বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা ২০ পয়েন্ট, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে ৫টি বাক্য টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য |
চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য টি।
ভূমিকা: একটা দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও রপ ফটে ওঠে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে । বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দেশে দেশে বিভিন্ন রূপে প্রতীয়মান। হয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক অপূর্ব লীলানিকেতন। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, সােন্দর্যে ভরা আমাদের এদেশ। লীলাময়ী প্রকৃতি এদেশে যেন মক্তহস্তে তার সমস্ত সৌন্দর্য বিতরণ করেছে। শাশ্বতকাল ধরে এ অনুপম সৌন্দর্য মানব হৃদয়ে দোলা। দেয়। মুম্ব কাবাঁচত্তে জন্ম দেয় সংগীতের উৎস ধারা ভাবকের হদয়ে তােলে ভাবের হিল্লোল। বাংলাদেশের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভােগ করার। জন্যে বিভিন্ন দেশ থেকে এদেশে ছুটে আসেন সৌন্দর্যপ্রেমিক মানুষ। বার্নিয়ের ইবনে বততা, ফ্রেডারিক, সিজার প্রমুখ বৈদেশিক পর্যটক এদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি গেয়েছেন
‘কোন গগনে ওঠেরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তােমার আলাে।
প্রথম আমার চোখ জুড়ালাে।
ওই আলােকেই নয়ন রেখে মুদবাে নয়ন শেষে।
বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি: টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ১.৪৭,৫৭০ বর্গকিলােমিটার আয়তনের ছােট্ট এ দেশটি বিশ্বের দরবারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। এ সৌন্দর্য যেমন দেশের ভূ-প্রকৃতি গঠনের দিক থেকে, তেমনই ঋতুবৈচিত্র্যের দিক থেকে বিরাজিত। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের প্রতিধ্বনি নিয়তই এক অলৌকিক সুরের মায়াজাল সৃষ্টি করে। হাজার হাজার মানুষ সেই সুরের মােহে ছুটে যায় সমুদ্র সৈকতে। উত্তরের ধূসর প্রকৃতির উদাসীনতার বাণী পাগলা বাউলের মতাে মানুষকে ঘরছাড়া করে। অসংখ্য নদ-নদী জালের মতাে সারাদেশে বিস্তৃত রয়েছে। কলকল রবে এসব নদ-নদী সাগরের পানে ছুটে চলে প্রতিনিয়ত। এদেশের অনুচ্চ পাহাড়, বন-বনানী যেন ঘােমটা মাথায় দিয়ে ধ্যানে রত। এটাই আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আর এভাবে আমাদের দেশের ছােট পরিধিতে প্রকাশ পেয়েছে প্রাকৃতিক রূপের লীলাখেলা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বনাঞল ও পাহাড়: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বাংলাদেশ। অপূর্ব সৌন্দর্যে বিভূষিত এদেশের বৈচিত্র্যময় গায়ে । অববাহিকার সাগর তীরে জেগে ওঠা উর্বর পলিমাটি। এ সমৃদ্ধ মাটিতে জন্ম নিয়েছে প্রচুর বনাঞ্চল। বিশ্বজুড়ে রয়েছে এদেশের সুন্দরবনের নাম, যেখানকার বিশাল বনানীতে সৃষ্টি হয়েছে এক স্বতন্ত্র জীবনধারা। এখানকার বিচিত্র জীবজন্তু মানুষকে যেমন আকৃষ্ট করে, তেমনি মনে ভীতিরও সার করে। বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণ ছাড়াও সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য জীবজন্তু। নদ-নদী, সাগরের পানিতে যেমন রয়েছে প্রচুর মাছ, তেমনই রয়েছে রাক্ষুসে কুমির। সুন্দরবন ছাড়াও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় বনাঞল। পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট, বান্দরবানের বনাঞ্চলের সাথে পাহাড় এবং পাহাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীগুলাে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। বনাঞল ও পাহাড়ের আঁকাবাঁকা, উচুনিচু পথে চলার সময় যে মনােমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে তা সহজেই মানুষের মনকে আকৃষ্ট করতে পারে । রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়গুলাে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা এক অসীম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এখনও দুর্গম চিম্বুক আর সাজেক উপত্যকার অপূর্ব সৌন্দর্য দেশবাসীর অজানা। ফয়েজ লেক ও রাঙামাটির কাপ্তাই লেক পাহাড়ের বুকে সৃষ্টি করেছে এক অনাবিল সৌন্দর্যের আধার।
নদ-নদীর সৌন্দর্য: বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এদেশের নাম হয়েছে নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদীর জন্যে বাংলাদেশের প্রকৃতি বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফলি, সরমা প্রভৃতি নদী জালের মতাে ছড়িয়ে রয়েছে সারাদেশ জুড়ে। এদেশের বুকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসব নদী এর মাটিকে উর্বর করে শস্য-শ্যামলা করে তুলেছে, প্রকৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। নদার জলধারার প্রভাবে সবুজের সমারােহ এসেছে সর্বত্র। নদীর বুকে বয়ে চলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমারগুলােও এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। বর্ষার সময় এসব নদী দু কূল প্লাবিত করে বয়ে চলে। এসব নদ-নদী ছাড়াও অসংখ্য খাল-বিল, হাওর, দ্বীপ এদেশে প্রকৃতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। হাতিয়া, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপসহ বহুসংখ্যক দ্বীপ বাংলাদেশের প্রকৃতিকে করেছে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত।
গ্রামের দৃশ্য: বাংলাদেশ ৬৮ হাজার গ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এদেশের এক একটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক একটা লীলানিকেতন। গ্রামের যে দিকেই তাকানাে যাক সেখানেই দেখা যায় শস্য-শ্যামল খেত, ফুলে-ফলে ভরা গাছপালা, অর্থাৎ চারদিকেই সবুজের সমারােহ। প্রকৃতির সবুজ অবগুণ্ঠনের মধ্য থেকে পাকা শস্যের মুখখানি যেন স্বর্ণবিন্দুর মতাে উঁকি দিয়ে ওঠে। কুটিরঘেরা পল্লিগ্রাম, সবুজ-শ্যামল মাঠ, দীঘির জলে। খেলা করা হাঁস সব মিলিয়ে পল্লিতে প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য বিরাজ করে। কবিগুরু এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলেন
‘অবারিত মাঠ, গগন ললাট চুমে তব পদধূলি ।
ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড় ছােট ছােট গ্রামগুলি।'
ঋতুবৈচিত্র্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নিহিত রয়েছে ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে। এদেশের প্রকৃতিতে বারাে মাসে ছয় ঋতুর বিচিত্র লীলা চলে। ছয়টি ঋতু ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। জীষা বর্ষা শরৎ হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয় এবং পরিবর্তন ঘটায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপবৈচিত্র্যের। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে প্রকৃতি অতিষ্ট হয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। এ সময়ের কালবৈশাখি ঝড় গাছপালা ভেঙে-চুরে প্রকৃতিকে যেন দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে যায়। এ সময় আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফল পাকতে শুরু করে ।
বর্ষা আসে পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। সারাদিন ঝর ঝর বৃষ্টি পড়তে থাকে। সূর্যের মুখ দেখা যায় না বললেই চলে। লানালার পানি দু কূল ছাপিয়ে যেন পূর্ণ যৌবনার রূপ ধারণ করে। প্রচুর বৃষ্টিপাতে প্রকৃতি নতুনরূপ ধরে আবির্ভূত হয়। প্রকৃতির বুকে তখন সবুজ। সমারােহ ও অপূর্ব লােভর সৃষ্টি হয়। চারদিকে কুহু-কেকার আনন্দ ধ্বনি জাগে। ফলে ফলে সুশােভিত হয়ে ওঠে বর্ষার প্রকৃতি। কেয়া, কদম, যুহ। ইত্যাদি ফুলের সৌরভে চারদিক মৌ মৌ করে। ঘন বর্ষার এ প্রকৃতিতে আকুল মন তাই বলে ওঠে
‘এমন দিনে তারে বলা যায়।
এমন ঘনঘাের বরিষায়।'
শরতের প্রকৃতি ভিন্নরূপ ধারণ করে। জলহীন সাদা মেঘের শরতের আকাশ আর রাতের জ্যোৎস্না এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। কামিনী, শেফালি, হাসনাহেনার গন্ধে ভরে ওঠে প্রকৃতি। সবুজের বিপুল সমাবেশে প্রকৃতি শান্তরূপ ধারণ করে। যে সৌন্দর্য অনুভব করে কবি বলেছেআজিকে তােমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রাতে।' হেমন্তের রূপ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে দেখা দেয়। শস্যক্ষেত্রের পাকা ফসলে প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্য। লাভ করে। চাষি মাথায় করে পাকা ধান ঘরে আনে। শীত ঋতু আসে তার গৈরিক উত্তরীয় নিয়ে। গাছপালার পাতা ঝরে প্রকৃতি শুষ্ক, বিবর্ণ ও শ্রীহীন হয়। মনে হয় প্রকৃতি নিরাভরণ রূপ ধারণ করেছে। শীতের সকালে শিশির বিন্দুর ওপর সূর্যের রশ্মি পড়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। শীতের শূন্যতা কাটিয়ে বিপুল সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতিতে। উপস্থিত হয় ঋতুরাজ বসন্ত। এসময়ে গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা দেয়। ফুলের সমারােহে আর কোকিলের গানে প্রকৃতি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। এভারে ছয়টি ঋতু বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তােলে। তাই কবি মুগ্ধচিত্তে বলেন
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।
উপসংহার: প্রকতি ও মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেই দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষকে করেছে ঘরছাড়া। এদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন পর্যটক ছুটে এসেছে দেশ-বিদেশ থেকে। প্রকৃতির বিচিত্র সৌন্দর্য এদেশের মানুষের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। অপূর্ব সৌন্দর্যে বিভূষিত এখানকার মানুষের চেহারায় যেমন বৈচিত্র্যের সমাবেশ ঘটেছে, তেমনি প্রকৃতিতেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের সমাবেশ ঘটেছে। বাংলাদেশকে প্রকৃতির সুরম্য লীলা নিকেতন বললে ভল হবে না। এদেশের যেদিকে দমিলান কল যায়, সেদিকেই দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা
ভূমিকা: আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এক সাগর রক্ত পেরিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক মানচিত্র পৃথিবীর বুকে স্থান করে নিয়েছে ‘বাংলাদেশ’ নামে । এ দেশের সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই আন্দোলন ও সংগ্রাম চলে আসছিল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের শাসন-শোষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে এ দেশের আপামর জনসাধারণ। এ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দখলদারমুক্ত হয়। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন সফলতার মুখ দেখে। নদীবিধৌত শস্য-শ্যামলা, সুজলা-সুফলা প্রকৃতির বৈচিত্র্যে ভরা এ বাংলাদেশ একরাশ স্বপ্ন বুকে ধারণ করে বিশ্ব মানচিত্রে নিজের স্থান করে নিয়েছে। এ স্বপ্নের দেশই আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সৌন্দর্য:
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণি সে যে— আমার জন্মভূমি।'
- আমাদের দেশ স্বপ্নের দেশ, স্বপ্নের রূপসি বাংলা। এ দেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি এসেছে এ দেশবাসীকে শাসন করতে। আবার অনেক কবি-সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে দেশের সৌন্দর্যের বন্দনা-গান গাইতে। এ দেশের নদী-অরণ্য, পাহাড় সবকিছুই সৌন্দর্যের আধার । নদীতে পালতোলা নৌকা চলতে দেখে বিশ্বকবি বলেছেন—
‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া,
দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া।'
স্বপ্ন এবং বাস্তবতা: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধিকার অর্জিত হওয়ার ফলে এ দেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যেখানে অরাজকতা, সন্ত্রাস-দুর্নীতি, ক্ষুধা- দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, কুসংস্কার প্রভৃতি থাকবে না। মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনের নিরাপত্তার জন্য ভাবতে হবে না— এমন একটি দেশই ছিল প্রত্যাশিত। প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা কেবল প্রত্যাশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেল। যে প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধিকার অর্জনের জন্য জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল— বাস্তবে তাঁদের সে প্রত্যাশা ও স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এ দেশে অরাজকতা, ঘুষ-দুর্নীতি, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রম-অবনতি দিনদিন বেড়েই চলেছে । শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির নামে লাইসেন্স পেয়েছে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। রাজনীতি দিন দিন কলুষিত ও সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ধনী দিন দিন আরও ধনী হচ্ছে আর গরিব আরও গরিব হচ্ছে। অথচ এমনটি প্রত্যাশিত ছিল না। প্রত্যাশা ছিল একটি স্বাধীন-সার্বভৌম স্বপ্নের দেশ, যেখানে জীবনের নিরাপত্তার জন্য ভাবতে হবে না, মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।
শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা: এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি প্রত্যাশা করি একটি শোষণমুক্ত সুশীল সমাজ। এখানে প্রভাবশালী ও প্রতিপত্তিশালী কিংবা বিত্তবান বলে কোনো শব্দ থাকবে না । সকলেরই থাকবে সমান অধিকার। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়া সকলের দায়িত্ব। সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সর্বপ্রকারের অরাজকতা দূরীকরণ সরকার থেকে শুরু করে সমাজের নিম্নস্তর পর্যন্ত প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। নিরক্ষরতা, কুসংস্কার দূরীকরণ ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে শোষণমুক্ত সমাজ। এমনটিই আমি প্রত্যাশা করি আমার স্বপ্নের বাংলাদেশে।
মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা: একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিক | হিসেবে সকলেরই প্রত্যাশা মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা লাভ করা। মৌলিক অধিকার বলতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতিকে বোঝায়। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণই একটি দেশের প্রধান কর্তব্য। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সমস্যা দূরীকরণের মধ্য দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। আর এ কাজে সরকার থেকে শুরু করে শিল্পপতি, আমলা, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল নাগরিকরা রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শিক্ষাক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা কমিশন গঠন, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, সকলের জন্য সমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন । আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের কোনো মিল নেই । এটা মোটেই প্রত্যাশিত নয় । চিকিৎসাক্ষেত্রেও আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। — বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ২৫০০ জনের জন্য মাত্র একজন ডাক্তার রয়েছে। [তথ্যসূত্র: ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, দৈনিক যুগান্তর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী] যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল । প্রতিবছরই এ দেশে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার অভাবে অকালে জীবন হারাচ্ছে। তাই প্রয়োজন যুগোপযোগী চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রবর্তন ও প্রয়োগ করা। আর এসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: স্বাধীনতার পূর্বে এ দেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র সাত কোটি। বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটির অধিক। স্বাধীনতার পর থেকেই এ সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলছে। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না আমাদের সম্পদ। জনসংখ্যার এ র্য ক্রমবৃদ্ধির ফলে দিনদিন সংকটের কবলে পড়ছে দেশ ও দেশের জনগণ । দৈনন্দিন জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মক্ষেত্রের পরিধি সে হারে বাড়ছে না, যে হারে বাড়ছে আমাদের জনসংখ্যা। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং একটি কার্যকর জনসংখ্যা নীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে জনসম্পদ ও জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে ।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ : নিরক্ষরতা যেকোনো জাতির জীবনে এক ভয়াবহ অভিশাপ। বাংলাদেশের মোট অধিবাসীর অর্ধেকটাই নিরক্ষর। আর দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এ নিরক্ষরতা সমস্যার কারণে। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ইতোমধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং তা দূরীকরণে সফল হয়েছে কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। ২০০৮ সাল নাগাদ সবার জন্য শিক্ষার যে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার ঘোষিত হয়েছিল, বাংলাদেশ তার সাথে একীভূত হয়ে সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমানে নিরক্ষরতা দূরীকরণ শুধু সরকারি কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নেই, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । প্রত্যাশা করা যায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে খুব দ্রুতই এ দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ সম্ভব হবে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সর্বস্তরের জনসাধারণের দাবি ও প্রত্যাশা ছিল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা । দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, জীবনের নিরাপত্তা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আইনের শাসন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসনের অন্যতম দিক। তাই সুখী-সমৃদ্ধ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন ।
বর্তমান রাজনীতির ধারা পরিবর্তন: স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। ফলে রাজনীতির সঠিক লক্ষ্য ও কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য হয়ে পড়েছে ক্ষমতা দখল । ফলে রাজনীতিতে পেশিশক্তির আধিপত্য দিনদিন বেড়েই চলেছে । রাজনীতি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও স্বার্থ অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সন্ত্রাস, দলীয় কোন্দল, হানাহানি, প্রতিহিংসা ও খুনখারাবি বাংলাদেশের রাজনীতির নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আমাদের প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান রাজনীতির ধারা পরিবর্তন করা একান্তই জরুরি। রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক চাহিদা, তাদের মতামত ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যদি তা করা সম্ভব হয় তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে সোনার দেশ, বাংলাদেশ।
উপসংহার: বাংলাদেশ আমার স্বপ্নের দেশ। এ দেশের জল-মাটি মেখে আমার বেড়ে ওঠা। এ দেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলার ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন। এজন্য মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন, সকল প্রকারের দুর্নীতি ও অরাজকতা দূরীকরণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, আইন-শৃঙ্খলার ক্রমোন্নতি, কর্মমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠিত হবে স্বাধীন-সার্বভৌম, উন্নত স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলাদেশ। আর তখনই প্রতিটি নাগরিকের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয় সাধিত হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা ssc টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঋতু বৈচিত্র্য রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।
BRO YOU'RE GREAT