বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর টি।
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর |
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ভাষার জন্ম জীবের জন্মের মতো নয়; তাই সঠিক সন-তারিখ হিসেব করে কোনো ভাষার উৎপত্তিকাল নির্ণয় করাও সম্ভব নয়। ভাষা নদী প্রবাহের মতো বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিতি। তবে পণ্ডিতগণ পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষারই আদি উৎস খুঁজে পেয়েছেন। পৃথিবীর যাবতীয় ভাষার উৎপত্তি হয়েছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি মূল ভাষাগোষ্ঠী থেকে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ‘ইন্দো-ইউরোপীয়' ভাষাগোষ্ঠী এ ভাষাগোষ্ঠী থেকেই উৎপত্তি হয়েছে অনেকগুলো ভাষার প্রাচীন বাংলার উৎপত্তি : আনুমানিক খ্রি. পূর্বঃ পাঁচ হাজার বছর আগে পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার পশ্চিমে যে ভাষা প্রচলিত ছিল, তা ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষা নামে চিহ্নিত হয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষাও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর দুটি শাখা । যথা- ১. কেন্তম ২. শতম। শতম শাখার অন্যতম উপশাখা হচ্ছে- আর্য। আর্য ভাষা'র আনুমানিক কাল ১৫০০ থেকে ১২০০ কিংবা ১০০০ খ্রি. পূ. ।
সংস্কৃত এ সময়ের একটি সাহিত্যিক ভাষা এবং তা কেবল সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকের মাঝে প্রচলিত ছিল। তখন গৌড় প্রাকৃতের পরবর্তী স্তর ‘গৌড়-অপভ্রাশ”। এ অপভ্রংশ থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি। ভাষাতাত্ত্বিক আবির্ভাব কাল বিবেচনা করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি বলে অনুমান করেছেন। অপরদিকে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি বলে মনে করেন। স্যার জর্জ গিয়াসসন বাংলাকে মাগধি প্রাকৃত হতে উৎপন্ন বলেছেন। ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এ মত সমর্থন করেছেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, সংস্কৃত প্রাকৃতিক যুগের সমসাময়িক একটি সাহিত্যিক ভাষা ।
সংস্কৃত যুগ বলে একটি পৃথক যুগ এবং সংস্কৃতের সাথে বাংলার কোনো সাক্ষাৎ সম্পর্ক নাই বলে তিনি তাঁর ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতের সাথে A. B. Keith সহ অন্যান্য মনীষীগণের মতের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ড. শহীদুল্লাহর মতকে সমর্থন করে আমরা বলতে পারি, গৌড় অপভ্রংশ থেকে সর্বপ্রথম বিহারী ভাষা উৎপন্ন হয়ে পৃথক হয়ে যায়। তারপর উড়িয়া ভাষা, তারপর বঙ্গ কামরূপী ভাষা। এ বঙ্গ কামরূপী ভাষা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলা ও অসমী ভাষায় পরিণত হয়েছে। পালি প্রাকৃত ভাষাস্তরকে বলা হয় মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা এবং বাংলা, বিহারী, উড়িয়া এবং অসমী ভাষাকে বলা হয় নব্য ভারতীয় আর্যভাষা। নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।
বাংলা ভাষার ক্রমবিকাশ : বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত সময়কে তিন যুগে বিভক্তি করা হয়। যেমন-
(ক) প্রাচীন যুগ (৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রি.), (খ) মধ্যযুগ (১২০১ থেকে ১৮০০ খ্রি.) এবং (গ) আধুনিক যুগ (১৮০১ থেকে বর্তমান) । (ক) প্রাচীন যুগ : প্রাচীন যুগের সময় হচ্ছে ৬৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত। ড. শহীদুল্লাহ্ প্রাচীন যুগের বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময়কাল (৬৫০-১২০১ খ্রি.) পর্যন্ত গণ্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
(খ) মধ্যযুগ : মধ্যযুগের সময় হচ্ছে ১২০১-১৮০০ সাল পর্যন্ত। মধ্যযুগকে অন্ধকার যুগ বলা হয়। কারণ মধ্যযুগের শুরুতে ১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত তেমন কোনো সাহিত্য পাওয়া যায়নি মুসলমানদের বাংলা বিজয়ের ফলে প্রচলিত সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে বিধায় এ সময় উল্লেখযোগ্য ১৩৫০ থেকে ১৫৭৫ খ্রি. পর্যন্ত আদি মধ্য যুগ হিসেবে ধরা হয়। এ যুগের প্রথম ভাগে বাংলা ভাষা গৌড়ের পাঠান সম্রাট ও সম্রান্ত ব্যক্তিগণের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। কিন্তু পারসি প্রভাব খুব অল্প পরিমাণে ভাষায় প্রবেশ করে । ১৩৭৫ থেকে ১৮০০ খ্রি. পর্যন্ত অন্ত মধ্যযুগ বলে পরিচিত। এসময় গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্যর শ্রীবৃদ্ধি হয়। এসময় থেকেই বাংলা ভাষায় পারসি প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। পারসির পাশাপাশি পুর্তগিজ, ওলান্দাজ ও ফরাসির শব্দ এ যুগেই বাংলা ভাষায় প্রবেশ করতে থাকে ।
(গ) আধুনিক যুগ : ১৮০১ খ্রি. থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ সময়কালকে আধুনিক যুগ বলে। এই সময়ে বাংলা ভাষায় গদ্য ও পদ্য রচনার পরীক্ষা চলে । এই সময়ে বাংলা গদ্যে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ও রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় রচনায় যেরূপ প্রাপ্ত হয়, তা নানাবিধি সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বর্তমান বাংলা সাহিত্যের বাহন হয়েছে। কবি মাইকেল মধুসূধন দত্ত, সাহিত্যিক ও উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র এই ত্রীয় আধুনিক বাংলা যুগের প্রবর্তক। এই যুগে বাংলায় ইংরেজি ভাষায় প্রভাব উত্তারোত্তর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। ১৮৩৫ খ্রি. লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকের আমলে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি রাজভাষার স্থান অধিকার করে। তখন হতে বাংলা ভাষায় মুসলিম প্রভাব হ্রাস পেয়ে পশ্চাত্য ভাষার প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা ভাষার ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস, পৃথিবীর বুকে বাংলা ভাষার যে মর্যাদা আছে অন্য কোনো ভাষায় তা নাই ভাষা অনেক, লড়াই, চড়াই উৎরাই পাড় হয়ে বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা লাভ করেছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা কর টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।