আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা টি।
আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা |
আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা
ভূমিকা: যুগে যুগে এ পৃথিবীর মানুষের মন ভুল, ভ্রান্তি, অজ্ঞতা, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে; তখন মানুষ প্রায় সকল আদর্শ-নীতি- নৈতিকতা ভুলে পাপের মধ্যে ডুবে যায়। এ ধরনের কালিক প্রেক্ষাপটে পথভ্রষ্ট মানবজাতিকে মুক্তি ও কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে যুগে যুগে পৃথিবীতে মহাপুরুষগণের আবির্ভাব ঘটেছে । আরব জাতিগোষ্ঠী যখন পাপের কালিমায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তখন তাদের পরিত্রাণের লক্ষ্যে আমাদের প্রিয় নবি ও রাসুল হজরত মুহম্মদ (স.) আবির্ভূত হন । তিনি মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে তাঁর আদর্শ প্রচার করলেও তা বিশ্বজনীন ছিল । তাঁর প্রচারিত ইসলামের মহান আদর্শে আরব জাতিগোষ্ঠীসহ বিশ্ববাসী সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, শান্তির উদাত্ত আহ্বানে নতুন করে জেগে উঠেছিল। তিনি একজন ধর্মপ্রচারক বা নবিই শুধু নন, তিনি একজন আদর্শ কর্মীপুরুষ হিসেবেও বিশ্ববাসীর সামনে নবতর কীর্তি স্থাপন করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর প্রচারিত আদর্শ, কর্ম এবং মানবতার শিক্ষা অতুলনীয়-অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
সংক্ষিপ্ত জীবনকথা: ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে হজরত মুহম্মদ (স.) আরব দেশের মক্কা নগরীতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার আমিনা। তাঁর পূর্বপুরুষ হজরত ইব্রাহিম (আ.)। মুহম্মদ (স.)-এর জন্মের ছয় মাস আগে তাঁর পিতার মৃত্যু হয় এবং জন্মের ছয় বছর পরে স্নেহময়ী মা আমিনাও পরলোকগমন করেন । মা- বাবার মৃত্যুর পর হজরত মুহম্মদ (স.) প্রথমে পিতামহ আবদুল মুত্তালিব এবং তাঁর মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিবের স্নেহচ্ছায়ায় বড় হন।
জন্মের আগে বাবাকে এবং জন্মের পরে অল্প সময়কালের মধ্যে মাকে হারিয়ে শিশু মুহম্মদ মা-বাবার স্নেহ-আদর ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন । এজন্য তাঁকে অনেক দুঃখকষ্ট ও পরিশ্রম করে বড় হতে হয়েছিল । তাঁর চাচা আবু তালিব ব্যবসায় করতেন, কিন্তু তাঁর আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না। ফলে শিশু মুহম্মদকে তাঁর ব্যবসায়ের কাজে ছোটবেলা থেকে সাহায্য- সহযোগিতা করতে হতো। ছোটবেলা থেকেই শিশু মুহম্মদ (স.)-এর মধ্যে চিন্তাশীলতা, পরোপকারিতা, সত্যবাদিতা প্রভৃতি গুণের বিকাশ ঘটে বাল্যকালেই তাঁর সত্যবাদিতার কারণে আরববাসী তাঁকে 'আল-আমিন' (বিশ্বাসী) উপাধিতে ভূষিত করেছিল। মুহম্মদের বাল্যকাল অত্যন্ত দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছিল বলেই হয়তো তিনি পরবর্তী সময়ে সমগ্র মানবজাতির দুঃখকষ্ট হৃদয় দিয়ে যথার্থই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
শৈশবকাল থেকেই মুহম্মদ অত্যন্ত চিন্তাশীল ও ধীরস্থির মন-মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। বিবি খাদিজাকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে তাঁর জীবনে সাময়িক আর্থিক সচ্ছলতা আসার পর, তিনি পুনরায় ধ্যানে মগ্ন হওয়ার সুযোগ লাভ করেন । তাঁর এ চিন্তার বা ধ্যানের প্রধান লক্ষ্য ছিল তৎকালীন আরব সমাজের পাপাচার ও নাস্তিকতা কীভাবে দূর করা যায়— তার উপায় বের করা। নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি আল্লাহর বাণী বিশ্ববাসীর কাছে পৌছে দেওয়াই একমাত্র কর্তব্য মনে করেন। তিনি আরববাসীকে বললেন, তোমরা মূর্তিপূজা ত্যাগ করো এবং নিরাকার আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করো । তিনি আরও বললেন, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ'-- অর্থাৎ ‘এক আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো উপাস্য নেই', হজরত মুহম্মদ (স.) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ ।
এ সত্য প্রচারের ফলে তাঁর ওপর বর্বর আরব জাতি সীমাহীন নির্যাতন আরম্ভ করে। কিন্তু তিনি কোনো বাধা-বিঘ্ন-বিপত্তির নিকট নতি স্বীকার করলেন না; মহান আল্লাহ তায়ালার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই তাঁর আদর্শ প্রচারের কাজ অব্যাহত রাখলেন। তিনি কুরাইশদের এ কথাও বললেন, 'যদি কুরাইশগণ আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্ৰও এনে দেয় তবুও আমি আল্লাহর আদেশ ও সত্যপ্রচারের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখব না।' ইসলামের মহান আদর্শ প্রচারের জন্যই তাঁকে প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ করে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করতে হয়। মদিনাবাসীর অকুণ্ঠ সাহায্য-সহযোগিতায় তিনি সেখানেই ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে সক্ষম হন ।
হজরত মুহম্মদ (স.) ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গমন করলে কুরাইশদের সাথে হুদাইবিয়া নামক স্থানে তাঁর এক সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ইতিহাসে এ সন্ধি ‘হুদাইবিয়ার সন্ধি' হিসেবে পরিচিত কিন্তু কুরাইশরা পরবর্তীকালে এ সন্ধির শর্তসমূহ উপেক্ষা করায় হজরত মুহম্মদ (স.) প্রায় দশ হাজার মুজাহিদ যোদ্ধা নিয়ে মক্কার দিকে অগ্রসর হন । এ সময় মক্কার বীর যোদ্ধাদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় কুরাইশরা দুর্বল হয়ে পড়ে। মুহম্মদ (স.) কে বাধা দেওয়ার মতো তাদের শক্তি ছিল না। ফলে অনেকটা বিনা রক্তপাতেই তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা নগরী জয় করেন। তাঁর ধৈর্য, সহনশীলতা, দয়া, উদারতা ও বিচক্ষণতায় মক্কা জয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই দলে দলে লোকজন ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। এভাবেই হজরত মুহম্মদ (স.) সমগ্র আরব জাতিগোষ্ঠীকে মহান এক আদর্শের ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করে ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন ।
হজরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্র: পবিত্র কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে, 'হজরত (স.)-এর মধ্যে তোমরা (জীবনযাত্রার আদর্শের) একটি সুন্দর উদাহরণ পাবে।' এ ঘোষণার মধ্যেই মহানবি হজরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্রের সারসংক্ষেপ নিহিত রয়েছে। বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহিষ্ণুতা, ধৈর্যশীলতা, উদারতা, সহনশীলতা ইত্যাদি মহৎ গুণের সমাবেশে হজরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্র হয়ে ওঠে অতুলনীয় মাধুর্যমণ্ডিত। সত্যের প্রতি র অবিচল নিষ্ঠাই তাঁর সমগ্র জীবনকে সার্থক-সুন্দর অমরত্ব প্রদান করেছে। কেননা সেই 'অন্ধকার যুগের' বর্বর মানুষেরাও তাঁর বিশ্বস্ততার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে তাঁকে 'আল-আমিন' উপাধিতে ভূষিত করেছিল বলাবাহুল্য তিনি একাধারে স্নেহময় পিতা, প্রেমময় স্বামী, সদাশয় ব্যক্তি এবং বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। হিজরতের পর মদিনাবাসীর সঙ্গে তাঁর যে চুক্তি হয় তা ইতিহাসে 'মদিনা সনদ' নামে খ্যাত। এ মদিনা সনদকে ঐতিহাসিকগণ 'ম্যাগনাকার্টা' হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ওই অন্ধকার যুগে জন্মগ্রহণ করে তিনি একজন দক্ষ শাসকের ন্যায় মদিনাবাসীর সঙ্গে যে চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন তার তুলনা ইতিহাসে বিরল ।' তিনি প্রাণঘাতী শত্রুকেও নির্দ্বিধায় ক্ষমা করে দিয়ে তাঁর মহত্ত্ব ও উদারতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মক্কা বিজয়ের কথা স্মরণ করা যেতে পারে; কেননা তাঁর মহত্ত্ব, ঔদার্য ও দয়াশীলতার কারণে প্রায় রক্তপাতহীন অবস্থায় তিনি মক্কা নগরী জয় করেছিলেন। হজরত মুহম্মদ (স.)-এর দারিদ্র্যই ছিল তাঁর গৌরব; তাই আজীবন তিনি দরিদ্রের অধিকার সংরক্ষণের প্রতি সচেতন থেকেছেন। বলা যায়, দরিদ্র-নির্যাতিত, অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের সেবাই তাঁর জীবনের আরেক ব্রত ছিল।
মুহম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শ: হজরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনের আদর্শ সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, প্রীতি ও শান্তির আদর্শ। তাঁর প্রচারিত ধর্ম কেবল কয়েকটি অনুষ্ঠান ও অনুশাসনের নামমাত্র নয়। তাঁর আদর্শের জীবনীশক্তি যারা লাভ করেন, অন্যায়-অসত্য তাদের স্পর্শ করতে পারে না। হজরত মুহম্মদ (স.) তাঁর জীবনে যে আদর্শ ও বাণী রেখে গিয়েছেন তা আজ পর্যন্ত অম্লান হয়ে আছে। আজও তাঁর কর্ম ও বাণী পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র আদর্শরূপে গৃহীত হচ্ছে। বিশেষত বিদায় হজে তাঁর উপদেশবাণী চিরস্মরণীয়। তিনি আরাফাতের ময়দানে ঘোষণা করেছিলেন——
১. ‘সকল মানুষই এক আদমের সন্তান, সুতরাং এক দেশের লোকের ওপর অন্য দেশের লোকের আধিপত্যের কোনো কারণ নেই।' ২. 'এক মুসলমান অন্য মুসলামানের ভ্রাতা, সকল মুসলমানকে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ নিয়ে
৩. ‘মানুষের ওপর অত্যাচার করো না, কারো অসম্মতিতে তার সামান্য পরিমাণ ধনও গ্রহণ করো না।'
৪. নারীজাতির প্রতি নির্মম ব্যবহার করো না। সংসারে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার; নারীর প্রতি পুরুষের যে দাবি, পুরুষের প্রতিও নারীর সে দাবি।'
৫. ‘দাস-দাসীকে নির্যাতন করবে না, তাদের মর্মে ব্যথা দেবে না, তোমরা যা খাবে ও পরবে দাস-দাসীকেও তা খেতে ও পরতে দিবে।'
উপসংহার: হজরত মুহম্মদ (স.)-এর চারিত্রিক ঔদার্য, মহত্ত্ব এবং পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিচক্ষণতা, জীবনব্যাপী সংগ্রাম- সংযম ও কর্মনৈপুণ্যে সাধারণ মানুষ মুগ্ধই শুধু হয়নি; তাঁকে একবাক্যে দেবদূত, মহামানব, মহাপুরুষ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। যদিও তিনি মানুষের এ ধারণা ভেঙে দিতেই বলেছেন, 'আমি তোমাদের মতোই মানুষ, আমি আল্লাহ তা'য়ালার দূত ও দাস; আমি দেবতা বা অবতার নই।' উপরন্তু বিদায় হজের ভাষণে সারাবিশ্বের মানুষকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন, তা বিশ্ব সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠা- প্রচেষ্টার প্রথম উদ্যোগ। হজরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্র, মানবিক গুণ, মনুষ্যত্ববোধ, অফুরন্ত কর্মশক্তি এবং সর্বোপরি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে ভালোবাসার যে হৃদয় তাঁর ছিল; সেই কারণেই তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বকালের সেরা আদর্শ মহাপুরুষ । এজন্যই তিনি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ-পুরুষ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রচনা | আমার প্রিয় ব্যক্তি রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।