বর্জনে আদেশ দেওয়া হয়। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়।
৪. ব্রিটিশ পুঁজিপতির চাপ : বঙ্গভঙ্গের ফলে ব্রিটিশ পুঁজিবাদী মালিকগণ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই তারা বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয় ।
৫. সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড : বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের তীব্রতায় বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। বাংলার গভর্নরকে হত্যার জন্য চারবার চেষ্টা করা হয়। আহমেদাবাদে লর্ড মিন্টো অল্পের জন্য রক্ষা পান। এদিকে ভারত সচিব লর্ড মার্লির রাজনৈতিক সচিব লন্ডনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবঙ্গ রদ করে।
৬. ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গ রহিতকরণের আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন। হিন্দু নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গ রদ না করা পর্যন্ত ব্রিটিশদের উপর চড়াও হয়ে ব্রিটিশ খেদাও এ আন্দোলনের ডাক দেয়। এতে ব্রিটিশ সরকারের ভিত কেঁপে উঠে
৭. মুসলমানদের দুর্বল নেতৃত্ব : বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানগণ অধিক লাভবান হয় বটে কিন্তু কংগ্রেস ও হিন্দুদের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুসলমানগণ তেমন জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তাই মুসলমানদের দুর্বল নেতৃত্বের কারণে হিন্দু নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনে সফলতা অর্জন করে।
৮. হিন্দুদের বিরোধিতা : বঙ্গভঙ্গ আইন পাস হওয়ার পর থেকেই হিন্দুরা এর বিরোধিতা শুরু করে। কেননা তারা বুঝতে পারে যে, এ আইনের ফলে হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানরা বেশি উপকৃত হবে। হিন্দুরা কখনো চায়নি মুসলমানরা তাদের চেয়ে এগিয়ে যাক। এ প্রেক্ষিতেই ড. বি. আর আমবেদকর বলেছিলেন, “মুসলমানরা পূর্ব বাংলায় যাতে তাদের যথার্থ স্থান না পায় মূলত এ দুরভিসন্ধি থেকেই হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করছে।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গ পূর্ববাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষেত্রেও নবদিগন্তের সূচনা করা। ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করার ফলে পূর্ববঙ্গবাসীদের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি চরম অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ব্যাখ্যা করো
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ব্যাখ্যা করো টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।