বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতির বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতি কত প্রকার
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতির বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতি কত প্রকার জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির শ্রেণিবিভাজন টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি কয় ধরনের টি।
বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতির বর্ণনা দাও |
বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? কি কি সংক্ষেপে লিখ
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ প্রকৃতির এর অপরূপ লীলাভূমি। এখানে ভূ-প্রকৃতি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। বাংলার ভূ- প্রকৃতি মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে। অফুরন্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই প্রকৃতিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর কোথ৷ও সমতল কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু। ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যের কারণে কোথাও ফসল ভালো হয় আবার কোথাও ফসল অনেক কম হয়। কোনো অঞ্চলের মানুষের জীবন হয় সংগ্রামী আবার কোনো অঞ্চলের মানুষের জীবন অলসতায় ভরপুর । নিম্নে প্রশ্নলোকে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো :
ভূ-প্রকৃতি : বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি বৃহৎ-ব দ্বীপ অঞ্চল । পদ্মা, যমুনা, ও মেঘনা নদী পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিক থেকে এদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ভূমির বন্ধুরতার পার্থক্য ও গঠনের সময়ানুক্রমিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূ- প্রকৃতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় ।
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ;
২. প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ বা চত্বরভূমি ও
৩. সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি।
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ : রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকাগুলো নিয়ে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ সম্ভবত টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় মায়ানমারের দিক থেকে আগত গিরিজনি আলোড়নের ধাক্কার ভাজগ্রস্ত হয়ে এসব পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এদের টারশিয়ারি পাহাড় বলা হয় । সংক্ষেপে বলা যায় যে, টারশিয়ারি যুগের হিমালয় অঞ্চলকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ ও
২. দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ।
উত্তর ও উত্তর পূর্বোঞ্চলের বলতে পাহাড়সমূহ বুঝায় ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তর পূর্বাংশ এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের দক্ষিণাংশের ছোট বড় বিচ্ছিন্ন পাহাড়কে ।
দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ বলতে খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দাবান জেলা এবং চট্টগামের অংশ বিশেষ এ অন্তর্গত পাহাড়কে বুঝায় । এ পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার ।
২. প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ : অনুমান করা হয় ২৫,০০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিনকালের আন্তঃবরফগলা পানিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়ে এসব চত্বরভূমি গঠিত হয়েছিল।
(ক) বরেন্দ্র ভূমি : বরেন্দ্র ভূমি রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৯৩২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। প্লাবন সমভূমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। গভীর খাত বিশিষ্ট আঁকাবাঁকা ছোট ছোট কয়েকটি স্রোতস্বিনী এ অঞ্চলে রয়েছে।
(খ) মধুপুর ও ভাওয়াল গড় : উত্তরের ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত অর্থাৎ ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও গাজীপুর অঞ্চল জুড়ে প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ অবস্থিত এর মোট আয়তন ৪১০৩ বর্গকিলোমিটার। মাটি কংকর মিশ্রিত ও লাল প্লাবন সমভূমি থেকে এর পূর্ব ও দক্ষিণ অংশের উচ্চতা ৬ মিটার কিন্তু পশ্চিম ও উত্তর দিকের উচ্চতা ৩০ মিটার। মধুপুর গড়ের অঞ্চলটি পাহাড়ের ক্ষয়িত অংশবিশেষ মধুপুর গড়কে অনেক বিশেষজ্ঞ নদী সোপান “আবার কেউ কেউ একে উত্থিত বা ব-দ্বীপও বলেন। বরেন্দ্রভূমির মতো এখনকার রং দেখতে লাল এবং বসবাসসহ বলে কৃষিকাজের উপযোগী নয় ।
(গ) লালমাই পাহাড় : কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কি. মি. দক্ষিণে লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত এটি বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার এবং গড় উচ্চতা ২১ মিটার। এর মাটি লালচে মুড়ি এবং বালি কংকর দ্বারা গঠিত।
৩. সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি : টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ এবং প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি অসংখ্য ছোট বড় নদী বাংলাদেশের সর্বত্র জালের মতো ছড়িয়ে আছে সমতল ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত বলে এ নদীগুলো বন্যার সৃষ্টি করে, দেশের অধিকাংশ অঞ্চল তখন জলমগ্ন হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার সাথে পরিবাহিত পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে পলল সমভূমি গঠিত হয়। এর আয়তন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের উত্তরাংশ থেকে সাগর উপকূলের দিকে সমভূমির একক ঢালু। সুন্দরবন প্রায় সমুদ্র সমতলে অবস্থিত কিন্তু সমুদ্র সমতল থেকে দিনাজপুরের উচ্চতা ৩৭.৫০ মিটার। বগুড়ার উচ্চতা ২০ মিটার। ময়মনসিংহের উচ্চতা ১৮ মিটার। সমভূমির স্থানে স্থানে বহু নিম্নভূমি বা জলাশয় দেখতে পাওয়া যায়। সমভূমির পরিত্যক্ত অশ্বক্ষুরাকৃতি নদী খাল ও ভূ- পৃষ্ঠের অবনমনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে।
সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি আরও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। যেমন-
(ক) কুমিল্লার সমভূমি : চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিকাংশ এবং লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও হবিগঞ্জ জেলার কিছু অংশে এ সমভূমি অবস্থিত।
(খ) সিলেট অববাহিকা : সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এবং কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার পূর্বদিকের সামান্য অংশ নিয়ে সিলেট অববাহিকা গঠিত।
(গ) পাদদেশীয় পলল সমভূমি : দেশের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত বৃহত্তম রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ স্থান জুড়ে পাদদেশীয় পলল সমভূমি অবস্থিত।
(ঘ) গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্লাবন সমভূমি : এটিই বাংলাদেশের মূল প্লাবন সমভূমি নামে পরিচিত এ প্লাবন সমভূমি বৃহত্তম ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও রাজশাহী জেলার অংশ বিশেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ।
(ঙ) ব-দ্বীপ অঞ্চলীয় সমভূমি : বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমের সমভূমিকে সাধারণতর ব-দ্বীপ বলা হয়। এ ব-দ্বীপ অঞ্চলটি বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলের সমুদয় অংশ এবং রাজশাহী, পাবনা ও ঢাকা অঞ্চলের কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত। তাছাড়া ব-দ্বীপ অঞ্চলের সমভূমি আবার চার ভাগে বিভক্ত । যথা-
১. সক্রিয় ব-দ্বীপ,
২. মৃতপ্রায় ব-দ্বীপ,
৩. স্রোতজ সমভূমি ও
৪. চট্টগ্রমের উপকূলী সমভূমি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ এমন একটি ভূ-খণ্ড যার প্রত্যেকটি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ভূ-প্রকৃতির মাধ্যমে। আর অবস্থান ভেদে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। এগুলোর প্রত্যেকটির রয়েছে আলাদা স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য। এর ফলে কোনো অঞ্চল উঁচু আবার কোনো অঞ্চল নিচু। কোথাও কৃষিপণ্য উৎপাদন বেশি হয় আবার কোথাও কৃষি পণ্য উৎপাদন হয় অনেক কম। ভূ-প্রকৃতির কারণে কোনো অঞ্চলের মানুষ হয় অপরাধ প্রবণ আবার এর কারণে কোনো অঞ্চলের মানুষ হয় সৎনিষ্ঠাবান। কোনো অঞ্চলের মানুষ হয় পরিশ্রমী আবার কোনো অঞ্চলের মানুষ হয় অলস প্রকৃতির ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতির বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতি কত প্রকার
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতির বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতি কত প্রকার টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি কয় ধরনের টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।