চিনামাটির চায়ের কাপে সুবিধা কেন?

 আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চা যেন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। চা পছন্দ করে না বা চা পান করে না এরকম ব্যক্তি খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে৷ অবশ্য বিভিন্ন রোগের কারণে বিশেষভাবে ডায়াবেটিসের আক্রান্তদের ডক্তারগণ চা পান করতে নিষেধ করেন। যাইহোক সেটা অন্য এক আলোচনা৷ আমরা এখন আলোকপাত করব চায়ের পানপাত্র নিয়ে অর্থাৎ আমরা যেসব পাত্রে চা পান করে থাকি সেসব পাত্র সম্পর্কে। এসবের মধ্যে চিনামাটির চায়ের কাপই বেশি প্রচলিত, চিনামাটির তৈরি চায়ের কাপে চা খাওয়ার চা পান করাতে অনেক সুবিধাও রয়েছে। 



প্রথমত, গরম চা হলেও চিনামাটির তৈরি কাপটা সহজে গরম হয় না; ফলে নিরাপদে কাপে ঠোঁট লাগানো যায়৷ চিনামাটির কাপের আসল সুবিধাটা হচ্ছে, চিনামাটি বা কোয়ার্টজ (শক্ত খনিজ পদার্থ, দানাদার সিলিকা) তাপে বেশি প্রসারিত হয় না এবং কাঁচের তুলনায় এর তাপ পরিবহন ক্ষমতা বেশি। এর ফলে এসব পদার্থে তৈরি কাপ চায়ের তাপে ফেটে যায় না৷ কিন্তু কাঁচের গ্লাসে চা ঢাললে সেটা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এজন্য কাঁচের গ্লাসে চা ঢালতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি৷ কারণ, কাঁচ ভালো তাপ পরিবাহী নয় এবং তাপে এটি বেশি প্রসারিত হয়৷ চা ঢালামাত্রই কাঁচে গ্লাসের ভেতরের তল দ্রুত তপ্ত ও প্রসারিত হয়, কিন্তু বাইরের তল প্রায় ঠাণ্ডাই থেকে যায় এবং ভেতরের প্রসারণের তুলনায় বাইরের তল সেভাবে প্রসারিত হয় না৷ ফলে গ্লাসের ভেতরে তলের প্রসারণ বাইরের তলে অপ্রসারিত তলের উপর চাপ সৃষ্টি করে যার কারণে কাঁচের গ্লাস ফেটে যায়।


তবে মজার ব্যাপার হলো, খুব পাতলা কাঁচের গ্লাস অন্যসব ব্যাপারে ঠুনকো হলেও চা পান করার ক্ষেত্রে খুবই মজবুত। পাতলা কাঁচের গ্লাসে গরম চা ঢাললেও গ্লাস ফেটে যায় না। কারণ, চায়ের উত্তাপে পাতলা কাঁচের ভেতর আর বাইরের তল প্রায় একই সঙ্গে উত্তপ্ত হয় ও একই তালে প্রসারিত হয়৷ এই সম্প্রসারণ গ্লাসের গায়ে চাপ সৃষ্টি করে না। ফলে চায়ের কাপ ফেটেও যায় না৷ তবে একটা বিষয় লক্ষ রাখতে হবে যে, পাতলা কাঁচের গ্লাসের তলাও যেন পাতলা কাঁচের হয়, কারণ গরম চায়ের তাপ গ্লাসের তলাতেই বেশি পড়ে৷ সে জন্যই বিজ্ঞান ল্যাবরেটরিতে টেস্টটিউব ও অন্যান্য পাতলা জিনিসপত্র পাতলা কাঁচের হয়। এদের তলাও হয় রকই রকম পাতলা কাঁচের। এসব পাত্রে তরল পদার্থ রেখে বার্নারে জ্বাল দিলেও তা ফেটে যায় না৷


পুরু কাঁচের তৈরি চায়ের কাপেও চা ঢাললে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, তবে সেটা হতে হবে বিশেষ ধরনের কাঁচ, যার অসম প্রসারণ ঘটে না৷ তা ছাড়া সাধারণ কাঁচের গ্লাসে যদি কখনো চা খেতে হয়, বিশেষ কৌশলে তাও করা যেতে পারে। চা ঢালার আগে গ্লাসে একটা তামা বা রুপার চামচ রেখে দিতে হবে। কারণ, তামা বা রুপার তাপ পরিবহনক্ষমতা অনেক বেশি। তাই গ্লাসে চা ঢালার সঙ্গে সঙ্গে এই চামচ দ্রুত তাপ শোষণ করে নিজে গরম হয়ে গ্লাসের কাঁচকে হঠাৎ অতিরিক্ত উত্তাপের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়৷ এতে গ্লাস ধীরে ধীরে গরম হয়, ফলে ফেটে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ