আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।
আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর |
আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণ কি
- অথবা, আগরতলা মামলার কারণ কি ছিল? এ মামলার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর ।
- অথবা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণ কি ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল আইয়ুব খানের শাসনামলের (১৯৫৮-৬৯) সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য ও প্রহসনমূলক ঘটনা। ১৯৬৬ সালে উত্থাপিত ছয়-দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তান যখন গণআন্দোলন জোরদার হতে থাকে তখনই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আন্দোলনকে স্তিমিত করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি উৎখাতের জন্য প্রহসন মূলনীতি গ্রহণে তৎপর হন। পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বশূন্য করে এ অঞ্চলে আইয়ুব খানের ক্ষমতা ও প্রভাব সুদৃঢ় করার সূদূরপ্রসারী পরিবর্তনকেই বলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। নিম্নে মামলার কারণ, উদ্দেশ্য ও বিচার প্রক্রিয়া সহকারে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো ।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণ : নিম্নে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. সংবাদপত্র ও মৌলিক অধিকার হরণ : আইয়ুব খান সরকার সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জনগণের মতামত প্রকাশের পথ বন্ধ করে এবং মৌলিক অধিকার হরণ করে, যার ফলে তীব্র গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয় যা দমনের জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয় ।
২. ছয়-দফা কর্মসূচি : ছয়-দফা বাঙালির মুক্তির সনদ। বাঙালির বেঁচে থাকার দাবি ছিল ছয়-দফা। ছয়-দফা দাবির ফলে যে গণআন্দোলন শুরু হয় তা দমন করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। পাকিস্তান সরকার ছয়-দফাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাকিস্তান ভাঙনের দাবি বলে ঘোষণা করে। ছয়-দফা দাবি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক উপেক্ষিত হলে পূর্ব- বাংলার জনগণ তীব্র আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
৩. জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নির্মূল করা : পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতির ফলে পূর্ব-বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। যা আইয়ুব সরকারকে ভাবিয়ে তোলে । এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।
৪. শেখ মুজিবকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করা : আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কারণ ছিল শেখ মুজিবকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করা। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। শেখ মুজিব সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সুদৃঢ় করে। যা পাকিস্তানির কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য অস্বস্তিকর ছিল । যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কারণ ।
৫. শোষণ অব্যাহত রাখা এসময় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরি হয় যে, শেখ মুজিবকে দমন করতে না পারলে তাদের অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সবই বন্ধ হয়ে যাবে। এমনাবস্থায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে শেখ মুজিবুর রহমানকে দমন করে তারা শাসন, শোষণ অব্যাহত রাখতে চায় ।
৬. গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করা : ছয়-দফাভিত্তিক আন্দোলন যখন সর্বস্তরে প্রসার লাভ করেছিল তখনই সরকার রবীন্দ্রসংগীত ও পহেলা বৈশাখ নিষিদ্ধ এবং আরবি হরফে বাংলা চালুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে আন্দোলনের গতি বহুগুণে বেড়ে যায়। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তান ছয়-দফা আন্দোলন এক গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। সরকার এ গণআন্দোলনের দাবিকে নস্যাৎ করে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা উত্থাপন করা হয়।
→ আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য : আগরতলা মামলা ছিল মূলত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা এর পেছনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের উদ্দেশ্য ছিল নিম্নরূপ-
১. আন্দোলন দমনের মাধ্যমে পূর্ব-বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করা ।
২. পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রতি এ মনোভাব জাগিয়ে দেওয়া যে বাঙালিরা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়
৩. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে বিভেদ ও ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দেওয়া ।
৪. শেখ মুজিবকে রাজনীতির ময়দান হতে নির্মূল করা।
৫. আসামিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় চক্রান্ত ও বিচ্ছিন্নতা আন্দোলন ষড়যন্ত্রের কথা প্রচার করে রায় প্রদত্ত হলে পূর্ব-বাংলার রাজনৈতিক উত্থান প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং গণ সমর্থন সরকারের পক্ষে চলে আসবে। এর ফলে পরবর্তী নির্বাচনে আইয়ুব খান ও তার কনভেনশন মুসলিম লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করে ।
উপসংহার : আলোচ্য আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আগরতলা মামলার পর বাংলার জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা বিপত্তিকে পূর্ণভাবে জয় করতে শেখে। তাছাড়া বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামিদের সাহসিকতা ও সরকারের দুর্বল অভিযোগ জনগণকে আরও উত্তেজিত ও সাহসী করে তোলে। এ সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দেওয়ায় আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব গ্রহণ করে পূর্ব-বাংলার ছাত্র সমাজ। আর এরই ধারাবাহিকতায় আইয়ুব খান মামলার মূল আসামিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আইয়ুব খানের সাথে কোনো সমাধান হয়নি। যার ফলে ২৫ মার্চ তিনি পদত্যাগ করেন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।