লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় | শবে কদরের রাতের ফজিলত ও আমল
আপনি কি লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল খুজতেছেন? যদি আপনি লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল খুজে থাকেন তাহলে স্বাগতম জানায় আমাদের আজকের এই আরটিকেল।
লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় শবে কদরের রাতের ফজিলত ও আমল |
হ্যালো বন্ধুরা আজকের আমাদের ব্লগের বিষয় হলো লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল। চলুন জেনে নেওয়া যাক লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল।
সুচিপত্রঃ লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় | শবে কদরের রাতের ফজিলত ও আমল
- লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস
- লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায়
- শবে কদরের রাতের ফজিলত
- শবে কদরের রাতের আমল
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস
লাইলাতুল কদর হলো মর্যাদার রাত এবং ফজিলতের রাত। লাইলাতুল কদরের রাত হাজর মাসের চেয়ে সেরা। যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের বরকত, রহমত থেকে বঞ্চিত হলো সে আসলেই বঞ্চিত হলো।
লাইলাতুল কদরের রাত স্থানান্তরশীল, তবে বাংলাদেশে ২৭ তারিখে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, "তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে কদর তালাশ করো"।
কদরের রাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত সহ বেশ কিছু হাদিস রয়েছে। লাইলাতুল কদর চেনার কিছু আলামত রয়েছে, যা জেনে নেওয়ার পরে আপনি যদি পূর্ণ ইমামের সহিত লাইলাতুল কদর তালাশ করেন তাহলে কবে কদরে রাত তা বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস আলোচনা করা হলোঃ
লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায়
হাদিস-১: সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত। -সহিহ ইবনু খুজাইমা: ২১৯০; বোখারি: ২০২১; মুসলিম: ৭৬২
হাদিস-২: নবি করিম (সা.) বলছেন, "লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।" (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯; সহিহ আল-জামিঈ, হাদিস : ৫৪৭২)
হাদিস-৩: উবাদাহ ইবনু সামাত (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনাহ) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতের চাঁদের মতই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২৭৬৫)
হাদিস-৪: আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনু খুযাইমাহ, হাদিস : ২১৯২)
এই চারটি হাদিসের মধ্যে মিল রয়েছে অর্থাৎ এই চারটি হাদিসের মূল বক্তব্য প্রায় একই। ভিন্ন কয়েকজন সাহাবি গণ এই হাদিসগুলো বর্ণনা করলেও মূলকথা বা দিক নির্দেশনা গুলো প্রায় একই। এই ৪টি হাদিসের আলোকে বলা যায়:
- প্রতিদিনের সূর্যোদয়ের চেয়ে এই দিন সূর্যোদয় কিছুটা ভিন্ন হবে, সূর্যোদয়ের সময় প্রখর রোদ বা তীক্ষ্ণ হবে না।
- কদরের রাত নাতিশীতোষ্ণ হবে। এই কদরের রাতে গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
- কদরের রাত হবে প্রফুল্লময়। এজন্য মুমিন গণ এক ভিন্ন তৃপ্তি অনুভব করবেন।
হাদিস-৫: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। (সহিহ বোখারি)
হাদিস-৬: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে"
হাদিস-৭: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর। (সহিহ বোখারি)
এই তিনটি (৫-৭) হাদিসের আলোকে বলা যায় কদরের রাত অবশ্যই রমজান মাসে। আর এই রাত রমজানের শেষ ১০ দিনে এবং বিজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে ২৭ শে রমজান কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। যে হাদিস গুলোর আলোকে রমজান মাসের ২৭ তারিখ অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় তা হলো:
হাদিস-৮: উবাই ইবনে কাব হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল (সা.) আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল (ইবাদত) করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হল রমজানের ২৭ তম রাত। -সহিহ মুসলিম
হাদিস-৯: হজরত আবদুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭ রজনীতে অনুসন্ধান করে। -আহমাদ
পরিশেষে জেনে নিন, লাইলাতুল কদর চেনার সহজ কয়েকটি উপায় জেনে নিন। বিশেষ এই আলামত হলো:
- কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
- সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
- ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
- কদরের রাত অনেক অনেক ফজিলত পূর্ণ।
এরকম একটি মত রয়েছে যে, কদরের রাত স্থানান্তরশীল। অনেক হাদিস বিশ্লেষক গণও তাই মনে করেন। তাদের মতে প্রতি বছর একই দিনে শবে কদর না'ও হতে পারে। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কদরের রাত থেকে বঞ্চিত হলো সে আসলেই বঞ্চিত হলো"। যেহেতু মুমিন ব্যক্তি গণ কখনোই রহমত থেকে বঞ্চিত হতে চাইবেন না তাই অবশ্যই রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে বিজোড় ৫টি রাতে শবে কদর তালাশ করা সর্বোপরী উত্তম।
শবে কদরের রাতের আমল | শবে কদরের রাত চেনার উপায়
শবে কদরের ইবাদত হলো নফল ইবাদত। ধরা-বাধা কোনো বিশেষ নিয়ম নেই। অন্য নফল ইবাদত যেভাবে করে সেভাবেই করা যায়।
শবে কদরের রাতে ইমামের সাথে বা দলবদ্ধ ভাবে ইবাদত করতে হবে এমন কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই। শবে কদরের আমল গুলো হলো নফল ইবাদত, এজন্য একাকী নির্জনে ইবাদত করাটাই সবচেয়ে ভলো। শবে কদরের ইবাদত করার সময় হলো মাগরিবের পর থেকে ফজর পর্যন্ত।
এই পুরো সময়টা অনেক বরকতময়।হাদিসে বর্ণিত আছে, “রমজানের শেষ দশক যখন আসত, নবি করিম (সা.) সারা রাত যাবৎ ইবাদত করতেন” আমাদের রাসুল (সা.) এই সময়ে এত বেশি ইবাদত করত যা অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
বাংলাদেশের মানুষ কিছু মন গড়া কথায় বিশ্বাস করেন। এজন্য শবে কদরের আমল সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া ভালো। শবে কদরের আমল সম্পর্কে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়:
- শবে কদরের রাতে সালাত আদায়ের নির্দিষ্ট ধরাবাধা নিয়ম নেই, তবে দুই রাকাত করে নফল সালাত আদায় করতে হয়।
- প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে নির্দিষ্ট কোনো সূরা তেলাওয়াতের কোনো নিয়ম নেই।
- সালাতে সূরা কেরাত দৈর্ঘ্য করা উত্তম। বেশি সূরা জানা না থাকলে একই সূরা বারবার পড়ুন।
- দাড়িয়ে সালাত আদায় করা।
- সারা রাত জেগে ইবাদত করা
- সালাত আদায়ের পাশাপাশি সূরা তেলাওয়াত করা, কালেমা পড়া, দরুদ পাঠ করাসহ জিকির করা যায়, যেহেতু কদরের ইবাদত নফল।
- আল্লাহ তায়ালার নিকট অন্তর থেকে ক্ষমা পার্থনা করাও আপনার জন্য মঙ্গলজনক কেননা শবে কদরের রাত পাপ মোচনের রাত।
শবে কদরের রাতের ফজিলত | লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায়
আমাদের গড় আয়ু পূর্বের নবি-রাসুলের উম্মতের চেয়ে কম, এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) কে সাহাবিগণ প্রশ্ন করেছিলেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছিলেন এমন এক রাতের কথা, যে রাতে ইবাদত করলে তার নেকি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে বেশি হবে। আর সেই রাত হলো লাইলাতুল কদরের রাত। হাজারও মাসের চেয়ে উত্তম রাত হলো শবে কদরের রাত।
হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদা পূর্ণ এই রাত৷ পবিত্র কুরআনুল কারিম নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই রাতকে আরও উত্তম ও মহা সম্মানিত রাত করে দিয়েছেন।
শবে কদর সম্পর্কিত আরও একটি হাদিস হলো- "যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে শবে কদরে জেগে নামাজ পড়বে তার পেছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে" (বুখারীঃ২০১৪)।
এই হাদিস দ্বারা এটি স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত এই রাতে পূর্ণ ইমানের সহিত কেউ আমল করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন, তার পূর্বের গুণাগুলো মাফ করে দিবেন।
আর এ বিষয়ও বলা যায় যে এ রাতে ইবাদত করলে আল্লাহ তায়ালা আপনার প্রতি অবশ্যই সন্তুষ্ট হবেন, কেননা আল্লাহ তায়ালা ত খুশি হয়েই, সন্তুষ্ট হয়েই ত ক্ষমা করেন। এ রাতের মর্যাদা ও ফজিলত প্রকাশিত আরও একটি হাদিসে।
হাদিসটি হলো: রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কদরের রাত থেকে বঞ্চিত হলো সে আসলেই বঞ্চিত হলো"। এই রাত যে ব্যক্তি অলসতায় কাটাল, সে যেন সবকিছু থেকে বঞ্চিত হলো, আল্লাহ তায়ালার রহমত, গুণা মাফ, নেকি সবকিছু থেকে সে বঞ্চিত হলে।
পরিশেষে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুক। (আমিন)
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল
আমারা এতক্ষন জেনে নিলাম লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল। আশা করি আমাদের আজকের এই আরটিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি আমাদের আজকের এই লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল টি ভালো লাগে তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আর এই রকম নিত্য নতুন আরটিকেল পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন। লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের রাতের ফজিলত এবং শবে কদরের রাতের আমল।