বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর ।
বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর |
বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : সংস্কৃতি হলো কোনো জাতির আয়না স্বরূপ। সমাজের মানুষের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমষ্টিই সংস্কৃতি। প্রত্যেক জাতির স্ব স্ব সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে; যেমন- হিন্দু সংস্কৃতি, ইংরেজি সংস্কৃতি, চায়না সংস্কৃতি ইত্যাদি। বিভিন্ন সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ধরনের বাঙালি সংস্কৃতির ধারাও এরূপ বৈচিত্র্যময় ৷ বাঙালি সংস্কৃতির উৎস ও ভিত্তি ছিল অস্ট্রিক, দ্রাবিড় মঙ্গোলীয় জ্ঞানবিজ্ঞান ও মনন। আর বাঙালির মননে এবং আত্মবৃদ্ধিতে সংখ্যা ও যোগতন্ত্রের প্রভাব প্রবল। সর্বপ্রাণবাদে তথা জড়বাদে এবং যাদুতার আস্থা ও অবচেতন ও নিঃসঙ্গ মনে ক্রিয়াশীল থেকেছে চিরকাল। বৃক্ষ দেবতা, নারীদেবতা, পশুদেবতা, দেহচর্যা ও জন্মান্তরে বিশ্বাস তাদেরই সৃষ্টি। নিম্নে সংস্কৃতির উৎস বাঙালির ভিত্তি আলোচনা করা হলো :
→ বাঙালি সংস্কৃতির উৎস ও ভিত্তি : বাঙালির সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। বাঙালি বিদেশি, বিজাতি, বিধর্মীয় সংস্কৃতি আকারে ধরেছে আর তাদের সংস্কৃতির সাহায্যেই নিজেদের সংস্কৃতি গড়ে তোলেছে । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
৩. নৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি : নৈতিক ও সামাজিক জীবনে গোত্র বিবাহ, বহু বিবাহ, অগোত্রীয় বিবাহ, বাল্য বিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ, বিধবা বিবাহ, ত্যাগ তালাক প্রভৃতি বিধিনিষেধ ও আদিম গোত্রপতি, সমাজপতি এবং গৃহপতির দাপট ও নেতৃত্ব আজো নিম্নতর সমাজে অবলুপ্ত গুরুবাদের মন্ত্রগুপ্তি সর্ব সমাজে আজও প্রবল। প্রাচীনকাল হতে বাংলার সমাজে পরিবারের পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু ছিল। একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতো। পরিবারের প্রধান কর্তাদের পুরুষ, এখনো বাংলার গ্রামাঞ্চলে এ সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরিই বিদ্যমান। এমনকি গ্রামাঞ্চলে আজও বহু বিবাহের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় ।
৪. অস্ত্রের ব্যবহার : বাঙালি কৃষক সমাজে বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার দর্শনীয়। এ হাতিয়ারের মধ্যে লাঙ্গল, জোয়াল, ফাল, হর্ষ, দা, দড়ি, মই, কোদাল, বর্শা, বাটুল, ঝুড়ি, চুপড়ি, চেঙাড়ি, ডিঙ্গি, ডোঙ্গা তৈজস আসবাপত্রের মধ্যে হাড়ি, সরা, পাতিল, ঝিনুক, ডাবা, (নারিকেলের মালা) মাচা, নল, পোটিঘটি, চাটাই, চাটি, ঝাঁটা বা খারি, প্রভৃতি। নেশার মধ্যে গাজা, ঘোলা, মদ, চরস, সিদ্ধি প্রভৃতি ফলমূলের ধান, বেগুন, ঝিঙা, কলা, তামুল, গুবাক, গাণ্ডারী, জাম্বুরা, শিমুল, তেতুল প্রভৃতি অস্ট্রিক, দ্রাবিড় মঙ্গোলীয় বাঙালির আবিষ্কৃত। মঙ্গোলীয় মাঝে অধিকাংশের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়, যা বাঙালি ফসল উৎপাদনে, কৃষি কাজের জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের কার্যসম্পাদনে ব্যবহার করে।
৫. খাদ্যের সংস্কৃতি : বাঙালিদের খাদ্যদ্রব্যের অধিকাংশ উৎপাদন শুরু করে প্রাচীনকাল হতে। যেমন- ধানের জিজিরা, ককচি, করা, তৃতীয়া, বাদল, শুকই, লেম্বরু, গেলঙ, মইদল প্রভৃতি এবং মাছের মধ্যে পুটি, টেংড়া, শিং, গজার, কই, মাগুর, টাকি, পাঙাস প্রভৃতি অস্ট্রিক দ্রাবিড় মঙ্গোলীয়দের দেওয়া খাদ্যেরই নাম। খাদ্য বস্তুর মধ্যে আরো গুড়, ভাত, মাড়, খই, চিড়া, মুড়ি, চচ্চড়ি, ভর্তা আচার প্রভৃতিও অস্ট্রিক হওয়ার কথা। আর প্রাচীনকালের সে খাদ্যভাস আজও বাঙালিরা অনুসরণ করে। সুতরাং খাদ্যাভাসও ছিল প্রাচীনকালে অনুকরণের একটি সংস্কৃতি ।
৬. জীবনধারা পরিবর্তন : বাঙালির জীবন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধারা প্রভাবিত আর এ কারণে জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বাড়া, পন, গাঙ্গা কুড়ি, বাহন, গণনা, পদ্ধতিগুলো হলো অষ্টিকদের। এমনকি কয়েকশত শব্দ ছিল, ঢাক, ঢোল, ডাঙ্গর ডাশাল, ডাহা, চোয়ার খাড়ু টোপা খোকা খুকি খাড়ি, খোটা, খামার খড় আড্ডা লাড্ডু প্রভৃতি অস্ট্রিক সংস্কৃতির স্মারক। এসব ছাড়াও আরো ধর্মমত সূত্রে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা পদ্ধতি সূত্রে বিদেশীয় জ্ঞান ও চিন্তা এবং দেশের আবিষ্কৃত ও উদ্ভূত দ্রব্য এবং ভাবচিন্তার নাম ও ব্যবহার সম্পৃক্ত আচার সংস্কৃতি অনুকৃতি, অনুসৃতির, মাধ্যমে বাঙালির সংস্কৃতিকে বন্ধ ও রূপান্তরিত করেছে। যেমন— জৈন, বৌদ্ধ, শাস্ত্রীয়, চিন্তাচেতনা এবং আচার- আচরণ এক সময় জৈন, বৌদ্ধ বাঙালির প্রাত্যহিক জীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণ শাস্ত্র ও জীবনদর্শন কিংবা ইসলাম এবং খ্রিস্টান শাস্ত্র বাঙালির জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
৭. বাঙালি সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন : বাঙালির সংস্কৃতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে বিদেশি সংস্কৃতি। ব্রিটিশ আমল থেকে প্রাতীচ্যবিদ্যা ও সংস্কৃতির প্রভাবে ব্যবহারিক জীবনে শিক্ষিত ব্যক্তিরা অনেকগুলো ইউরোপীয় আচার-আচরণ ব্যক্তিক, ঘরোয়া এবং সামাজিক জীবনে গ্রহণ করেছে, তবুও স্বাতন্ত্র্য চেতনা হারায়নি। পাক প্রণালিতে খাদ্যাখাদ্য, নিরূপণে, তামা-পিতল ও মাটির থালা বাসন, গ্লাসের ব্যবহার ঘর পোশাক, পরিচ্ছেদে মসজিদ মন্দির গির্জার আঙ্গিক স্বাতন্ত্র্যে ও পার্থক্য সুপ্রকট হয়ে আছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ এমনই একটি ভূ-খণ্ড যার অধিবাসীরা বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ধর্মীয় বিভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে। আমরা এর আগে জানতে পেরেছি বাঙালিরা ছিল ধর্মীয় সহনশীলতাপূর্ণ একটি সুমহান জাতি। যার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন জাতি তাদের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির উৎস ও ভিত্তি জানতে হলে, 'আমাদের পরিচয় নিতে হলে বিত্ত পলিটিক্যাল পরিবর্তনের কথাও জানতে হবে। এ ভূখণ্ডে রাজ্য, রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন যুগে যুগে কিভাবে হয়েছে প্রাচীন কাল থেকে আজকের বাংলাদেশ কিভাবে প্রতিষ্ঠা হলো তার ইতিহাস এদেশের জনগণকে জানতে হবে। ইতিহাস জানতে হবে। জাতি পরিচয়ে আমরা অস্ট্রিক মঙ্গোলীয়দের বংশধর তা স্বীকার করতেই হবে। আর আমাদের সংস্কৃতির ভিত্তিও এখানেই সু-প্রতিষ্ঠিত ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাঙালি সংস্কৃতির উৎস সমূহ আলোচনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।