ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা For Class 6, 7, 8, 9, 10
প্রশ্নঃ ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা | ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছোট রচনা
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা - প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা তোমাদের জন্য আমরা ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা নিয়ে আসছি। তোমরা যাতে খুব সহজে এখান থেকে পড়তে পারো ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা। এখন প্রায় সব পরিক্ষায় ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা আসে।
তোমাদের যদি কারো জানা না থাকে তাহলে নিচের ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা পয়েন্ট পড়লেই তোমরা ভালো ভাবে জেনে যাবে। ক্লাস ৬ থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত সবাই এই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা পয়েন্ট পড়তে পারবে। কোনো রকম সমস্যা হবে না ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা টি পড়তে ও লিখতে। তোমরা যেকোন পরিক্ষায় এই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা টি লিখতে পারবে। রচনাটি পড়ার আগে জেনে নাও প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম। ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা টি দেখে নেই।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা For Class 6, 7, 8, 9, 10 |
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
ভূমিকা: মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। এ সময় যেভাবে নিজেকে গড়ে তোলা হয়, সারা জীবন সে রকম ফল পাওয়া যায়। ছাত্রজীবনকে বলা হয় প্রতুতির জীবন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে নিজেকে যােগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয় এই ছাত্রজীবনেই। সুতরাং ব ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
ভুমিকা: ছাত্রজীবন ভবিষ্যতের পল্লবিত মহীরহের অস্ফুট পটভূমি। ছাত্রজীবনই হলাে মানুষের প্রস্তুতিপর্ব। এরই ওপর নির্ভর করে ছাত্রছাত্রার পরিণত জীবনের সফলতা-ব্যর্থতা। তাই ছাত্রজীবনই শখলা অনুশীলনের প্রকষ্ট সময়। এ বিশ্ব এক অদৃশ্য দুর্লঙ্ঘ্য নিয়মের সূত্রে বাধা; ক্ষুদ্রতম অণু-পরমাণু। থেকে বিশাল বিশাল গ্রহ-নক্ষত্র পর্যন্ত সর্বত্রই এক কঠোর নিয়মের শাসন বিরাজিত। প্রভাতে পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয় এবং দিবাশেষে পশ্চিম-দিগন্তে সূর্যাস্ত সবই এক দুর্লঙ্ঘ্য নিয়মের অধীন। ছাত্রজীবনেও প্রয়ােজন সেই নিয়মের শাসন।
প্রধান কর্তব্য: সংস্কৃত ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- ‘ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ।' অর্থাৎ অধ্যয়ন বা লেখাপড়া করাই হচ্ছে ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য। সমস্ত রকমের ভােগ-বিলাস ত্যাগ করে একাগ্রতার সঙ্গে নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্যে উপযুক্ত হওয়াই এ সময়ের অন্যতম কাজ।
অন্যান্য কর্তব্য: আগেই বলা হয়েছে যে, ছাত্রজীবনের যে সময়টক, এটিই হচ্ছে জীবন গঠনের প্রকৃত সময়। এ সময়ে শুধু লেখাপড়া নয়, এর সাথে সাথে অনেক কর্তব্য করতে হয়। যেমন: মাতাপিতা ও গুরুজনের আদেশ মান্য করা, তাদের কথামতাে চলা ও তাদের সেবা-যত্ন করে তাদের থেকে দোয়া ও শুভেচ্ছা পেতে চেষ্টা করা। কথায় বলে- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।' ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। স্বাস্থ্যরক্ষার বিধি বা নিয়মগুলাে মেনে চলতে হয়। তার জন্যে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্য খাওয়া, খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদি করা উচিত। অনেক সময় অনেক ছাত্র নিজের হাতে কাজ করাকে লজ্জাকর মনে করে। তাদের এ ধারণা ভুল। লেখাপড়ার সাথে সাথে অন্যকোনাে কাজ করাকে লজ্জাকর মনে করতে নেই। কাজ কাজই তা ছােট হােক আর বড়ই হােক। জ্ঞান আহরণের জন্যে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর শ্রমশীল ও অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়ােজন। বস্তুত প্রত্যেকের মাঝেই অপার সম্ভাবনার বীজ নিহিত থাকে। অধ্যবসায় ও সাধনার দ্বারা সে সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে হয়। পৃথিবীতে যারা অবিনশ্বর কীর্তি রেখে গিয়ে অমর হয়েছেন তারা প্রধানত কঠোর। পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই তা করেছেন। শ্রমবিমুখ প্রতিভা বলতে কিছু নেই। এ কথাটির প্রতি ছাত্রছাত্রীদেরকে গভীর আস্থা রাখতে হবে। কঠোর শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সহজাত প্রবৃত্তিকে শানিত করে ছাত্রছাত্রীদেরকে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হবে।
জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। জ্ঞানার্জনের সাধনা কেবল পাঠ্যপুস্তকের সীমিত পৃষ্ঠাগুলােতে সীমাবদ্ধ। রাখলে চলবে না। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত ভালাে ভালাে বই পড়ে জীবনের জন্যে কল্যাণকর পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে । সেইসাথে ভালাে ভালাে চলচ্চিত্র, মঞনাটক, চিত্রকলা প্রদর্শনী দেখতে হবে। এভাবেই বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রখর করতে হবে। সর্বোপরি গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শিষ্টাচার, বিনয়, কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য, সৃষ্টিশীলতা অর্থাৎ সমাজের উন্নতির জন্যে যা কল্যাণকর তাই অর্জন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে এসব জ্ঞান সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে।
চরিত্র গঠন: মানবজীবনের প্রধান সম্পদ হলাে চরিত্র। আর এ চরিত্র গঠন করতে হয় ছাত্রজীবনেই । কথায় বলে ‘চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান।' শিক্ষিত হলে কী হবে, সৎচরিত্রের অধিকারী না হলে জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই ছাত্রজীবনেই সৎচরিত্র তথা সাধুতা, সত্যবাদিতা, । আত্মসংযম, দেশপ্রেম, ধৈর্য প্রভৃতি গুণ আয়ত্ত করে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যে দেশের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হতে হবে। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎসঙ্গে চলা ও ভালাে বই পড়ার মাধ্যমে এটা সম্ভব হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ইংরেজি প্রবাদটি প্রণিধানযােগ্য
"When money is lost, nothing is lost
When health is lost, Something is lost,
But When Character is lost, everything is lost."
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যেবােধ: সৌজন্যে ও শিষ্টাচারের ছোঁয়াতেই ছাত্র হয় বিনীত, ভদ্র । নতুন প্রাণস্পন্দনে হয় গেীরবান্বিত। ছাত্রজীবনে গুরুজনদের যে শ্রদ্ধা করতে শিখল না, যার উদ্ধত অবিনীত ব্যবহারে শিক্ষক বিরক্ত, যার রূঢ় অমার্জিত আচরণে বন্ধুরা ক্ষুব্ধ-বেদনাহত, পরবতা জীবনেও তার একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তখন সে হয় অশুভ শক্তি, অকল্যাণের মূর্ত প্রতীক । হতাশা, ব্যর্থতার তিল তিল দংশন জ্বালায় সে নিজেকে নিঃশেষ করে। আর সমাজের বুকে ছড়িয়ে দিয়ে যায় অমৃতের বদলে গরল । ছাত্রজীবনই মানুষের সুপ্ত সুকুমারবৃত্তি লালনের শুভক্ষণ। শিষ্টাচার, সৌজন্যে তাে তার মনুষ্যত্ব অর্জনেরই সােপান। এরই মধ্যে আছে নিজেকে সুন্দর ও সার্থকতায় পরিপূর্ণ করে তােলার মহাশক্তি। শিষ্টাচার ও সৌজন্যে প্রকাশের জন্যে ছাত্রদের কিছু হারাতে হয় না, কোনাে অর্থ ব্যয় করতে হয় না, বরং এক মহৎ অঙ্গীকারে তার সমৃদ্ধ জীবন প্রকাশের পথ প্রশস্ত হয়। বিনয়ী, ভদ্র ছাত্র শুধু শিক্ষকের স্নেহ-ই কেড়ে নেয় না, সে পায় শিক্ষকের আশীর্বাদ, পায় তার সাহায্য। সৌজন্যে ও শিষ্টাচারের অভাব ছাত্রকে অবিনীত, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর করে। এ অভাবই তাকে ঠেলে দেয় অন্যায়, আর অসত্যের চোরা-অন্ধকারে। সেই অন্ধকার শুধু ব্যক্তিকেই আচ্ছন্ন করে না, গ্রাস করে গােটা সমাজকে।
ছাত্রজীবনে সামাজিক নেতৃত্ব: সমাজের যে কোনাে কাজে ছাত্রসমাজ নেতৃত্ব দিতে পারে । মহামারি প্রতিরােধ, বন্যার সময় জনসেবায় ও অন্যান্য পাকতিক দুর্যোগে ছাত্রছাত্রীরা শুধু অংশগ্রহণ করেই নয়, নেতৃত্বও দিয়ে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজসেবায় ছাত্রদের ভূমিকা উল্লেখযােগ্য। বন্যার্তদের সেবার জন্যে ছাত্ররা কেবল কায়িক পরিশ্রমই করে না, তারা চাদা সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করে। এক কথায় ছাত্রজীবনে সমাজসেবার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনস্বীকার্য। আমাদের দেশের শতকরা ৫০ ভাগ লােকই নিরক্ষর। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পাবে। সমাজ থেকে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার দূর করা ছাত্রদের কর্তব্য। জনসাধারণের খাদ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিক সচেতন করে তােলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে ছাত্রছাত্রীরা সমাজের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখতে হবে। আমার্থে নিমগ্ন মানুষ যথার্থ মানুষ নয়- পরের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত জীবন সার্থক জীবন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে/আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”
– (কামিনী রায়)
ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলানুশীলনের উপযুক্ত সময়: ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলনের উপযুক্ত সময়। এ সময় সজীব-কোমল মানবভূমিতে শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মানুবর্তিতার বীজ বপন করলে উত্তরকালে তাতে অমৃত ফল ফলে। শৃঙ্খলানুশীলন তাই সর্বকালের সবলে” ছাত্রদের অবশ্য আচরণীয় বিধি।
দেশ গঠনের নামে ছাত্রসমাজের উচ্ছলতা: সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজের উচ্ছলতায় সকলেই বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। বলাবাহুল্য, সেই উবে স”। নয়। তাদের উচ্ছঙ্খলতার কলঙ্কিত স্বাক্ষর পড়ে পরীক্ষা হলে, বাসে, পথে-প্রান্তরে সমাজজীবনের অলিতে-গলিতে। ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা, কিন্তু আজ তাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ। কর্মহীনতার বিশাল অবকাশ তাদের মানসক্ষেত্রে যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। দেশব্যাপী আশাহীনতা তাদের নিক্ষেপ করেছে এক গভীর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। সেবাদান মানুষের মনুষ্যত্বের প্রকাশ— এ আদর্শের আলােকে গণমানুষকে যেকোনাে বিপদসংকুল পরিবেশে সেবাদান করতে গিয়ে কেউ না কেউ রাজনীতিক ব্যক্তি বা দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সেবাদানের এ সময়টুকুতে রাজনীতিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক সময় তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করে। স্বভাবত শৃঙ্খলাবােধ হারিয়ে হিংস্রতার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আশ্রয় নিয়ে ছাত্রসমাজ উচ্ছঙ্খলতার কলঙ্কের বােঝা মাথায় বয়ে চলে। তা ছাড়া কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাত্রসমাজকে উচ্ছঙ্খলতার পথে চালিত করে। ছাত্রসমাজের মধ্যে যদি শৃঙ্খলাবােধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে তাদের উচ্ছংখলতার মূল কারণগুলাের বিলােপ সাধন করতে হবে। কেবল ছাত্রসমাজকে তিরস্কার করে সমস্যার সমাধান হবে না।
উপসংহার: বর্তমানে বাংলাদেশের সুশীল-সমাজ ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা দাবি করে। ছাত্রসমাজের মনে রাখতে হবে যে, ছাত্রজীবনই হলাে দায়িতবােধ বিকাশের কাল, সামাজিক কর্তব্যবােধে দীক্ষিত হওয়ার সময়। বর্তমান নৈরাশ্যের অন্ধকার কিংবা রচি-বিকৃতির কয়াশা অপসারিত হয়ে শীঘই নতন আশা ও আদর্শের সূর্যোদয় হবে। এরপর আসবে নতুন দিন, নতুন জীবন । আমাদের ছাত্রসমাজ কাকে বলে থাকে। এজন্যে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে আত্মনিয়ােগ করে আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে উঠতে হবে।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
ভূমিকা: ছাত্রজীবন মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের শস্যক্ষেত্রস্বরূপ। ছাত্রজীবনই | হলো মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রস্তুতিপর্ব। এরই ওপর নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা। তাই ছাত্রজীবনে তরুণদের নানা দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের দীক্ষা নিতে হয়। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি তাদের নিতে হয় দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের নানা ব্রত। পরিবারের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অংশ নিতে হয় নানা সামাজিক কর্তব্য সম্পাদনে। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে ছাত্রজীবনে সমাজ উন্নয়নের দীক্ষা গ্রহণ করতে হয় তাদের।
ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য: অধ্যয়ন বা লেখাপড়া করাই হচ্ছে ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য। সমস্ত রকমের ভোগবিলাস ত্যাগ করে একাগ্রতার সঙ্গে নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে কর্মজীবনের জন্য উপযুক্ত হওয়াই এ সময়ের অন্যতম কাজ। ছাত্রজীবনে শুধু লেখাপড়া নয়, এর সাথে সাথে অনেক কর্তব্য করতে হয়। যেমন— মাতাপিতার ও গুরুজনের আদেশ মান্য করা, তাদের কথামতো চলা ও তাদের সেবা-যত্ন করা, দরিদ্র ও অসহায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা, সর্বোপরি সততা ও শৃঙ্খলাবোধের চর্চা করা।
কথায় বলে— 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।' শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রতি নজর দিতে হয়। স্বাস্থ্যরক্ষার বিধি বা নিয়মগুলো মেনে চলতে হয়। তার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্য খাওয়া, খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদি করা উচিত।
অনেক সময় অনেক ছাত্র নিজের হাতে কাজ করাকে লজ্জাকর মনে করে । তাদের এ ধারণা ভুল। লেখাপড়ার সাথে সাথে অন্য কোনো কাজ করাকে লজ্জাকর মনে করতে নেই । কাজ কাজই তা ছোট হোক আর বড়ই হোক।
ছাত্রজীবনে চরিত্র গঠন: মানবজীবনের প্রধান সম্পদ হলো চরিত্র। আর এ চরিত্র গঠন করতে হয় ছাত্রজীবনেই। কথায় বলে 'চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান।' শিক্ষিত হলে কী হবে, সৎ চরিত্রের অধিকারী না হলে জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। প্রবাদ আছে— ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ।' তাই ছাত্রজীবনেই সৎচরিত্র তথা সাধুতা, সত্যবাদিতা, আত্মসংযম, দেশপ্ৰেম, ধৈর্য প্রভৃতি গুণগুলো আয়ত্ত করে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য দেশের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হতে হবে। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎসঙ্গে চলা ও ভালো বই পড়ার মাধ্যমে এটা সম্ভব হতে পারে।
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ: সৌজন্যে ও শিষ্টাচারের ছোঁয়াতেই ছাত্র হয় ভদ্র, নতুন প্রাণসম্পদে হয় গৌরবান্বিত । ছাত্রজীবনে গুরুজনদের যে শ্রদ্ধা করতে শিখল না, যার উদ্ধত ব্যবহারে শিক্ষক বিরক্ত, যার অমার্জিত আচরণে বন্ধুরা ক্ষুব্ধ-বেদনাহত, পরবর্তী জীবনেও তার চরিত্রে একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তখন সে হয় অশুভ শক্তি, অকল্যাণের মূর্ত প্রতীক। সমাজের বুকে সে ছড়িয়ে দিয়ে যায় অমৃতের বদলে বিষ। ছাত্রজীবনই মানুষের সুপ্ত সুকুমারবৃত্তি লালনের শুভক্ষণ। শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ তো তার মনুষ্যত্ব অর্জনেরই সোপান। এরই মধ্যে আছে নিজেকে সুন্দর ও সার্থকতায় পরিপূর্ণ করে তোলার মহাশক্তি । শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রকাশের জন্য ছাত্রদের কিছু হারাতে হয় না, কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না, বরং এক মহৎ অঙ্গীকারে তার সমৃদ্ধ জীবন বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়। বিনয়ী, ভদ্র ছাত্র শুধু শিক্ষকের স্নেহ-ই কেড়ে নেয় না, সে পায় শিক্ষকের আশীর্বাদ, পায় তার সাহায্য। সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অভাব ছাত্রকে অবিনীত, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর করে। এ অভাবই তাকে ঠেলে দেয় অন্যায়, আর অসত্যের চোরা-অন্ধকারে । সে অন্ধকার শুধু ব্যক্তিকেই আচ্ছন্ন করে না, গ্রাস করে গোটা সমাজকে ।
ছাত্রজীবনে সামাজিক নেতৃত্ব: সমাজের যেকোনো কাজে ছাত্রসমাজ নেতৃত্ব দিতে পারে। মহামারি প্রতিরোধ, বন্যার সময় জনসেবায় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিক্ষার্থীরা শুধু অংশগ্রহণ করেই নয়, নেতৃত্ব দিয়েও এসব কাজকর্ম করতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজসেবায় ছাত্রদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য । বন্যার্তদের সেবার জন্য ছাত্ররা কেবল কায়িক পরিশ্রমই করে না, তারা চাঁদা সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করে এবং কখনো কখনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করে। এককথায় ছাত্রজীবনে সমাজসেবার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনস্বীকার্য।
ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলানুশীলনের উপযুক্ত সময়: ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলনের উপযুক্ত সময়। এ সময় সজীব-কোমল মানবভূমিতে শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতার বীজ বপন করলে উত্তরকালে তাতে অমৃত ফলে । শৃঙ্খলানুশীলন তাই সর্বকালের সর্বদেশের ছাত্রদের অবশ্য আচরণীয় বিধি ।
বর্তমানে ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ: সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতায় সকলেই বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। বলা-বাহুল্য, সে উদ্বেগ অমূলক নয়। তাদের উচ্ছৃঙ্খলতার কলঙ্কিত স্বাক্ষর পড়ে পরীক্ষা হলে, বাসে, সমাজজীবনের অলিতে-গলিতে। ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা। কিন্তু আজ তাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ। বেকারত্ব তাদের মানসক্ষেত্রকে স্থূল রুচির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশব্যাপী আশাহীনতা তাদের নিক্ষেপ করেছে এক গভীর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। তা ছাড়া কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাত্রসমাজকে উচ্ছৃঙ্খলতার পথে চালিত করে। ছাত্রসমাজে যদি শৃঙ্খলাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে তাদের উচ্ছৃঙ্খলতার মূল কারণগুলো বিলোপ সাধন করতে হবে। কেবল ছাত্রসমাজকে তিরস্কার করে সমস্যার সমাধান হবে না।
উপসংহার: বর্তমানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। ছাত্রসমাজের এখন মনে রাখতে হবে, ছাত্রজীবনই হলো দায়িত্ববোধের বিকাশের কাল, সামাজিক কর্তব্যবোধে দীক্ষিত হওয়ার সময়। বর্তমানে নৈরাশ্যের অন্ধকার কিংবা রুচি-বিকৃতির কুয়াশা অপসারিত হয়ে শীঘ্রই নতুন আশা ও আদর্শের সূর্যোদয় হবে। আসবে নতুন দিন, নতুন জীবন । আমাদের ছাত্রসমাজ তাকে বরণ করার জন্য যেন প্রস্তুত থাকে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা | ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছোট রচনা
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা। যদি আজকের এই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।