ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া | গোসল করার দোয়া
আপনি কি ফরজ গোসলের নিয়ম | গোসল করার দোয়া খুজতেছেন? যদি ফরজ গোসলের নিয়ম | গোসল করার দোয়া খুজে থাকেন তাহলে স্বাগতম জানাই আমাদের আজকের এই পোষ্টে । কারন আজকে আমরা ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া নিয়ে আলোচনা করব।।
ফরজ গোসলের নিয়ম গোসল করার দোয়া |
আসসালামু আলাইকুম আমি আরকে রায়হান আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব ফরজ গোসলের নিয়ম | গোসল করার দোয়া। তো চলুন শুরু করা যাক আমাদেরাজকের এই পোষ্ট টি।
ফরজ গোসলের নিয়ম | গোসল করার দোয়া
গোসলের ফরযসমূহ
গোসলের মধ্যে ফরজ কাজ ৩টি । যথা—
১। গড়গড়ার সহিত (রোজাদার না হইলে) কুলি করা ।
২। নাকের ভিতর পানি প্রবেশ করাইয়া ভালরূপ ধৌত করা।
৩। সমস্ত শরীরে ভালরূপ পানি বহাইয়া দেওয়া ।
গোসলের সুন্নতসমূহ
গোসলের মধ্যে সুন্নত কাজ ৬টি । যথা—
১। দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
২। শরীরে নাপাকী থাকিলে প্রথমে তাহা ধুইয়া ফেলা ।
৩। গুপ্তস্থান ধুইয়া নাপাকী সাফ করিয়া লওয়া ।
৪ । গোসলের পূর্বে ওজু করিয়া লওয়া ।
৫। মস্তক ও শরীর তিনবার ধৌত করা ।
৬। গোসলের জায়গা হইতে খানিকটা সরিয়া পা ধৌত করা ।
গোসলের মুস্তাহাবসমূহ
গোসলের মধ্যে মুস্তাহাব কাজ ৮টি। যথা—
১। মনে মনে নিয়ত করা।
২। উভয় হাত ধূইবার সময় ‘বিস্মিল্লাহ্’ পড়া।
৩। সারা শরীর ভাল রকম ঘষিয়া মাজিয়া গোসল করা।
৪.। সর্বসাধারণের অগোচরে নির্জন স্থানে গোসল করা ।
৫। গোসল করিবার সময় নিষ্প্রয়োজন কথাবার্তা না বলা ।
৬। গোসলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ না করা ।
৭। গোসলের পর গামছা বা তোয়ালে দ্বারা শরীর মুছিয়া ফেলা ।
গোসল করার দোয়া | গোসলের নিয়ত
نويت الغُسل لرفع الجناية .
উচ্চারণ নাওয়াইতুল্ গোস্লা লিরাইল জানাবাতি ।
অর্থাৎ, আমি ‘জানাবাত' হইতে পাক হওয়ার জন্য গোসল করিতেছি।
ফরজ গোসলের নিয়ম | গোসল করিবার সুন্নাত তরীকা | gosol korar niyom
গোসলের নিয়ত করিয়া তারপর 'বিস্মিল্লাহ্' পড়তঃ দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুইয়া তারপর গুপ্তস্থান ধুইবে ৷ অতঃপর ওজু করিবে। ওজুতে ভালরূপে গড়গড়া করিয়া কুলি করিবে। রোজাদার হইলে শুধু কুলি করিবে, গড়গড়া করিবে না।
তিনবার কুলি করা সুন্নত। তারপর তিনবার নাকে পানি দিয়া নাক পরিষ্কার করিবে। ওজুতে ঘাড় মাসেহ্ পর্যন্ত শেষ করিয়া তখনকার মত পা ধোওয়া বাদ রাখিয়া, তারপর যথাক্রমে মাথায়, ডান কাঁধে ও বাম কাঁধে তিনবার এমনভাবে পানি ঢালিবে, যাহাতে সারা শরীর ভিজিয়া পানি গড়াইয়া যায় এবং উভয় পা ধোওয়া হইয়া যায় ।
গোসলের কয়েকটি মাসয়ালা
যতবার ইচ্ছা সঙ্গম করিয়া অথবা একাধিক স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করিয়া একবার গোসল করিলেই যথেষ্ট হইবে। প্রত্যেক স্ত্রীর সহিত প্রতিবার সঙ্গমের পর গোসল করা ফরজ নয় ।
সঙ্গমান্তে না ঘুমাইয়া অথবা প্রস্রাব না করিয়া অথবা অন্ততঃ চল্লিশ কদম হাটাহাটি না করিয়াই গোসল করতঃ নামাজ পড়িল । ইহার পর সামান কিছু বীর্য যাহা সঙ্গমকালে স্বীয় স্থান হইতে স্খলিত হইয়াছিল, কিন্তু নির্গত হইয়া সারে নাই।বাহির হইলে পুনরায় গোসল করিতে হইবে, তবে ঐ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে না ।
আর যদি সঙ্গমান্তে প্রস্রাব করার অথবা ঘুমাইবার অথবা অন্ততঃ চল্লিশ কদম হাটাহাটি করিবার পর গোসল করতঃ নামাজ পড়ে, তারপর বীর্য নির্গত হয়, তাহা হইলে গোসল কিম্বা নামাজ কোনটাই দোহ্রাইতে হইবে না। অবশ্য যদি পুরুষাঙ্গ উত্তেজিত ও দণ্ডায়মান অবস্থায় বীর্য নির্গত হয়, তাহা হইলে গোসল করিতে হইবে।
স্ত্রী গোসল শেষ করিবার পর তাহার গুপ্তস্থান হইতে বীর্য বাহির হইলে এবং তাহা নিজের বীর্য বলিয়া বিশ্বাস হইলে তাহার পুনরায় গোসল করিতে হইবে। আর স্বামীর বীর্য বলিয়া বিশ্বাস হইলে তাহার গোসল করিতে হইবে না, কেবল ওজু করিলেই চলিবে।
স্বপ্নদোষের কথা মনে নাই, তবে কাপড়ে বা বিছানায় দাগ দেখা যায় । এইক্ষেত্রে যদি উহা 'মনি' বলিয়া বিশ্বাস হয়, তবে গোসল করিতে হইবে । আর মণি কিনা, সন্দেহ হইলে যদি শুইবার কালে লিঙ্গ উত্তেজিত থাকিয়া থাকে, তবে উহাকে মজি ধরিতে হইবে এবং এই অবস্থায় গোসল করিতে হইবে না । অন্যথায় গোসল করা ফরজ হইবে ।
স্বামী-স্ত্রীর একই বিছানায় শয়ন করিল । ঘুম হইতে জাগিয়া দেখিল ॥ বিছানায় বীর্যের দাগ পড়িয়া রহিয়াছে। কিন্তু স্বপ্নদোষের কথা স্বামী কিম্বা স্ত্রী কাহারও মনে নাই । এই ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েরই গোসল করা কর্তব্য। কেন না, বীর্য স্বামী কিম্বা স্ত্রীর-তাহা সঠিক রূপে বলা যায় না ।
ফরজ গোসল শেষ করার পূর্বে কোন কিছু পানাহার করিতে ইচ্ছা করিলে হাত-মুখ ধোওয়া এবং কুলি করিয়া লওয়া উত্তম । হাত-মুখ না ধুইয়া যদি কোন কিছু পানাহার করে, তাহাতেও গুনাহ্ হইবে না ।
নাবালেগা বালিকার সহিত সাবালক পুরুষ সঙ্গম করিলে, যদিও নাবালেগার গোসল করা ফরজ নয়, তথাপি গোসলের অভ্যাস গড়িয়া তোলার জন্য এই ক্ষেত্রেও তাহার গোসল করা উচিত ।
যদি এমন কোন রোগে আক্রান্ত হয় যাহার ফলে ফরজ গোসলের সময় মস্তকে পানি ঢালিতে গেলে পীড়া বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের হানি হওয়ার আশংকা থাকে, তাহা হইলে মস্তক বাদ দিয়া অবশিষ্ট সারা শরীরে পানি বহাইয়া দিলে গোসল শুদ্ধ হইয়া যাইবে । তদ্রূপ, শরীরের যে কোন স্থানে ক্ষত, বা পট্টি থাকার কারণে পানি বহান ক্ষতিকর হইলে ঐ টুকু স্থান বাদ দিয়া বাকী সমস্ত শরীর ধুইতে হইবে। ঐ স্থানটুকু মাসেহ্ করিয়া ফেলিবে
গোসল করার সময় এমনভাবে সারা শরীরে পানি পৌঁছাইবে যেন এক চুল পরিমাণ জায়গাও ভিজা বাকী না থাকে । চুল পরিমাণ স্থানও শুকনা থাকিয়া গেলে গোসল শুদ্ধ হইবে না । গোসল শেষ করিয়া আসার পর দেখা গেল চুল পরিমাণ সামান্য জায়গা শুকনা রহিয়া গিয়াছে ; তখন শুধু ঐ শুকনা জায়গাটুকু ধুইলেই গোসল পুরা হইয়া যাইবে । পুনরায় গোসল করিতে হইবে না ।
গোসল করিয়া আসার পর মনে পড়িল যে, ভুল বশতঃ কুলি করা কিম্বা নাকে পানি দেওয়া হয় নাই । তখন কুলি করিয়া বা নাকে পানি দিয়া লইলেই গোসল পুরা হইয়া যাইবে । পুনরায় গোসল করিতে হইবে না ।
গোসলের পর দেখা গেল-চুন, আটা বা আঠা জাতীয় কোনকিছু হাতে, নখে কিম্বা অন্য কোন স্থানে লাগিয়া থাকায় গোসলের সময় সেইখানে পানি পৌঁছে নাই তখন ঐ স্থানে আঠা খোঁচাইয়া বা অন্য যেভাবে সম্ভব-পরিষ্কার করিয়া তারপর ঐ স্থানটুকু ধুইয়া লইবে । পুনরায় গোসল করিতে হইবে না ।
উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে গোসল করার পর গোসলের ত্রুটি ধরা পড়ায় ঐ শুকনা অংশ ধৌত করার মধ্যবর্তী সময়ে কোন নামাজ পড়িয়া থাকিলে তাহা দোরাইতে হইবে ।
স্ত্রীলোকের মাথায় খোঁপা বাঁধা থাকিলে এমনভাবে পানি ঢালিবে যেন সমস্ত চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছিয়া যায় । খোঁপা বাঁধা রাখিয়া চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছান সম্ভব না হইলে খোঁপা খুলিতেই হইবে। চুল খোলা থাকিলে চুলের আগা-গোড়া সবটুকু ভিজাইতে হইবে।
হাতের আংটি, নাকের নথ, কানের বালি, বাজুতে বাঁধা তাবিজ ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত অঙ্গে ভালরূপে পানি পৌঁছাইতে হইবে। অন্যথায় গোসল হইবে না ।
পুকুর বা নদীতে ডুবাইয়া অথবা বৃষ্টিতে ভিজিয়া আসিলে তৎসঙ্গে যদি কুলি করিয়া এবং নাকে পানি দিয়া থাকে, তাহাতেই গোসল হইয়া যাইবে ।
নারী দর্শনে বা আলিঙ্গনে অথবা যৌন-আবেদনমূলক ছায়াছবি দেখার বা যৌন গ্রন্থাদি পাঠ করার-ফলে মনে কামভাব জাগিতে অথবা সঙ্গমকালে পূর্ণ উত্তেজনায় পূর্বে জননেন্দ্ৰিয় বাহিয়া যে আঠাযুক্ত তরল পদার্থ বাহির হয়, উহাকে 'মজি' বলে ৷ শুধু ‘মজি’ বাহির হইলে গোসল ফরজ হয় না, তবে ওজু ভঙ্গ হইয়া যায় ।
আর সঙ্গমকালে অথবা অন্য যে-কোন অবস্থায় ‘শাওয়াত' বা পূর্ণ কামোত্তেজনার সহিত লিঙ্গ পথে যে গাঢ় বীর্য বাহির হয়, উহাকে ‘মনি' বলে । মনি বাহির হইলে গোসল ফরজ হয় ।
মনি আর মজির মধ্যে পার্থক্য হইল মজি দুর্গন্ধহীন স্বচ্ছ আঠাযুক্ত তরল পদার্থ, আর মনি দুর্গন্ধযুক্ত গাঢ় ধাতু । মজি চরম উত্তেজনার পূর্বাভাস । মজি বাহির হওয়ার পর উত্তেজনা কমে না, বরং বাড়ে, অথচ মনি বাহির হওয়ার পর শাহ্ওয়াত ও দৈহিক উত্তেজনা শিথিল হইয়া পড়ে।
ধাতু-দৌর্বল্য, প্রমেহ, কোষ্ঠকাটিন্য ইত্যাদি কারণে বা মলত্যাগ করিতে বসিয়া কোঁথ দিলে যদি বিনা উত্তেজনায় মনি বাহির হয়, তবে গোসল ফরজ হইবে না ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ফরজ গোসলের নিয়ম | গোসল করার দোয়া
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ফরজ গোসলের নিয়ম (Foroz Gosol Er Niyom Bangla) | গোসল করার দোয়া। আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্ট টি আপানাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে এখনি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর এই রকম নিত্য নতুন আরটিকেল পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।