আসরের নামাজ কয় রাকাত সুন্নত কয় রাকাত ফরজ ও আসরের নামাজের নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আজকের ব্লগ পোস্টের বিষয় হলো আসরের নামাজ কয় রাকাত কি কি ও আসরের নামাজের নিয়ম ( asorer namajer niyom ) আসরের নামাজের নিয়ত, আসরের নামাজের ফজিলত।
আসরের নামাজ কয় রাকাত কি কি ও আসরের নামাজের নিয়ম |
অনেকে আছেন যারা আসরের নামাজ কয় রাকাত জানেন না। তাই আমরা তাদের জন্য আজকের পোস্ট টি সাজিয়েছি। নিচে থেকে খুব ভালো ভাবে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
আসর নামাযের বিবরণ
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যার আসরের নামায তরক হয়ে গেল, তার যেন সমস্ত পরিবার ও ধন-সম্পদ লুট হয়ে গেল । (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ। করেছেন, যে ব্যক্তি আসর নামায তরক করেছে তার আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। (বুখারী)
আসর নামায বিলম্বে আদায় করা মুনাফিকের লক্ষণ
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, তার নামায মুনাফিকের নামায যে ব্যক্তি বসে সূর্যের অপেক্ষা করে। যে পর্যন্ত না সূর্য হলদে হয় এবং শয়তানের দুই শিং এর মধ্যস্থানে আসে। তখন সে উঠে চার ঠোকর মারে, তাতে সে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে । (মুসলিম)।
আসরের নামাযের ফযীলত
হযরত উমারাহ ইবনে রুআইবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি মহানবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছি, এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে নামায আদায় করেছে। অর্থাৎ ফজর ও আসর। (মুসলিম)
আসরের নামাযের ওয়াক্ত
কোন বস্তর ‘আছলী ছায়া বাদে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আছর নামাযের সময়। কিন্তু সূর্যের রং হলদে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আছর নামাযের মুস্তাহাব ওয়াক্ত। তারপর মাকরূহ ওয়াক্ত। মাকরূহ ওয়াক্তে অর্থাৎ যখন সূর্যের রং পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন আছর নামায আদায় করা মাকরূহ।
অবশ্য যদি কোন ওযর বশতঃ ওই দিনের আছর নামায আদায় করা না হয়ে থাকে, তবে ওই সময়ই আদায় করে নেবে। নামায কাযা হতে দেবে না। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য সর্তক হয়ে যাবে, যাতে পুনরায় পূর্বের ন্যায় দেরী না হয়। অবশ্য এ সময়ে ওই দিনের আছরের। নামায ব্যতীত কাযা, নফল বা অন্য কোন নামায আদায় করলে দুরস্ত হবে না। ।
আসরের নামাজ কয় রাকাত সুন্নত কয় রাকাত ফরজ - Asorer namaz koto rakat
আসর নামায মােট ৮ রাকআত।। ৪ রাকআত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ। ৪ রাকআত ফরয।
আসরের চার রাকআত সুন্নত নামাযের ফযীলত
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক অনুগ্রহ করেন সেই ব্যক্তির প্রতি, যে ব্যক্তি আসরের ফরযের পূর্বে চার রাকআত নামায (সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ) আদায় করে। (আহমদ, তিরমিযী ও আবু দাউদ)
আসরের চার রাকআত সুন্নত নামাযের নিয়ত
ة أن أصلى لله تعالى أربع ركعات صلوة العصر و رسول الله تعالی متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر .
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবাআ' রাকয়াতি সালাতিল আ’সরি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তাআলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। | বাংলা নিয়ত ? আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে আসরের চার রাকয়াত সুন্নাত নামায আদায়ের নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবার।
আসরের চার রাকআত সুন্নত আদায়ের নিয়ম
আসরের চার রাকআত সুন্নত নামায আদায় করার নিয়ম আর যােহরের চার রাকআত সুন্নত আদায় করার নিয়ম একই প্রকার। শুধুমাত্র নিয়তের মধ্যে যােহরের স্থানে আসরের কথাটি উল্লেখ করতে হবে।
সুন্নত আদায়ের সময় জামাআত আরম্ভ হয়ে গেলে করণীয়
আসরের চার রাকআত সুন্নত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ'। সুন্নত আদায় করার পূর্বেই জামাআত আরম্ভ হয়ে গেলে সুন্নতের নিয়ত করবে না; বরং ফরয আদায়। করার জন্য জামাআতে অংশগ্রহণ করবে।
যদি চার রাকআত সুন্নত নামায আরম্ভ করার পর এক রাকআত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জামাআত আরম্ভ হয়ে যায় তাহলে ডান। দিকে সালাম ফিরায়ে নামায ভঙ্গ করে জামাআতে অংশ নিবে।
আর যদি এক রাকআত পূর্ণ করার পর কিংবা দুই রাকআতের কম আদায় করার পূর্বেই জামাআত আরম্ভ হয়ে যায় তাহলে দুই রাকআত পূর্ণ করে বসে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করে সালাম ফিরায়ে জামাআতে অংশগ্রহণ করবে। এ দুই রাকআত নফল হিসেবে গণ্য হবে।
জামাআতে ফরয আদায় করার পর এ চার রাকআত সুন্নত বা অবশিষ্ট দুই রাকআত আদায় করতে হবে না। আর তৃতীয় বা | চতুর্থ রাকআতে থাকা অবস্থায় জামাআত আরম্ভ হয়ে গেলে চার রাকআত সুন্নত পূর্ণ করে জামাআতে অংশ নিবে।
আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
نويت أن أصلى لله تعالی أربع ركعات صلوة العصر فرض الله تعالی متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر .
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিল আ’সরি ফারদুল্লাহি তা'আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
বাংলা নিয়ত: আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে আসরের চার রাকয়াত ফরজ নামায (এই ইমামের সহিত) আদায় করিবার নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবার।
(জামাআতে ইমাম সাহেবের পিছনে নামায আদায় করা হলে নিয়ত করার সময় ফারদুল্লাহি তাআলা শব্দ বলার পরে বলতে হবে ইকতাদাইত বিহা-যাল ইমাম। তারপর বাকী অংশ বলে নিয়ত পুরা করবে।
আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম
যােহরের চার রাকআত ফরয নামায এবং আসরের চার রাকআত ফরয নামায আদায় করার একই নিয়ম। শুধু নিয়তের মধ্যে যােহরের চার রাকআত ফরয এর স্থলে আসরের চার রাকআত ফরযের কথা বলতে হবে।
আসর নামাযের পর অন্য কোন নামায আদায় করা
আসরের ফরয আদায় করার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে আসরের ফরয আদায়ের পূর্বে নফল আদায় করা মাকরূহ নয় । (ফতােয়ায়ে আলমগীরী)।
আসরের ফরয আদায় করার পর কাযা নামায, জানাযার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা, দোয়া দরূদ ইত্যাদি জায়েয আছে। সূর্য হলুদ হয়ে যাবার পর হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত।
এ মাকরূহ ওয়াক্তে কোন নফল নামায, কাযা নামায এবং পূর্বের তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়েয নেই। কিন্তু এ মাকরূহ সময়ে। ঐ দিনের আসরের নামায আদায় করতে পারবে।
এছাড়া আসরের মাকরূহ ওয়াক্তে জানাযা উপস্থিত হলে কিংবা সিজদার আয়াত পাঠ করলে জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা যাবে। (ফতােয়ায়ে আলমগীরী)
মাকরূহ ওয়াক্তে ফজর ও আসর নামায শুরু করলে করণীয়
তিন সময়ে নামায আদায় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন: সূর্যোদয়ের সময়, দ্বিপ্রহরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহগণ বলেন, ফজরের নামাযে রত থাকা অবস্থায় সূর্য উদয় হলে কিংবা আসর নামাযে রত থাকা অবস্থায় সূর্য অস্ত গেলে ফযর ও আসর নামায বাতিল হবে না; বরং ঐ ওয়াক্তের নামায আদায় হয়ে যাবে।
তারা এর স্বপক্ষে একটি হাদীসকে দলিল হিসেবে পেশ করেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের নামাযের এক রাকআত আদায় করেছে সে ফজরের নামায পেয়েছে এবং যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকাআত আদায় করেছে সে আসরের নামায পেয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)।
কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)। হতে বর্ণিত হাদীসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় নামায আদায় করা নিষেধ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কিয়াসের অনুসরণ করা উচিত। কিয়াস অনুসারে ফজরের নামায আদায় হবে না।
কিন্তু আসরের নামায আদায় হয়ে যাবে। কেননা আসরের নামাযের নির্দোষ সময়সীমা হচ্ছে সূর্য হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সূর্য হলুদ হওয়ার পর আসরের নামায আদায় করা মাকরূহ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আসরের নামাজ কয় রাকাত কি কি ও আসরের নামাজের নিয়ম
বন্ধুরা আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম asorer namaj koi okto, আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম, আসরের নামাজের নিয়ত । যদি আপনার আজকের পোস্ট ভালো লাগে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানতে ভুলবেন না আর মাস্ট বি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আর কে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথেই থাকবেন।