বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা টি।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা |
বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র সর্বাপেক্ষা আলোচিত একটি বিষয়। গণতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আধুনিক এবং সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি । বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত প্রকার সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে, গণতন্ত্র তাদের মধ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ হিসেবে প্রমাণিত। গণতন্ত্রের শাব্দিক অর্থ— জনগণের শাসন। আধুনিক বিশ্বে মানুষ অপরের হাতে শোষিত হতে চায় না, সে চায় নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে এবং তাদের স্বার্থের আলোকে শাসিত হতে। মানুষের এ আত্মজাগরণের ফল গণতন্ত্র। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত দেশ বাংলাদেশ। আর এ নবীন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গৃহীত চারটি মূলনীতির অন্যতম একটি মূলনীতি হলো গণতন্ত্র ।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Democracy’। গ্রিক শব্দ ‘Demos’ ও ‘Kratia' শব্দ থেকে 'Democracy' শব্দের উদ্ভব, যার বাংলা রূপ ‘গণতন্ত্র।' বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তবে এসব সংজ্ঞার আলোকে গণতন্ত্র বলতে সাধারণভাবে যা বোঝায় তা হলো- 'যে শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তিরই অংশ রয়েছে, সেটাই গণতন্ত্র।' 'Government in which everyone has share'. জনগণ কর্তৃক দেশ শাসনের যে অধিকার ও পদ্ধতি তাই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে কোনো ব্যক্তি বা দলের খেয়াল-খুশিমতো শাসনব্যবস্থা চালানোর অধিকার নেই। জনগণের ইচ্ছাই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র হলো এমন এক ধরনের সরকারব্যবস্থা, যা জনগণের, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য তৈরি।' সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গণতন্ত্র সে ধরনের শাসনব্যবস্থা, যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষভাবে অথবা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে । গণতন্ত্রে স্বৈরশাসনের কোনো স্থান নেই। দেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণসাধনই গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা হলো এর মূল্যবোধের অভাব । বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও সব দেশের গণতন্ত্রের সুফল সমান নয়। উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্র আর তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশের গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উন্নত দেশসমূহের গণতান্ত্রিক চেতনা যেভাবে দেশ ও জনগণকে শাসন করছে, শিক্ষার পশ্চাদপদ দেশে সেভাবে পারছে না। কারণ শিক্ষার পশ্চাদপদ ও অনুন্নত দেশগুলোতে ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে শাসকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে চরমভাবে আঘাত করে। অথচ ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার সঙ্গে গণতন্ত্রের আদৌ কোনো মিল নেই। গণতন্ত্রকে যথার্থ মর্যাদা না দিলে দেশের মঙ্গল আসতে পারে না। তাই অনুন্নত দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে উন্নত দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে, গণতান্ত্রিক আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে ।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশ: ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। অনেক কষ্ট আর ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে এ দুর্লভ স্বাধীনতা আমরা লাভ করেছি। যে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণতন্ত্রের সে নির্ভেজাল রূপ আর টিকতে পারল না। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রথমবারের মতো হোঁচট খায় ১৯৭৫ সালের আগস্ট ট্র্যাজেডির পর। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে হত্যা করা হয় গণতান্ত্রিক অনুশীলনের পথ। পঁচাত্তর থেকে নব্বই সাল পর্যন্ত গণতন্ত্র নির্বাসিত ছিল বাংলাদেশ থেকে। ‘রাজা এসেছে, রাজা গেছে' কিন্তু গণতন্ত্র আসেনি। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই পনেরো বছর মূলত অন্ধকার যুগ। জনপ্রতিনিধিত্বহীন শাসন কাঠামোর এই দুঃসময়ে ক্ষমতায় ছিল উচ্চাভিলাষী ক্ষমতালোভী সেনাপতি, সুবিধাবাদী বিচারপতি, নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতিক, বিভ্রান্ত-বিপথগামী আমলা আর তাঁবেদার সেনাবাহিনী ।
গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে গণতন্ত্রের বারবার অকালমৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু বাংলার মানুষ অধিকার আদায়ের শপথে দীপ্ত । তারা তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে শিখেছে। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে তারা নানা আন্দোলনে তা প্রমাণ করেছে। এটা প্রমাণ করতে পেরেছে বলেই ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আবার সে অধিকার ফিরে আসে। মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছে। ১৯৯১ সালে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় গণমানসের জয় সূচিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক সরকার, জনগণের সরকার। গণতন্ত্র মর্যাদা পেয়েছে। ১৯৯৬ সালেও নির্বাচন হয়েছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। অতঃপর ২০০৭ সালে গণতন্ত্র সাময়িক সময়ের জন্য পথ হারালেও ২০০৮ সালে জনগণের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় গণতন্ত্রের সঠিক পথে ফিরে আসে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও গণতন্ত্রের সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে ।
উপসংহার: বর্তমানে সারাবিশ্বের গণতন্ত্রকামী জনগণ জেগে উঠেছে। তারা অধিকার চায় । মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার এক সফল ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আজ পর্যন্ত এর ঊর্ধ্বে কোনো শাসনব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এ ব্যবস্থার প্রয়োগপদ্ধতি অনেক সময় খামখেয়ালিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার রক্তাক্ত হয়েছে, আর নয়। আমরা চাই, গণতন্ত্রের অধিকার নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকুক। আর যুগ যুগ ধরে আমাদের অস্তিত্বে, চেতনায় গণতন্ত্র অমর হোক ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশের গণতন্ত্র রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।