আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর ।
আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর |
আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর
- আইনগত কাঠামো আদেশের প্রকৃতি বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৬৯ সালের ২৮ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদের এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেন। এ ভাষণে তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি রূপরেখা প্রদান করেন যা আইনগত কাঠামো আদেশ নামে পরিচিত। সংক্ষেপে যা L.F.O নামে পরিচিত। L.FO পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা হয় ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ। এতে একটি প্রস্তাবনা, ২৭টি অনুচ্ছেদ, ৩টি তফসিল, পরিষদের কার্যবিবরণীসহ ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রয়নের জন্য সব রকমের নিয়মবিধি, শর্ত ও বিধিনিষেধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ আদেশের মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের গঠনের বিধিবিধান, নির্বাচন পরিচালনা ও মূলনীতি, প্রার্থীদের যোগ্যতা অযোগ্যতা, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, স্পিকার ও সদস্য এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, জাতীয় পরিষদ ও তার সদস্যবর্গের সুযোগ ইত্যাদি ।
→ আইনগত কাঠামো আদেশ ও বৈশিষ্ট্য : ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ ইয়াহিয়া একতরফাভাবে একটি আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন, যাতে নির্বাচনের পূর্বে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য জাতীয় পরিষদের জন্য নির্বাচনীবিধি এবং সংবিধান সংযোজনার্থে কিছু বিধানের রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত ছিল । তা আলোচনা করা হলো :
১. ফেডারেশনের ঘোষণা : এ আদেশ প্রদেশ অঞ্চলসমূহের সমন্বয়ে একটি ফেডারেশন ধারণা দেয় এবং নিশ্চয়তা দেয় যে ফেডারেশনের ঐক্য কোনোভাবেই বিনষ্ট হবে না ।
২. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার : এ আদেশ জনসংখ্যা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার ভিত্তিতে ফেডারেল ও প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনের ব্যবস্থা গড়ে গণতন্ত্রের নীতিমালাকে উর্ধ্বে স্থাপন করে ।
৩. বৈষম্য হ্রাস : আদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধিগত ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রদেশসমূহ এবং আদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য হ্রাস করার অঙ্গীকার।
৪. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : এ আদেশে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপ্তি নির্দেশ না করলেও এ কথা বলা হয় যে, প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসন থাকবে। যা ছিল একটি অস্পট শব্দ এবং এ আদেশে ছয় দফা এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ দাবি উল্লেখ ছিল না ।
৫. সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের লাভ : তাড়াহুড়া করে প্রণীত এ দলিলে সাংবিধানিক বিলের উপর ভোটাটির পদ্ধতির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে অস্পষ্টতা থাকায় সাংবিধানিক বিলটি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ হবে নাকি সকল ফেডারেলের এককের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হবে তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের উপর চলে যায় ।
৬. ধর্ম নিরপেক্ষতাহীন : আদেশটিতে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সুযোগ রাখা হয়নি। এতে বলা হয় যে, পাকিস্তান হবে একটি | ইসলামি প্রজাতন্ত্র; যে ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে তা সংরক্ষণ করা হবে এবং রাষ্ট্রের প্রধান হবে একজন মুসলিম ।
৭. সংবিধান প্রণয়নের ইঙ্গিত : আইনগত কাঠামো আদেশ অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক ১২০ দিনের সময়কালের মধ্যে সংবিধান প্রণয়নের কথা ছিল। ১ এপ্রিল (১৯৭০) ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠকে জনগণের গণতান্ত্রিক দাবি দাওয়া ও আশা আকঙ্খার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষাকল্পে আইনগত কাঠামোকে যথাযথভাবে সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আইনগত কাঠামার ২৫ ও ২৭ নং ধারার তীব্র সমালোচনা করে, কারণ তা ছিল গণতান্ত্রিক নীতিমালাবিরোধী
৮. পাকিস্তানের সংবিধানে ইসলামের আদর্শের ভিত্তি : বলা হয় যে, পাকিস্তানের সংবিধান ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে রচিত হবে।
৯. পাকিস্তানের স্বাধীনতা আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় ঐক্যরক্ষা : এই আইনগত কাঠামো আদেশের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল সংবিধান অবশ্যই পাকিস্তানের স্বাধীনতা, আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হবে।
১০. গণতন্ত্রের মৌল উপাদান : সংবিধানকে অবশ্য গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং তাতে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে স্বাধীন ও সামরিক নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের মৌল উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
১১. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণ : সংবিধানকে সত্যিকার অর্থে যুক্তরাষ্ট্রীয় হতে হবে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারসমূহের মধ্যে আইন বিষয়ক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাসহ অন্যান্য ক্ষমতা এমনভাবে বিভক্ত হবে যে প্রদেশগুলোর সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আদেশের মূল বিষয় বস্তুর মধ্যে ছিল জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের গঠনের বিধিবিধান, নির্বাচন পরিচালনা ও মূলনীতি, প্রার্থীদের যোগ্যতা অযোগ্যতা, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, জাতীয় পরিষদ ও তার সদস্যবর্গের সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া এটি ছিল পুরোপুরিভাবে একটি অগণতান্ত্রিক প্রস্তাব। আইনগত কাঠামো আদেশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ২৭ নং ধারায় অনুরূপ অগণতান্ত্রিক বিধান সংযোজন করা হয়। এতে বলা হয় আদেশের কোনো ব্যাখ্যা নিয়ে সন্দেহ বা প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন এবং সেই সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।