ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
ভূমিকা: ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বর্তমানে আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত ও বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। ২০২১ সালে পালিত হবে বাংলাদেশের। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী । তাই, বাংলাদেশ এসময়ের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকার গড়ার লক্ষমাত্রা স্থির করেছে। উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে। তাল মিলিয়ে চলার জন্যে এটি একটি সময়ােচিত পদক্ষেপ। পৃথিবী, ধীরে ধীরে ডিজিটাল পৃথিবীতে পরিণত হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকেও এর থেকে বাইরে থাকলে চলবে না। কিন্তু একটি দেশকে ডিজিটাল দেশ তৈরি করার স্বপ্ন দেখা যতই সহজ হােক না কেন তা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন।
“ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর অর্থ: “ডিজিটাল বাংলাদেশ' কী এ বিষয়কে বুঝতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে একটি দেশ কীভাবে ডিজিটাল। দেশে পরিণত হতে পারে। একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ (Digital Countrv) বলা যাবে যখন তা ই-গভর্নমেন্ট (e-Government)-এ পরিণত হবে । অর্থাৎ দেশের যাবতীয় কার্যাবলি যেমন: সরকার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তাই আমাদের বাংলাদেশকে তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা যাবে যখন উপরিউক্ত বিষয়গুলাে যথাযথ অনুসরণ করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনি ইশতেহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। এখন যদি সরকার বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে তা স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পালন করবে। অবশ্য ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরােধী দল (বিএনপি) বা উভয়ই তথ্য যােগাযােগ প্রযুক্তি (Information Communication। Technology বা সংক্ষেপে ICT) উন্নয়নকে মৌলিক ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও প্রয়ােজনীয় প্রযুক্তি: সাধারণভাবে বলতে গেলে একটি ডিজিটাল সমাজে সকল পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অনলাইন প্রযুক্তির। প্রয়ােগ নিশ্চিত করাকে বােঝায় । ডিজিটাল বাংলাদেশ দুত ও কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজব্যবস্থা গড়বে। বাংলাদেশকে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করতে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন:
- বিদ্যৎ ঘাটতি: সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় বাংলাদেশকে ৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার ক্ষেত্রে দৈনিক ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যৎ ঘাটতির মখােমখি হতে হয়। একটি পরিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামাে গড়ে ওঠার জন্যে যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবহার একান্ত প্রয়ােজন।
- নেটওয়ার্ক-কাঠামাে: ঢাকার বাইরে খুব কমসংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কাঠামাে স্থাপন করা গেছে। ঢাকা শহরের বাইরের কিছ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাওয়া গেছে যে, বেশির ভাগ লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক অভ্যন্তরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পার্থক্যকে প্রতীয়মান করে।
- ইন্টারনেট ব্যবহার তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্যে একটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলাের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাংলাদেশের অবস্থান সব চেয়ে খারা আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার মাত্র ০.৩% যেখানে পাকিস্তান ও ভারতে যথাক্রমে ৭.৩% এবং ৫৩%,
- ইংরেজি শক্ষার হার: বাংলাদেশে ইংরেজিতে শিক্ষিতের হার এক শতাংশের কম, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে। ২০ শতাংশ। মূলত ইংরেজি ভাষা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করছে। অন 'তে শিক্ষিতের হার এক শতাংশের কম, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে এর পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ৬০ এ।
- তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিশ্বায়নকে তরান্বিত করছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা প্রয়ােজন। অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারিনি। এজন্যেই আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন করতে হংরে। ভা।ম।
- সাবমেরিন ক্যাবল: ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সুপার হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্র সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। কিন্তু একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবল প্রায়শই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলাে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা: বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বহিবিশ্বের যােগাযােগ স্থাপন করেছে। আজ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য মােবাইল ফোনের ব্যবহার। তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন জ্ঞানভিত্তিক থেকে অনেকখানি দূরে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ সাবমেরিন ফাইবার অপটিক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে শহরের কিছু উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযােগ পাচ্ছে। যে দেশের মজর মাসিক ১২০০ টাকাতেও কাজ করতে বাধ্য। হয় সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্যে মাসিক খরচ সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা। এ উচ্চ মূল্যে যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় তবে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ার যে স্বপ্ন তা স্বপ্নই থেকে যাবে, বাস্তবে রূপায়িত হবে না।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা |
ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ: ডিজিটাল বাংলাদেশ উন্নয়নের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ বিশাল কর্মপদ্ধতি চালানাের জন্যে অনেকগুলাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসজো এগিয়ে নিতে হয় । ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে আমাদের উন্নয়নের একটি বিজ্ঞানসম্মত নকশা তৈরি করতে হবে। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী মানবশক্তি তৈরি করতে হবে। ইন্টারনেটের ব্যয় সাধারণের সীমার মধ্যে এনে সকল জনগণের জন্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার করে স্বচ্ছতা আনাতে হবে। বাংলাদেশকে তখনই ডিজিটাল বলা যাবে। এজন্যে জনগণকে পরিবর্তনশীল মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে এবং সরকারি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিরােধী দলসমূহকেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। গ্রাম ও শহর অঞলের মধ্যে একটি ভালাে যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজলভ্য করতে হবে।
উপসংহার: বর্তমান পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবী। পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। এ স্বপ্নকেই ধারণ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের স্বাধীন হওয়া আমাদের এ মাতৃভূমি ১৯২১ সালে সবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে। এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে— এটি সকলেরই আশা। তবে এ আশাকে বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। নানারকম প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার কাজে আমাদের সবাইকে ব্রত থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
ভূমিকা: বর্তমান যুগ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। একুশ শতকের জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যুগে যে দেশ বা জাতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানকে যতটা কাজে লাগাতে পেরেছে তারাই অন্যদের থেকে উপরে রয়েছে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ এই সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তার সুফল ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে ভিশন-২০২১ নামক যে প্রকল্প ঘোষণা করে, এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ কী: বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার প্রত্যয়ের অপর নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। রাষ্ট্রের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এনে জনগণকে উন্নততর সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। একই সাথে বাংলাদেশের জনগণ যাতে একুশ শতকের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে নিজেদের অভিযোজন করে নিতে পারে, সরকার তার অনুকূল অবকাঠামো নিশ্চিত করেছে। এতে একদিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষ দক্ষ মানব সম্পদের দিকে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি জনগণের জীবনযাত্রার মানের প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা: বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের দিনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও আজ প্রযুক্তির হাওয়া লেগেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ২০০৭ সালেও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ ছিল সম্ভাবনাহীন একটি দেশ। কিন্তু খুব দ্রুতই দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসে যখন ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এর সহায়তায় আওয়ামী লীগের “ডিজিটাল বাংলাদেশ' পরিকল্পনা উন্মোচন করেন । ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল ২০২১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর বাংলাদেশ। একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে 'ভিশন-২০২১' নামে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ভিশন- ২০২১ এর প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ ছিল 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে 'ভিশন-২০২১' ঘোষণা করে, যা বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে। আর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার এই লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য : চারটি মূল লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে “ডিজিটাল বাংলাদেশ' কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। উদ্দেশ্যগুলো হল: ডিজিটাল সরকার, নাগরিকদের ডিজিটাল সেবা প্রদান, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক মানবসম্পদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্প। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় ‘অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন' প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভিনব উদ্ভাবনকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে প্রকল্প শুরু হয়। পরবর্তীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ‘আইসিটি বিভাগ' এবং 'ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ' এ বিভক্ত করা হয় যাতে মন্ত্রণালয়ের কাজ বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি: জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে প্রযুক্তির দক্ষ প্রয়োগ করার লক্ষ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের বিস্তৃত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:-
১. জনগণের রাষ্ট্র: ডিটেল টুলস ব্যবহার করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করবে সরকার। এভাবে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ।
২. মৌলিক চাহিদা পূরণ: রাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদানের কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। জনগণ যাতে সহজেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার মৌলিক অধিকার পূরণে সফল হয় সরকার তার সকল ব্যবস্থা করবে। অর্থাৎ গ্রাম ও শহরের সকল জনগণকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে শিল্প, ব্যাবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে ।
৩. রাজনীতির ডিজিটাল ধারা: জাতীয় সংসদসহ সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হবে । জাতীয় সংসদ পরিচালনাসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড উন্মুক্তভাবে সকল জনগণের জন্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪. ডিজিটাল সরকার: রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকার হবে ডিজিটাল । প্রতিষ্ঠানে দাপ্তরিক কাজে প্রচলিত কাগজভিত্তিক ফাইল ও ফিতাভিত্তিক ব্যবস্থার বদলে কাজ করতে হবে নেটওয়ার্ক ইন্টারেক্টিভ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে। সরকারি সকল তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হবে। এভাবে সরকারি কাজে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ রচিত হবে ।
৫. ডিজিটাল স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার: কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও সকল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে যোগাযোগসহ সেবা প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ডিজিটাল হতে হবে।
৬. ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা: প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে হবে। দেশের সকল স্তরের, সকল ধরনের, সকল পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠদানের প্রধান উপকরণ হবে মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি । শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়নসহ সকল কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হতে হবে ।
৭. ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা: সামরিক-বেসামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে নিরাপত্তার মান উন্নত করতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা অর্জনের লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীকে ডিজিটাল টুলস ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ দমন করে ব্যক্তির ‘ব্যক্তিগত তথ্য' সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে ।
৮. ডিজিটাল আইন ও বিচার ব্যবস্থা: পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট নতুন ধরনের অপরাধ সাইবার অপরাধ, সাইবার কমিউনিকেশন, ডিজিটাল কমার্স, ডিজিটাল লাইফ স্টাইল, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং মেধা সম্পদ ইত্যাদি সকল বিষয়কে পর্যালোচনা করে অপরাধ সংক্রান্ত ফৌজদারী কার্যবিধিসহ অনান্য সকল আইন পরিবর্তন করতে হবে। অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজিটালসহ নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োজন মতো বায়োমেট্রিক্স, জিন পরীক্ষা, অপরাধীর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) চালু, অপরাধীর ডাটাবেজ তৈরি করা ছাড়াও সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করতে হবে।
৯. ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা: উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল হাসপাতালে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে।
১০. ডিজিটাল পরিবহণ ব্যবস্থা: দেশের যানবাহনের নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ “এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দক্ষ করার জন্য ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করতে হবে। জরুরী প্রয়োজনে যানবাহন ট্রাকিং এর জন্য জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। ট্রেন, বাস ও বিমানের চলাচল এবং টিকেটিং সহজ ও কার্যকর করতে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করতে হবে ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ: বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সফল হয়েছে। প্রতিটি সরকারি মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের কাজকে ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সরকারের ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থার আওতায় জনগণ এখন বাড়িতে বসেই বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সেবা নিতে পারছে। জনগণ এখন ঘরে বসেই মোবাইল দিয়ে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুকিং করতে পারছে। সরকারের গৃহীত টেলিমেডিসিন প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগণও মোবাইল ফোনের সাহায্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন। দেশের প্রতিটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুবিধা নিতে পারছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ করার জন্য সরকার নিম্ন মাধ্যমিক থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে । গ্রামের মানুষ যেন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পায় সে জন্য সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড লাইন সংযুক্ত করেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে অন্তরায়: ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে প্রধান সমস্যা হলো বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও দাপ্তরিক দুর্নীতি। সকল ধরনের প্রশাসনিক কাজকর্ম ডিজিটাল ব্যবস্থার মধ্যে না আনলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। সরকারি প্রকিউরমেন্ট এবং সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটাল না করলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে না। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরেকটি অন্যতম অন্তরা হিসেবে কাজ করবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে। সকল জনগণকে বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনার পথে বাধা হিসেবে কাজ করবে ডিজিটাল ডিভাইস। সম্প্রতি করোনাকালে সরকার এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছে। ডিজিটাল ডিভাইসের অভাবে এবং দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের ফলে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থী সরকারের অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারেনি।
উপসংহার: সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা 'ভিশন ২০২১' রূপকল্প হাতে নিয়েছিল। এক্ষেত্রে সরকার অনেকটা সফল হয়েছে কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র ও দুর্নীতিমুক্ত এবং দক্ষ মানবসম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মাধ্যমে এই স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ হয়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখি নিকট ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের সকল জনগণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সকল সুবিধা ভোগ করবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।