আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা টি।
আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা |
আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার আগমন একটি একক ইচ্ছে কিংবা উদ্দেশ্যে না হলেও এই বিশ্বসংসারে মানব আগমন এক বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্যের অংশবিশেষ। একটি আদর্শ জীবনের বাতিঘর হয়ে মানুষ মহৎ জীবনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ধন্য হয় নিজে, ধন্য করে মানব জাতিকে। বিচিত্র জীবনের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে মুখরিত হয় মানব জীবন। যাপিত এই জীবনের নানা ধাপে থাকে ঘাত-প্রতিঘাত। তার মাঝে নিজেকে বিকশিত করে যাওয়ার এক অনন্ত তাগিদ থাকে। যে পারে, সে সফল হয়। আর আত্মকার্যে মগ্ন হয়ে দিনাতিপাত করলে তাতে হয়তো নিজের কল্যাণ হয়, কিন্তু সেই কল্যাণ নিজের জন্য গৌরব বয়ে আনতে পারে না। তাইতো কবি বলেছেন, ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও'। কবির এই মহান বাণীর সার্থকতা প্রমাণ করতে অবশ্যই নিজেকে বিশ্বজনের জন্য সঁপে দিতে হবে। পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে— পরের জন্য আত্মোৎসর্গ করার মহৎ সাধনা করতে হবে সকল মানুষের। সেই জীবনই প্রকৃত মানব জীবন, প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধের স্মারক। আমি চাই, নিজেকে একজন সৎ, নিবেদিত এবং পরোপকারী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। এজন্য আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে তার সবটুকু অংশে জুড়ে রয়েছে মানুষের সেবা করা। সেই ক্ষেত্রে বর্তমান যুগের দাবি অনুসারে আমি নিজেকে একজন নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই ।
প্রবীণরা বলে গেছেন— স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের অনৈতিক মানসিকতা, অসৎ চিন্তা, ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফার লোভ এবং খাদ্যকে বেশিদিন মজুদ রাখার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেশি টাকা উপার্জনের আশায় কৃষকের নৈতিকতা বিসর্জন এবং ব্যবসায়ীদের অতি বাণিজ্যিক চিন্তার কারণে সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্য, শাকসবজি ও ফলমূল ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজালে ভরে গেছে। ফসল উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, এমনকি বাজারে প্রবেশের পরেও এখন নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্য অনিরাপদ ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। একটি ফসলের উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সারের সাথে সাথে রোগবালাই ও কীটপতঙ্গ থেকে ফসলকে বাঁচাতে কীটনাশক প্রয়োগ ব্যাপকভাবে করা হচ্ছে। আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসব কীটনাশক ও সারের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে থাকে।
তবুও কৃষকদের অতি মুনাফার লোভ ও অসতর্কতার কারণে নিয়ম না মেনে অনেক নিষিদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্যও | ইদানীং ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলে। যা খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে অঙ্গহানিসহ প্রাণঘাতী নানা রোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া কিছু ফসলে একধরনের হরমোন ব্যবহার করা হয় অধিক ফলনের জন্য এবং দ্রুত ফসল পাওয়ার আশায়, যা মানব শরীরের জন্য প্রচণ্ড বিপজ্জনক। ফরমালিন ও কার্বাইড তো বহুল ব্যবহৃত বিষ। এগুলো খাদ্য সংরক্ষণ ও ফলমূল পাকাতে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক হারে এটি ব্যবহার করে থাকেন। খাদ্যকে অনেক দিন পচন থেকে রক্ষা করতে এবং আকর্ষণীয় রং দিতেই তারা এটি ব্যবহার করেন। ফলে আমরা প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছি ভোক্তা হিসেবে। এসব বিষসমৃদ্ধ খাবার আমাদের ত্বকের জন্য নানা রোগ ও শারীরিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ ক্ষেত্রে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নানা শাকসবজি, ফলমূল এমনকি মাছ-মাংসও এই মারাত্মক রাসায়নিক বিষের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এই কারণে নিজে সুস্থ থাকতে এবং সুস্থভাবে বাঁচতে, সেই সাথে আপন পরিবার এবং চারপাশের মানুষজনকে বাঁচাতে সময়ের দাবি এখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে রাসায়নিক বিষের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাসহ একটি সুন্দর ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তার কোনো বিকল্প নেই। সময়ের দাবি এখন খাদ্য বিষয়ে নিজে সচেতন হওয়া, পরিবারকে সচেতন করা, সমাজকে সচেতন করা এবং এর থেকে উত্তরণ ঘটানো। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, নিজেকে পারিপার্শ্বিক মোহ জগতের ঊর্ধ্বে নিয়ে একজন সৎ, দক্ষ ও সফল নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তা হতে চাই। যাতে করে আমি আমাকে, আমার পরিবার, সমাজ, দেশ এবং সর্বতোভাবে সারা বিশ্বের মানব সেবায় নিরাপদ খাদ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি। তাই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা ।
কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে জড়িত। আমাদের অর্থনীতির বৃহৎ চালিকাশক্তি কৃষি । জিডিপির এক বিশাল অংশ জোগান দেয় আমাদের কৃষি খাত। কিন্তু সর্বাধিকজনের এবং অন্যতম বৃহৎ এই খাতের হাল রুগ্ণ ও জরাজীর্ণ । বিজ্ঞান যেখানে কৃষি খাতে এনে দিয়েছে বিপ্লব, সেখানে আমরা তার পুরোপুরি ফায়দা নিতে পারিনি। উৎপাদনমুখী বিজ্ঞান কৃষি খাতে যেমন উপকারী, নানা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এনে দিয়েছে তেমনি এর সাথে ভয়ংকর কিছু নিষিদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্যও যোগ করেছে।
এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ী ও মুনাফালোভীরা অন্যান্য খাতের জন্য ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক কৃষি খাতের জন্য আমদানি করছে, যা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। পাশ্চাত্যে যেখানে নানান কৃষিজ যন্ত্রপাতি ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদনের প্রতি জোর দিয়ে কৃষিকে এগিয়ে নিচ্ছে, সেখানে আমরা শুধু বেশি ফসল ও সতেজ ফসল উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হয়েছি। এতে আমরা প্রাকৃতিক ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন থেকে সরে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক ভেজালে ভরা ফসল উৎপাদন করে বাজারকে কলুষিত করছি। যার ফলে এখন আমাদের প্রায় সবার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। খাদ্যের বিষক্রিয়ায় প্রতিবছর অনেক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে।
অনেকে অঙ্গহানির ফলে পঙ্গু ও অসহায় জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। খাদ্য যেখানে শরীরকে শক্তি দেয়, আমাদের বোকামি ও লোভের ফলে সেই খাদ্য বিষক্রিয়াই আমাদেরকে মেরে ফেলার উপক্রম করছে। এর থেকে উত্তরণে আমাদের কিছু করা দরকার । প্রয়োজন এসব রাসায়নিক বর্জ্যকে দূরে ঠেলে আবার প্রাকৃতিক ও অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের মেলবন্ধন করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে মন দেওয়া। নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন যেহেতু একটি নতুন ধারণা সেই ক্ষেত্রে আমি চাই এই ধারণাকে আমার পরিবার, সমাজ ও দেশে পরিচিত করতে। আমি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে খাদ্য ঝুঁকিকে মোকাবিলা করতে চাই।
একজন নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তাই আজকের প্রেক্ষিতে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনকে জোরদার করতে পারে। নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগিয়ে একটি সুন্দর খাদ্য শৃঙ্খলব্যবস্থা জোরদার করতে একজন প্রতিশ্রুতিশীল খাদ্য উদ্যোক্তার প্রয়োজন অনেক বেশি জরুরি। একজন খাদ্য উদ্যোক্তা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হবে ভালো এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহকরণে। তৃণমূল পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। কৃষি খাতের দুর্বলতাগুলো শনাক্ত করে কীটনাশক ও রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োগ ব্যতিরেকে ভালো ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে সারাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব। নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তার পক্ষেই সম্ভব এই বার্তাকে চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ভিত মজবুত করা। আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে মোবাবিলা করার জন্য যেহেতু নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই সে ক্ষেত্রে এই সময় সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণকে জোরদার করা। খাদ্যই মানবদেহের সকল শক্তি ও কর্মের উৎস। তাই এখন কোনোভাবেই এই নিরাপদ খাদ্য বিষয়টিকে পাশ কাটানো উচিত নয়। সর্বোপরি একজন নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তাই হতে পারে আমাদের দেশের সম্পদ, আমাদের সমাজের সবচেয়ে উপকারী ব্যক্তি ।
নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি এখন আমাদের গণমানুষের দাবি। সেই দাবির প্রেক্ষিতে একজন নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তাই পারে আমাদেরকে বিষাক্ত খাদ্য হতে মুক্তি দিতে। একজন সচেতন যুবক হিসেবে আমাদেরকেই সেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও আত্মঘাতী মানসিকতা থেকে রক্ষা করতে পারে একজন নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তাই । একজন নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তাই পারেন একটি সুস্থ ও নিরাপদ মেধাবী আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিতে । আমি চাই, সেই কাজটি যেন আমি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারি ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।