দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণি
প্রশ্নঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা | দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা লিখ।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা - প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা তোমাদের জন্য আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা নিয়ে আসছি। তোমরা যাতে খুব সহজে এখান থেকে পড়তে পারো দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা। এখন প্রায় সব পরিক্ষায় দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা আসে।
তোমরা সবাই জানো বিজ্ঞান কি। তোমাদের যদি কারো জানা না থাকে তাহলে নিচের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা পড়লেই তোমরা ভালো ভাবে জেনে যাবে। ক্লাস ৬ থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত সবাই এই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা পড়তে পারবে। কোনো রকম সমস্যা হবে না দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা টি পড়তে ও লিখতে। তোমরা যেকোন পরিক্ষায় এই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা টি লিখতে পারবে। রচনাটি পড়ার আগে জেনে নাও প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা টিতে কি কি থাকতেছে তা সুচিপত্রে দেখে নেই।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণি |
সুচিপত্রঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা | দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা
- সচনা
- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
- শহুরে জীবনে বিজ্ঞান
- গ্রামীণ জীবনে বিজন
- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাবের অপকারিতা
- উপসংহার
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
সূচনা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আজ বিজ্ঞান আমাদের কাছে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতােই অপরিহার্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটা মুহূর্তও বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারি না। এখন যেকোনাে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষই বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় কাজকর্মের মধ্যে বিজ্ঞানের অবদান লক্ষণীয়। বলা যায়, এখন বিজ্ঞানই মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নিয়ন্ত্রক।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান: বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মানুষের একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এখন প্রতি মুহুর্তে, প্রতি পদক্ষেপে সভ্য-মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে জীবন-ধারণ করছে। এই যে বসে লিখছি – হাতের কলম ও কালি, লেখার কাগজ, এমনকি বসার জায়গাটিতে পর্যন্ত বিজ্ঞানের প্রভাব রয়েছে। আমাদের পথেঘাটে অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে সব জায়গায়ই বিজ্ঞানের অবদান অসীম। শুধু তাই নয়, আমাদের অন, বস্ত্র, বাসস্থানের এই প্রাথমিক প্রয়ােজনটুকুও বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজেই আমরা বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল।
শহুরে জীবনে বিজ্ঞান: শহুরে জীবনে মানুষ আর বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শহরে আমার এলার্মঘড়ির শব্দে। ঘুম থেকে উঠে দিনের শুরু করি টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে। এরপর আছে সংবাদ পত্র। তারপর গ্যাস অথবা হিটার কিংবা স্টোভে তাড়াতাড়ি রান্না করে খাই। রিক্সা, অটোরিক্সা, বাস, ট্রেন বা মােটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে পৌছাই। সিঁড়ির বদলে লিফটে উঠে অফিসকক্ষে যাই। টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল ও ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠাই। কম্পিউটারে কাজের বিষয় লিখে রাখি। ক্লান্ত দেহটাকে আরাম দেওয়ার জন্য এসি কিংবা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসি - এই ৩াৰে মান বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দিনের অন" "" মিউজিক প্লেয়ার কিংবা টিভি চালিয়ে মনটাকে সতেজ রাখতে চেষ্টা করি। ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নােট রাখে; কখনাে কখনাে ভিডিও গেমস খেলে। এমনিভাবে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি।
গ্রামীণ জীবনে বিজনঃ যােগাযােগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য শ' শ' দরকে করেছে নিকট প্রতিবেশী। বাস রিক্সা, ভ্যান সাইকেল মােটরসাইকেল সবই এখন অংশ। ফলে বিজ্ঞান শহরজীবনকে অতিক্রম করে পৌছে গেছে গ্রামে। বর্তমানে গ্রাম্য জীবনেও আ ম নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। টুথপেস্ট, টুথবাশ, টিভি, রেডিও, মােবাইল ফোন, টর্চ, স্নো, সাবান, , আয়না-চিরনি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দন জানান মিশে গেছে। শহরের মানুষ যেমন নিজেদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিজ্ঞানকে নিত্যসঙ্গী করেছে, তেমনি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনেও ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাবের অপকারিতা; দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে। যন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করতে গিয়ে মানুষ পরিশ্রম-বিমুখ হয়ে উঠছে। মানসিক পরিশ্রমের তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম কম করছে। ফলে নানা জটিল রােগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের জীবনে কৃত্রিমতা ঘনীভূত হচ্ছে। মানুষের স্নেহ, মায়া, মমতার মতাে সগুণগুলাে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ছে। বিজ্ঞান-নির্ভর যন্ত্রশক্তির ওপর অন্ধ। আস্থা স্থাপন করতে গিয়ে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে।
উপসংহার: আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়ােজনীয় বস্তু আজ একেবারে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। বিজ্ঞান। সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত যা কিছু আমাদের প্রয়ােজনীয় তার সবই বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞান আজ আমাদের নিত্য সহচর। বিজ্ঞান আমাদের জীবন-যাপনকে করেছে সহজসরল। তবে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব শুধু যে কল্যাণ করছে তা নয়, অনেক ক্ষতিও করছে। তাই। বিজ্ঞানের অপব্যবহার না করে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা: আধুনিক যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। এর অন্যতম কারণ বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য ও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে এর ওতপ্রোত সম্পর্ক। বিজ্ঞান মানুষের জীবনে এনেছে গতিময়তা, সমস্ত পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়, জীবনযাত্রাকে করেছে সহজ। বিজ্ঞান সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান শুধু শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞানের ব্যবহার করে চলেছি।
বিজ্ঞানের অবদানসমূহ: বিজ্ঞান মানুষের সনাতন ধ্যানধারণা ও চিন্তা- চেতনার পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের জীবনকে উন্নীত করেছে এক নতুন উচ্চতায়। সভ্যতার ঊষালগ্নের সেই নিরীহ মানুষ আজ বিশেষ জ্ঞান ও অদম্য শক্তির অধিকারী। বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে জেম্স ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিভেন্স রেলগাড়ি আবিষ্কার করেছেন। জন লেজি বেয়ারড, ফার্ণসয়রত এবং জরিকিন টেলিভিশন আবিষ্কার করেছেন। বিদ্যুৎ, আণবিক শক্তি, মহাকাশ গবেষণা, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার। বিজ্ঞান মানুষকে জল, স্থল, নভোমণ্ডল জয় করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর্কিমিডিস, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন প্রমুখ মহান বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত শ্রমে মানুষ আধুনিক যুগে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা: আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রাকে জালের মতো আবৃত করে আছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। প্রতিদিন সকালে ধোঁয়া ওঠা চায়ের সাথে হাতে সংবাদপত্র না পেলে পুরো পৃথিবী থেকে আমরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করি। টেলিভিশনের পর্দায় আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার জীবন্ত ভিডিও চিত্র দেখতে পারি। টেলিফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর একপ্রান্তে বসে মুহূর্তের মধ্যেই অন্যপ্রান্তে যোগাযোগ করতে পারি। কৃষি কাজ, বাড়িঘর নির্মাণ, পরিধেয় বস্ত্র ও ওষুধপত্র তৈরি, খনিজ পদার্থ উত্তোলন ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার সমূহ: বিজ্ঞান যেমন জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে তেমনি আমাদের জীবনকে করেছে অনেক সহজ এবং গতিশীল। প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকি। মূলত এর সবই বিজ্ঞানের' আবিষ্কার। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত এমন কিছু শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার নিচে তুলে ধরা হলো—
ছাপাখানা: বইপুস্তক বা কোনো তথ্য ছাপার কথা বললেই আসে ছাপাখানার কথা। পূর্বে বিভিন্ন ফাইল, বইপুস্তক হাতে লিখে প্রকাশ করা হত। এটি সর্বপ্রথম ১৪৪০ সালে জন গুটেনবার্গ আবিষ্কার করেন । কম্পিউটার আবিষ্কারের সাথে সাথে এর বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ছাপাখানা আমাদের বাড়িতেই ব্যবহার করতে পারি যা প্রিন্টার হিসেবে পরিচিত।
ক্যালকুলেটর: প্রতিদিনের হিসাবের কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ক্যালকুলেটর । নবম শতকে চীনে আবিষ্কৃত ক্ষুদ্র ক্যালকুলেটর অ্যাবাকাস। সর্বপ্রথম ১৬৪২ সালে গণিতবিদ ব্লেইসি প্যাসকেল ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। আধুনিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার ১৯৬৩ সালে এবং এর আবিষ্কারক বেল পাঞ্চ কোম্পানি।
বিদ্যুৎ: বিজ্ঞানের সকল আবিষ্কারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ আবিষ্কার ছাড়া আমাদের ব্যবহৃত প্রায় সকল আবিষ্কার বিফলে পরিণত হতো। বিদ্যুৎ কে আবিষ্কার করেছে তা সঠিকভাবে বলা দুরূহ। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ থেকে শুরু করে খ্রিষ্টাব্দ ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণার ফলে আজকের অবস্থানে বিদ্যুৎ।
টেলিফোন: আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৭০ সালে টেলিফোন আবিষ্কার করেন। এটি আবিষ্কারের পেছনে ছিলেন অ্যান্টনি মিউকি, ফিলিপ রিস, ইলিশা গ্রে এবং আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ।
বৈদ্যুতিক বাতি: বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানুষ এর বিভিন্ন ব্যবহার শুরু করে। এর থেকেই আবিষ্কার বৈদ্যুতিক বাতির। এর আবিষ্কারক = আমেরিকান বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। সর্বপ্রথম মানুষ সফলভাবে র বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু করে ১৮৭৯ সালে । আর বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করে ।
কম্পিউটার: যুগে যুগে বিখ্যাত কিছু আবিষ্কার হয়েছে যা মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তেমনি এক বিস্ময়কর = আবিষ্কার কম্পিউটার। কম্পিউটার আবিষ্কার যেন মানুষের জীবনে এক = বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। যুগান্তকারী এই কম্পিউটারের আবিষ্কারক হাওয়ার্ড আইকেন । ডেস্কটপ কম্পিউটার সর্বপ্রথম মানুষের হাতে আসে ১৯৭৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে অ্যাডাম অসবর্ন ল্যাপটপ আবিষ্কার করেন ।
টেলিভিশন: মানুষের বিনোদন জোগাতে বিজ্ঞানের সর্বপ্রথম আবিষ্কার টেলিভিশন। এর আবিষ্কারক জন লেজি বেয়ারড, ফার্নসয়রথ এবং জরিকিন। টেলিভিশনের ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৫৮ সালে। এটিতে শোনার পাশাপাশি ছিল দেখার সুবিধা।
বিমান: বিমানের ধারণা আসে মূলত রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর অরভিল এবং উইলভার রাইট প্রথম মানুষের আকাশে ওড়ার সম্ভাব্যতা নিয়ে পরীক্ষা চালান। আর বাণিজ্যিকভাবে ১৯১১ সালে অ্যারোপ্লেন আবিষ্কার করা হয়। বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সবচেয়ে দ্রুতগামী মাধ্যম হচ্ছে এরোপ্লেন। অ্যারোপ্লেনের নীতির ওপর ভিত্তি করেই জেট বিমান, রকেট ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে।
এয়ারকন্ডিশন: বছরের সকল সময় আরামদায়ক আবহাওয়া সৃষ্টিতে ব্যবহৃত যন্ত্র এয়ারকন্ডিশন । বর্তমান উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ অফিস, বাড়িঘরে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করে থাকে। আমেরিকান বিজ্ঞানী উইলিস কারিয়ার এটি আবিষ্কার করেন। তিনি ১৯০২ সালে একটি প্রিন্টিং এর দোকানের অতিরিক্ত আর্দ্রতা কমাতে একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটিই বর্তমানে এয়ারকন্ডিশন হিসেবে সমগ্র বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে ।
ক্রেডিট কার্ড: বর্তমানে বড় বড় বিপণিতে কেনাকাটা করতে নগদ টাকার পরিবর্তে একটি কার্ড ব্যবহার করা হয়। এটি কোনোকিছু ক্রয় করে বিপণিবিতানে বসে শুধু একটি কার্ড দিয়ে দাম পরিশোধ করা যায় । আর এই প্লাস্টিক কার্ডই ক্রেডিট কার্ড। সর্বপ্রথম ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার সফলভাবে শুরু হয়। সর্বপ্রথম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী যুক্তরাষ্ট্রের জন বিগিন ।
ডিজিটাল ক্যামেরা: ১৯৭৫ সালে স্তেভেন সাসন ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল ০.০১ মেগা পিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন। আর আজ আমরা ১৬০ মেগা পিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকি । এমনকি বর্তমানে মোবাইল ফোনেও ডিজিটাল ক্যামেরার সুবিধা রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব: বর্তমানে যেকোনো প্রয়োজনে আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে থাকি। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে শব্দটি খুব পরিচিত। আর এই শব্দ তিনটির পূর্ণ রূপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বারনারস লি এটি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে সারাবিশ্বে ১.৯ বিলিয়ন মানুষ এটি ব্যবহার করে থাকে। এই শব্দ তিনটি দ্বারাই সকল ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে আর আমরা পেয়ে যাচ্ছি আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ।
অটোমোবাইল: মানুষের চলার পথকে আরও অনেক আরামদায়ক এবং দ্রুত করতে বিজ্ঞানের আবিষ্কার অটোমোবাইল অন্যতম। কার্ল বেলজ এবং ডেইলমলারের আবিষ্কৃত অটোমোবাইল খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । আর এজন্য অটোমোবাইলের আবিষ্কারক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কার্ল বেনজকে ।
মোবাইল ফোন বা স্মার্ট ফোন: বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল ফোন। বহুল ব্যবহৃত এই যন্ত্রটির আবিষ্কার কৌশল এসেছে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের টেলিফোন আবিষ্কারের মাধ্যমে। সর্বপ্রথম তারহীন এই মোবাইল ফোন বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে। বর্তমানে বিশ্বের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে ।
এটিএম: জরুরি বা ছুটির দিনে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা উঠানোর একটি বিশেষ পদ্ধতি এটিএম বা অটোমেটেড টেলার মেশিন। বিজ্ঞানী লুথার জর্জ সিমজান এটি আবিষ্কার করেন। এখানে একটি পিন কোডের মাধ্যমে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয় । বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশে এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রেফ্রিজারেটর: কোনো খাবার দীর্ঘদিন টাটকা রাখতে বহুল ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম রেফ্রিজারেটর। সর্বপ্রথম উইলিয়াম কুলেন ১৭৮৪ সালে রেফ্রিজারেটরের ডিজাইন করেন। কিন্তু এর কোনো ব্যবহারিক প্রয়োগ হয়নি। পরবর্তীতে ১৮০৫ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক অলিভার ইভান রেফ্রিজারেটরের নকশা করেন ।
ই-কমার্স: বিজ্ঞানের আশীর্বাদের ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যেও এসেছে নতুন ধারা। ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষ এখন ঘরে বসেই তার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারছে। মানুষ আর আগের মতো বাজার বা শপিংমলে যাওয়ার চেয়ে ই-কমার্সকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
গৃহস্থালি কাজে বিজ্ঞান: দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনে বাড়িঘরে মানুষ বিজ্ঞানের অবদানকে ব্যবহার করে চলেছে। রান্নার কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস, বৈদ্যুতিক হিটার প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে রান্নার কাজে ব্যবহার উপযোগী বায়োগ্যাস তৈরির প্রযুক্তি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বৈদ্যুতিক পাখা, বিজলিবাতি চালানো; মোবাইল ফোন ও চার্জার লাইট চার্জ দেওয়া; টেলিভিশন, ওয়াটার হিটার, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, এয়ার কুলার প্রভৃতি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার জনজীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মোটকথা বিজ্ঞান মানবজীবনে আশীর্বাদ রূপে তাদের গৃহস্থালি কর্মকাণ্ডকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞানের ভূমিকা: শিক্ষাক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের রয়েছে বিস্তর অবদান । বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে প্রজেক্টরের সাহায্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিক্ষাক্ষেত্রে এনেছে সুদূরপ্রসারী বিপ্লব। যেকোনো তথ্য বর্তমানে গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে অতি সহজেই শিক্ষার্থীর হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে। এসব কিছুই মূলত বিজ্ঞানের অবদান ।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান: মানুষকে সুস্থ করা ও জটিলরোগ উপশমে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে চশমা ব্যবহার ছাড়াই মানুষ আজ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছে। স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন, এক্স-রে প্রভৃতি আজ মৃত্যুপথযাত্রীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কর্নিয়া (অক্ষিগোলকের স্বচ্ছ আবরণ), বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং যকৃতের মতো অঙ্গপ্রতঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ সফল ।
কর্মস্থল ও পরিবহনক্ষেত্রে বিজ্ঞান: অফিস-আদালত, কলকারখানা, শপিংমল, দোকান-পাট প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান সৃষ্ট প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে । প্রিন্টার ও ফটোস্ট্যাট মেশিন এসব প্রতিষ্ঠান সমূহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তৈরি পোশাক শিল্প ও বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকরা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে তাদের দৈনন্দিন নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করছেন। বড় শপিংমলগুলোতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা রক্ষা ও সুবিধার্থে সি.সি. ক্যামেরা, লিফট, এস্কেলেটর প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়, যা বিজ্ঞানের আবিষ্কার। এছাড়া স্থানিক দূরত্ব অতিক্রমে ও জনগণের কল্যাণে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়েছে। বেতার যন্ত্র, ভিডিও চ্যাট, মোবাইল ফোন প্রভৃতির মাধ্যমে যোগাযোগের স্থানিক দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে ।
কৃষি ও শিল্পের প্রসারে বিজ্ঞান: অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে । প্রাচীন আমলের কাঠের লাঙলের পরিবর্তন বর্তমানে কৃষকদের হাতে এসেছে কলের লাঙল, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি। সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তিচালিত পাম্প। কৃষিতে পচা আবর্জনা ও গোবরের সাথে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার। গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের হাতে উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে ।
বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকসমূহ: কল্যাণকর দিকের পাশাপাশি বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকও কম নয়। বিজ্ঞানকর্তৃক আবিষ্কৃত স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলো যখন কাজ করতে শুরু করেছে, তারপর থেকেই অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। দ্রুত শিল্পায়ন, যন্ত্রশিল্প কারখানা ইত্যাদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করতে ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা এ দূষণ প্রক্রিয়া অব্যহত থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে যা জীবজগতের ওপর বিভিন্ন ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়ার চেরনোবিলে পারমাণবিক দুর্ঘটনায় যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়েছিল তা পরিবেশকে মারাত্মকরূপে দূষিত করেছিল এবং এতে অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয় ও মারা যায়। বিজ্ঞানের কোনো কোনো বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
উপসংহার: বিজ্ঞান মানুষকে করেছে স্বনির্ভরশীল এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও অবদানসমূহকে মানুষ কোন পথে ব্যয় করবে তা নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছার ওপর। যদিও বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে মহৎ উদ্দেশ্যে তথা মানবকল্যাণে। মানুষ যদি কেবল মানবকল্যাণে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তবেই এর সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা, গৃহস্থালি কাজকর্ম, কৃষি, শিল্প, আণবিক শক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের যে অবদান তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই । বিজ্ঞান আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্তমানে এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যে, বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক পাও এগুতে পারব না। তাই জয় হোক বিজ্ঞানের।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা | দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা। যদি আজকের এই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।