শিশু শ্রম রচনা | শিশু শ্রমিক রচনা ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শিশু শ্রম রচনা বা শিশু শ্রমিক রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি শিশু শ্রম রচনা বা শিশু শ্রমিক রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শিশু শ্রম রচনা বা শিশু শ্রমিক রচনা টি।
শিশু শ্রম রচনা বা শিশু শ্রমিক রচনা |
আর হ্যা আমরা তোমাদের সুবিধার জন্য আমরা খুব সহজ ভাবে আজকের এই শিশু শ্রম রচনা বা শিশু শ্রমিক রচনা টি তুলে ধরেছি।
শিশু শ্রম রচনা
ভূমিকা: অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক শিশুকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। দরিদ্র শিশুরা অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে সস্তা। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে। এ শিশুশ্রম শিশুদের সুন্দর শৈশব ও বিকশিত জীবনের একমাত্র বাধা। আমাদের শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকে। শিশুরা এভাবে অর্থ উপার্জনে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত, গন্তব্যহীন।।
শিশুর সংজ্ঞা: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের এ সনদ অনুমােদন করেছে। তবে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ঘােষিত বাংলাদেশের খসড়া জাতীয় শিশুনীতি অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েরা শিশু বলে গণ্য। আর বাংলাদেশে মােট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু।
শিশুশ্রম ও বিশ্ব পরিস্থিতি: পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সমগ্র বিশ্বের অনেক দেশেই শিশুরা শিশুশ্রমে নিয়ােজিত। কেবল তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশেই নয়, উন্নত দেশগুলােতেও শিশুরা বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে । খনির কাজ বয়স্কদের জন্যেই বিপজ্জনক বলে বিবেচিত, অথচ শিল্পোন্নত বিশ্বে বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও খনিতে কাজ করে। ইতালির চামড়া শিল্পে, চীনের কয়লা খনিতে, কলম্বিয়া ও পেরুর ইট তৈরির কারখানায় অনেক শিশু কাজ করে । উন্নয়নশীল দেশে মােট শ্রমিকের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। এদের মধ্যে ব্যাপক অংশ কাজ করে কৃষিক্ষেত্রে। আফ্রিকায় রপ্তানিযােগ্য ফসলের খামারে, জিম্বাবুয়েতে তুলা এবং কফি খেতে, ব্রাজিলে চা, আখ ও তামাক চাষে, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে রাবার বাগানে, নেপালে চা বাগানে এমনিভাবে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই শিশুরা খেতে-খামারে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষিতে নিয়ােজিত শিশু শ্রমিকদের অধিকাংশই জাতিগত সংখ্যালঘু। ভারতে কাচ শিল্পে কাজ করে অনেক শিশু । এভাবে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই শিশুরা নানা কারণে বিপজ্জনক ও কষ্টসাধ্য শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। এদের সকলের বয়স আট থেকে চৌদ্দ বছরের মধ্যে।
বাংলাদেশে শিশু শ্রমিক: সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আনুমানিক শ্রমশক্তির শতকরা ১৫ ভাগই শিশ। এদের মধ্যে শহরাঞ্চলে শিশুরা গার্মেন্টস শমিক, টেম্পু হেলপার, কুলি, হকার, রিকশা শ্রমিক, হােটেল বয়, শিল্প শ্রমিক এবং গাড়ির গ্যারেজে প্রভৃতি কাজে নিয়ােজিত। জামদানি শাড়ি কারখানায়ও অনেক শিশু শ্রমিক কাজ করে। এ ছাড়া সাবান ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন কারখানা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ বৈদাতিক মিমি নির্মাণ শ্রমিক, চামড়া ও ট্যানারি শিল্প শ্রমিক, মাদকদ্রব্য বেচা-কেনা প্রভৃতি ঝুকিপূর্ণ কাজেও শিশুরা নিয়ােজিত। অনেক শিশ গহপরিচারক হিসেবে। কাজ করে। গ্রামাঞলে শিশুদের একটি বড় অংশ ক্ষেতে-খামারে কাজ করে।
শিশুদের গার্হস্থ্য কাজ: পৃথিবীর সবদেশেই শিশুদের জন্যে যে কাজটি নিজেদের পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ সেটি হলাে কৃষি ও গার্হস্থ্য কাজ। চলে গবাদিপশু চরানাে, ছােট ভাই-বােনদের দেখাশােনা, খাবার তৈরি, পানি সংগ্রহ প্রভৃতি দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে শিশুরা মাকে সাহায্য করে থাকে। পারিবারিক কাজের মধ্য দিয়েই শিশু শ্রমিকদের জীবনযুদ্ধ শুরু হয়।
বাংলাদেশে শিশুদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও শিশুশ্রমের কারণ: আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশে তিন শ্রেণির শিশুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। প্রথমত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিশু—এরা শিশু শ্রমের সাথে জড়িত নয়। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনােদনসহ প্রয়ােজনীয় সকল সুযােগ-সুবিধাই এরা পেয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশু। এরা সার্বিক সুযােগ-সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। এরা প্রাথমিকভাবে শিক্ষার সুযােগ পেলেও আর্থিক অসচ্ছলতা ও সামাজিক বিভিন্ন টানাপােড়েনে শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়। শিশু অবস্থাতেই এরা শ্রমের বিনিময়ে জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
ততীয় শেণিটি বিত্তহীন। এরা ছিন্নমূল । চরম দারিদ্র্য এদের জীবনের নিদারুণ সত্য। এরা সব ধরনের সুযােগ-সুবিধা থেকে বর্ণিত। খাদ্যাভাব। পষ্টিহীনতা এবং বিভিন্ন রােগব্যাধির মধ্য দিয়েই এরা বেড়ে ওঠে। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে এদের সংখ্যাই বেশি এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পেছনে প্রধান কারণগুলাে হলাে:
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি;
২. দারিদ্র্যের কারণে গ্রাম থেকে শহরে গমন;
৩. নদীভাঙন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ;
৪. পরিবার ভেঙে যাওয়া প্রভৃতি।
শিশু শ্রমিকদের বড় অংশ মেয়ে শ্রমিক। শিশু শ্রমিকরা যে ধরনের পেশায় নিয়ােজিত থাকে তার মধ্যে কিছু কিছু কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কখনও কখনও শিশুরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও শিশুরা বৈষম্যের শিকার হয়। অনেক শিশুই দৈনিক সাত থেকে বারাে ঘণ্টা কাজ করে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকরা শিশু শ্রমিকদের তুলনায় অর্ধেকেরও বেশি মজুরি পেয়ে থাকে। অথচ প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের চেয়ে শিশু শ্রমিকরা দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য হয়। নিস্পাপ শিশু শ্রমিকরা অনেক সময় প্রয়ােজনীয় ছুটি কিংবা বিশ্রামও পায় না।
শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইন ও শিশু শ্রম বন্ধের উপায়: আইনের দৃষ্টিতে শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। আন্তর্জাতিক শ্রম-সংস্থা অর্থাৎ আইএলও শিশু। শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৫ বছর নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া কী কী ধরনের কাজে শিশুদের নিয়ােগ করা যাবে না সে ব্যাপারেও সুস্পষ্ট নীতিমালা। রয়েছে। যেমন: রেলযাত্রীর মালামাল বহন, বন্দরের মালামাল খালাস বা বােঝাই, বিড়ি তৈরি, আতশবাজি ও বিস্ফোরক তৈরির কারখানা, ট্যানারি, সাবান তৈরিসহ বেশ কিছু কাজে শিশুদের নিয়ােগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সমাজ বাস্তবতার নিরিখে শিশুশ্রম পুরােপুরি বন্ধ করা না হলেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তাদের নিয়ােগ বন্ধ করা যেতে পারে। প্রতিবছর ১২ই জুন বিশ্বে শিশুশ্রম প্রতিরােধ দিবস পালিত হয়। এ দিবসটির তাৎপর্য শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলা, সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ দিবসটি তখনই সফল হবে যখন সত্যিকার অর্থে মানুষ সচেতন হবে, পরিবর্তন আসবে সমাজব্যবস্থার। সেইসাথে শিশুকে জানাতে ও বােঝাতে হবে যে, তাদের দারিদ্র্য দূর করার মােক্ষম হাতিয়ার শিক্ষা। সেইসাথে শিশুদের শিক্ষার সুযােগ করে দিতে হবে।।
উপসংহার: শিশুরা জাতির ভবিষ্যত’-এ স্লোগানটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। কিন্তু অনেক দেশেই বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আইনেও রয়েছে ফাক। তাই শিশুদের যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলার জন্যে সকল শিশুর অধিকার ও সুবিধা সুনিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজন মানুষের দষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। শিশুরা যাতে পরিপূর্ণ সুযােগ পেয়ে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে সে অঙ্গীকারে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ শিশু শ্রম রচনা | শিশু শ্রমিক রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শিশু শ্রম রচনা | শিশু শ্রমিক রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই শিশু শ্রম রচনা | শিশু শ্রমিক রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।