বাংলাদেশের উৎসব রচনা ssc ২০ পয়েন্ট
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের উৎসব রচনা ssc জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের উৎসব রচনা ২০ পয়েন্ট টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের উৎসব রচনা ২০ পয়েন্ট টি।
বাংলাদেশের উৎসব রচনা |
বাংলাদেশের উৎসব রচনা
ভূমিকা: উৎসব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মধ্যে নিহিত থাকে একটি জনপদের ইতিহাসঐতিহ্য, কিংবদন্তী এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস ও ভালাে-মন্দ লাগার উপাদান। কোনাে দেশ বা সমাজের উৎসব সম্পর্কে জানা থাকলে সেই দেশ সমাজের মানুষকেও অনেকখানি জানা হয়ে যায়। উৎসব হতে পারে কোনাে জনগােষ্ঠীকেন্দ্রিক, আবার হতে পারে জনপদ বা ভূখণ্ডকেন্দ্রিক। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসবের প্রচলন রয়েছে। তবে অধিকাংশ উৎসবই কোনাে না কোনাে ঋতু বা মাসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এসব উৎসব মানুষের মনে কেবল আনন্দেরই সঞ্চার করে না বরং এর মধ্য দিয়ে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সামগ্রিক চিত্রটি ফুটে ওঠে।
বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি উৎসব সম্পর্কে একে একে আলােচনা করা হলাে।
বাংলা বর্ষবরণ: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়াে সর্বজনীন উৎসব বাংলা বর্ষবরণ। পুরানাে দিনের দুঃখ, ব্যথা, ক্লান্তি, গ্লানি ভুলে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার উত্সব এটি। এই উত্সব বাংলাদেশের সর্বত্র পালিত হয়। ধর্মবর্ণ-গােত্র নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ এই উৎসব পালন করে। এ উপলক্ষে মেলা ও শােভাযাত্রার আয়ােজন করা হয়। ব্যবসায়ীরা এই দিনে হালখাতা নামে হিসাবের নতুন খাতা খােলেন এবং বকেয়া আদায় উপলক্ষে গ্রাহকদের নিমন্ত্রণ করে মিষ্টিমুখ করান। বৈশাখের প্রথম দিনটিতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মজাদার খাবারের আয়ােজন করা হয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আড়ম্বরে উদ্যাপন করা হয় বাংলা নববর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হয় মঙ্গল শােভাযাত্রা। নতুন বছরের। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়।
বৈসাবি: বাংলাদেশে তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি'। শব্দটি বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু – এই তিন নামের আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত। বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু যথাক্রমে ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের বর্ষবরণ উৎসব। সাধারণত বছরের শেষ দুই দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বৈসাবি উদ্যাপিত হয়।
নবান্ন: নবান্ন হলাে নতুন ধানের উৎসব। হেমন্ত কালে ঘরে ঘরে নতুন ধান ওঠে। এ সময়ে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। আত্মীয়-পরিজন ও প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
একুশে ফেব্রুয়ারি: একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির দীর্ঘ দিনের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিলকারীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। তাদের উপর সরকারি নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায়। এতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেকে শহিদ হন। এই আত্মত্যাগ এবং দীর্ঘ সংগ্রামের ফলস্বরূপ ১৯৫৪ সালে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি। শহিদদের স্মৃতিকে স্মরণ করতে ও শ্রদ্ধা জানাতে পরের বছর থেকেই দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ, শহিদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, আলােচনা সভা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে দিবসটি পালিত হয়। শহিদদের আত্মদান ও পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘােষণা দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এই আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করতে কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস: ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়ে থাকে। অফিসে, বাড়িতে, সড়কে, যানবাহনে সর্বত্র বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা শােভা পায়। এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশের স্মৃতিসৌধগুলােতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। একই সঙ্গে শিশুকিশােরসহ বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজ, আলােচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হয়।
বিজয় দিবস: ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। স্বাধীনতা ঘােষিত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযােদ্ধারা বিজয় অর্জন করে। দিনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। তাই ডিসেম্বর এলেই সমগ্র দেশ লাল-সবুজে সেজে ওঠে। ১৬ই ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশের স্মৃতিসৌধগুলােতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব, ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও বই মেলার আয়ােজন করা হয়।
বইমেলা: বইমেলা বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বইমেলার আয়ােজন করা হয়। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য বইমেলা - ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়ােজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এই বইমেলা পরিণত হয় পাঠক ও লেখকের মিলনমেলায়। বইমেলায় অনেক লেখক তাঁদের নতুন বই যেমন প্রকাশ করেন, তেমনি পূর্বে প্রকাশিত বইও মেলায় পাওয়া যায়। বইমেলা এখন আর কেবল বই কেনাবেচার মেলা নয়, এটি পরিণত হয়েছে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক উৎসবে।
ঈদ: ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড়াে ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মানে আনন্দ, খুশি। ঈদ আসে আনন্দ আর মিলনের বার্তা নিয়ে। এই দিনে ধনী-নির্ধন ভেদাভেদ ভুলে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সাড়ম্বরে ঈদ উৎসব পালিত হয়। বছরে দুটি ঈদ। প্রথমে আসে ঈদ-উল ফিতর এবং পরে ঈদ-উল আজহা। রমজান মাসের শেষে হিজরি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ঈদ-উল ফিতর উদ্যাপিত হয়। জিলহজ মাসের দশম দিনে পালিত হয় ঈদ-উল আজহা। ঈদ-উল আজহায় পশু কোরবানি করা হয়। একে বলা হয় আত্মত্যাগের ঈদ। দুটি ঈদেই মুসলমানরা নতুন পােশাক পরে, ধনীরা গরিবদের দান করে। ঈদগাহে ঈদের নামাজের আয়ােজন করা হয়। নামাজের পর একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে। বাড়িতে ভালাে খাবারের আয়ােজন করা হয়। নিজে খেয়ে এবং অন্যকে খাইয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়।
দুর্গা পূজা: হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুজা। শরঙ্কালে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তমী অষ্টমী নবমী এই তিন দিন দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সপ্তমীর আগের দিন ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বােধন অনুষ্ঠান হয়। নবমীর পরদিন দশমীর উত্সবকে বলা হয় বিজয়া দশমী। বােধন থেকে বিসর্জনের দিনগুলাে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করে। পাড়ায় পাড়ায় তৈরি হয় পূজা মণ্ডপ, থাকে প্রসাদের আয়ােজন। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় মেলা। দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হলেও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দ নিয়ে পূজামণ্ডপে ঘুরতে যায়। অষ্টমীর দিন আনন্দ আর জাকজমক থাকে বেশি। রাতে হয় আরতি। দশমীর দিন দেবী-বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
বুদ্ধ পূর্ণিমা: বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদ্যাপিত হয় বলে এর অন্য নাম বৈশাখী পূর্ণিমা। এই দিনের সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের জন্ম, তিরােধান ও বােধিলাভের স্মৃতি জড়িত। প্রার্থনা ও দান-দক্ষিণার মাধ্যমে এবং ফানুশ উড়িয়ে এই উৎসব পালন করা হয়।
বড়াে দিন: বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা পালন করে বড়াে দিন। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে তারা এ উত্সব পালন করে। প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর বড়াে দিনের উত্সব পালিত হয়। গির্জায় প্রার্থনা করে, কেক কেটে, চকলেট বিতরণ করে, গান গেয়ে এই উত্সব পালন করা হয়।
অন্যান্য উৎসব: এছাড়া সারা বছরই বাংলাদেশে কোনাে না কোনাে উৎসব পালিত হয়। যেমন: রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, লালন-উত্সব, মধুমেলা, মহররম, ঈদ-ই মিলাদুন নবি, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, প্রবারণা পূর্ণিমা, ইস্টার সানডে ইত্যাদি।
উপসংহার: মানুষের জীবনে উৎসবের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। উত্সব মানুষের মধ্যে সাম্য ও মৈত্রী গড়ে তােলে। আনন্দমুখর উত্সব-প্রাঙ্গণে ঘুচে যায় মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। উত্সব ছাড়া সকল শ্রেণির মানুষের মিলনমেলার চিত্র কল্পনাই করা যায় না। জাতীয় উৎসবগুলাে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে। উত্সবের মধ্যে যে মূল্যবােধের বীজ আছে তাকে জাগ্রত করতে পারলে নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি মানুষের মধ্যে গড়ে উঠবে প্রীতি ও সৌহার্দ্য।
বাংলাদেশের উৎসব রচনা
ভূমিকা: বাঙালি জাতির সঙ্গে বিভিন্ন উৎসব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাঙালির একঘেয়ে দুঃখ-দুর্দশাজর্জরিত জীবনে আনন্দের ছোঁয়া নিয়ে আসে বিভিন্ন উৎসব। সবাই তখন দুঃখ ও হতাশার গ্লানি ভুলে মেতে ওঠে অনাবিল আনন্দে। উৎসব-পাগল এ জাতির তাই তো বারো মাসে তেরো পার্বণের ঘটা। এ উৎসবগুলো বাঙালির সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বাস এ বাংলাদেশে। এ দেশের উৎসবের ধরন ও প্রকৃতিও তাই বৈচিত্র্যময়। সবাই তাদের নিজস্ব আচার অনুযায়ী, ধর্ম অনুযায়ী নিজস্ব সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটায় এ উৎসবগুলোতে। উৎসবের রকমফের: বাঙালির উৎসবের রকম ও প্রকৃতি ভিন্ন। এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। ধর্ম অনুযায়ী উৎসবের ভিন্নতা ও প্রাচুর্য লক্ষণীয়। এছাড়া ষড়ঋতুর এ দেশে প্রকৃতির রূপের ভিন্নতার বার্তা নিয়ে আসে উৎসবের আমেজ। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচয় মেলে বাঙালির সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে। বাঙালির চেতনার প্রকাশ ঘটে এ দেশ গঠনে যাঁদের অবদান আছে জাতীয় উৎসবের মাধ্যমে তাঁদের স্মরণ করার মাধ্যমে। বাঙালির উৎসবগুলো চার রকমের যেমন— ১. ঋতুভিত্তিক; ২. ধর্মীয়; ৩. সামাজিক; ৪. জাতীয় উৎসব ।
ঋতুভিত্তিক উৎসব: বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি তার রূপ পাল্টায়। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সংস্কৃতিতে প্রকৃতির এ রূপ পরিবর্তন আনে উৎসবের বার্তা। বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। এদিনে বাঙালি তার পুরোনো বছরের সব গ্লানি ভুলে নতুনভাবে জীবনকে শুরু করার উদ্যোগ নেয়। শুরু করে হালখাতা। এ উপলক্ষ্যে পান্তা-ইলিশ ও মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। এছাড়া আছে চৈত্রসংক্রান্তি, পহেলা ফাল্গুন, হেমন্তের নবান্ন, পৌষের পিঠা উৎসব, শারদীয় উৎসব, বসন্তে দোল উৎসব। এভাবে প্রতিটি ঋতু একটি আলাদা উৎসব নিয়ে আসে বাঙালির জীবনে, আর বাঙালি তা উদযাপন করে, মেলার আয়োজন করে পিঠাপুলি তৈরি করে। এভাবে ঋতুভিত্তিক উৎসবের মাধ্যমে বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ।
ধর্মীয় উৎসব: বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। তাই ধর্মীয় উৎসবের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের কথা । মুসলমানদের বছরে দুটি ইদ। একটি ইদুল ফিতর এবং অন্যটি ইদুল আজহা। ঈদুল ফিতরে মুসলমানরা ভেদাভেদ ভুলে ধনী-গরিব সবাই একত্রে একই আনন্দের শরিক হয়। ইদুল আজহা মুসলমানদের আত্মত্যাগ | করতে শেখায়, অর্থাৎ মুসলমানদের কাছে আনন্দের আরেক প্রতিশব্দ ইদ। এছাড়া আছে শবেকদর, শবেবরাত, শবেমেরাজ, আখেরি চাহার শাম্বা, মহরম, ইদে মিলাদুন্নবি বা সিরাতুন্নবি (স.), আশুরা ইত্যাদি। এ দিবস বা ...অনুষ্ঠানগুলো মুসলমানরা পালন করে থাকে দান-সদকা করে, মিলাদ পড়ে আত্মীয়স্বজন ও মেহমানদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মিষ্টিমুখ করানোর মাধ্যমে এবং নামাজ পড়ে, কবর জিয়ারত করে, ফকির-মিসকিনদের দান করে। মুসলমানদের পরেই আসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের কথা। বছরের প্রতিটি মাসেই তাদের কোনো না কোনো লৌকিক দেবতার পূজা থাকে। এ সমস্ত ধর্মোৎসবের ভেতরে দুর্গাপূজাই সর্বশ্রেষ্ঠ। দুর্গাপূজার পর আসে লক্ষ্মীপূজা, তারপর একে একে আসে কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, সরস্বতী পূজা। ঢাকঢোল, কাঁসা, শঙ্খ, উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পূজাপ্রাঙ্গণ । ফুল, মিষ্টি খাদ্যদ্রব্য অর্ঘ্য হিসেবে দেওয়া হয় দেবীর চরণে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের মাধ্যে আছে বুদ্ধপূর্ণিমা, প্রবারণা পূজা, মাঘী পূর্ণিমা ইত্যাদি। এছাড়া খ্রিষ্টানদের আছে বড়দিন, ইস্টার সানডে, গুড ফ্রাইডে, হ্যালোইন ইত্যাদি উৎসব।
সামাজিক উৎসব: বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে বিয়ে শ্রেষ্ঠ উৎসব। যদিও ধর্মীয় বিধান মতেই সকল সম্প্রদায়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়; কিন্তু কার্যত লৌকিক ও দেশীয় উৎসবের কোনো কমতি পরিলক্ষিত হয় ও না । গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে রং খেলা, রাত জেগে গান-বাজনা করা, ক উপহারসামগ্রীর আদান-প্রদান প্রভৃতি দ্বারা বিয়ের উৎসব উদযাপিত হয়। এক সম্প্রদায়ের বিয়েতে অন্য সম্প্রদায়ের সরব ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এ উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে ।
এছাড়া বৌভাত অনুষ্ঠান, জন্মদিন, আকিকা, বিবাহবার্ষিকী, ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠী, খতনা প্রভৃতি সামাজিক উৎসব হিসেবে চিহ্নিত। এসব উৎসব আমাদের যান্ত্রিক জীবনে আনে মানবীয় ও সজীব আনন্দের ছোঁয়া ।
জাতীয় উৎসব: বাঙালি জীবনের অন্যতম প্রধান অংশ হিসেবে গণ্য জাতীয় উৎসবসমূহ। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব। আনন্দ-বেদনার এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি এ দিনগুলোকে জাতীয় উৎসব হিসেবে উদযাপন করে । এর সর্বজনীনতা অন্যান্য উৎসবের তুলনায় বেশি। জাতীয় চেতনা' গঠন, দেশপ্রেমের উৎসরণ প্রভৃতি আমেজে বাঙালিরা এ উৎসবগুলো উদ্যাপন করে
উপসংহার: যেকোনো উৎসবই মানুষে-মানুষে মিলনের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের উৎসবসগুলোর সর্বজনীনতা এ ক্ষেত্রে বিস্ময়কর। ইদ-পূজা কিংবা পহেলা বৈশাখ যেকোনো উৎসবে এ সর্বজনীনতা দেখা যায়। মিলিত তথা যৌথভাবে এসব পর্বের স্বাদ ভাগাভাগি আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির এক অদৃশ্য সেতুবন্ধ রচিত করে চলে প্রতিটি উৎসব। সম্প্রতি ৩১শে ডিসেম্বর ও ১৪ই ফেব্রুয়ারিও যথাক্রমে ইংরেজি বর্ষবিদায় ও ভালোবাসা দিবসের উৎসব হিসেবে বাংলাদেশে যথেষ্ট আগ্রহের সঙ্গে উদ্যাপিত হচ্ছে। যা হোক, যান্ত্রিক সভ্যতার এ সময়ে আমাদের সংস্কৃতির ধারক প্রতিটি উৎসবকে সামগ্রিকভাবে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা ২০ পয়েন্ট
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের উৎসব রচনা ২০ পয়েন্ট টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশের উৎসব রচনা ssc টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। বাংলাদেশের উৎসব রচনা, বাংলাদেশের উৎসব রচনা ssc, বাংলাদেশের উৎসব রচনা ২০ পয়েন্ট, বাংলাদেশের উৎসব রচনা ২০ প্যারা