স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর টি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর |
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ভাবের বাহন ভাষা, বাংলা বাঙালির প্রাণের ভাষা। বাঙালি তাদের প্রথম সংগ্রাম ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু করে। মূলত ভাষাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলা ভাষার গৌরব এতই মহৎ যে পৃথিবীর কোনো জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি কিন্তু বাঙালিরাই প্রথম ভাষার জন্য প্রাণ দেয়। এই ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা নিয়ে বাংলার বীর সন্তানেরা পরবর্তীতে স্বাধীনকারের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ের পর বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়। আর এটা অনস্বীকার্য যে এই ভাষা জনগণের ঐক্য ও সংহতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। আর এই ঐক্য ও সংহতির সামগ্রিক রূপই স্বাধীনতা । নিম্নে প্রশ্নালোকে আলোচনা করা হলো :
স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ে বাংলা ভাষার অবদান : স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পেছনে ভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই ভাষায় ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাঙালি স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পেছনে ভাষার অবদান আলোচনা করা হলো :
১. ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় চেতনা : পৃথিবীর ইতিহাসে অধিকাংশ দেশই গড়ে উঠেছে ভাষাকে কেন্দ্র করে। ভাষা যেকোনো দেশ গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখে। আর বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের ভাষা বাংলা। তাই বাংলাদেশও ভাষাভিত্তিক একটি জাতি রাষ্ট্র। বাঙালিরা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা আন্দোলন করে রক্ত ঝরায়। এরই পরিক্রমায় বাঙালি জাতি উদ্বুদ্ধ হয় স্বাধীনতা সংগ্রামে আর জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মৃত্তিকার উপর স্বাধীন সার্বভৌম, বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে একাত্তরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ভাষা ভিত্তিক জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে বাঙালি প্রমাণ দেয় ভাষাই তার জীবন, ভাষাই তার বল ভাষাই তার অস্তিত্ব ও জীবনবাতি। বাংলা ভাষার জন্মের মাধ্যমেই মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিস্থাপন করা হয় যা স্বাধীনতা অর্জনে উৎসাহ যুগিয়েছে।
২. বাংলা ভাষার বিস্তৃতি : বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই। মূলত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তাই ভাষার নাম বাংলা দেশের নাম বাংলাদেশ। বাংলা ভাষা যখন জন্ম লাভ করে তখন এ ভাষা আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা প্রেরিয়েও অনেক দূর সীমানা বিস্তার করে । বাংলা ভাষার বিস্তৃতি সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে জানা যায় যে প্রত্ন বাংলা আসামিয়া প্রত্ন-মৈথিল। ও প্রত্ন উড়িষ্যাও আরও বিস্তৃতি ছিল । তাই ভাষা বিজ্ঞানের মতে, নীতি প্রাকৃত জনসাধারণের আদিম প্রাকৃত ভাষা থেকেও বাংলা। ভাষার জন্ম। গৌড় প্রকৃতির পরবর্তী স্তর গৌড় অপভ্রংশ হতেই বাংলাভাষার উৎপত্তি ।
৩. বাংলা ভাষা থেকে শিক্ষালাভ : বাংলা ভাষায় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কারের ইতিহাস রয়েছে প্রায় ১৩ শত বছরের বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা ও বিকাশিত হয় পাল রাজবংশের শাসনামলে। বাংলা ভাষায় আদি পরিচয় পাওয়া যায় নেপালের রাজদরবারে বাংলা ভাষায় আদি নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কারের মাধ্যমে। চর্যাপদের অনেক কবি ছিলেন তারাও বাংলা ভাষায় অনেক কবিতা, বর্ণনা, মাহাত্ম্য ও গান গেয়েছেন। আবার বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল সেই আদিকাল থেকেই। আর বাংলা ভাষা তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে যুগে যুগে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে । এ লড়াই থেকে বাঙালি শিক্ষা নিয়ে সকল ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে ।
৪. সুদীর্ঘ পথ অতিক্রমের শিক্ষা : বাংলা ভাষা গৌরবের ভাষা যে ভাষার গৌরব ও স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে একটি রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, মাতৃভাষা থেকে রাষ্ট্রভাষা। বাঙালি মাতৃভাষার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে এদেশের বাঙালি সম্যকরাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর ভাষা তার নিজের ভাষা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। আর বাঙালিরা এ ভাষা থেকে প্রেরণা নিয়েই ১৯৭১ সালে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় ।
৫. ঐক্যের সৃষ্টি : ভাষা একটি অঞ্চলের মানুষের মাঝে ঐক্য সৃষ্টিতে সাহায্য করে। জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম শর্ত হলো ভাষাগত ঐক্য। বাংলাভাষা আমাদের মাতৃভাষা আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলাদেশের জাতি গঠনের অন্যতম সংগঠক ছিল ভাষা। জাতির পরিচয় ও সংজ্ঞা নিয়ে মত পার্থক্য ও মতভিন্নতা গড়েও শেষ পর্যন্ত আমাদের জাতিসত্তা নির্মাণে ভাষাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা ঐক্য সৃষ্টিতে মূল হাতিয়ার। আর এ ভাষা বাঙালিদের ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দু-মুসলিম খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের লোকদের যুদ্ধ করতে বাধ্য ( করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ।
৬. অভিন্ন জাতিসত্তা গঠন : আঠারো শতকের শেষের দিকে উনিশ শতকে বাঙালির নবজাগরণ শুরু হয় হিন্দু ও ব্রাহ্মণধর্মের অনুসরণকারীদের কেন্দ্র করে। বেনেস ধর্মাশ্রিত হওয়ায় সাধারণ হিন্দু জনগোষ্ঠী তো বটেই অনেক অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন হিন্দু মনীষীও হিন্দুত্ব ও বাঙালিত্বকে সমার্থক মনে করেছেন।
মনীষীদের অভিমত : বাংলা ভাষা কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম প্রসঙ্গে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো :
ড. অতুল সুর তার লিখিত গ্রন্থ “বাংলা ও বাঙালির বিবর্তন” -এ বলেন, “বাঙালি বলতে আমরা মাত্র তাদেরই বুঝি যাদের মাতৃভাষা বাংলা এবং যারা বিশেষ সংস্কৃতির বাহক। আর তার বর্ণিত ও সংস্কৃতিই পরবর্তীতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ধারক।”
গোপাল হালদার বলেন, তার ‘সাহিত্যের রূপরেখা' গ্রন্থে বাংলা যার শৈশব নিজস্ব ভাষা তিনিই বাঙালি। আর তার এ বাঙালি নিয়েই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত ।
ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি । তিনি যে বাঙালি জাতি নিয়ে গর্ববোধ করতেন আর যে ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল সেই বাঙালিই স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে আসেন।”
অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, “ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও অর্থনৈতিক মুক্তি চেতনার প্রেরণা থেকেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়।”
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের উপর প্রতিষ্ঠিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে চিহ্নিত।”
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মাতৃভাষা বাংলাকে কেন্দ্র করে। কারণ বাঙালিরা বাংলা ভাষার নানা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে লড়াই করে বিশ্বের দরবারে নিজের স্থান করে নেয় তা দেখে বাঙালিরা অনুপ্রেরণা লাভ করে। তারা শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অগ্নিগর্ভ চোখকে উপেক্ষা করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদীর চেতনায় অবশেষে দীর্ঘ নয় বছর যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই বলা যায়, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। একটা ছাড়া আরেকটাকে কল্পনা করা যায় না।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা কর টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।