রাজুর শৈশব খুদে গল্প
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রাজুর শৈশব খুদে গল্প জেনে নিবো। তোমরা যদি রাজুর শৈশব খুদে গল্প টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের রাজুর শৈশব খুদে গল্প টি।
রাজুর শৈশব খুদে গল্প |
রাজুর শৈশব খুদে গল্প
পড়ন্ত বিকেলে ঢাকার ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে রাজু ভাবে— কালের প্রবহমান স্রোত জীবনকে আজ কতদূরে নিয়ে এসেছে। কিন্তু শৈশবের স্মৃতিগুলো আজও অমলিন মনের মণিকোঠায়। সেই দুরন্ত শৈশবের অম্ল- মধুর স্মৃতি তাকে অতীতের কোলে টেনে নেয়। এই নাগরিক কোলাহল রাজুর একদম ভালো লাগে না। একঘেয়েমি, যান্ত্রিক এই মহানগরের জীবন যেন ডাঙায় তোলা মাছের মতো সর্বদা খাবি খায়। পালাতে ইচ্ছা হয় সব কিছু ছেড়ে । জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাজু তা পারে না। তবে শৈশবের অমলিন স্মৃতিগুলো যেন নাগরিক শ্বাসরুদ্ধতার মধ্যে এক পলকা নির্মল ও শুভ্র বাতাস ।
রাজু ভাবে কত না সুন্দর ছিল তার শৈশব। গোপালপুর নামক ছোটো গ্রামে তার বেড়ে ওঠা । সেখানে ছিল না, নগরের যান্ত্রিক ছোঁয়া।
সকালে মা তাকে গরম ভাত খাইয়ে দিতেন নিজ হাতে। স্কুলের জামা- জুতা পরিয়ে দিতেন। তার খুদে হাত মুঠোয় করে রোজ স্কুলে দিয়ে আসতেন মা। কলেজিয়েট প্রাথমিক স্কুলে পড়ত সে। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় স্কুলের শিক্ষকগণ তাকে খুব ভালোবাসতেন। স্কুলের শেখার বিষয়টা ছিল অতি আনন্দের। এখনকার বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের মতো বইয়ের বোঝা তাকে বইতে হয়নি।
সবাই ক্লাসে বসে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতো কখন বারোটা বাজবে । দপ্তরি আব্দুল হাই ঘণ্টার আওয়াজ দেবেন । ঘণ্টা বাজা মাত্র ভোঁ- দৌড়ে স্কুল-মাঠে হাজির হতো রাজু ও তার সহপাঠীরা। দুপুরের রোদকে থোড়াই কেয়ার করে তারা খেলায় মেতে উঠত। টিফিনের একটা ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে থাকত বিদ্যালয়ের আঙিনা। আর স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মায়ের হাতে তৈরি টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়ার স্মৃতি তো আজও তাকে অশ্রুসিক্ত করে তোলে। আজ সে কোথায় আর কোথায় তার স্কুল বন্ধু রহিম, জসিম, আল-আমিন, জীবন ও রোমানরা।
স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের হাতে খেতো রাজু। মা তাকে ঘুম পাড়াতে চাইতেন । রাজু ঘুমের ভান করে থাকত। যেই না মা সরে যেতেন, অমনি রাজু পগারপার। মা আর তাকে খুঁজে পেতেন না। খুঁজে পেত তার বন্ধুরা। পাড়ার বড়ো মাঠে। ক্রিকেট খেলতে খুবই পছন্দ করত রাজু। ভালো ক্রিকেট খেলতো বলে কেবল বন্ধু মহলেই নয়, পাড়ার বড়ো ভাইয়েরাও রাজুকে খুব স্নেহ করতেন। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়লেই রাজু বাড়ি ফিরে যেত। ধুলো জড়িয়ে থাকত তার সারা গায়ে । মা তাকে জোর করে আবার গোসল করাতেন। গোসল করানোর পর তাকে ঘরে ঢুকতে দিতেন মা ।
সন্ধ্যায় রাজুর বাবা অফিস থেকে ফিরতেন। রাজু তখন লক্ষ্মী ছেলের মতো বইয়ে মাথা গুঁজে স্কুলের পড়া তৈরি করত। সন্ধ্যায় দুরন্ত রাজু আর দুরন্ত থাকত না। বাবার কণ্ঠস্বরকে সে যমের চেয়ে বেশি ভয় করত। উচ্চস্বরে পড়ত সে। ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসত। তবু ঘুমাতে পারত না সে বাবার ভয়ে । এই বুঝি বাবা দিলেন এক ধমক।
তখনকার দিনে প্রায় প্রতি রাতেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট অর্থাৎ লোডশেডিং হতো । লোডশেডিং ছিল রাজুর প্রার্থনার বস্তু। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজুর ঘুমও উধাও হয়ে যেত। স্কুলের দুরন্তপনা এবং খেলার মাঠের চঞ্চলতা আবার তার ওপর ভর করত। বিদ্যুৎ গেলে তাকে পড়তে হতো না । দুপুরের খেলার মাঠের বদলে রাতে সে নেমে পড়ত বাড়ির আঙিনায় । উঠান যেন মুহূর্তেই শিশু-কিশোরদের মেলায় রূপ নিতো। ‘কুক পালানো’, ‘ছোয়াছুঁয়ি’, ‘কানামাছি’ ছিল রাজুদের রাতের খেলা। তবে 'কুক পালানো' ই ছিল তাদের প্রধান খেলা। কেউ কেউ আবার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসতো। রূপকথার রাজকুমার-রাজকুমারীর জগতে ডুবে যেত অনেকেই ।
বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত অবিরাম তারা খেলেই চলত। যেই বিদ্যুৎ আসত, অমনি সবাই উঠোন খালি করে এক দৌড়ে বাসায় ফিরে যেত। হাত-মুখ ধুয়ে ফের রাজু পড়তে বসতো। পড়ার চেয়ে ঘুমই তখন তাকে বেশি টানত। কতদিন যে না খেয়েই রাজু ঘুমিয়ে যেত তার কোনো ইয়ত্তা ছিল না । অবশ্য মা তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে হাতে তুলে খাইয়ে দিতেন ।
হঠাৎ বাসের কর্কশ হর্নে রাজু সম্বিৎ ফিরে পায়। শৈশবের স্বর্গ থেকে নেমে আসে নগর জীবনের বাস্তবতার মাটিতে। দীর্ঘশ্বাসে বুক তার ভারি হয়ে আসে। দ্রুত হেঁটে চলে রাজু। সামনের গলিতে গিয়েই যে তাকে বাস ধরতে হবে। ফিরতে হবে ইট-পাথরের বদ্ধ কুঠিতে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ রাজুর শৈশব খুদে গল্প
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রাজুর শৈশব খুদে গল্প টি। যদি তোমাদের আজকের এই রাজুর শৈশব খুদে গল্প টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।