সালাম বিনিময়ের নিয়ম ও সালাম বিনিময়ের ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম । আশা করি সকলে ভালো আছেন । আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো আছি । যাই হোক আমি বেশি কথা বাড়াতে চাই না সরাসরি পোস্টের কথাতে চলে আসতে চায় ।
অনেকেই হয়তো পোস্টের টপিক দেখেই বুঝে ফেলেছেন যে আজ আমি কোন বিষয় নিয়ে লিখতে যাচ্ছি । আজ আমি সালাম বিনিময়ের উপকারিতা সম্পক লিখতে যাচ্ছি । আশা করি সকলে আমার আজকের পোস্ট পড়বেন । পোস্ট ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন ।
সালাম বিনিময়ের নিয়ম
সালাম বিনিময়ের উপকারিতা বলার আগে আমি প্রথমে সালাম বিনিময়ের নিয়মটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই ।
দেখা হলেই প্রত্যেক মুসলমানকে সালাম দিতে হবে । সালাম শুধুমাত্র বড়দের জন্যই নয় । ছোট বড় সবাইকে সালাম দিতে হবে । সালাম দেওয়া সুন্নাত এবং সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব । সুতরাং কেউ সালাম দিলে আমাদেরকে তার উত্তর অবশ্যয় দিতে হবে ।
তা না হলে আমাদের গুনাহ হবে । কেউ একাকী থাকলে তাকে উদ্দেশ্য করে তার সাথে আস্তে সালাম দিতে হবে । একসাথে অনেকজন থাকলে জোরে এবং সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিতে হবে । কারোর বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার আগে প্রথমে সালাম দিতে হবে এবং তারপর বাড়িতে প্রবেশ করতে হবে । এটার কারণ অনেক ।
সালাম (سَلَام) আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামি অভিবাদন হলো- ‘সালাম’।
এ কারণে কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার আগে সালাম দেয়া প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলার আগে সালাম দাও।’
আসসালামু আলাইকুম (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ)
অর্থাৎ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’।
যে সালামের উত্তর দিবে তাকে কমপক্ষে বলতে হবে :-
ওয়ালাইকুমুস সালাম
আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক
সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব তথা অবশ্যক করণীয়।
প্রথম সালামের প্রচলন
আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালামকে সালাম দেয়ার শিক্ষা দেন। হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি ফেরেশতাদের সালাম দিলে তারাও সালামের উত্তর দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ যে ফেরেশতামণ্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর।
আর ওরাও তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্তুতির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাকুম’।
তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশি বললেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন)
সালাম দেয়ার পদ্ধতি ও সালাম বিনিময়ের ফজিলত
হাদিসের নির্দেশনা হলো- একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা-বার্তার আগে সালাম দিতে হবে। সালাম দেয়ার ফজিলত অনেক বেশি। সালাম দেয়া সুন্নাত এবং সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-
- হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি মানুষ ওই ব্যক্তি; যে সর্বপ্রথম সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহামদ)
- একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা ‘। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মেশকাত)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দুই জন মুসলমানের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হাতে হাত মেলায়) করে তখন একজন অপরজন থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’
- হজরত আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) খাবার দান কর, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখ এবং লোকেরা যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামাজ পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দরেমি)
সালামের নির্দেশ
সালাম ইসলামের সর্বোত্তম কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিকে পরস্পর সাক্ষাতে ব্যাপকভাবে সালামের প্রসারের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইনবুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলামে সর্বোত্তম কাজ কী? তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) খাবার দান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’ (মেশকাত, রিয়াদুস সালেহিন)
হজরত আবু উমারা বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাতটি (কাজ করতে) আদেশ করেছেন-
- রোগী দেখতে যাওয়া;
- জানাজার অনুসরণ করা;
- হাঁচির (ছিঁকের) জবাব দেয়া;
- দুর্বলকে সাহায্য করা;
- নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা
- সালাম প্রচার করা; এবং
শপথকারীর শপথ পুরা করা।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহামদ)
এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক।
মুমিন মুসলমানের উচিত, পরস্পরের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটানো। কুরআনে শেখানো পদ্ধতি ও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা মোতাবেক সালাম আদান প্রদান করা। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও বরকত লাভ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে পরস্পর যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে সালাম দেয়ার তাওফিক দান করুন। সালামের উপকারিতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।