ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর ।
ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর |
ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন, শোষণ ও হিন্দুবাদীদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় তা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালিদের জন্য সুখকর হয়নি। কেননা এর মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হলেও নতুনভাবে পাকিস্তানি শাসনের কবলে পড়ে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন ও শোষণের মাত্রা এতই তীব্রতর ছিল যে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণকেও হার মানায়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে সকল প্রকার ধন-সম্পত্তি পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতো এবং বিনিময়ে পূর্ব পাকিস্তানের লোকেরা অত্যাচার ছাড়া কিছুই পেত না। পূর্ব-বাংলার জনগণকে এই শোষণ থেকে মুক্তি দিতেই শেখ মুজিব ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয়-দফা কর্মসূচি।
→ ছয়-দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিব যে ছয়-দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেন তার পিছনে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল। তার মধ্যে ছয়-দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন : আওয়ামী লীগের ৬-দফা দাবির প্রথম মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা। ১৯৪০ সালে উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হলেও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর পাঁকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে এই সহায়তা কখনই দেয়নি । তাই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন অধ্যয়ন করার লক্ষ্য নিয়েই ছয়-দফা দাবি প্রণয়ন করা হয়। কেননা আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসন ছাড়া জনগণের মুক্তি কখনোই সম্ভব নয় ।
'২. বৈষম্যহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিনির্মাণ : আওয়ামী লীগের ছয়-দফা কর্মসূচির আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিনির্মাণ করা।
কেননা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জনগণকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। মূলত ক্ষমতাবাদ পশ্চিমা এলিট শ্রেণিরাই পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো।
ইতিহাসের দিক তাকালে দেখা যায় যে, ১৯৪৭ - ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ৪ জন রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে মাত্র একজন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। তাও আবার তিনি ছিলেন উর্দুভাষী এবং ৭ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৩ জন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের যার মধ্যে ১ জন ছিলেন উর্দু ভাষী। তাছাড়া ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ জয়লাভ | করলেও সামান্য অযুহাতে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙে দেওয়া হয়। তাই এই রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করাই ছিল ছয়-দফা দাবির অন্যতম উদ্দেশ্য।
৩. সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ছয়-দফার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কেননা একমাত্র পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হলেই পূর্ব পাকিস্তান তার ন্যায্য অধিকার পাবে। তাই ছয়-দফার প্রথম দফাতেই বলা হয় যে, পাকিস্তানের সরকার ব্যবস্থা হবে পার্লামেন্টারি পদ্ধতি। তাছাড়া এতে আরও বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক যে আইনসভাগুলো গঠিত হবে তা হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং এই সকল আইন পরিষদের সদস্যরা প্রাপ্ত বয়স্ক জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।
৪. পূর্ব-বাংলার সম্পদের উপর নিজস্ব কর্তৃত্ব কায়েম : পূর্ব- বাংলার যে সকল সম্পদ ও সম্পত্তি রয়েছে সেগুলোর উপর নিজস্ব কর্তৃত্ব অর্জন করাও ছিল ছয়-দফা দাবির অন্যতম লক্ষ্য। কেননা পূর্ব পাকিস্তানের যে সকল সম্পদ ছিল সেখানে বাঙালি জনগণের কোনোরূপ কর্তৃত্ব ছিল না। তাই সকল সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানিরা জোরপূর্বক পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেত এবং সেখানকার উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করত। অন্যদিকে নিজেদের যথেষ্ট সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর উপর নিজের কর্তৃত্ব না থাকায় পূর্ব পাকিস্তান অনুন্নতই থেকে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের এ সকল নিজস্ব সম্পদের উপর নিজস্ব কর্তৃত্ব কায়েম করার দাবি তাই ছয়-দফায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।
৫. বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : পূর্ব পাকিস্তান থেকে ক্রমান্বয়ে মুদ্রা পাচার ও সকল শিল্প দ্রব্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের কোনোরূপ শিল্প উন্নয়ন ঘটেনি। অন্যদিকে সকল শিল্পকারখানা পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহাল দশা দেখা দেয়। তাছাড়া পাকিস্তানের জন্য যে সকল বৈদেশিক সাহায্যে আসত তার পুরোটাই ভোগ করতো পশ্চিম পাকিস্তান । সকল বৈদেশিক কার্যক্রম ও লেনদেন সম্পন্ন হত পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। এতে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসা বাণিজ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তাই বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ছয়-দফা দাবির মুখ্য উদ্দেশ্যগুলোর একটি।
৬. অর্থনৈতিক সামঞ্জস্য বিধান : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যবিধান করাও ছিল ছয়-দফা দাবির আরেকটি মৌলিক উদ্দেশ্য। পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ ও সম্পদ পাচার হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনেকাংশেই ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল অনেক উন্নত। তাই এক অর্থনীতি কাঠামোর অধীনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাহাড় গড়ে উঠেছিল তা দূর করা সম্ভবপর ছিল না। এজন্য ছয়- দফায় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দুই রকম মুদ্রা থেকে দুই রকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয় ।
৭. সামরিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : ছয়-দফা কর্মসূচির আরেকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরক্ষা খাতে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা তথা সামরিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। কেননা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল একেবারেই নাজুক। বিশেষ করে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল পুরোপুরি অরক্ষিত। এসময় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী কোনরূপ নজর প্রদান করেননি। তাই ছয়-দফায় প্রতিরক্ষা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী গঠন করার কথা বলা হয়।
৮. সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্র গঠন : ঐতিহাসিক ছয়-দফা দাবির মুখ্য ও মূল উদ্দেশ্য ছিল সত্যিকার অর্থে একটি শিথিল যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা। কেননা সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হলেই কেবল পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্য ছয়-দফায় লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র গড়ে তোলার কথা বলা হয়। এমনকি কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা কেন্দ্রকে না দিয়ে কেবল আঞ্চলিক সরকারকে দেওয়ার মাধ্যমে একটি অতি শিথিল যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ছয়-দফায় উল্লেখ করা হয় ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করে একথা বলা যায়, পূর্ব-বাংলার তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার ও পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবিতে তথা আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতেই মূলত ছয়-দফা উত্থাপন করা হয়। এতে কোথায় পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলা হয়নি। কিন্তু ছয়-দফার দাবি একসময় গণ মানুষের দাবিতে পরিণত হয় এবং এরই ভিত্তিতে একসময় আমরা অর্জন করি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ছয় দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।