সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি | বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি | বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি | বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি ।
সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি |
সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি | বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি
উত্তর : ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ ৪টি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা খেতাব প্রদান করে ।
১. বীরশ্রেষ্ঠ,
২. বীরউত্তম,
৩. বীরবিক্রম এবং
৪. বীরপ্রতীক।
তার মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রাপ্ত হন ৭ জন ।
→ সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি : নিম্নে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হলো :
১. সিপাহি মোস্তফা কামাল
জন্ম : ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ সালে। ভোলা জেলার পশ্চিম হাজিপুর থানার দৌলত গ্রামে ।
কর্মস্থল : সেনাবাহিনী।
পদবি : সিপাহি ।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৮নং সেক্টর।
মৃত্যু : ৮ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ।
সমাধিস্থল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়ার দরুইন গ্রামে ।
যেভাবে শহিদ হন : ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর অভিযান প্রতিহত করতে গিয়ে শহিদ হন ।
২. ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ
জন্ম : ১ মে, ১৯৪৩ সালে। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে ।
কর্মস্থল : ই. পি. আর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)।
ই. পি. আর এ যোগদান : ৮ মে, ১৯৬৩ সালে ।
পদবি : ল্যান্স নায়েক ।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ১নং সেক্টর । মৃত্যু : ২০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ।
সমাধিস্থল : চট্টগ্রামের কালুরঘাটের চিংড়িখালী নদীর তীরে । যেভাবে শহিদ হন : ২০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে রাঙামাটি ও মহালছড়ির সংযোগপথ বুড়িঘাট এলাকায় চিংড়িখালের দুই পাশে নির্মিত প্রতিরক্ষা ব্যারেজ অক্ষুণ্ণ রাখতে গিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং পলায়নরত হানাদার বাহিনীর গুলিতে শাহাদাত্বরণ করেন।
৩. ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
জন্ম : ২৯ অক্টোবর, ১৯৪১ সালে। নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে।
কর্মস্থল : বিমানবাহিনী।
বিমানবাহিনীতে যোগদান : ১৯৬৩ সালে ।
পদবি : লেফটেন্যান্ট।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : তিনি পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যু : ২০ আগস্ট, ১৯৭১ সালে।
সমাধিস্থল : পাকিস্তানের করাচির মৌরিপুর মাশরুর ঘাঁটিতে ছিল, বর্তমানে বাংলাদেশের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। ২৪ জুন, ২০০৬ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর (মৃতদেহ) বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং ২৫ জুন, ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী করবস্থানে সমাহিত করা হয়।
যেভাবে শহিদ হন : স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হবার পর নিজ দেশে ফিরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিমান সমর্থন দেবার চিন্তা করতে থাকেন। সুযোগ বুঝে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মাশরুর ঘাঁটি থেকে ১টি টি-৩৩ জঙ্গী বিমান ছিনিয়ে নেন এবং বাংলাদেশের পথে রওয়ানা দেন। কিন্তু সিন্ধু প্রদেশের মরু অঞ্চলে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে তিনি শহিদ হন।
৪. ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ
জন্ম : ২৬ এপ্রিল, ১৯৩৬ সালে। নড়াইল জেলার মহেষখোলা গ্রামে।
কর্মস্থল : ই. পি আর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্)।
ই. পি. আর এ যোগদান : ১৯৫৯ সালে ।
পদবি : ল্যান্সনায়েক।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৮ নং সেক্টর ।
মৃত্যু : ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে।
সমাধিস্থল : যশোরের গোয়ালহাটি নামক স্থানে ।
যেভাবে শহিদ হন : ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৮ নম্বর সেক্টরে স্থায়ী টহলে নিয়োজিত থাকার সময় পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পড়েন। সঙ্গীদের বাঁচাতে গিয়ে সম্পূর্ণ একাকি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সঙ্গীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
৫. সিপাহি হামিদুর রহমান
জন্ম : ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ সালে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুরে গ্রামে।
কর্মস্থল : সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীতে যোগদান : ১৯৭০ সালে । পদবি : সিপাহি।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৪ নং সেক্টর।
মৃত্যু : ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১ সালে ।
সমাধিস্থল : ভারতের আমবাসা নামক স্থানে ছিল । বর্তমানে বাংলাদেশের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। ১০ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের করব (মৃতদেহ) ভারতের ত্রিপুরার আমবাসা থেকে সামরিক মর্যাদার মধ্যদিয়ে কুমিল্লার বিবির বাজার স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং ১১ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। যেভাবে শহিদ হন : ১৯৭০ সালের ২ অক্টোবর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধ আরম্ভ হলে একদিনের জন্য তিনি মায়ের সাথে দেখা করতে আসেন। ফিরে গিয়ে তিনি ৪ নং সেক্টরে মৌলভীবাজারস্থ কমলগঞ্জের ধলইতে যুদ্ধ করেন এবং পাকহানাদার বাহিনীর সাথে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদাৎবরণ করেন ।
৬. স্কোয়াড্রন লিডার রুহুল আমিন
জন্ম : ১৮৩৪ সালে, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় । কর্মস্থল : নৌবাহিনী।
পদবি : স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ১০ নং সেক্টর ।
মৃত্যু : ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে।
সমাধিস্থল : খুলনার রূপসা নদীর তীরে কবর দেয়া হয় । যেভাবে শহিদ হন : ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস পদ্মার স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হানাদার বাহিনী পরিচালিত বিমান হামলায় জাহাজের ইঞ্জিনে আগুন লেগে তিনি পুড়ে মারা যান ।
৭. ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
জন্ম : ১৯৪৯ সালে।
কর্মস্থল : বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে ।
সেনাবাহিনীতে যোগদান : ১৯৬৭ সালে ।
পদবি : ক্যাপ্টেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৭নং সেক্টর।
সমাধিস্থল : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে। মৃত্যু : ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে ।
যেভাবে শহিদ হন : ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। পাকবাহিনী পিছু হটলে মুক্তিবাহিনী পলায়নরত পাক- বাহিনীকে ধাওয়া করে। সে সময় পাকবাহিনীর একটি বুলেট কপালে বিদ্ধ হলে তিনি শহিদ হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে যত পুরস্কার বা খেতাব প্রদান করা হয় তার মধ্যে সবার চেয়ে উত্তম হলো এই বীরশেষ্ঠ খেতাব। আর বাংলাদেশের উপর্যুক্ত সাতজনই এই খেতাবে ভূষিত হয়েছে। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এই বীরশ্রেষ্ঠদের অবদান অসামান্য ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি | বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের পরিচিতি | বাংলাদেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি কি । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।