১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর |
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ ভারতে শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নামে দুটি প্রদেশ গঠন করেন। অবশ্য ১৯০৫ সালের পূর্বেও বঙ্গভঙ্গের সুপারিশ করা হয়েছিল । সেই সুপারিশ অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও আসামকে নিয়ে পূর্ববাংলা প্রদেশ গঠন করা হয় যার রাজধানী করা হয় ঢাকা ।
→ বঙ্গভঙ্গ : বঙ্গভঙ্গ অবিভক্ত বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯০৫ সালের পূর্বে ‘বাংলা প্রেসিডেন্সি' ছিল ভারতের সর্ববৃহৎ প্রদেশ। ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করা হয় এবং ১৬ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং আসাম নিয়ে গঠিত হয় ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ'। এ নতুন প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ’ প্রদেশ। এর রাজধানী হয় কলকাতা ।
→ বঙ্গভঙ্গের কারণসমূহ : বঙ্গভঙ্গের পেছনে যেসব কারণ ছিল নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. প্রশাসনিক কারণ : সাত কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বঙ্গ প্রদেশ একজন প্রশাসকের পক্ষে রাজধানী কলকাতা থেকে সুষ্ঠু শাসন পরিচালনা করা দুরূহ ছিল। তাই প্রশাসনিক সুবিধার্থে তদানীন্ত ভাইসরয় বঙ্গ প্রদেশকে বিভক্ত করে ।
২. অর্থনৈতিক কারণ : পূর্ব বাংলার কাঁচামালে কলকাতায় গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। অপরদিকে, পূর্ববঙ্গ দিন দিন অনগ্রসরতার দিকে এগুচ্ছিল। তাই ব্রিটিশরা ভেবেছিল বঙ্গভঙ্গ হলে পূর্ববাংলার অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হবে ।
৩. রাজনৈতিক কারণ : পূর্ববাংলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হলেও শিক্ষাদীক্ষায় ছিল অনুন্নত ও অবহেলিত। তাই রাজনৈতিক দিক থেকে এ অঞ্চল ছিল পিছিয়ে। তাছাড়াও ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হবার পর মুসলমানদের উপর অত্যাচার চরমে উঠে। এ সময় পূর্ববাংলার মুসলমানগণ নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হয় এবং পৃথক আবাসভূমির দাবি তোলে। এ দাবি পূরণের ফলস্বরূপ সম্পন্ন করা হয় বঙ্গভঙ্গ ।
৪. সামাজিক ও ধর্মীয় কারণ : পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সামাজিক ও ধর্মীয় অসুবিধাদির কথা বিবেচনা করেও বঙ্গভঙ্গ করা হয় ।
— ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলাফল : কতকগুলো সুনির্দিষ্ট কারণেই ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী । নিম্নে এর ফলাফল আলোচনা করা হলো-
১. রাজনৈতিক সচেতনতা : বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে এ দেশের মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনা জাগ্রত হয়। তবে বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে মুসলমানগণ আরও বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে ।
২. বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন : মুসলমানদের যে সুবিধা হয়েছিল হিংসাপরায়ণ হিন্দু সম্প্রদায় তা সহ্য করতে পারেনি। তাই স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ শুরু করে ।
৩. হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ : একদিকে বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে মুসলমানরা সোচ্চার হয়ে উঠে অপরদিকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্দোলন শুরু হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ চরম আকার ধারণা করে ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়।
৪. মুসলিম লীগের জন্য : বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার পর তা নানামুখী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুসলমানগণ আলাদা একটি রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করার মানসে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠন করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গ পূর্ববঙ্গের গণমানুষের মনে এক নতুন আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করে । ঢাকা নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় নতুন অফিস-আদালত ও সুরমা | অট্টালিকা গড়ে উঠে এবং ঢাকার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু কায়েমি | স্বার্থবাদী মহল ও বর্ণবাদী হিন্দুরা এটা মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।