বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর |
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর
উত্তর : ভূমিকা : ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্ত ানের বর্বর সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ড শুরু হবার পরদিন ২৬ মার্চেই ভারতীয় লোকসভায় বিষয়টি আলোচিত হয়।
৩১ মার্চে ভারতের রাজ্য ও লোকসভার যৌথ অধিবেশনে পাকিস্তান, সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভারত অকৃত্রিমভাবে সহযোগিতা করেছে ।
→ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান : মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেলেও তা প্রথম দিকে ততটা সক্রিয় ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় নীতির এটি পর্যায় ছিল। নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরা হলো :
১. স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান : ভারতই প্রথম দেশ যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত আরও দৃঢ় হয়। ভারতকে অনুসরণ করে ৭ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশ স্বীকৃতি প্রদান করে ।
এভাবে ভারতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একে একে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে ।
২. শরণার্থীদের চাপ : প্রথমদিকে ভারতের সংবাদ মাধ্যম, জনসাধারণ, জাতীয় ও প্রাদেশিক সরকারসমূহ শরণার্থীদের স্বাগত জানায়।
কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্রমাগত হত্যা ও নির্যাতনে শরণার্থীদের সংখ্যা ভারতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এ কারণে জনগণের মনে অসন্তোষ ও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সংগত কারণে ভারত খুব দ্রুত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
৩. মুজিবনগর সরকার গঠনে সহায়তা : বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকার ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতা লাভ করে। বাংলাদেশের এ সহযোগিতা এদেশের মানুষের কাছে আজীবন চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
৪. জনসমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান : ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এবং জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আকুণ্ঠ সহানুভূতি প্রকাশ করে।
সরকারি দল কংগ্রেস ছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টি, সোশ্যালিস্ট পার্টি, জনসংঘ মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠন ও শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য দিয়ে, সহায়তা করে সর্বস্তরের ভারতীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বুদ্ধিজীবীরা 'শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি' গঠন করে অর্থসংগ্রহ ছাড়াও জনমত সৃষ্টিতে অবদান রাখেন ।
৫. মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং প্রদান : এপ্রিলের শেষ নাগাদ বাঙালি যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়া শুরু হয় ভারতের মাটিতে। এছাড়া ভারত এসময় হালকা অস্ত্রও দেয়। RAW এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ‘মুজিব বাহিনী'।
জুনে এদের ট্রেনিং শুরু হয় এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলে। এছাড়া অসংখ্য বেসামরিক লোককে ভারত সরকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলাদেশের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৬. কূটনৈতিক সহযোগিতা : জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব হেনরী কিসিঞ্জার ভারত সফর করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সহযোগিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করলে প্রত্যাখ্যান করেন।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় মধ্যস্থতার পথ রুদ্ধ হয় এবং এর ফলে ভারত তার নিজস্ব বিবেচনায় চলতে থাকে ।
৭. সামরিক অভিযান প্রেরণ : জুলাই মাস থেকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি নিয়মিত ধ্বংস করার কাজে আত্মনিয়োগ করে।
জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত পূর্ব বাংলার সমস্যার প্রত্যাশিত সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে সামরিক প্রচেষ্টা জোরদার করে। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল পূর্ব-বাংলায় মোতায়েন করা হয় ।
৮. পাকিস্তানের প্ররোচনা : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকেই পাকিস্তান সরকার যেভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে 'ভারতের চক্রান্ত' এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোদের 'ভারতের এজেন্ট' বলে প্ররোচনা চালায় তখন যৌক্তিক কারণেই ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করে।
৯. উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দান : পাক-হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে বাংলার মানুষ অত্যন্ত সংকটময় পরিস্থিতির শিকার হয়। হাজার হাজার নারী-পুরুষ জীবনরক্ষার জন্য বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে তারা আশ্রয়হীন উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
অনেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে চলে যায়। এ সংকটকালীন মুহূর্তে ভারত সরকার আশ্রয়হীন মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দান করে ভারত অত্যন্ত মহৎ ভূমিকা পালন করে ।
১০. অস্ত্র সাহায্য : পাকহানাদারদের প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রতিরোধ ব্যূহ গড়ে তোলেন। কিন্তু পাকবাহিনী ছিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।
তাই মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যাপ্ত অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করে সহযোগিতা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস শরণার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে, প্রবাসী সরকার গঠনে সহায়তা করে, আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করে।
সর্বোপরি চূড়ান্ত পর্বে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অপরিসীম 1
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।