বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা | শেখ মুজিবুর রহমান রচনা
রচনা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ - প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা তোমাদের জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা নিয়ে আসছি। তোমরা যাতে খুব সহজে এখান থেকে পড়তে পারো বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা। এখন প্রায় সব পরিক্ষায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা আসে।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা শেখ মুজিবুর রহমান রচনা |
তোমরা সবাই জানো বঙ্গবন্ধু কে। তোমাদের যদি কারো জানা না থাকে তাহলে নিচের বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা পড়লেই তোমরা ভালো ভাবে জেনে যাবে। ক্লাস ৬ থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত সবাই এই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা পড়তে পারবে। কোনো রকম সমস্যা হবে না বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টি পড়তে ও লিখতে। তোমরা যেকোন পরিক্ষায় এই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টি লিখতে পারবে। রচনাটি পড়ার আগে জেনে নাও প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টিতে কি কি থাক্তেছে তা সুচিপত্রে দেখে নেই।
সুচিপত্রঃ রচনা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ৫০০ শব্দের | শেখ মুজিবুর রহমান রচনা | বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল রচনা
শুধু বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা লেখার জন্য লেখাটা পড়বেন তাতে লস আপনার। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টি পড়লে আপনি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো কিছু জানতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টি পড়লে আপনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদধের বিসয়ে জানতে পারবেন তাই এখন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা টি পড়ুন।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
ভূমিকা - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
বঙ্গবন্ধ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি ভাষা সৈনিক। তাশ জাতির পিতা। বাঙালির অধিকার ও স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের গণমানুষের মুক্তির " পরিচালিত সকল আন্দোলনের তিনিই ছিলেন প্রধান চালিকাশা। তার নেততেই উনিশ শশা একাত্তর সনে আমরা মহান স্বাধীনতা যুব অংশগ্রহণ করেছি এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি বজ্রকণ্ঠের অধিকারী। তিনি সেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা মহান পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। এ-জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
জন্ম - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চে গােপালগঞ্জ (সাবেক ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা-মাতা - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের সন্তান আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শিক্ষা - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন গােপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল থেকে। বিএ পাস করেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।
নেতৃত্ব - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালােবাসতেন। ছাত্রজীবনেই তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন ও রাজনীতিসংলগ্ন হয়ে ওঠেন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার। প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ। তৎকালীন যেসব ছাত্র ও তরুণের প্রচেষ্টায় এ-পরিষদ গঠিত হয় তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে শেখ মুজিবুর রহমান আলি আহাদ, কাজী গােলাম মাহবুবসহ অধিকাংশ ছাত্রনেতা গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘকাল বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেন। ফলে বারবার তাকে জেল খাটতে হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেকালি লাহােরে বিরােধীদলের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু পূর্ব-পাকিস্তানে বাঙালির সব ধরনের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ৬ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ৬ দফা আন্দোলনকে দমন করবার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এই ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও সালিষ্ট নেতৃবৃন্দকে গােপন বিচারের মাধ্যমে ফাসি দেওয়া। এভাবে নেতৃত্বশূন্য করে আন্দোলন থামিয়ে দে ওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভুথানের জোয়ারে আইউব খানের স্বেরশাসন টিকে থাকতে পারে নি। ২২শে ফেব্রুয়ারি আইউব খান আগরতলা মামলা প্রতহার করে সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। কারামুক্ত শেখ মুজিবকে ২৩শে ফেমের রেসকেস " বিশাল গণসংবর্ধনা দেওয়া হয় । এ-সমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় ।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় দলের শতকরা আশি ভাগ আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু তাঁকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযােগ আন্দোলন শুরু করেন।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে ও ব্যাপক হত যজ্ঞ চালায়। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বাংলা দেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ। নয় মাস যুদ্ধের পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয়। বাঙালির বিজয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনিই জাতিসংঘে বাংলায় প্রথম ভাষা দে । এভাবে শুধু বাঙালি জাতি নয়, বাংলা ভাষার মর্যাদাকে তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পরলােকগমন - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের আক্রমণে ও নিষ্ঠুর আঘাতে কলের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, এ-জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক গােরস্তানে তাকে সমাহিত করা হয় । যে-মাটির সান্নিধ্যে ও যে-প্রকৃতির পরিচয় তিনি জনই করেছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন, সেই মাটির সান্নিধ্যে, প্রকৃতির শীতল স্নেহে ও একান্ত স্পর্শে তিনি মােশয় গ্রহণ করেছেন ।
উপসংহার - বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
জাতির মহান নেতা হতে হলে যে-সমস্ত গুণের প্রয়ােজন বঙ্গবন্ধুর তার সবই ছিল। তিনি ছিলেন মােহ = স্বাধীনতাপ্রিয়। সকল প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অধিকার আজানের সময় আপােসহীন । কোনাে প্রকার ভীতি কিংবা দ্বিধা তাকে কখনাে বিচলিত করেনি বাংলা ছিল তার নাম জানা ফুল তার ভাষা এবং তিনি নিজেকে বলতেন “আমি বাঙালি কবির উপলব্ধিই যথা, কেট বালির মা কাজ।
যতদিন রবে পদ্ম-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান
ততদিন রবে কীতি তােমার শেখ মুজিবুর রহমান।
শেখ মুজিবুর রহমান রচনা
ভূমিকা: স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের জাতির পিতা। সংগ্রাম ও অবদানে নিজ নিজ জাতির মুক্তিদাতা হিসেবে মানুষের মাঝে অমর হয়ে আছেন আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো প্রমুখ নেতা। আর বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ সংগ্রাম ও সাধনার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের বরপুত্র হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন। তাঁর জীবনাদর্শে আমরা সংগ্রামী চেতনা ও কর্মনিষ্ঠার পরিচয় পাই।
জন্ম: ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ (তৎকালীন ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। টুঙ্গিপাড়া গ্রামে প্রকৃতির নিবিড় আশ্রয়ে জল-মাটি-কাদায় হেসে-খেলে শৈশব কাটে শেখ মুজিবুর রহমানের ।
শৈশবকাল: ছোটোবেলা থেকে শেখ মুজিব ছিলেন খুব চটপটে স্বভাবের । বাড়ির সবাই তাঁকে খোকা নামে ডাকত। তাঁর ছিল অফুরন্ত প্রাণশক্তি । নদীতে-খালে-বিলে ঝাঁপ দিয়ে, সাঁতরিয়ে সবাইকে মাতিয়ে তুলতেন । খেলাধুলায়ও বেশ ভালো ছিলেন তিনি। স্কুলের ফুটবল দলেও তাঁর পাকা স্থান ছিল। ছোটবেলা থেকে শেখ মুজিবের মধ্যে দরিদ্র-বঞ্চিতদের জন্য, ভালোবাসার প্রকাশ দেখা যায়। স্কুল জীবনেই তাঁর প্রতিবাদী চেতনারও পরিচয় মেলে। একবার অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে আসেন। সবার হয়ে স্কুলের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর জোরালো বক্তব্য স্কুলটির সমস্যা নিরসনে সাহায্য করে । ছোটবেলা থেকে তাঁর মধ্যে সুস্পষ্ট প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায় ।
ছাত্রজীবন: সাত বছর বয়সে শেখ মুজিব ভর্তি হন গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । পরে পিতার কর্মস্থল গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক (এন্ট্রান্স) পাশ করেন। চোখের অসুখ হওয়াতে প্রায় চার বছর তাঁর পড়ালেখায় ছেদ পড়েছিল। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৪ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে বিএ পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় । শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শেখ মুজিব থাকতেন সামনের কাতারে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করার জন্য তাঁকে জরিমানা করা হয়। তরুণ মুজিব অন্যায়ভাবে ধার্য করা জরিমানা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান । আইন বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় তাঁর ছাত্রজীবনের অবসান হয় ।
রাজনৈতিক জীবন: ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতি ও দেশব্রতে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে থাকাকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন মুসলিম লীগে যোগ দেন। গোপালগঞ্জের দূর গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে অল্প সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে সমর্থ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব । এ সময়ে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আসেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে ছাত্রসমাজ। এ সময় গ্রেফতার হন শেখ মুজিবসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। ছাত্রদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদের ফলে কিছুদিন পরেই তাঁরা মুক্তি পান। ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন করার জন্য শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে কারাবন্দি তরুণ নেতা শেখ মুজিবকে দলের যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। মুক্তি পেয়ে তিনি দল গঠনের কাজে ব্রতী হন। আওয়ামী লীগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। এটা শাসকগোষ্ঠীও বুঝতে পারে। তাই ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে আবারও তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । এবার তাঁকে সহজে মুক্তি দেওয়া হয় না। জেলে থাকাকালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি অনশন পালন করেন। দুই বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার পর তিনি মুক্তি পান। জেল থেকে বের হয়ে আবার তিনি সারাদেশে রাজনৈতিক দল সংগঠিত করার কাজে নিবিষ্ট হন। তাঁর দল 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী চেতনার বাহক ‘আওয়ামী লীগ’ হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ঘটলে শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী হন। পাকিস্তান সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। তখন তাঁকে আবারও কারাবরণ করতে হয় এরপর তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে আবার তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী হন। কিন্তু আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার কাজে সময় দেবেন বলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯৬৮ সালে জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা আগরতলা মামলা করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে এর ফল হয়েছিল বিরূপ। জনপ্রিয়তায় বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা।
‘বঙ্গবন্ধু' উপাধি লাভ: নির্যাতন-নিষ্পেষণ যত বৃদ্ধি পেতে থাকে, ৬ দফা কর্মসূচি দিন দিন ততই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালে প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খানের সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় । বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর ২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্ৰীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আয়োজিত গণসংবর্ধনা সমাবেশে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেওয়া হয় ।
৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ: ১৯৭১ সালের ২ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সারা বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৭ই মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় দশ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ১৮ মিনিটের ঐ ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান । তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেন— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
গ্রেফতার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের আগেই, অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর স্বাক্ষরিত ঘোষণাবার্তাটি তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। প্রায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছে ফিরে আসেন। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এর যুদ্ধবিধস্ত দেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় দেশ গড়ার নতুন সংগ্রাম ।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামল: বাংলার মহান নেতা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাকালীন ১৭ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে (মুজিবনগরে) স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং ১২ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করে বাংলাদেশের সাংবিধানিক যাত্রার শুভ সূচনা করেন। এ সময় দেশে সংসদীয় সরকারপদ্ধতি চালু করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। সময়ের দিক থেকে তাঁর শাসনামল অতি স্বল্প দিনের হলেও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য ।
মৃত্যু: মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । কিন্তু কে জানত স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকরা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র শানিয়ে তুলছে তাঁর বিরুদ্ধে! ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে শহিদ হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যা বাঙালি জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।
উপসংহার: বাঙালি জাতির জীবনে যে অল্প কয়েকজন মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে প্রধানতম পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর তুলনা কেবল তিনি নিজেই । তাই তিনি বাঙালির হৃদয়ে মধ্যমণি হয়ে থাকবেন চিরদিন।