ঈমান কি ? ঈমান সম্পর্কে হাদিস | ঈমান সম্পর্কে বয়ান | ঈমান বৃদ্ধির উপায়
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। প্রিয় বন্ধুরা মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমানটা টিকিয়ে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঈমান ব্যতীত কোন লোক মৃত্যুবরণ করলে, সে জাহান্নামী হবে কিংবা, পরকালে সে ব্যক্তি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। তো এ কারণে আজকে আমরা, ঈমান বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ঈমান কি ঈমান সম্পর্কে হাদিস ঈমান সম্পর্কে বয়ান ঈমান বৃদ্ধির উপায় |
ঈমান সম্পর্কে হাদিস | ঈমান সম্পর্কে বয়ান
ঈমান কি ঈমানের পরিচয়
ঈমান হল মানুষের বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ঈমান শব্দটি অর্থাৎ ঈমানের অর্থ হলো, আস্থা স্থাপন করা স্বীকৃতি দেওয়া, মেনে নেওয়া, নির্ভর করা কিংবা বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ইসলামের পরিভাষায় সাধারনত, শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা এবং অন্যদিকে মুখে স্বীকার ও তদনুযায়ী আমল করা কি এমন বলা হয়।
তাছাড়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমান সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। তাই আমাদের এই ঈমান সম্পর্কে ধারণা থাকা অবশ্যই উচিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমান হচ্ছে আল্লাহ, কিতাব সমূহ, রসুন গান, পরকাল, ফেরেশতাকুল, এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের সকল কিছু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকেই হয়। আর এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা কি ঈমান বলা হয়। এই হাদীসটি সাধারণত মুসলিম শরীফে রয়েছে।
ঈমান এর মোট শাখা কয়টি বা ঈমান কয়টি ও কি কি?
ঈমানঃ ঈমানের সাধারণত সাধারণত সাতটি মূল বিষয় রয়েছে। ঈমান অর্থ বিশ্বাস। একজন মুসলমানকে ঈমানের কতগুলো মৌলিক বিষয়ে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয়। এগুলো আল কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ঈমানের মৌলিক বিষয় এর উপর বিশ্বাস ব্যতীত, কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। চলুন এই সাতটি মূল বিষয় নিয়ে জেনে নিই।
এক নম্বর মূল বিষয়ঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর প্রতি বিশ্বাস।
ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান বিষয় হলো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন এক অদ্বিতীয়। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই।
তিনি সকল সকল কিছুর সৃষ্টি কর্তা, পালনকর্তা ও রক্ষা কর্তা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল গুণের আধার। সমস্ত প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারিত। আল্লাহ তায়ালার প্রতি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
দুই নম্বর মূল বিষয়ঃ ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস।
সাধারণত ফেরেশতাগণ মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ সৃষ্টি। এবং ফিরিশতাগণ নূরের তৈরি। তারা নারীও নয় পুরুষও নয়। তারা সকল পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে মুক্ত।
তাদের এই এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন রাখা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত অংশ। আশা করি আপনারা ফেরেশতাগণের বিষয়টি বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন।
তিন নম্বর মূল বিষয়ঃ আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস।
আসমানী কিতাব সমূহ আল্লাহ তালার বানী। এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, মানুষকে নিজ পরিচয় প্রদান করেছেন। তাছাড়া তিনি তার আদেশ-নির্দেশ বিধিবিধান সুসংবাদ সতর্কবাণী ইত্যাদি এই আসমানী কিতাবের ভিতরে রেখেছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর রসূলগণের নিকট এই কিতাব সমূহ পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে 104 খানা আসমানি কিতাব নাযিল করা হয়েছে। এবং এগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের আবশ্যক।
চার নম্বর মূল বিষয়ঃ নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
সাধারণত মানবজাতি হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, যুগে যুগে বহু নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।
এবং এই নবী-রাসূলগণ তারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পথে ডেকেছেন। সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন ও ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি নির্দেশনা প্রদান করেছেন। নবী রাসূলের প্রতি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
পাঁচ নম্বর মূল বিষয়ঃ আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস।
সাধারণত আখিরাত হল পরকাল। আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী। এই জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখিরাতের জীবন শতগুণ বেশি।
পরকাল অর্থাৎ কবর হাশর মিজান জান্নাত জাহান্নাম সীরাত ইত্যাদি আখিরাতের একপর্যায়। এবং পরকালে আমাদেরকে ইহকালের কাজ কর্মের হিসাব নিকাশ নেওয়া হবে। তাই আখিরাতের প্রতি আমাদেরকে স্থাপন রাখতে হবে। এটিও ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
ছয় নম্বর মূল বিষয়ঃ তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস।
তাকদীর হল সাধারণত নির্ধারিত পরিমাণ, ভাগ্য বা নিয়তি। একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই তাকদীরের ভালো-মন্দের নির্ধারণ কারি। ভালো-মন্দ একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আমরা নিজেরা ভালো-মন্দ নির্ধারণ করতে কখনোই পারবোনা। এমনকি তিনি তার কথা ব্যতীত একটি গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না। ঠিক এ কারণেই তাকদীরের প্রতি আমাদেরকে বিশ্বাস স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি অংশ।
সাত নম্বর মূল বিষয়ঃ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস।
মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায় না। বরং মানবজীবন দুই ভাগে বিভক্ত। লোকাল জীবন শেষ হলে আমরা পরকাল এর যাত্রা শুরু করলাম।
সাধারণত ইহকাল হলো এই পৃথিবী বা দুনিয়ার জীবন। আর পরকাল হল মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। সেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল মানুষকে একত্রিত করবেন এবং হিসাব-নিকাশ নিবেন। তাই আমাদের মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি।
প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলে কোন লোককে খারাপ উদ্দেশ্যে, কিংবা কোন ধার্মিক বিষয়ে আঘাত এনে দেওয়ার জন্য নয়।
আমরা ইসলামটাকে নিজের মতো না ভেবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের, আদেশ নির্দেশ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আজকে আমরা যে মৌলিক সাতটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঈমানের অংশ।
ঈমান বৃদ্ধির উপায়
ঈমান টিকিয়ে রাখার উপায়ঃ প্রিয় বন্ধুরা আমরা জানি, ঈমান হল বিশ্বাস এবং এই বিশ্বাসের, সাতটা স্তম্ভ রয়েছে। বা ঈমানের সাতটি মৌলিক বিষয় রয়েছে।
এগুলোর প্রতি আমাদের বিশ্বাস থাকলে অবশ্যই আমরা ঈমানদার। তবে আপনি যদি আমাদের শেয়ার করা উপরোক্ত সাতটি মৌলিক বিষয়, এর উপর বিশ্বাস স্থাপন না করেন তাহলে, আপনি ঈমানদার না।
আর ঈমান মজবুত ও টিকিয়ে রাখার জন্য, আমাদের এই সাতটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। শুধু বিশ্বাস করলে হবেনা মনেপ্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস থাকা জরুরি।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, ফেরেশতাগণ, নবী-রাসূলগণ, পরকাল, তাকদীর, আখিরাত, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে প্রেরিত কিতাব সমূহ ইত্যাদি।
এগুলোর প্রতি মনেপ্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন রাখতে পারলেই, ঈমান মজবুত ও টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তবে এগুলোর প্রতি বিশ্বাস করলাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ-নির্দেশ মানলাম না, তাহলে কিন্তু আপনার ঈমান থাকবেনা।
তাছাড়া মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এবাদত না করলে আপনি ঈমানদার না। সুতরাং এগুলোর প্রতি আমরা যেন সঠিক নিয়মে এবং নবী এর আদর্শ, এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ নির্দেশ অনুযায়ী চলতে পারি।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকে আমরা, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রিয় ঈমান অংশটি। নিয়ে আলোচনা করেছি বিস্তারিত। যদিও বিস্তারিত না তবে সংক্ষিপ্ত আকারে বিস্তারিত জানানো বা বলার চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি এই সম্পর্কিত আরো আর্টিকেল পেতে চান তাহলে কমেন্ট করবেন।
আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদেরকে, ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করার তৌফিক দান করে আমিন। আমরা সবাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের, ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করি যেন।
ঈমান ব্যতীত আমরা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবোনা। সুতরাং আমরা সবাই যেন একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের গোলামী করার চেষ্টা করব। এবং নিজের ঈমানকে মজবুত ও টিকিয়ে রাখার জন্য যত সম্ভব হতো চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিয়ম-নীতি ও রসূলের আদেশ অনুযায়ী জীবন চালাবেন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আসসালামু আলাইকুম রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।