১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ ।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ |
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ
- অথবা, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ আলোচনা কর।
- অথবা, সামরিক শাসন জারির কারণগুলো লিখ ।
- অথবা, সামরিক শাসন জারির কারণগুলো কি ছিল? বিস্তারিত আলোকপাত কর ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির বহুবিধ কারণ উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানে ১৯৫৬ সালের পর প্রবর্তিত শাসনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকরী হতে না পারায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। শাসনতান্ত্রিক অস্থিরতার ফলে রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মীর্জা হতভম্ব হয়ে পড়েন। তাই ১৯৫৮ সালে সমগ্র পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামরিক শাসন জারি করেন। যে কারণে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসন জারি করা হয়েছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সুসংগঠিত সেনাবাহিনী : ১৯৫৪ সালে পাক-মার্কিন চুক্তির ফলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একদিকে যেমন প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভার সংগ্রহে সফল হয়, অন্যদিকে তেমনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক বেশি সুসংহত হয়ে ওঠে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও ঐক্যবোধ অর্জনে সক্ষম হয়। সুতরাং ক্ষমতা দখলে মনস্থ করলে তখন সামরিক বাহিনীর পথ রুদ্ধ করার কোনো ক্ষমতা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের অবশিষ্ট ছিল না ।
২. দলীয় শৃঙ্খলার অভাব : পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলার অভাব, দলবদলের পালা, উপদলীয় কোন্দল প্রভৃতি কারণে জনগণ রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে এ সুযোগে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন।
৩. গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা : পাকিস্তানের ১৯৪৭ সাল থেকে প্রায় একদশক যে গণতান্ত্রিক শাসন প্রচলিত ছিল সে - সমস্যা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে ১৯৫৭ সালের দিকে গণতান্ত্রিক সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকবিলায় ব্যর্থ হয়। তাই প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে সামরিক শাসন প্রবর্তন করেন।
৪. মুসলিম লীগের দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থান : পাকিস্তানের দু'প্রদেশের মধ্যে ঐক্যবন্ধনের প্রতীক হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে মুসলিম লীগের অবস্থা হয়ে উঠে অত্যন্ত শোচনীয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় যুক্তফ্রন্টের নিকট মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম লীগের নেতারা রিপাবলিকান দলে যোগদান করায় সেখানেও মুসলিম লীগের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।
৫. বাঙালি ও পাঞ্জাবি দ্বন্দ্ব : পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থান, জাতিগত ভিন্নতা বাঙালি বনাম পাঞ্জাবি দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছিল। এ দ্বন্দ্বের ফলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর হতে ব্যর্থ হয়। এ দ্বন্দ্বের অবসান না হওয়ায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ কোনো অমূলক ঘটনা ছিল না।
৬. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : ১৯৫৬ সালের সংবিধান কার্যকর হবার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রাতারাতি ক্ষমতার হাত বদল হয়। ক্ষমতার এরূপ হাত বদল দেশটিকে শোচনীয়ভাবে রাজনেতিক দেউলিয়াপনায় নিক্ষেপ করে। ফলে মারাত্মকভাবে সরকারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয় বলে সামরিক শাসন জারি অনিবার্য হয়ে পড়ে ।
৭. নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের সম্ভাবনা : ১৯৫৯ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগের বিজয় লাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তাই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন আইয়ুব খান নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন।
৮. প্রশাসনিক দুর্নীতি : সামরিক সরকার উল্লেখ করে যে, তৎকালীন পাকিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি সকল যুগের দুর্নীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই এ অবস্থায় দেশকে বাঁচানোর তাগিদে দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে।
৯. আমলাদের দৌরাত্ম্য : পাকিস্তানে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে একদশকে আমলাদের দৌরাত্ম্য দ্বিগুণ বেড়ে যায় । তবে এ আমলাদের হস্তক্ষেপ পাকিস্তানের ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিরাজমান ছিল। গোলাম মোহাম্মদ, ইস্কান্দার মীর্জা, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, জেনারেল আইয়ুব সকলে হয় আমলা না হয় সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আর এদের অঘোষিত হস্তক্ষেপের ফলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যর্থ হয়। আর গণতান্ত্রিক শাসনের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে সামরিক শাসন চালু হয়।
১০. মন্ত্রিসভার দ্রুত রদ বদল : স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা দ্রুত রদ বদল হতে থাকে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে একটি সরকার মাত্র ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মতো দক্ষ, প্রজ্ঞা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ কেন্দ্রে মাত্র ১৩ মাস ক্ষমতাসীন ছিলেন।
১১. সেনাবাহিনীর ক্ষমতা লাভের বাসনা : পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করে এসেছিলেন। ১৯৫৮ সালের সামরিক অবস্থান ছিল মূলত মোহাম্মদ আইয়ুব খানের নেতৃত্বাধীন এক শ্রেণির সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনায় পরিণত হয়।
১২. সংবিধান অকার্যকর হওয়া : পাকিস্তানের সংবিধানিক স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য ১৯৫৬ সালের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ১৯৫৬ সালের সংবিধান কার্যকরী হতে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ব্যর্থতা গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতাকে ফুটিয়ে তুলেছিল। তাই ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন প্রবর্তন করেন।
১৩. বার্মার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রভাব : ১৯৫৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বার্মার সেনাপতি জেনারেল নে উইনের ক্ষমতা দখল ও প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ও জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের নিকট পথ প্রদর্শন হিসেবে কাজ করে ।
১৪. বাঙালি ও পাঞ্জাবি দ্বন্দ্ব : পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থা জাতিগত বিভেদের কারণে বাঙালি বনাম পাঞ্জাবি দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের ফলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকরী হতে ব্যর্থ হয়। এই দ্বন্দ্বও পাকিস্তানে সামরিক সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৫. আইনসভায় অপ্রীতিকর ঘটনা : ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আইন পরিষদে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগও বিরোধী দলীয় সদস্যদের মধ্যে বৈঠক চলাকালে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী মারত্মকভাবে আহত হন এবং তিন দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান । এই ঘটনা গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করে ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তান সৃষ্টি থেকে নানা ধরনের অনৈক্য সৃষ্টি হয়। যার ফলে সামরিক হস্তক্ষেপ আবশ্যক হয়ে পড়ে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির কারণ ও ফলাফল লিখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।