প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের প্রিয় কবি রচনা - আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা টি।
আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা |
আর হ্যা আমরা তোমাদের সুবিধার জন্য আমরা খুব সহজ ভাবে আজকের প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা টি তুলে ধরেছি।
আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা
ভূমিকা: যে কবির কাব্যে আছে মৃত্যুঞ্জয়ী চিরযৌবনের জয়ধ্বনি, অগ্নিবীণার সুর ঝংকার, যিনি ধীরস্থির অচল বাংলা কাব্যে বয়ে এনেছিলেন দুর্বার কালবােশেখির ঝড়াে হাওয়া, তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, আমার প্রিয় কবি। এ পরাধীন জড়তাগ্রস্ত সমাজের বুকে তিনি সঞ্চারিত করেছিলেন নবযৌবন।
বাংলা কাব্যে নজরুল: বিদ্রোহের জয়ধ্বজা উড়িয়ে ধূমকেতুর মতাে কাজী নজরুল ইসলাম আবির্ভূত হয়েছেন বাংলা কাব্যে। তার বিদ্রোহী' কবিতাটি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে তার স্বীকৃতির ছাড়পত্রস্বরূপ। উদাত্তকণ্ঠে তিনি ঘােষণা করলেন
বল বীর
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রীর।'
কেবল এ ‘বিদ্রোহী' কবিতার মাধ্যমেই বাংলা কবিতার আসরে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত হলেন। কবি নজরুল হলেন বাংলার ‘বিদ্রোহী কবি। কবির বিদ্রোহী আত্মার জন্মের মূলে যে অনুপ্রেরণা কাজ করেছিল, তা হলাে কবির প্রেম। কবি তাঁর আত্মপ্রকাশে গেয়ে গেছেন
‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী
আর এক হাতে রণ তুর্য।'
কবিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে, “জগতে আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, যেখানে আমি প্রেম পাইনি, সেখানেই বিদ্রোহ করেছি।' কবি সত্য, সুন্দর ও মানবতার পূজারি। সকল প্রকার অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সােচ্চারকণ্ঠ। তাই তিনি শাসক শ্রেণির শাসন-শােষণে ব্যথিত হয়ে ক্ষু কণ্ঠে উচ্চারণ করেন—
‘বন্ধু বড় বিষ জ্বালা এ বুকে
দেখিয়া শুনিয়া খেপিয়া গিয়েছি
তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি নাতাে একা।
তাই লিখে যাই রক্ত লেখা।'
কৈশাের ও প্রথম যৌবন: কবি নজরুলের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। ছেলেবেলাতেই পিতৃহারা হয়ে নিদারুণ দারিদ্র্য আর অভিভাবকহীনতার জন্যে বােহেমিয়ান হয়ে পড়েন। এ সময়ে লেটো গানের দলে গীত রচনা ও সুর সংযােজনা করার প্রয়াসের মধ্যে নজরুল প্রতিভার বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে তিনি লেখাপড়ার চেয়ে কর্মজীবনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে তিনি বাঙালি পল্টনে যােগদান করেন এবং সেনাবাহিনীতে যােগ্যতার পরিচয় দিয়ে হাবিলদার পদে উন্নীত হন।।
প্রতিভার উৎস: প্রথম মহাযুদ্ধের অবসান হলে ছাঁটাইয়ের খাতায় নাম ওঠে নজরুলের। মহাযুদ্ধের স্মৃতি ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দাবাগ্নি জ্বালিয়ে দুর্দান্ত আবেগ নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন বাংলার অখ্যাত হাবিলদার কবি । যুদ্ধক্ষেত্রে বসে রচিত তাঁর কবিতা ‘মুক্তি’ এরই মধ্যে পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এবার তিনি বিদ্রোহের বহ্নিচ্ছটা নিয়ে বাংলা কবিতার আসরে অবতীর্ণ হলেন। কোরআন, গীতা ও মহাভারতের গভীর জ্ঞান এবং আরবি, ফারসি, সংস্কৃত ও বাংলার শব্দ ভাণ্ডারের দুর্লভ চাবিকাঠি ছিল তার হাতে। আর ছিল উদাত্তকণ্ঠ ও রাগ-রাগিণীর জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার কীর্তন-বাউল-জারি-সারি-ভাটিয়ালির প্রতি প্রাণের টান ও সেইসঙ্গে ফারসি গজলের প্রাণ মাতানাে সুর বাহার।।
বিদ্রোহী-যৌবনের কবি নজরুল চিরযৌবনের কবি। দুবার প্রাণ-প্রাচুর্যই যৌবনের নিশ্চিত প্রাণ-স্পন্দন। সব ধরনের শােষণ-শাসন-শখলের বিরুদ্ধাচরণে আর দুর্জয় সাধনায় সে ছিল ব্রতচারী, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুদ্ধ থেকে পত্যাবর্তনের পর নজরুল দেখলেন দেশ পরাধীনতার জিঞ্জিরে বন্দি। ধনিক শ্রেণি ও সাম্রাজ্যবাদীদের নির্লজ্জ শােষণে সমগ্র সমাজ যখন। পরিণত হয়েছিল কঙ্কাল পরিকীর্ণ এক বিশাল শ্মশান ভূমিতে তখন তিনি গাইলেন।
কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙে ফেল কর রে লােপাট
রক্ত জমাট শিকল-পূজার পাষাণ বেদী।' (ভাঙার গান)
সামাজিক জড়তা ও ক্লান্তিকর নৈস্কর্মের মধ্যে কালবােশেখি ঝড়ের মতাে তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে গাই
‘মেনে শত বাধা টিকি হাঁচি
টিকে দাড়ি নিয়ে আজো বেঁচে আছি
বাঁচিতে বাঁচিতে প্রায় মরিয়াছি, এবার সব্যসাচী,
যা হােক একটা তুলে দাও হাতে, একবার মরে বাঁচি।'
নজরুলের বিদ্রোহ যেমন পরাধীনতার বিরুদ্ধে, তেমনি তার বিদ্রোহ সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধেও। তার দৃষ্টিতে সমস্ত সামাজিক বিভেদই কৃত্রিম ও মিথ্যে। তাঁর কথায়—
‘ও কি চণ্ডাল! চমকাও কেন? নহে ও ঘৃণ্যজীব
ও হতে পারে হরিশ্চন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব!’
তার ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘সর্বহারা', 'ফণি-মনসা’ প্রভৃতি কাব্যগুলােতে মূলত বিদ্রোহেরই সােচ্চার জয়ধ্বনি ।
অসাম্প্রদায়িক নজরুল: ভারতবর্ষে একদিকে যখন স্বাধীনতার আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে, অন্যদিকে তখন হিন্দু-মুসলমান দাগা চরম আকার ধারণ করেছিল । নজরুল তখন ডাক দিলেন
“হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মাের মার।'
এভাবে তিনি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির মিলনমন্ত্র রচনা করে গেছেন। নজরুলের কাব্য তাই হিন্দু-মুসলমানের মিলন তীর্থ ।।
উপসংহার নজরল বিদ্রোহী কবি, ব্যথিত মানবাত্মার কবি, আমার প্রিয় কবি। তিনি তাে বিদ্রোহী যৌবনের কপালে জয়তিলক একে দিয়ে তাকে ‘দুর্গম গিরি কানার মর দস্তর পারাবার' উত্তরণের মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন। নজরুলের সৃজনশীল সৃষ্টি আজও আমাদের প্রাণে দোলা দেয়। আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমাদের চলার পথে সঠিক নির্দেশনা দেয়। তাই তাে নজরুল গণজাগরণের কবি, নিপীড়িত মানুষের কবি এবং আমার লিঙ্গ শট।
তোমার প্রিয় কবি রচনা
ভূমিকা: “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য; আমি কৃষ্ণ-কণ্ঠ মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির ।”
এই দুটো পক্তি রচনা করে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই নিজের পরিচয় আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। শুধু এই দুটো পক্তিই নয়, তাঁর আরও অনেক পক্তি থেকে সহজেই বোঝা যায় তিনি একাধারে বিদ্রোহী কবি, রোমান্টিকতার কবি, সত্য ও সুন্দরের কবি, গণমানুষের কবি। সর্বোপরি তিনি আমাদের জাতীয় কবি। বাংলার সাহিত্যাকাশে ঝড়ের মতো আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর। রবীন্দ্র অনুকরণ থেকে মুক্ত হয়ে তিনি অন্যায়-অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছিলেন অস্ত্রের মতোই। অল্পকালের মধ্যেই তিনি বাংলা সাহিত্যে যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তা খুব কম কবির অর্জনেই দেখা যায় । তিনি অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতিতে লক্ষণীয় প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, ফলে তিনি আমাদের জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ।
জন্ম পরিচয়: পশ্চিম বাংলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর পিতা কাজী ফকির আহমদ এবং মাতা জাহেদা খাতুন। তাঁর ডাক নাম দুখু মিয়া। মসজিদের ইমাম ও মাজারের খাদেম কাজী ফকির আহমেদের অভাব-অনটনের সংসারেই জন্ম লাভ করেন দুখু মিয়া। আর মানুষের দুঃখকে প্রথমে মনে আর পরে কলমে ধারণ করে এই দুখু মিয়াই হয়ে ওঠেন আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম । শৈশবকাল: শৈশব শব্দটার সাথেই যে দুরন্ত শব্দটা জড়িয়ে থাকে সেটি কাজী নজরুল ইসলামের শৈশবের সাথে খানিকটা জড়ালেও তিনি তাঁর শৈশবকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি। কারণ খুব অল্প বয়সেই তিনি তাঁর পিতা ও মাতাকে হারান । ফলে চরম সংকটাপন্ন হয় তাঁর শৈশব। চরম দারিদ্র্যে পড়ে অল্প বয়সেই তিনি মাংসের দোকানে, রুটির দোকানে কাজ নেন; লেটো গানের দলে যোগ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে কবিতা ও গান রচনার কৌশল নজরুল লেটো গানের দলেই রপ্ত করেন। দুরন্ত হলেও পড়ালেখার প্রতি ছিল তাঁর ব্যাপক আগ্রহ, কোনো কিছুতে আগ্রহ পেলে তিনি সেটি করেই ছাড়তেন ছোটবেলা থেকেই। আবার শৈশব থেকে জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন বলেই এত গভীর জীবনবোধে পরিপূর্ণ তাঁর কবিতা ও সাহিত্য ।
শিক্ষাজীবন: শিক্ষাজীবনের শুরুতেই গ্রামের মক্তবে ভর্তি হন কাজী নজরুল ইসলাম । এরপর ১৯০৯ সালে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, এবং ১৯১০ সালে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন । ১৯১৭ সালে দশম শ্রেণি পাশের মধ্য দিয়ে তাঁর শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক থাকলেও আর্থিক অনটনে তিনি, তাঁর শিক্ষাজীবনকে দীর্ঘায়িত করতে পারেননি। ১৯১৭ সালের শেষ দিকে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯২০ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর নজরুলের সামরিক জীবনের পরিধি, এই সময়ে তিনি সৈনিক থেকে ব্যাট্যালিয়ন কোর্টের মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন ।
সাহিত্য সাধনা: কবিতা, কাব্যানুবাদ, কিশোর কাব্য, গল্প, উপন্যাস, গানসহ সাহিত্যের সকল শাখায় কৈশোর থেকে যতদিন সুস্থ ছিলেন ততদিন তিনি বিচরণ করেছেন আপন অনুরাগে, আপন সুরে, আপন মহিমায়, আপন উজ্জ্বলতায়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা খুব কম সময় কবিকে সুস্থ পেয়েছিলাম । মস্তিষ্কের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত না হলে তিনি সাহিত্য রচনায় বলিষ্ঠতার তেজে বিশ্বের অনেক কবি-সাহিত্যিককে ছাড়িয়ে যেতেন। মাত্র বিশ বছর বয়সে সওগাত পত্রিকায় ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী' প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে। তারপর আর তিনি থেমে থাকেননি । রচনা করেছেন ২২টি কবিতাগ্রন্থ যার কিছু ছিল বিদ্রোহপ্রধান, কিছু প্রেমপ্রধান, কিছু জীবনীমূলক, কিছু শিশুতোষ। এসব কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ছিল অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, ভাঙ্গার গান, সর্বহারা, দোলনচাঁপা, সাম্যবাদী, ঝিঙে ফুল, নতুন চাঁদ। নজরুলের ৩টি উপন্যাস- বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা ও কুহেলিকা। তাঁর ৩টি গল্পগ্রন্থ— ব্যথার দান, রিক্তের বেদন ও শিউলিমালা। নাট্যগ্রন্থ ৪টি— ঝিলিমিলি, আলেয়া, মধুমালা ও পুতুলের বিয়ে। গানের জগতের 'বুলবুল' হিসেবে খ্যাত এই কবি কত গান রচনা করেছেন তার প্রকৃত হিসাব নেই । আরও আছে তাঁর প্রবন্ধ, গান ও স্বরলিপির বই, কাব্যানুবাদের মতো অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম।
বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচয় :
“আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ”
কবির এই দৃঢ় দৃপ্তকণ্ঠের উচ্চারণ তাঁর বিদ্রোহী চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি দৃঢ় দৃপ্তকণ্ঠে সমাজব্যবস্থায় বিরাজমান অন্যায়-অত্যাচার-শোষণ ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী চেতনায় রুখে দাঁড়িয়েছেন, মানুষের মাঝে বিশ্বাসের, সত্যের, বিদ্রোহের, নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছেন। তিনি ছিলেন বিশ্ব মানবতার কবি। মানবতার পক্ষে কথা বলতে গিয়েই তিনি 'বিদ্রোহী' অভিধায় অভিহিত হয়েছেন। তাঁর মোট পাঁচটি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়েছিল, এর কারণ আর কিছুই নয়। কারণটি ছিল তিনি ব্রিটিশ সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন । বিদ্রোহী কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন—
“বল বীর বল উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির।'
তিনি অন্যায়ের সাথে কোনোদিনই আপস করেননি, আজীবন সংগ্রাম করেছেন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে, আর তাইতো খ্যাতি পেয়েছেন বিদ্রোহী কবি হিসেবে।
জাতীয় কবির মর্যাদা লাভ: ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে আনা হয় এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয় ।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নজরুল:
“মোরা একই বৃত্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তার প্রাণ ।”
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এমনই সব বাক্য রচনা করে কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের ভেতরকার মনুষ্যত্বকে জাগানোর চেষ্টা করেছেন । তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক মূর্ত প্রতীক। তাঁর মতো অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের দেখা খুব কমই মেলে । আর তাই ‘পথের দিশা', ‘হিন্দু- মুসলিম যুদ্ধ' ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী কবিতা লিখেছেন তিনি । তাঁর কবিতা খুব সহজেই হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি রচনা করতে পারে। তিনি জানতেন হিন্দু-মুসলিম যদি নিজেদের বিভেদ ভুলে একাত্ম হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ায় তাহলে পরিত্রাণ সম্ভব নয়, তাই তিনি হিন্দু ও মুসলিম সব বাঙালিকে একাত্ম করার নিরলস চেষ্টা করে গেছেন আজীবন
আমার ভালোলাগার কারণ: ‘ভোর হলো, দোর খোলো, খুকুমণি ওঠ রে...' এই ডাকে আমার শৈশবের ঘুম ভাঙিয়ে ছিলেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম। তারপর আমার সখ্য ‘কাঠবিড়ালী, কাঠবিড়ালী, পেয়ারা তুমি খাও...' কিংবা হাবুদের ডালপুকুরে...'র মতো কবিতার ছন্দ আর আনন্দের সাথে। জাতীয় কবি বলে তাঁকে না চেনার কোনো কারণ নেই, তিনি আমার কাছে নিদারুণ ভালোলাগার শুধু তাঁর কাব্য সৌন্দর্যের জন্য, তাঁর চেতনার নিগূঢ়তার জন্য, সত্যকণ্ঠের বলিষ্ঠতার জন্য। দেশ ও জাতিকে পরাধীনতার নিগড় থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁর মমত্ব ও দায়িত্ববোধ নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধা করার মতো। আমি তাঁর কাছেই শিখেছি সাম্যের মন্ত্র, শিখেছি মানবতা, বুঝেছি জীবনকে । তিনি আমাকে শিখিয়েছেন—
‘গাহি সাম্যের গান—
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান! নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি’
তাঁর কবিতা, আমার তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি তাঁর কাছেই শিখেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, শিখেছি মানবিক ও সাম্যবাদী আচরণ, অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিক বা ব্যক্তিত্ব আমার চেতনা ও মূল্যবোধকে এতটা নাড়া দেয়নি, যতটা তিনি দিয়েছেন । আর তাই তিনি আমার প্রিয় কবি, ভালোলাগার কবি।
সম্মাননা ও পুরস্কার: সাহিত্যাঙ্গনে বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কবি হিসেবে বিদ্রোহী কবি, গানের জগতে বুলবুল হিসেবে খ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম । তাঁর জীবনধর্মী, বাস্তবধর্মী ও বিদ্রোহী লেখনীকে সম্মান জানাতে ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক প্রদান করে এবং ১৯৬০ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি দেয়। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র-ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট, ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট ও বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সালে ‘একুশে পদক' প্রদান করে। ২০০৪ সালে বিবিসির বাংলা বিভাগের জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তাঁর স্থান তৃতীয়।
জীবনাবসান: ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই তিনি ‘পিকস ডিজিজ' নামক মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। কিছুকাল পর তাঁর চৈতন্য ও বাক্শক্তি লোপ পায়। ফলে তাঁর সাহিত্য সাধনার পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।
উপসংহার: কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে বলতে গেলে তা শেষ হবার নয়। গতানুগতিক মূল্যবোধ ও প্রচলিত সংস্কারকে আঘাত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নতুন মূল্যবোধ। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে নতুন ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করে জীবনের যথার্থ পরিচয় দিতে আত্মত্যাগী তিনি ও তাঁর জীবন আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি শুধু সাহিত্যিক বা কবি নন, তিনি অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর কাব্যকে নিজের ভেতরে ধারণ করলে আমরা হয়ে উঠতে পারব প্রকৃত মানুষ ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই প্রিয় কবি রচনা | আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।