কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC (science and agriculture) | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট জেনে নিবো। তোমরা যদি কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা SSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট (agriculture lesson) টি।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট |
আর হ্যা আমরা তোমাদের সুবিধার জন্য আমরা খুব সহজ ভাবে আজকের কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট (best agriculture schools) টি তুলে ধরেছি।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা: সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করল, সেদিন থেকেই ফসল ফলানাের কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। উন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশে কৃষি অন্যতম প্রধান শিল্প। উন্নত দেশের বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিব্যবস্থা বিশ্বের সব দেশেই কম-বেশি প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশও তার থেকে ভিন্ন নয়। বাংলাদেশ মানেই গ্রাম-বাংলা, পল্লিবাংলা, মাটি ও মানুষের বাংলা । সেই অর্থেই গােটা বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্র। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই কৃষিনির্ভর। কৃষি আমাদের প্রাণ, কৃষি আমাদের ধ্যান-জ্ঞান ও সাধনা। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে সুপরিচিত।
কষিকাজের গুরুত্ব: মানবজীবনে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। এ পৃথিবীতে কৃষিকাজ দিয়েই মানুষ তার কর্মজীবনের সূত্রপাত করেছিল। কৃষির ওপর নির্ভর করেই মানবজীবনের ধারা এখনও বয়ে চলেছে এবং চলবে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষি এবং তাদের জাতীয় উন্নয়নও কষির ওপর নির্ভরশীল। মানবজাতির জন্যে তাই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা অনবরত গবেষণার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করছেন।
আমাদের দেশের কৃষক ও কৃষি: আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লােকই কৃষিজীবী। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, উন্নত দেশগুলােতে কৃষিকাজের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও আমাদের দেশে এ ব্যাপারে তেমন কোনাে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এখনও প্রাচীন আমলের মতাে কৃষকেরা কৃষিকাজের জন্যে জীর্ণ-শীর্ণ গরু আর লাঙল ব্যবহার করছে। কৃষকদের অবস্থাও শােচনীয়। কৃষিকাজের জন্যে তারা প্রয়ােজনীয় মূলধন যােগাতে পারে না। তারা নিরক্ষর তাই উন্নত ও আধুনিক কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের উপযােগী জ্ঞান ও অর্থ তাদের নেই। ফলে আমাদের কৃষিব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিবর্তনের সিঁড়ি বেয়ে গােটা বিশ্ব আজ অপ্রতিহত গতিতে ধেয়ে চলেছে উন্নয়নের স্বর্ণ-শিখরের পানে। দিনবদলের পালায় বাংলার কৃষক আর কৃষি আজও সেই তিমিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। যুগ-তরঙ্গ তাদের মাঝে কোনাে আলােড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। তাই আজও বাংলার কৃষক প্রকৃতির খেয়াল-খুশির খেলনা হয়ে ধুকে ধুকে মরছে।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এদেশের হতভাগ্য অসহায় কৃষকের ইতিবৃত্তে বলেছেন, “ওই যে দাড়ায় নত শির মূক সবে, ম্লানমুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর বেদনার করুণ কাহিনি, স্কন্ধে যত চাপ তার বহি চলে মন্থরগতি যতক্ষণ থাকে প্রাণ তার।'
কৃষিকাজে বিজ্ঞান: একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর কোনাে কাজেই বিজ্ঞানের অনুপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র অব্যাহত । বিজ্ঞানের বদৌলতে অন্ধকার ধরণী আজ আলােকাভায় প্রােজ্জ্বল। বিজ্ঞানের বদৌলতেই আজ ঊষর মরু হয়েছে সরস ও উর্বর, দুর্গম পাহাড়ের উপত্যকা ও অধিত্যকা এসেছে চাষের আওতায়। নদী পেয়েছে নতুন গতি, শুকনাে ক্ষেতে চলছে জলসিঞ্চন। জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়াসে নিবিড় চাষের জন্যে যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার-টিলারের সঙ্গে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি। দিয়েছে। গােবর সার, কম্পােস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার; যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এসএসপি ইত্যাদির আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপরে চলে গেছে। একই সঙ্গে উল্লেখ করা যায়, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের কথা। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরি ধান আবিস্কৃত হয়। এরপর বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইনি- নামক উস। ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা আবশ্যক, মার্কিন যকৰাটের নােবেল। পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী নর্মান বেরলগের মাঝিপাক ও অন্যান্য জাতের উচ্চ ফলনশীল গম আবিষ্কার করে কৃষিতে বিজ্ঞানের এক মহতী উদাহরণ। সৃষ্টি করেছেন। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের এ সাফল্য প্রায় সকল ধরনের ফল। ফলারি ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই সাধিত হয়েছে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগের মাধ্যমে পােকা-মাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়ােগ। ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতােই। নানা ধরনের পােকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্যে ইনসেকটিসাইড বা পােকা দমনকারী বহ রাসায়নিক দ্রব্য আবিস্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে এড্রিন, ডায়াজিন, ক্লোর ছাড়াও রয়েছে অনেক পােকা ধ্বংসকারী ওষুধ।
বিভিন্ন দেশের কৃষিকাজে বিজ্ঞান: বর্তমানে উন্নত দেশগুলােতে কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। জমি কর্ষণ থেকে শুরু করে। বীজ বপন, ফসলের আগাছা পরিষ্কার, সেচকার্য ফসল কাটা, মাড়াই করা ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই তারা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি। তাদের কৃষিকাজে এখন আর অন্তরায় হয় না। শীতপ্রধান দেশে শীত নিয়ন্ত্রিত ঘর অর্থাৎ গ্রিন হাউজ তৈরি করে সেখানে শাক-সবজি, ফল-মূল উৎপন্ন করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সহায়তায় মরুভূমির মতাে জায়গাতেও সেচের ব্যবস্থা করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ফসল ফলানাে হচ্ছে। ফলে দেখা যায়, কৃষিকার্যে বিজ্ঞান এক যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিয়েছে।
আমাদের দেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান: উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের দেশে সম্ভব হচ্ছে না। তবে সীমিত। আকারে আমাদের কৃষিতে বিজ্ঞানের ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে এবং কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তবে প্রয়ােজনের তুলনায় তা অনেক কম। জমির খণ্ড-বিখণ্ডতার কারণে জমি কর্ষণে এখনও অনেক জায়গায় ট্রাক্টর ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। সেচকার্যের জন্যে গভীর নলকূপ ও মেশিন চালিত। পাম্প ব্যবহৃত হচ্ছে। বীজ সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও উৎপাদনের মাত্রা বাড়াতে সার ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে ইতােমধ্যে স্বল্পমাত্রায় হলেও কৃষির। উন্নতি সাধিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আরও উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়ােজন রয়েছে।
দৃষ্টান্ত: বিস্ফোরণােন্মুখ জনসংখ্যার ভারে বাংলাদেশ আজ নজ। জনসংখ্যার গুরুভার সৃষ্টি করেছে প্রকট খাদ্য সমস্যা। আমাদের কৃষির প্রচলিত। প্রাচীন পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমতা বজায় রেখে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির। স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা এক চতুর্থাংশ। অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে অধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কৃষিকে আমরা এক্ষেত্রে অনুসরণ করতে পারি।
আমাদের কৃষক এবং আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তি: আমাদের কৃষক সম্প্রদায় এখনও অনেক জায়গায় জমি চাষের জন্যে গবাদিপশু চালিত লাঙল ব্যবহার করে। এ ব্যবস্থা যেমনি কষ্টকর তেমনি সময়সাধ্য। এ কাজে আমরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক জমিতে চাষাবাদ করতে পারি। কৃষিজমির মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উন্নত দেশসমূহের মতাে আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। বলতে গেলে মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই যােগান দেয় কৃষি । তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণসাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন হয়ে উঠছে। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষিকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
উপসংহার: পর্যাপ্ত মূলধন, কাঁচামাল ও খনিজ সম্পদের অভাবহেতু বাংলাদেশের শিল্পায়নের সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। তাই আমাদের জাতীয় উন্নয়ন বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আর একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরা পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ। থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিজ্ঞানের প্রায়ােগিক দিকের নাম প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে আরামদায়ক। কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের জয়যাত্রা লক্ষণীয়। অসংখ্য কৃষি প্রযুক্তি কৃষিকাজকে করে তুলেছে। সহজসাধ্য। অজস্র উচ্চফলনশীল জাতের ফসল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে কৃষিপণ্যও হয়েছে সহজলভ্য।
কৃষির অতীত-কথা: কৃষি হলাে মানব সভ্যতার আদিম পেশী। জীবন ধারণের তাগিদে আদিম মানুষ প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ফলমূল গুহায় নিয়ে আসতাে এবং বনজঙ্গলের পশু-পাখি শিকার করতাে। প্রকৃতির। উপরে পূর্ণ নির্ভরশীলতার কারণে প্রায়ই তাদের খাদ্য-সংকটে পড়তে হতাে। বছরের কিছু সময়ে তাদের। কোনাে খাবার জুটত না। ফলে খাদ্যের সন্ধানে তাদের একস্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াতে হতাে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আদিম মানুষ এক পর্যায়ে পশুপালন ও বীজ বপন করতে শেখে। এর ফলে খাদ্যদ্রব্য সুলভ হয় এবং জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে অপেক্ষাকৃত সহজ ও নিশ্চিন্ত। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আগে পর্যন্ত কৃষিকাজ ছিল অত্যন্ত শ্রমসাপেক্ষ এবং প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
কৃষি ও বিজ্ঞানঃ বিজ্ঞানের অবদানে ধীরে ধীরে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটছে। কৃষিকাজকে সহজ ও কম শ্রমসাধ্য করতে কৃষি-বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা করছেন। ফলে একদিকে যেমন চাষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে, ফসল নির্বাচন ও নতুন নতুন ফসল তৈরির কাজেও অগ্রগতি হচ্ছে। কৃষি-বিজ্ঞানের এসব গবেষণা পৃথিবীকে আজ শস্যে ও ফসলে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। পৃথিবীর মানুষের জন্য এখন যতটা ফসল দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি ফসল পৃথিবীতে ফলছে। জমিকে উর্বর করতে আবিষ্কৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সার। পুরানাে প্রযুক্তির লাঙল-মই প্রভৃতির পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর। উদ্ভাবিত হয়েছে উন্নত জাতের বীজ ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত। এতে অল্প সময়ে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ফসল এবং বীজ উৎপাদন এবং তা সংরক্ষণেও বিজ্ঞান সহযােগিতা করছে। সেচ ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। পশু-পাখি ও মাছের রােগজনিত মৃত্যুর হারও হ্রাস পেয়েছে কৃষি-চিকিত্সার অগ্রগতির কারণে। এভাবে কৃষি-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কৃষিকাজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
উন্নত বিশ্বে কৃষি: উন্নত দেশগুলাের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তােলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন মােয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ফিড গ্রাইন্ডার (পেষক যন্ত্র), ম্যানিউর স্পেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র), মিল্কার বৈদ্যুতিক দোহন যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলাের কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে ট্রাক্টরের মাধ্যমে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ করা সম্ভব হয়। একই ট্রাক্টর আবার একসঙ্গে ফসল কাটার যন্ত্র হিসেবেও কাজ করে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশও কৃষি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলেছে।
কৃষি ও বাংলাদেশ: কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মােট জাতীয় আয়ের শতকরা ৩৮ শতাংশ আসে কৃষি থেকে এবং রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ১৪ শতাংশ আসে কৃষিজাত দ্রব্য। রপ্তানি থেকে। এছাড়া কর্মসংস্থান ও শিল্পের ভিত্তি হিসেবেও বাংলাদেশে কৃষি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু কৃষিকাজের জন্য খুবই অনুকূল। এদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক জল-ভান্ডার। আধুনিক প্রযুক্তি উন্নত দেশগুলাের মাটির অনুর্বরতাকে এবং পানির। দুর্লভতাকে যেভাবে দূর করেছে, তাতে আধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য আরাে বেশি সুবিধা নিয়ে আসবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা এখনাে অনেকাংশে প্রকৃতির উপরে নির্ভরশীল। ফলে বন্যা, খরা, জলােচ্ছ্বাসের মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়, আবার অনেক সময়ে প্রত্যাশার তুলনায় কম ফসল ফলে। কৃষকের কাছে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও কৃষি বিজ্ঞানের জ্ঞান সঠিকভাবে পেীছে না দিতে পারাই এর প্রধান কারণ। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব বাধা দূর করা। যায় এবং উন্নত দেশগুলাের মতাে বাংলাদেশকেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তােলা যায়।
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা: কৃষির উন্নতির উপরেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই কৃষি-বিজ্ঞান ও কৃষি-প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার কোনাে বিকল্প নেই। এটা অত্যন্ত আশার কথা যে, বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইতিমধ্যে বহু নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল ফসল উদ্ভাবন করেছে, বহু কৃষিবান্ধব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে এবং বহু ধরনের কৃষিপণ্যকে বাজারজাত করণের ব্যাপারে নতুন নতুন কৌশল বের করেছে। অর্থাৎ কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ কোনােক্রমে পিছিয়ে নেই। তবে এখন প্রয়ােজন এসব উদ্ভাবনকে দেশের সর্বত্র সহজলভ্য করে তােলা এবং কৃষককে এসব উদ্ভাবনের সঙ্গে পরিচিত করে তােলা। শিক্ষিত জনবলকে কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারলে এবং কৃষিকাজের সঙ্গে তাদের যুক্ত করতে পারলে এই কাজ অনেকটা সহজ হয়। তাতে আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর যথাযথ প্রয়ােগ সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিন্ত হওয়া যেতে পারে। বর্তমানে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কৃষকদেরকে নিয়মিতভাবে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
উপসংহার: কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে টেকসই করতে প্রয়োজন কৃষি সংক্রান্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজলভ্য করা। এছাড়া বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে ফসলহানির আশঙ্কা তৈরি না হয় অথবা উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণে যাতে কোনাে সমস্যা না হয়, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যান্য শাখাকেও কৃষির স্বার্থে এগিয়ে আসা দরকার। তবে সবার আগে দরকার শিক্ষিত জনগােষ্ঠীকে কৃষিপেশায় আকৃষ্ট করা এবং শিক্ষিত জনশক্তিকে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত করা। কেননা শিক্ষিত জনশক্তি কৃষিকাজে এগিয়ে এলে কৃষি-বিজ্ঞান ও কৃষি-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব হবে। এজন্য সরকারের উচিত কৃষিপেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের, বিশেষভাবে কৃষিকাজে সফল হওয়া ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা ও সম্মানিত করা। এতে তাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে এবং অধিক সংখ্যক শিক্ষিত লােক কৃষিপেশায় আকৃষ্ট হবে। কৃষিকাজের সঙ্গে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সম্পর্ক মজবুত করতে এমন পরিবেশই জরুরি।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা: আদিম মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করল, সেদিন থেকেই কৃষিবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু। ক্রমশ তারা ফসল ফলানোর কাজে লাঙল, কোদাল ইত্যাদি প্রাথমিক হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করল। সে ছিল আদিম ধরনের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি। তারপর কত শতাব্দী চলে গেছে। বিজ্ঞানের হয়েছে অভাবনীয় অগ্রগতি। এখন কৃষিতে লেগেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। বাংলাদেশের কৃষিতেও বিজ্ঞানের প্রয়োগ অগ্রযাত্রা সূচিত। বাংলাদেশ মানেই গ্রামবাংলা, মাটি ও মানুষের বাংলা । এদেশের শতকরা ৭০ জনের বেশি অধিবাসী কৃষিজীবী। গোটা বাংলাই যেন একটা কৃষিক্ষেত্র । বাংলাদেশ ও এর অধিবাসী সবই কৃষিনির্ভর। কৃষি আমাদের প্রাণ, কৃষি আমাদের ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। তাই এদেশের কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ খুবই গুরুত্ব বহন করে ।
কৃষিকাজে, বিজ্ঞান: একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর কোনো কাজেই বিজ্ঞানের অনুপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র। বিজ্ঞানের কল্যাণে অন্ধকার পৃথিবী আজ আলোকিত। বিজ্ঞানের কল্যাণেই মরু হয়েছে সরস ও উর্বর, দুর্গম পাহাড়ের খাড়াই-উতরাই পরিণত হয়েছে দিগন্তবিস্তৃত সমভূমিতে, নদী পেয়েছে নতুন গতি, শুকনো খেতে চলছে জল-সেচ। জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিকতর ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নিবিড় চাষের জন্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের সঙ্গে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে গোবর সার, কম্পোস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার; যথা- ইউরিয়া, টিএসপি, এএসপি ইত্যাদির আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপরে চলে গেছে। পাশাপাশি উল্লেখ করা যায় ধান ও গমের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের কথা। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরি ধান আবিষ্কৃত হয়। এরপর বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইরি-৮ নামক উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে । প্রসঙ্গত উল্লেখ করা আবশ্যক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী বিজ্ঞানী নর্মান বেরলগের মাক্সিপাক ও অন্যান্য জাতের উচ্চ ফলনশীল গম আবিষ্কার করে কৃষিকাজের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে মহতী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় । বিজ্ঞানের এ সাফল্য দেশের প্রায় সকল ধরনের ফল, ফলাদি ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই সাধিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতোই। নানা ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্য ইনসেকটিসাইড বা পোকা দমনকারী বহু রাসায়নিক দ্রব্য আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে এন্ড্রিন, ডায়াজিন, ক্লোর ছাড়াও রয়েছে অনেক পোকাধ্বংসী ওষুধ।
বাংলাদেশের কৃষিতে বিরাজমান অবস্থা: অধিক জনসংখ্যার ভারে বাংলাদেশ আজ নুয়ে পড়েছে। জনসংখ্যার গুরুভার সৃষ্টি করেছে প্রকট খাদ্য। সমস্যা। আমাদের দেশের প্রচলিত প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমতা বজায় রেখে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা এক- চতুর্থাংশ। অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে প্রায় অর্ধেক জমিতে সর্বাধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কৃষিবিজ্ঞানকে আমরা ব্যবহার করতে পারি। তবে বাংলাদেশের কৃষিখাতে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
আমাদের কৃষি এবং আধুনিক প্রযুক্তি: আমাদের কৃষক সম্প্রদায় এখনো অনেক জায়গায় জমি চাষের জন্য গবাদিপশু চালিত লাঙল ব্যবহার করেন। এ ব্যবস্থা যেমন কষ্টকর, তেমনই সময়সাধ্য। এ কাজে আমরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে অল্প আয়াসে অধিক জমিতে চাষাবাদ করতে পারি। কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উন্নত দেশগুলোর মতো আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলানো থেকে শুরু করে অল্প আয়াসে অধিকতর ফসল কেটে ও মাড়াই করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই জোগান দেয় কৃষি। তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনই দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণসাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষিকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সম্প্রসারণে সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে।
উপসংহার: আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরা পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা: আদিম মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করল, সেদিন থেকেই কৃষিবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু। ক্রমশ তারা ফসল ফলানোর কাজে লাঙল, কোদাল ইত্যাদি প্রাথমিক হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করল। সে ছিল আদিম ধরনের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি। তারপর কত শতাব্দী চলে গেছে । বিজ্ঞানের হয়েছে অভাবনীয় অগ্রগতি । এখন কৃষিতে লেগেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। বাংলাদেশের কৃষিতেও বিজ্ঞানের প্রয়োগ অগ্রযাত্রা সূচিত। বাংলাদেশ মানেই গ্রামবাংলা, মাটি ও মানুষের বাংলা । এদেশের শতকরা ৭০ জনের বেশি অধিবাসী কৃষিজীবী। গোটা বাংলাই যেন একটা কৃষিক্ষেত্র । বাংলাদেশ ও এর অধিবাসী সবই কৃষিনির্ভর। কৃষি আমাদের প্রাণ, কৃষি আমাদের ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। তাই এদেশের কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ খুবই গুরুত্ব বহন করে ।
কৃষিকাজে, বিজ্ঞান: একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর কোনো কাজেই বিজ্ঞানের অনুপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র। বিজ্ঞানের কল্যাণে অন্ধকার পৃথিবী আজ আলোকিত। বিজ্ঞানের কল্যাণেই মরু হয়েছে সরস ও উর্বর, দুর্গম পাহাড়ের খাড়াই-উতরাই পরিণত হয়েছে দিগন্তবিস্তৃত সমভূমিতে, নদী পেয়েছে নতুন গতি, শুকনো খেতে চলছে জল-সেচ। জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিকতর ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নিবিড় চাষের জন্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের সঙ্গে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে গোবর সার, কম্পোস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার; যথা- ইউরিয়া, টিএসপি, এএসপি ইত্যাদির আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপরে চলে গেছে। পাশাপাশি উল্লেখ করা যায় ধান ও গমের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের কথা। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরি ধান আবিষ্কৃত হয়। এরপর বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইরি-৮ নামক উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা আবশ্যক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী বিজ্ঞানী নর্মান বেরলগের মাক্সিপাক ও অন্যান্য জাতের উচ্চ ফলনশীল গম আবিষ্কার করে কৃষিকাজের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে মহতী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের এ সাফল্য দেশের প্রায় সকল ধরনের ফল, ফলাদি ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই সাধিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতোই। নানা ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্য ইনসেকটিসাইড বা পোকা দমনকারী বহু রাসায়নিক দ্রব্য আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে এন্ড্রিন, ডায়াজিন, ক্লোর ছাড়াও রয়েছে অনেক পোকাধ্বংসী ওষুধ।
আমাদের কৃষি এবং আধুনিক প্রযুক্তি: আমাদের কৃষক সম্প্রদায় এখনো অনেক জায়গায় জমি চাষের জন্য গবাদিপশু চালিত লাঙল ব্যবহার করেন। এ ব্যবস্থা যেমন কষ্টকর, তেমনই সময়সাধ্য। এ কাজে আমরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে অল্প আয়াসে অধিক জমিতে চাষাবাদ করতে পারি কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উন্নত দেশগুলোর মতো আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলানো থেকে শুরু করে অল্প আয়াসে অধিকতর ফসল কেটে ও মাড়াই করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই জোগান দেয় কৃষি । তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনই দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণসাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষিকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সম্প্রসারণে সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে।
উপসংহার: আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরা পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC (agriculture plant science) | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট টি। যদি তোমাদের আজকের এই কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা HSC | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। agriculture animal science, ag degrees, types of agriculture degrees, agriculture degrees online, agriculture university near me, (best agriculture schools), ms in, agriculture, farming degrees
আরও অনেক পয়েন্ট দেওয়া দরকার ছিল
real
Thik