কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ টি।
কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ |
কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ
উত্তর : ভূমিকা : কুব্বাত আস সাখরা মুসলিম স্থাপত্যে শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক এটি নির্মাণ করেন। উমাইয়া আমলে যেসকল স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল তার মধ্যে ডোম অব দ্য রক বা কুব্বাত আস সাখরা। ঐতিহাসিক রিমেন্ড বলেন, কুব্বাত আস সাখরা হলো মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের প্রাথমিক যুগের অন্যতম নিদর্শন।
→ নির্মাণের পটভূমি : উমাইয়া শাসনামলে যখন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অসংখ্য সুন্দর ও কারুকার্যমণ্ডিত স্থাপত্য নিদর্শন ছিল তখন মুসলিম শাসকদের ছিল না বললেই চলে। তাই মুসলিম রাজারাও এ অভাব পূরণ করার জন্য ও ইসলামের মান-মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন। বিশেষ করে মসজিদ। জেরুজালেম বা মরিয়া পাহাড়ের শীর্ষদেশে অবস্থিত যে পাথরের উপর পা রেখে মেরাজে গিয়েছিলেন ঠিক যে জায়গাকে ঘিরে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ৬৯১ সালে কুব্বাত আস সাখরা তৈরি করেন।
কুব্বাত আস সাখরার পরিচয় : কুব্বাতুস সাখরা আরবি শব্দ। আর Dome of the rock হলো ইংরেজি শব্দ। এখানে Dome শব্দটি ল্যাটিন Domres শব্দ থেকে গৃহীত। এর অর্থ হলো গম্বুজ। মহানবি (স) যে পাথরে ওপর পদচিহ্ন রেখে মেরাজ গমন করেন, খলিফা আবদুল মালিক সে পাথরকে কেন্দ্র করে গম্বুজ বিশিষ্ট ষষ্ঠ কোণাকার একটি অতুলনীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন, যা কুব্বাতুস সাখরা নামে পরিচিত। আবার এটাকে Dome of the rock ও বলে।3
→ নামকরণ ও অবস্থানের স্বরূপ : Dome of the rock বা পাথরের গম্বুজ নামে নামকরণ করা হলেও এটি মূলত কাঠ সীসার দ্বারা তৈরি। মোবাইয়া পাহাড়ের ওপর নির্মিত পাথরের উপর স্থাপিত শিল্প কর্মটিতে নির্দেশ করে। আবার কারো মতে রাসূল (সা.) একটি পাথরে পা রেখে সেখান থেকে প্রস্থান করে। সেই পাথরটিকে কেন্দ্র করে এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে বলেই এর নাম Dome of the rock রাখা হয়।।
নির্মাণের উদ্দেশ্য : মক্কা ও মদিনা ছিল আবদুল মালিকের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এর শাসনে। তাই যুবায়েরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার জন্য মক্কার পরিবর্তে জেরুজালেমে হজব্রত পালনের জন্য কুব্বাতুস সাখরা নির্মাণ করেন। অন্যদিকে যুবায়েরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখে বিকল্প কাবা হিসেবে এটা নির্মাণ করেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন শিল্পানুরাগী। তাই তিনি বাইজান্টাইন গির্জাগুলোর আকর্ষণ কমানোর জন্যও এটি নির্মাণ করেন।
স্থাপত্যিক গুরুত্ব : কুব্বাতুস সাখরা মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইমারত। একদিকে এটি যেমন মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনবদ্য সৃষ্টি অন্যদিকে এর ঐশ্বর্য ইসলামি শিল্পের দিগন্তকে সম্প্রসারিত করে। ইসলামের সর্বপ্রথম ও সর্বোৎকৃষ্ট ইমারত হিসেবে কুব্বাতুস সাখরার বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী স্থাপত্য শিল্পে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
→ স্থাপত্যিক উৎস : কুব্বাত আস সাখরা নির্মাণের উৎস হিসেবে কাজ করেছে রোমান সেন্টাবাস্টন যার সমাধি যা ছিল বৃত্তাকার জেরুজালেমের মেরীর সমাধি ও সংবদ্ধ গির্জা বা অ্যানাস্টিমের নকশা জেরুজালেমের স্যান সেনশন গির্জা যা প্রথমে বৃত্তাকার। ওপরে অষ্টাভূজাকৃতির। সুতরাং Dome of the rock-এ তাদের নির্মাণের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
→ ভূমি নকশা ও গঠন : মুসলিম স্থাপত্যের এটি ছিল সর্বপ্রধানের মধ্যে অন্যতম। এর গঠন ও নকশা ছিল তিন অংশে বিভক্ত (i) অভ্যন্তরের মাঝখানে বৃত্তাকার অংশ। (ii) বৃত্তাকৃতির চারপাশে প্রথম অষ্টভূজবিশিষ্ট পরিবেষ্টিত এলাকার ও (iii) প্রথম অষ্টভূজ আকৃতির পরিবেষ্টিত এলাকাকে ঘিরে দ্বিতীয় গম্বুজের অংশ। Dome of the rock এর পুরুটাই প্রায় গোলাকৃতি আর গোলায়িত স্থানটি যা একটি পাথরকে ঘরে গড়ে উঠেছে তাই অধিক পবিত্র ।
→ অলংকরণ : কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রকস অষ্টভূজের নিচের অংশ মসৃণ সাদা মার্বেল এবং উর্ধ্বাংশ বিভিন্ন ধরনের মোজাইক দ্বারা অলঙ্কৃত। ড্রামের জালির জানালা ও অষ্টভূজের প্রতি বাহুতে মিনাকল টালীর ব্যবহার লক্ষণীয়। প্রবেশ পথের ভল্ট সোনা ও কাচ দিয়ে নির্মিত। সাদা ও কালো নকশাকৃত পিয়ার ও কলামের ওপর নির্মিত খিলানগুলো ডোরাকাটা। মোট মিলিয়ে এটা খুবই সুন্দর।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম স্থাপত্যের বিবর্তনে কুব্বাতুস সাখরার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এটা ইসলামের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিজয়েরই প্রতীক নয়, এটা স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের শ্রেষ্ঠ ইমারত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এটা মুসলিম স্থাপত্যের সর্বোত্তম নিদর্শন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কুব্বাত আস সাখরা সম্পর্কে লিখ টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।