স্যাটেলাইট কি কিভাবে কাজ করে | Satellite in Bangla
স্যাটেলাইট কি - What is Satellite? আপনি কি জানতে চান স্যাটেলাইট কাকে বলে? যদি জানতে চান স্যাটেলাইটের কাজ কি এবং স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে তাহলে আপনাকে স্বাগতম আমাদের আজকের আর্টিকেলে।
স্যাটেলাইট কি কিভাবে কাজ করে Satellite in Bangla |
আসসালামু আলাইকুম আমি আরকে রায়হান আপনি পড়তেছেন আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের একটি আর্টিকেল সেটি হলো স্যাটেলাইট কাকে বলে, স্যাটেলাইটের কাজ কি বা স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? আপনি যদি জানতে চান স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি এবং স্যাটেলাইট বলতে কি বুঝায় তাহলে এই আর্টিকেল টি পড়তে থাকুন।
সুচীপত্রঃ স্যাটেলাইট কি | স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি | Satellite in Bangla
স্যাটেলাইট কি
আমরা উপরে সুচিপত্র টি দেখে নিলাম। এবার আমরা জানব স্যাটেলাইট কি? তাহলে চল বন্ধু জেনে নিই স্যাটেলাইট কি?
স্যাটেলাইটঃ এ প্রযুক্তিতে যােগাযােগে স্যাটেলাইটের (উপগ্রহের) সহায়তা নিতে হয়। রকেটের মাধ্যমে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যাটেলাইটকে পৃথিবী থেকে (৩৬০০০ কি.মি.) ২২,২৩০ মাইল উপরে জিওসিনক্রোনাস অরবিটে স্থাপন করা হয়। যেখানে ক্যাবলের মাধ্যমে যােগাযােগ স্থাপন করা সম্ভব নয় সেখানে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয়। স্যাটেলাইটে ট্রান্সমিটার, রিসিভার, শক্তিশালী রিসিভার ট্রান্সমিটার অ্যান্টেনা VSAT (Very Small Aperture Terminal), সােলার পাওয়ার থাকতে হয়।
স্যাটেলাইটের কাজ কি
স্যাটেলাইট কি আমরা তা জানলাম। এখন জানবো স্যাটেলাইটের কাজ কি? তো চল বন্ধুরা জেনে নিই স্যাটেলাইটের কাজ কি?
স্যাটেলাইটের কাজঃ পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তে খুব তাড়াতাড়ি কম খরচে যােগাযােগ করা যায়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলাের বিশ্বময় সরাসরি সম্প্রচার, আন্তঃমহাদেশীয় দূরবর্তী টেলিফোন কল করা এবং ইন্টারনেটে সিগন্যাল পাঠানাের জন্য স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। অধিক দূরত্বে অনেক বেশি পরিমাণ ডেটাকে পরিবহণের জন্য স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ অপরিহার্য।
স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে
স্যাটেলাইট কি এবং স্যাটেলাইটের কাজ কি আমরা তা জানলাম। এখন জানবো স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? তো চল বন্ধুরা জেনে নিই স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?
স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করেঃ স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশনের জন্য ভূমিতে আকাশমুখী করে ডিশ অ্যান্টেনার মতাে একটি অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়। এটিকে ভিস্যাট বলা হয়। মাটিতে স্থাপিত বেজ স্টেশন বা ভি-স্যাটগুলােকে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বলা হয়। ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র হতে ভিস্যাটগুলাে মাইক্রোওয়েভ ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে সরাসরি স্যাটেলাইটে তথ্য পাঠায়। এই ফ্রিকোয়েন্সির পরিমাণ হলাে 6 Ghz। এরপর স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) এ থাকা ট্রান্সপন্ডেন্ট দ্বারা ঐ মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল আরও বেশি বিবর্ধিত বা অ্যামপ্লিফাই করে সেটিকে রিলে করা হয়। এর ফ্রিকোয়েন্সি হয় 4Ghz। টেরিস্ট্রোরিয়াল মাইক্রোওয়েভে রিপিটার যে ভূমিকা পালন করে স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভের ক্ষেত্রে ট্রান্সপন্ডেন্ট সেই ভূমিকা পালন করে। পুনরায় ভূমিতে থাকা বিভিন্ন ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রগুলাে ঐ বিবর্ধিত সিগন্যালগুলােকে গ্রহণ। করে যথাস্থানে প্রেরণ করে। যেহেতু মাইক্রোওয়েভ মুখােমখি সংযােগ বা লাইন অব সাইট মেইনটেইন করে এজন্য ভূমিতে স্থাপিত। ভিস্যাটকে আকাশমুখী করে স্থাপন করা হয়। স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভের সিগন্যাল ট্রান্সমিশনের প্রতিবন্ধকতাগুলাে হলাে বাতাসে থাকা বিভিন্ন গ্যাস, জলীয় বাষ্প, আয়নােস্ফিয়ার প্রভৃতি। এগুলাে মাইক্রোওয়েভ সিগন্যালকে শােষণ করে।
স্যাটেলাইট এর ব্যবহার (Using of Satellite)
স্যাটেলাইটের অনেক ব্যবহার আছে তার মধ্যে কিছু উল্লেখ যোগ্য ব্যবহার আমরা নিচে তুলে ধরলাম। তো নিচে থেকে তোমরা স্যাটেলাইট এর ব্যবহার জেনে নাও।
১. পৃথিবীর জলবায়ু এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করার কাজে।
২. টেলিভিশন সম্প্রচার কাজে।
৩. অপেশাদার রেডিও যােগাযােগের ক্ষেত্রে।
৪. প্রতিরক্ষা কাজে।
৫. ইন্টারনেট যােগাযােগের ক্ষেত্রে।
৬. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যােগাযােগের ক্ষেত্রে।
৭. দূরের গ্রহ, গ্যালাক্সি এবং মহাশূন্যের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ কাজে।
৮. গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (Global Positioning System-GPS) এর মতাে বিভিন্ন অবস্থান নির্ণয় কাজে।
স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি
আমরা উপরে জানলাম স্যাটেলাইট এর ব্যবহার। স্যাটেলাইট যেমন বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয় তেমনি স্যাটেলাইটের কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে। তো স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি যদি প্রশ্ন করে তাহলে নিচে স্যাটেলাইটের সুবিধা গুলো দেওয়া হলোঃ
১, বিপুল পরিমাণ ডেটা আদান-প্রদান করা সম্ভব।
২. পৃথিবীর একপ্রান্তে বসবাসকারী লােকজন অন্যপ্রান্তে বসবাসকারী লােকজনের কাছাকাছি থাকতে পারে।
৩. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. প্রাকৃতিক বিপর্যয়কালীন সময় যখন সব ধরনের যােগাযােগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে তখন স্যাটেলাইট যােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
৫. আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব।
৬. ভয়েস কলিং, ভিডিও কলিং, রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স ইত্যাদি সেবা পাওয়া যায়।
৭. একটি মূল্য সাশ্রয়ী ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লং ডিসটেন্স কল করা যায়।
স্যাটেলাইটের অসুবিধা কি কি
স্যাটেলাইট এর ব্যবহার জানলাম পাশাপাশি স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি তাও জানলাম। স্যাটেলাইটের যেমন সুবিধা আছে তেমনি স্যাটেলাইটের অসুবিধা আছে। নিচে থেকে আমরা স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি জেনে নিই।
১. স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে হওয়ায় সেখানে সিগন্যাল পাঠাতে অনেক বড় এন্টেনার প্রয়ােজন হয়।
২. স্যাটেলাইট প্রযুক্তিটির বাস্তবায়ন ও তদারকির বিষয়টি ব্যয়বহুল।
৩. স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সিগন্যাল ডিলে একটি অসুবিধা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
৪. ভ্রমণরত অবস্থায়, খারাপ আবহাওয়ায় কিংবা সানস্পট-এর কারণে বিভিন্ন সেবা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
৫. ডেটার অনাকাক্ষিত হস্তক্ষেপ প্রতিরােধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ এর সাথে টেরিস্ট্রোরিয়াল মাইক্রোওয়েভের পার্থক্য
স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি | টেরিস্ট্রোরিয়াল মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি |
---|---|
১. স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতিতে উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবী থেকে প্রায় ২২,২৩০ মাইল উপরে জিওসিনক্রোনাস অরবিটে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার বসানাে বা স্থাপন করা হয়। | ১. টেরিস্ট্রোরিয়াল মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতিতে ভূ-পৃষ্ঠেই ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার বসানাে বা স্থাপন করা হয়। |
২. একসঙ্গে একাধিক দেশে কভারেজ প্রদান করা যায়। | ২. এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র একটি দেশেই কভারেজ প্রদান করা সম্ভব। |
৩. এই পদ্ধতিতে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার-এর মধ্যে বাধা তৈরি | হওয়া সম্ভব নয় বলে সিগন্যাল বাধাপ্রাপ্ত হয় না। | ৩. এই ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার-এর মধ্যে কোনাে বাধা তৈরি হলে সিগন্যাল বাধাপ্রাপ্ত হয়। |
স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য
আপনি যদি স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য না জেনে থাকেন তাহলে নিচে থেকে স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য জেনে নিন।
স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্যঃ স্যাটেলাইটের চেয়ে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে আলাের গতি কম হলেও ডেটা পাঠাতে অপটিক্যাল ফাইবারই দ্রুততর । পৃথিবী থেকে ভিস্যাটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটে সিগন্যাল পাঠানাে হয়। স্যাটেলাইট সিগন্যালটি রিসিভ করে সেটিকে নতুন করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইট আবার স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবী এভাবে সিগনাল ট্রান্সমিট হয়। কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে পাঠালে প্রথমে বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে আলােক সিগন্যালে পরিণত করে আলাের গতিতে ফাইবারের মাধ্যমে ট্রান্সমিট হয় এবং অপরপ্রান্তে আলােক সিগনালকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিণত করা হয়। এভাবে প্রেরক থেকে সরাসরি গ্রাহকের নিকট সিগন্যাল পরিবাহিত হয়। স্যাটেলাইট দিয়েও সিগন্যাল আলাের বেগে যেতে পারে, কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার কাচের ভেতর দিয়ে যেতে হয় বলে সেখানে আলাের বেগ এক-তৃতীয়াংশ কম। তারপরেও পৃথিবীর একপৃষ্ঠ থেকে অন্যপৃষ্ঠে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সিগন্যালকে তাড়াতাড়ি পাঠানাে যায়। কারণ তখন প্রায় ৩৬ হাজার কিলােমিটার দূরের স্যাটেলাইটে সিগন্যালটি গিয়ে আবার ফিরে আসতে হয় না। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে মাত্র। আঠারাে থেকে বিশ হাজার কিলােমিটারেই চলে যেতে পারে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ স্যাটেলাইট কি | স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে | Satellite in Bangla
বন্ধুরা আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম স্যাটেলাইট কি, স্যাটেলাইটের কাজ কি, স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে, স্যাটেলাইট এর ব্যবহার (Using of Satellite), স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি, স্যাটেলাইটের অসুবিধা কি কি ও স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ এর সাথে টেরিস্ট্রোরিয়াল মাইক্রোওয়েভের পার্থক্য এবং স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য। যদি আমাদের আজকের স্যাটেলাইটের কি কিভাবে কাজ করে | Satellite in Bangla আর্টিকেল টি ভালো লাগে তাহলে নিচে কমেন্ট ও বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুল্বেন না।
খুব সুন্দর লিখেছেন। আরো এরকম পোস্ট দেন