১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করW ।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর |
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
উত্তর : ভূমিকা : বাঙালির অগ্রনায়ক শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাংলার সাহসী পুরুষদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা করা হয়। ১৯৬৯ এর গণ- অভ্যুত্থানের ফলে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এজন্য বাঙালির ইতিহাসে ১৯৬৯ গণ-অভ্যুত্থান অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। ফলে পরবর্তীতে স্বাধীনতার স্বাদ বাঙালি পেয়ে থাকে ।
— ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো :
১. আগরতলা মামলার অবসান : এ আন্দোলনের মাধ্যমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান ঘটে। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে সাথে আরও ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব মোনায়েম চক্র কর্তৃক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় ও অটল থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিক্ত সব আসামিকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ।
২. রাজবন্দিদের মুক্তি : ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষ করে বাঙালি জনগণের মনে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থানে থাকেন। প্রচণ্ড গণ-আন্দোলনের মুখে পূর্ব বাংলার সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য রাজবন্দিদের বিনাশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
৩. শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচিতি : ১৯৬৯ সালের গণ- আন্দোলনের অন্যতম প্রভাব পড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে। তাছাড়া তিনি বাংলার জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। ১৯৬৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক গণসংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয় ।
৪. গোল টেবিল বৈঠকের আহ্বান : ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থানের তীব্রতা প্রশমনের জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করে। এ বৈঠকে ৬ দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। ফলে গণ-আন্দোলন আবারও তীব্ররূপ ধারণ করে এবং প্রশাসন নিশ্চল হয়ে পড়ে।
৫. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি : এরূপ পরিস্থিতিতে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। অবশেষে ২০ মার্চ আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে রাওয়ালপিন্ডিতে পুনরায় গোলটেবিল বৈঠকে বসে। এই বৈঠকে ১৩ মার্চ তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
(i) প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
(ii) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে।
(iii) সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
৬. গোলটেবিল বৈঠক বর্জন : রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে গৃহীত তিনটি বিষয়ে আইয়ুব খান ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেন। কিন্তু ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় আওয়ামী লীগ গোল টেবিল বৈঠক বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে ।
৭. আইয়ুব সরকারের অবসান : এ আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করে লৌহমানব আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ তথা রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন ।
৮. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : মূলত ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যুত্থানের চেতনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধিকার অর্জনের চেতনায় জাগ্রত করে তোলে । অপরদিকে, পূর্ব পাকিস্তানে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটতে থাকে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
৯. জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : ১৯৬৯ সালের এই গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের র পুনর্জাগরণ ঘটে। আর জাতীয়তাবোধের চেতনা থেকেই তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের উৎসাহ জোগায় ।
১০. স্বৈরাচার বিরোধী মানসিকতা তৈরি : গণ-অভ্যুত্থানের ফলে জনগণের মধ্যে স্বৈরাচার বিরোধী মানসিকতা গভীরভাবে প্রোথিত হয়। বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য জনগণ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্যও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়।
১১. বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি : এ গণ-অভ্যুত্থানের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির একমাত্র নন্দিত নেভায় পরিণত হন ।
১২. একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটি পুনর্বহাল : ১৯৬৯ এর গণ- অভ্যুত্থানের ফলে জাতীয় চেতনার প্রতীক ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পূর্বের মর্যাদা ফিরে পায়। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছুটির দিন ঘোষণা করেছিল । কিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পর এ ছুটি বাতিল হয়ে যায় ।
১৩. স্বাধীনতা অর্জন : পাকিস্তানের সামরিক জান্তা এ গণ- আন্দোলনকে স্তব্ধ করার শত প্রচেষ্টা চালিয়েও সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। এ আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার যে মহান ব্রত নেয় তা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাস্তবরূপ লাভ করে।
১৪. এলিটদের মনোবল নষ্ট : ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন কেবল আইয়ুব খানের শাসন বিরোধী আন্দোলনই ছিল না, বরং এ আন্দোলন ক্ষমতাকেন্দ্রিক এলিটদের বিরুদ্ধেও ছিল। তাই এ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতাকেন্দ্রিক মনোবল নষ্ট হয়।
উপসংহার : আলোচনার শেষে স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে পূর্ব বাংলার ব্যাপক লাভবান হয় । বাঙালির মুক্তির জন্য যে সময় আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পায় সে সময় যদি আন্দোলন না হতো তবে হয় তো বঙ্গবন্ধু সেদিন মুক্তি পেত না। আর মুক্তি না পেলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদও ভোগ করতে পারতোম কিনা তা সন্দেহ আছে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।