মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা টি।
মনুষ্যত্ব রচনা শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা |
ভূমিকা: মানুষ বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সামাজিক জীব। একজন মানুষের মানসিকতার ভালোমন্দ দুটো দিকই থাকতে পারে। জন্মের পর থেকে মানুষ যেসব ইতিবাচক দিকের অনুশীলন করে, মনুষ্যত্ব বা মানবতা তার মধ্যে অন্যতম। পারিবারিক, সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা মনুষ্যত্বের বিকাশে ভূমিকা রাখে। মনুষ্যত্বগুণসম্পন্ন একজন মানুষ সর্বক্ষেত্রে প্রশংসার দাবিদার। জীবনকে যথার্থ সুন্দর ও সার্থকভাবে গড়ে তোলার জন্য মনুষ্যত্বের চর্চা অপরিহার্য। যে সমাজে মানুষ মনুষ্যত্বহীন, সেখানে মানবিক দিকের বিকাশ এবং সকল প্রকার কল্যাণচিন্তা অসম্ভব। তাই ব্যক্তি ও সমাজের অগ্রযাত্রার স্বার্থে মনুষ্যত্বের বিকাশ হওয়া একান্ত আবশ্যক ।
মনুষ্যত্বের স্বরূপ: মানুষের পক্ষে যা সহজাত, তা-ই মনুষ্যত্ব। সহজ কথায়, মনুষ্যত্ব হচ্ছে মানবিকতার চর্চা। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই'— এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে লালন করে সকল মানুষকে বিচার করা এই গুণের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দয়া, ধর্ম, প্রেম এসব মানবিক গুণ বা বৈশিষ্ট্যধারী ব্যক্তিকেই যথার্থ মনুষ্যত্বগুণসম্পন্ন মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায়। এদিক বিচারে মনুষ্যত্বগুণ মানবজীবনের এক মূল্যবান অবিনাশী সম্পদ। মনুষ্যত্বের অধিকারী ব্যক্তি ধর্ম, অর্থ, দেশ বা বর্ণগোত্রের সাহায্যে মানুষকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা থেকে বিরত থাকেন। অপরিচিতের সাহায্যে এগিয়ে আসা, মুমূর্ষের সেবা করা, সর্বোপরি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা সৃষ্টিতে মনুষ্যত্বগুণ মানুষের প্রধান সহায় । মনুষ্যত্বগুণকে বলা যেতে পারে মানবীয় গুণাবলির প্রধান অবলম্বন ও বিকাশক।
মনুষ্যত্বগুণ অর্জনের উপায়সমূহ: সমাজে প্রতিটি মানবশিশু ‘মানুষ' হয়েই জন্মায়। বেড়ে ওঠার ধাপে ধাপে কঠোর বাস্তবতা ও নেতিবাচক ঘটনাপ্রবাহ মানুষের স্বাভাবিক মনুষ্যত্ববোধ নষ্ট করে দিতে ভূমিকা রাখে। এজন্য যথার্থ। 'মানুষ' হওয়ার লক্ষ্যে আমাদের নিরন্তর সাধনা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, মানব ইতিহাসের ধারাবাহিকতা, রাষ্ট্রীয় বিধান, দর্শন ও সাহিত্য পাঠ এবং ব্যক্তির বিবেচনাবোধ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাছাড়া ধর্মীয় অনুশাসনের ভূমিকাও উল্লেখ করার মতো অন্যান্য বিষয়ের মতোই ব্যক্তির মনে মনুষ্যত্বের ধারণা তৈরিতে পরিবার হচ্ছে প্রথম ও প্রধান শিক্ষালয়। মা-বাবার চরিত্রের গুণাবলি সন্তানের মনুষ্যত্ববোধ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের চারপাশের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে 'ভালো'টুকু গ্রহণ করে নিজের মানবিকতাবোধকে শানিত করা সম্ভব । নৈতিক ও ধর্মীয় বিধান অনুসরণ, মহৎ ব্যক্তিদের বর্ণাঢ্য জীবনযাত্রায় আস্থা স্থাপন ও গ্রহণযোগ্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে এসবের সমষ্টিগত ফল, তথা ব্যক্তিমনের শুভবোধ ও মঙ্গলাকাঙ্ক্ষাই মনুষ্যত্ব লাভের কার্যকর ও শ্রেষ্ঠ উপায় ।
ব্যক্তিজীবনে মনুষ্যত্ব: ব্যক্তিজীবন মনুষ্যত্ব চর্চা ও লালনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। ব্যক্তির সমষ্টিই সমাজের আবহ তৈরি করে, ফলে ব্যক্তিজীবনে মনুষ্যত্বের চর্চা বিশেষভাবে আবশ্যক। এর ফলে জীবনে স্বস্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সহজ হয় । তাছাড়া সকল মানুষকে সমান দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ফলে প্রত্যেকেই নিজেকে অপরের অংশ বলে ভাবতে শেখে। স্বর্গীয় অনুভূতিতে ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে। মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি দরিদ্র হতে পারেন, কিন্তু মনুষ্যত্বগুণ দিয়ে তিনি সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন, ভালোবাসা অর্জন করে নেন। সহজেই সকলের আস্থাভাজন হতে পেরে তিনি মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন। জীবনের শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য, অর্থাৎ সকল পর্যায়ে মনুষ্যত্ববোধের চর্চা ব্যক্তি চরিত্রকে মহিমান্বিত করতে পারে ।
সমাজে মনুষ্যত্ববোধের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা: সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বসবাস করতে হয়। মনুষ্যত্ববোধের চর্চা এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পারস্পরিক সহমর্মিতা সৃষ্টিতে, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণে, হানাহানিমুক্ত সমাজ গঠনে মনুষ্যত্বের চর্চা অপরিহার্য। দয়াশীল মানসিকতা নিয়ে মানুষ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে, এটাই সবার কাম্য। প্রেমময়, শান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে সকলের সহাবস্থানপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ও চর্চা অপরিহার্য। সামাজিক অবস্থান, রাষ্ট্র ও পরিবেশ-পরিস্থিতিভেদে মনুষ্যত্বের বাহ্যিক রূপের পার্থক্য হতে পারে কিন্তু বৃহত্তর অর্থে এটি একই মমার্থকে ধারণ করে। সমাজে নিজের অবস্থান ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ থেকে প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে মনুষ্যত্ববোধের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই ব্যক্তির কল্যাণবোধ ও দয়ার মানসিকতা সমাজে ও রাষ্ট্রে সৌহার্দপূর্ণ স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি, করবে— এ পৃথিবী হয়ে উঠবে মানবিকতাবোধ সম্পন্ন ও সকলের বাসযোগ্য।
মনুষ্যত্বহীনতার প্রভাব: মনুষ্যত্বহীন ব্যক্তিজীবন ও সমাজ হয় নির্দয় ও বিবেকহীন। সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না, মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে বাধ্য হয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবে হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি বৃদ্ধি পায়। জাতিতে জাতিতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেঁধে যায়। মনুষ্যত্বহীন মানুষ নিষ্ঠুর ও উদ্ধত প্রকৃতির হয়, ফলে শাশ্বত সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টের মাধ্যমে দয়া, প্রেম, পরদুঃখকাতরতা প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলির নির্বাসন ঘটায়। নীতিহীন, বিবেকহীন মানুষ নামধারী পশুদের সদম্ভ বিচরণ সমাজের পরিবেশকে কলুষিত করে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মনুষ্যত্বহীনতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ব্যক্তিজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের চরম অবক্ষয় সংঘটিত হয়। ক্রমাগত পিছিয়ে পড়াটাই তখন নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়।
মহৎ ব্যক্তিদের মনুষ্যত্ব চর্চা: সমাজের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তির জীবনী অবলোকন করলে মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করেই তাঁরা আজ মানব ইতিহাসের অলংকার হয়েছেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখের নাম। অর্থবিত্ত, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র কিংবা অন্য কোনোভাবেই তাঁরা মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে দেখেননি। দুঃখীজনে দয়া, আর্তের সেবা এবং মানুষের প্রতি সর্বজনীন ভালোবাসা প্রদর্শন করে ইতিহাসে তাঁরা স্বমহিমায় স্থান করে নিয়েছেন। বিভেদ, হিংসা-দ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী এমন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব যুগে যুগে মানবসভ্যতাকে ঋদ্ধ করেছে। মনুষ্যত্ব চর্চার গুরুত্ব: জীবনকে যথার্থরূপে উপভোগ করতে হলে, জীবনের প্রকৃত মানে উদ্ধার করতে চাইলে মনুষ্যত্বগুণ অর্জনের বিকল্প নেই। এ পৃথিবীতে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নিজেকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করতে মনুষ্যত্বের চর্চা প্রধান সহায়ক হতে পারে। এর মাধ্যমে অন্যায় ও অনুচিতকে পরিহার করে ন্যায়ভিত্তিক, নৈতিকতাসমৃদ্ধ আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ ও মেকি শ্রেণিবিভাজন দূর করে সকলের বসবাসের অনুকূল প্রেমময় সমাজ নির্মাণে মনুষ্যত্ব বা মানবিকতার চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম ।
উপসংহার: মানুষের সর্বগুণের নির্যাস হচ্ছে মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্বহীনতার এ বৈরী সময়ে ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনে মনুষ্যত্বের চর্চা ও লালন আবশ্যক। মানবিকতাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশে জীবনযাপন মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। জীবনের প্রতি ভালোবাসা তথা মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্য প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠা সর্বাগ্রে প্রয়োজন । তাই আমাদের সকলকে মনে প্রাণে মনুষ্যত্বের চর্চা করতে হবে, হয়ে উঠতে হবে দয়ায় আর্দ্র মানসিকতাসম্পন্ন প্রকৃত মানুষ ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই মনুষ্যত্ব রচনা | শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব রচনা | মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।