বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা টি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা |
ভূমিকা: “তীব্র আগুনের হল্কা ছুটিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে মহাকাশের দিকে ডানা মেলে ছুটে চলল বাংলাদেশের পতাকা শোভিত প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১”— এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় মুহূর্ত। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির সক্ষমতা, উন্নতি, সাফল্য, গৌরব ও দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়। বাংলাদেশ প্রবেশ করে মহাকাশ যুগে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবের ৫৭তম সদস্যের মর্যাদা লাভ করে।
স্যাটেলাইট কী: স্যাটেলাইট শব্দটি এসেছে মূলত ল্যাটিন শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো— ‘অনুসরণ করা’। স্যাটেলাইট হলো এমন একটি অবজেক্ট বা বস্তু, যা আরেকটি বড়ো অবজেক্টকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে । অর্থাৎ স্যাটেলাইট হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত কৃত্রিম উপগ্রহ। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের খবর নিমেষেই পাওয়া যায়। স্যাটেলাইটকে রকেট বা স্পেস শাটলের কার্গো বে-এর মাধ্যমে কক্ষপথে পাঠানো হয় । পাঠানোর সময় রকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয় ইনার্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম (আইজিএস) মেকানিজম ।
স্যাটেলাইট কীভাবে কাজ করে: স্যাটেলাইট স্থাপনের সময় কক্ষীয় গতি ও তার জড়তার ওপর পৃথিবীর অভিকর্ষের যে প্রভাব রয়েছে, এর জন্য সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারলে স্যাটেলাইট এ অভিকর্ষের টানে ফের ভূ- পৃষ্ঠে চলে আসতে পারে । এ জন্য স্যাটেলাইটকে ১৫০ মাইল উচ্চতাবিশিষ্ট কক্ষপথে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মাইল গতিতে পরিভ্রমণ করানো হয় । মূলত গতিবেগ কত হবে তা নির্ভর করে স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে কত উচ্চতায় রয়েছে, তার ওপর। পৃথিবী থেকে ২২ হাজার ২২৩ মাইল ওপরে স্থাপিত স্যাটেলাইট ঘণ্টায় ৭০০ মাইল বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করে। পৃথিবীর সঙ্গে স্যাটেলাইটও ২৪ ঘণ্টা ঘোরে। তবে ভূ-স্থির বা জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলো এক জায়গাতেই থাকে। এগুলো আবহাওয়া ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি ঠিক এ রকমই একটি স্যাটেলাইট। কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে স্যাটেলাইটটি কত উচ্চতায় বসবে। যেমন— গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয় ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার মাইল উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সম্পর্কিত তথ্য: ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যয় হয়েছিল প্রায় দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি ১১৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমার ভূ-স্থির প্লটে স্থাপিত হয়েছে। এটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কর্তৃক নকশা তৈরি করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস-এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। যার ১৪টি সি-ব্যান্ডের এবং ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ডের। এর মেয়াদকাল ১৫ বছর। তবে ডিজাইন আয়ুষ্কাল ১৮ বছর। স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে। বিএস-১ উপগ্রহটি ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডারে সজ্জিত হয়েছে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে অবস্থান থেকে। কে-ইউ ব্যান্ডের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল । সি-ব্যান্ডেরও আওতায় রয়েছে এই সমুদয় অঞ্চল ।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সম্ভাবনা: বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড স্যাটেলাইট মহাকাশে কাজ শুরু করার তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। পূর্বে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুনতে হতো ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। নিজস্ব উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ সেই নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে অনেকাংশে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে রয়েছে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে এবং বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার পর্যায়ক্রমে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের কাছে স্যাটেলাইট সেবা দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার একদম ওপরে। ইন্দোনেশিয়া থেকে সামনের দিকে যত দেশ আছে যেমন মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর সবই কিন্তু এই স্যাটেলাইটের আওতায় রয়েছে। এই স্যাটেলাইটের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
স্যাটেলাইট সেবা খাতে বাংলাদেশ: শক্তিশালী কে-ইউ ও সি-ব্যান্ডের আওতায় থাকবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া। ফলে এসব দেশে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দিতে পারবে বঙ্গবন্ধু-১। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল বৈষম্য দূর হয়েছে। ডাইরেক্ট টু হোম পদ্ধতিতে স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দুর্যোগে দেশের বিভিন্ন টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। সাবমেরিনের কাজ কোনো কারণে ব্যাহত হলে তখন বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে । সন্দ্বীপ ও হাতিয়া দ্বীপের সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঢাকার সাথে ল্যান্ড কমিউনিকেশন বন্ধ হয়ে গেলে এর সাহায্যে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। যার ফলশ্রুতিতে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ আবিষ্কার ও উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মহাকাশ যুগে প্রবেশ করেছে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এখন দেশের অভ্যন্তরে সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা সচল থাকছে। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতিও ত্বরান্বিত হচ্ছে। মোটকথা, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি সাধিত হয়েছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।
good