মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ জেনে নিবো। তোমরা যদি মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ টি।
মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ |
মানবাধিকার রচনা
ভূমিকা: মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করে ব্যক্তি সমাজজীবনে যেসব সুযোগ- সুবিধার দাবিদার হয় এবং যা ব্যতীত তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে পারে না, তা-ই মানবাধিকার। এটি মানুষের জন্মগত অধিকার। জাতি-ধর্ম- বর্ণ, নারী-প -পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই মানবাধিকারের মর্মবাণী।
মানবাধিকারের পটভূমি: সুপ্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীতে মানুষে মানুষে বিভেদ আর হানাহানি চলছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র-ভাষা প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে। আবার একই জাতি, ধর্ম, ভাষাভাষীদের মধ্যেও শ্রেণিবিভেদ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত কম হয়নি। ফলে গত শতকে বিশ্ববাসী সম্মুখীন হয়েছিল দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের। যে যুদ্ধ মূলত মানুষের বিকৃত মানসিকতার ফসল। তাই সচেতন বিশ্ববাসী দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে গিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তির নিবাস গড়তে আগ্রহী।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস দীর্ঘ। সভ্যতার ঊষালগ্নেও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন— খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার বছরেরও আগে পৃথিবীর প্রাচীনতম আইন সংকলক ব্যাবিলনের রাজা হাম্মুরাবির নিয়মাবলিতে মানবাধিকারের ধারণা পাওয়া যায়। খ্রিষ্টের জন্মের তিনশ বছর পূর্বে রোমান আইনজ্ঞ সিসেরো মানবাধিকারের ভিত্তিতেই তাঁর প্রাকৃতিক আইনের তত্ত্ব রচনা করেন। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে হজরত মুহম্মদ (স.) কর্তৃক প্রণীত মদিনা সনদেও মদিনার সকল নাগরিকের সমঅধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। পরবর্তীতে ষোলো, সতেরো এবং আঠারো শতকে মানবাধিকারের দাবি উচ্চারিত হয় ফ্রান্সের লেখক রোদ্যা, ইংল্যান্ডের দার্শনিক জন লক, ফ্রান্সের দার্শনিক রুশোর লেখায়। এছাড়া ১২১৫ সালে ব্রিটেনের ম্যাগনা কাটা, ১৬৮৯ সালের অধিকার বিল, ১৭৭৬ সালের ভার্জিনিয়ার অধিকার বিল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট মাইলফলক। ফরাসি বিপ্লবের ঘোষণাও মানবাধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই মানবাধিকারের ধারণা সুস্পষ্ট হতে থাকে। তাই বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার সুস্পষ্ট ভাষায় সাংবিধানিক আইনের মর্যাদা পাচ্ছে। সর্বজনীন মানবাধিকার: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সীমাহীন নৃশংসতা, বিশেষ
সর্বজনীন মানবাধিকার: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সীমাহীন নৃশংসতা, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী ইতালি সরকার এবং নাৎসি জার্মান সরকারের বর্বরতা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। ফলে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, চলাফেরার অধিকার, কথা বলার অধিকার, ধর্ম চর্চার অধিকার তথা মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়ে ওঠে বিশ্ববাসী। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকো শহরে স্বাক্ষরিত হয় জাতিসংঘ সনদ। আর এই সনদেই সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক পরিসরে মানব জাতির মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘মৌল মানবিক অধিকার, মানুষের মর্যাদা এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকারের প্রতি এই সংখ্যা পুনরায় আস্থা রাখার অঙ্গীকার করেছে।' পরবর্তীকালে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা গৃহীত হলে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার ভিত্তি রচিত হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাটি ৩০টি ধারাসংবলিত।
মানবাধিকার ও জাতিসংঘ: ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মৌলিক মানবাধিকারসমূহ গৃহীত ও ঘোষিত হওয়ায় সদস্য রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবছর এ দিনটিকে "মানবাধিকার দিবস' হিসেবে উদযাপন করে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারসংক্রান্ত নীতিসমূহ এ রকম: ১. পৃথিবীর সকল মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং সমঅধিকার ও সমমর্যাদাসম্পন্ন। ২. সকল অধিকার ও স্বাধীনতা সকলের সমানভাবে উপভোগের অধিকার রয়েছে। ৩. পৃথিবীর সকল স্বাধীন, অর্ধ-স্বাধীন বা অ- স্বায়ত্তশাসিত যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিককে তার দেশের রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য বা তারতম্য করা হবে না। মানবাধিকার আর্থসামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে থাকে। কেননা
এমন অনেক রাষ্ট্র রয়েছে, যেখানে সরকার স্বেচ্ছায় জনগণকে বা জনগণের কোনো অংশবিশেষকে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রদানে অনিচ্ছুক থাকে। কিন্তু জাতিসংঘের সদস্য হওয়ায় এসব রাষ্ট্র মানবাধিকার ভোগের পরিবেশ বজায় রাখতে, অর্থাৎ আর্থসামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় বাধ্য হয় ।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার: মানবাধিকার সকল মানুষকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দান করে। অর্থাৎ মানবাধিকার নাগরিকের মতামত প্রকাশের এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশের অনুকূল পরিবেশও গড়ে তোলে । এর ফলে গণতন্ত্র সফল ও সার্থক হয়ে ওঠে।
মানবাধিকার ও বাংলাদেশের সংবিধান: বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে, ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদ পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এসব অধিকার জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং মানবাধিকারগুলোকে আরও উন্নত ও সুবিন্যস্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানে ।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের উদ্যোগ: বাংলাদেশের সংবিধানে যেমন মানবাধিকারের প্রতিফলন রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও সেবা সংস্থা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া, অসহায় মানুষকে শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিচর্যা, পুনর্বাসন, ঋণদান প্রভৃতি সেবা দান করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানগুলো ।
মানবাধিকার ও বর্তমান পরিস্থিতি: ১৯৪৮ সালে মানবাধিকার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করলেও এখনো মানবাধিকারের পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কেননা, সমগ্র বিশ্বে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ চিন্তা, বিবেক, ধর্মের স্বাধীনতা এবং নারী- পুরুষের সমঅধিকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খাদ্য, শিক্ষা, বস্ত্র, বাসস্থানের সুব্যবস্থা অনেক মানুষেরই নেই। পুঁজিবাদী দেশগুলোর পৃথিবীব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা এবং অনগ্রসর দেশগুলোর দারিদ্র্যের কশাঘাতে মানবাধিকারের বাস্তবায়ন আশানুরূপ হয়নি ।
উপসংহার: জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয় (UNHCR) মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তৎপর । তাই আশা করা যায়, সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে মানবাধিকার। সারা পৃথিবীর মানুষ ভোগ করবে সমান অধিকার, সমান মর্যাদা ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ টি। যদি তোমাদের আজকের এই মানবাধিকার রচনা | মানবাধিকার রচনা পয়েন্ট সহ টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।